বলরামের দোল। সেকালের সমাজচিত্র। দীনেন্দ্রকুমার রায়। সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা
"বলরাম হাড়ী, সুবল চৌধুরী মুচি-- জাত্যাংশে উভয়েই সমাজের একই স্তরের লোক, ইহাও তাহাদের বন্ধুত্ব-বন্ধনের অন্যতম কারণ। সুবল চৌধুরী বলিত, জাতিতে আমি মুচি, এ-জন্য হিন্দুসমাজে আমি অচল, আমরা কুকুরেরও অধম! উচ্চশ্রেণীর হিন্দুর ঘরে কুকুর উঠিলে ঘর অপবিত্র হয় না, কিন্তু আমরা তাহাদের ঘরে উঠিলে ঘর অপবিত্র হয়। তাহাদের রান্নাঘরের তো কথাই নাই, কুকুর তাহাদের রান্নাঘরে প্রবেশ করিলে পাকশালার হাঁড়িকুড়ি ফেলিতে দেখা যায় না, কিন্তু তাহাদের পাকশালার ত্রিসীমানায় আমাদের যাইবারও অধিকার নাই। হিন্দুর ধোপা আমাদের কাপড় কাচে না, নাপিত আমাদের কামায় না। হিন্দু ঘরামি আমাদের ঘর ছাইবে না। এমনকি, হিন্দুর দেবমন্দিরে আমাদের প্রবেশের অধিকার নাই। হিন্দু হইয়াও আমরা-- এই বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মুচি উচ্চবর্ণের হিন্দুর অস্পৃশ্য। হিন্দু পূজার দালানে উঠিতে পাইব না, কিন্তু পূজা উপলক্ষে ঢাক-ঢোল বাজাইবার জন্য আমাদের ডাক পড়িবে। আমরা পূজা-বাটিতে ঢাক বাজাইব, কিন্তু উচ্চ-সমাজের হিন্দুর সহিত মিশিয়া পূজা করিতে পাইব না!
হিন্দু বলিয়া পরিচয় দিব, অথচ হিন্দুসমাজের অস্পৃশ্য হইয়া থাকিব-- এ অত্যাচার অসহ্য। আমার হাতের জল অস্পৃশ্য, হিন্দু আমার ঘরে জলস্পর্শ করিবে না, হিন্দু বলিয়া আমার পরিচয় দিতে লজ্জা হয়।"
বলরামের দোল
সেকালের সমাজচিত্র
দীনেন্দ্রকুমার রায়
সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ সৌজন্য চক্রবর্তী
#সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment