টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি। মিহির সেনগুপ্ত
"এখন আকাশ অনেকটা ফরসা। এবার আমাকে ফিরতে হবে নিজস্ব জীবনের গণ্ডিতে। ধীর পায়ে, সিনগি যেখানে বসে আছে, সেখানে, তার পিছনটিতে দাঁড়াই। দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা রেখে নিশ্চুপ বসে আছে মেয়েটি। অত্যন্ত স্নেহভরে তার মাথার উপর আমার ডান হাতখানা রাখতে, সে খুবই সহজে তার হাত দু-খানি বাড়িয়ে দেয়। সেই হাত চুম্বকের আশ্লেষের মতো আমার হাত দু-খানিকে আবদ্ধ করলে, সে তার শেষ গানটি করে--
দাড়েম মেনাঃ খান আমকা
সেঁতাম মেনাঃ খান আমকা,
ধিরিকাওয়ার দ আমকা ঝিজ মেসে হো।
দাড়েম মেনাঃ খান আমকা
সেঁতাম মেনাঃ খান আমকা
ধিরিকাওয়ার দ, আমকা লাডাক মেসে হো।
মানেটা নিজেই করে দেয়। হে অমুক, গায়ে যদি শক্তি থাকে, তাকত থাকে, তাহলে এই পাথরের কপাট খোলো, সরাও এই পাথরের বাধা।-- গানটি শেষ করে কৃষ্ণসার বনকুরগীর মতো মেয়েটি আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ে। আমার এতক্ষণের চিন্তা চিন্তন, প্রেম, বন্ধুতা এবং শরীরী স্থূলতা বিষয়ে গ্লানিবোধ, সব কিছু একাকার হয়ে শুধু একটিই বোধ সত্তাকে আশ্রয় করে স্থায়ী থাকে। সেই বোধটি সিনগিরই গাওয়া গানটির ধ্রুবপদ--
জনম জখা তেলাং জানাম আকানা
জেগৎ জেলা রেলাং চাডো আকানা...।
প্রাকৃত বিশ্বে তখন সিংবোঙা প্রকাশ পাচ্ছেন। অগ্নিকুণ্ডে শুধুমাত্র কিছু ছাই। কিন্তু তথাপি অন্তর্বিশ্বে এক প্রাচীন হংস ও তার হংসী পরস্পরের গ্রীবায় সন্নদ্ধ থেকে 'ধরতি আবার' সন্ধানে ঝাপটে যাচ্ছে।
উৎরাই দিয়ে নামতে নামতে সিনগিকে উদ্দেশ করে বলি, তোমার ভূরপা ইপিলকে আমার আদর জানিও। কিন্তু তার মতো আমার তো ওই রকম চমৎকার সব গানের বাণী নেই, তাই একান্ত করে তাকে কিছুই বলে আসতে পারলাম না। কুয়াশা মাখানো উৎরাই ভেঙে বেশ খানিকটা নেমে পিছনে একবার তাকালাম। সারা শরীরে কুয়াশার আস্তরণ সিনগি তখনও সেখানে দাঁড়িয়ে।"
টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি
মিহির সেনগুপ্ত
প্রচ্ছদ: শুভশ্রী দাস
অলংকরণঃ পার্থপ্রতিম সরকার, আত্রেয়ী সাহা
মুদ্রিত মূল্য: ২৫০ টাকা
#সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment