নাগরী। মিশু মিলন

একটানা বেশ কিছু বছর অনাবৃষ্টির ফলে তীব্র খরায় মহাসংকটে পড়েছে অঙ্গরাজ্য; ফসলের মাঠ তো বটেই, জল শুকিয়ে পুকুর-কুয়োর তলা হয়েছে চৌচির, এমনকী ছোটো ছোটো নদী-খালের জল শুকিয়েও বক্ষে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে! গঙ্গার বদান্যতায় চম্পা নদীতে এখনো স্রোত বইছে বটে কিন্তু শীত-গ্রীষ্মে সেই স্রোতে না থাকে অলংকার, না আভিজাত্য। বর্ষাকালে গঙ্গা-চম্পার মিলনস্থল রাগে ফুঁসে ওঠা গোখরোর মতো ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করলেও অন্যান্য সময় ফণা তোলা দূরে থাক, ফিসফিসও করে না; নিঃশব্দে জলঢোঁড়ার মতো বয়ে যায়! ধু ধু চর পড়েছে গঙ্গায়, সূর্যকিরণে তপ্ত বালির দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যায়, কেবল গঙ্গার মাঝখান দিয়ে লজ্জাবনত নারীর মতো বয়ে চলেছে নিরলংকার-নিরহংকার জলধারা। অঙ্গরাজ্যে জলের অভাবে রোগে ভুগে, ছটফট করতে করতে রোজ-ই মরছে মানুষ-গবাদীপশু; বৃক্ষ-লতা মরছে নীরবে। বছরের পর বছর হিংস্র-বিষাক্ত প্রাণির ভয় উপেক্ষা করে, বহু জীবন ক্ষয় করে অরণ্য কেটে যে কৃষি জমি তৈরি করা হয়েছে, তা এখন নিষ্প্রাণ ধূসর তেপান্তর। অনাবাদে দুর্ভিক্ষ লেগেছে সারা রাজ্যে, বৃক্ষরাজি বন্ধ্যা নারীর ন্যায় ফলশূন্য। কেবল গঙ্গার পার্শ্ববর্তী জনপদেই যৎকিঞ্চিত ফসল দৃষ্টিগোচর হয়, গঙ্গা থেকে দূরবর্তী অঞ্চল ক্রমশ মরুভূমির রূপ নিচ্ছে।  

মানুষ দুষছে রাজা লোমপাদকে; অধিকাংশ মানুষ বলছে, ‘মহারাজ লোমপাদ পাপী, তার পাপের ফলেই রাজ্যে এমন অনাবৃষ্টি!’  
বিচক্ষণ কেউ কেউ রাজা লোমপাদ তো বটেই তার পূর্ববর্তী রাজাদেরকেও দুষছেন, যারা অবাধে অরণ্য ধ্বংস করে কৃষি জমি তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচক্ষণ মানুষেরা বলছেন, ‘অবাধে অরণ্যের বৃক্ষ ধ্বংস করার কারণেই হয়তো এই অনাবৃষ্টি।’ 
কেউ-বা বলছে, ‘অরণ্যদেবীর অভিশাপেই বৃষ্টি হচ্ছে না!’  
দূর্ভিক্ষে-রোগে স্বামী হারানো স্ত্রী, পুত্র-কন্যা হারানো পিতা-মাতা, পিতা-মাতা হারানো অনাথ সন্তান বিলাপ করতে করতে অভিসম্পাত করছে রাজা লোমপাদকে।  

আবার কি বর্ষণসিক্ত হবে অঙ্গরাজ্য?

নাগরী
মিশু মিলন

প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ সৌজন্য চক্রবর্তী

মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৫০ টাকা
#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।