Posts

Showing posts from November, 2022

সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ।। সম্পাদনা: শতঞ্জীব রাহা।

Image
সমর ভট্টাচার্য জন্মেছিলেন অবিভক্ত নদীয়ার মেহেরপুরে। অনতি-বাল্যকালেই তাঁদের পরিবার এপার বঙ্গে চলে এলেও সমর তাঁর সত্তা-বিজড়িত মেহেরপুরের অপরিণত স্মৃতি আজীবন বহন করেছেন। উচ্ছিন্ন নিরুপায়তায় ছেড়ে আসা সেই ভূ-বিশ্ব, ভৈরবের পাড়ের সেই গ্রামীণ অথচ প্রাচীন পুর এবং জেলা মহকুমা মেহেরপুর শহরের নিসর্গ ও মানবসঙ্গের স্পর্শকে কখনও পেছনে ফেলে যেতে পারেননি সমর–না জীবনযাপনে, না নিজের সৃজন-বিশ্বে! সেই মায়াময় সৃজন-বিশ্বে সবাইকে স্বাগত।  সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৯০ টাকা #সুপ্রকাশ

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।

Image
'প্রথমে তনয়দের বাড়ি। সন্ধ্যে হয়ে এসেছে। রাস্তার দু-পাশের বাড়িগুলোর আলো জ্বলে উঠেছে, শাঁখ বাজছে কোথাও কোথাও। মিউনিসিপ্যালিটির রাস্তার আলো এখনও জ্বলেনি। তনয়দেরও বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে। রাস্তার দিকের দুটো জানালার একটা শীতের সন্ধ্যায় বন্ধ। আর খোলা জানালাটা দিয়ে একটি মনুষ্যমূর্তির পৃষ্ঠদেশে অনেকটা আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বাকিটা রাস্তায় এসে পড়েছে। গত বছরের রেজাল্টের দিনের মতোই জানালায় দাঁড়িয়ে আছে টুকু। —'দাদা, এই দাদা। টুকুর ডাকে সদর দরজার দিকে না গিয়ে আমরা জানালার কাছে এগোই। —'কী করছিলিস্ এতক্ষণ। প্রায় ধমকায় টুকু। তনয় গলা নামিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে— আমরা সবাই কুন্তীর ওপারে গিয়েছিলাম। তোর জন্য টম্যাটো, ছোলা এনেছি। তনয় জানালা দিয়ে পকেট দেখায়। —“চাই না ওসব। সেই কোনকালে স্কুলে গেলি....রেজাল্টের দিন—চিন্তা হয় না?' টুকুর মুখ ভার কাটে না। টুকুর এবার ক্লাস এইট।  টুকুও কি বড়ো হয়ে গেল ? তনয় আরও গলা নামিয়ে ফেলে—'কে চিন্তা করছে? তুই?—এই দেখ রেজাল্ট। বুক পকেটের ভাঁজ করা হালকা তুঁতে রঙের কাগজটা জানালা দিয়েই বাড়িয়ে দেয় তনয়। ভাঁজটা খুলেই আলোর সোজা পিঠে টুকুর নজর যা

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।

Image
'মিহিরবাবুর রচনায় হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের বিশ্লেষণ নেই, ছবি আছে। সে ছবি নানা রঙের---অত্যাচার-দাঙ্গার ঘনকৃষ্ণ বর্ণ থেকে ফুর্তি-ভালবাসার গাঢ় সবুজ অব্দি তার ব্যাপ্তি।' '...ছোমেদ মেয়ার কথায় বলি--- "মানুষই মানুষরে মারে, মানুষই মানুষরে ধরে, মানুষ ভাসায়, মানুষ ডোবায়, মানুষই সব করে।" তারপরেও আছে, সব মানুষের শেষ ইচ্ছা :  "শোক আছে দুঃক আছে মোগো চিরকাল উপাসও কাপাসও আছে প্যাডে হরতাল। তমো মোরা উচ্ছবের করি আয়োজন। বাচনের জইন্য তাহা অতি পেরোজোন।।" যে প্রচন্ড প্রাণশক্তি অনাহার-অর্ধাহারের মধ্যেও উৎসবে মাততে পারে, মিহিরের বিবরণে তারই জয়গান। এই অসামান্য কাহিনী বাঙালি পাঠকমাত্রেরই চেতনাগোচর হওয়া বাঞ্ছনীয়।'  ---তপন রায়চৌধুরী  (নন্দন পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচনার একাংশ)  সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম মিহির সেনগুপ্ত #সুপ্রকাশ

দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস ' অনন্যবর্তী ' পড়ে লিখেছেন অপরাজিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস ' অনন্যবর্তী ' পড়ে লিখেছেন অপরাজিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................ অনন্যবর্তী দুর্লভ সূত্রধর সুপ্রকাশ  এলাকাটি একটি গ্রামীণ মফস্বল, যার ধার দিয়ে বয়ে গেছে কুন্তী নদী। মোক্তার আছে, ডাক্তার আছে, রয়েছে আরো বিচিত্র পেশার মানুষ। সেখানে উজ্জ্বল ছেলেমেয়ের পাশে আছে একদল ছেলেমেয়ে— 'যাদের জীবনে কোনো ম্যাজিক নেই '।  লেখক  এদের জীবনে কোনো ম্যাজিক নেই বললেন বটে, কিন্তু এদের জীবনের এবং এদের পরিবারের যাপনের ম্যাজিকই এই উপন্যাসের উপজীব্য। এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে। তনয়, টুকু, শোভন, কাজু, তপেশ, তরণী— তাদের স্কুল, তাদের খেলা, তাদের স্কুলের পর নদীর ওপারে ঘুরতে যাওয়া — এর মধ্যেই বড়ো হয়ে যাওয়া। তাদের একসঙ্গে নাইট স্কুল এ মতাদর্শের জন্য শ্রমদান, অনুচ্চকিত রাজনীতি— এ সবই তো আছেই, সঙ্গে এই উপন্যাসে রয়েছে প্রেম। সেই প্রেমের ধরন বড়ো নিজস্ব তাদের।  এই ছেলেমেয়ের দলের কাহিনীর পাশাপাশি চলেছে আরও একটি সমান্তরাল আখ্যান। সেই আখ্যান এদের আগের প্রজন্মের মানুষদের নিয়ে। মধ্যবিত্তের বি

জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

Image
"সমুদ্রের তলদেশ । নীল স্বচ্ছ পানির মধ্যে লাল পাথরের চাঁই ঘিরে কিছু ছোটো ছোটো দোতলা বাড়ি । অন্য বাড়িগুলোর থেকে আকৃতিতে বড়ো একতলা একটা বাড়িতে ঝিনুকের দীর্ঘ লাইন। প্রত্যেকের হাতেই মুক্তো। কারোটা ছোটো কারোটা বড়ো। কারোটা সাদাটে গোলাপি, কোনোটা আবার লালচে। একদিকের দীর্ঘ লাইনে মুক্তো জমা দিয়ে ঝিনুকেরা চলে যাচ্ছে। পাশেই হিসেব রাখছে একজন ব্যাংকার। কোন মুক্তো ঝিনুক জমা দিচ্ছে। আর অন্যপাশের লাইনে সমুদ্রের বিভিন্ন প্রাণী, কেউ চিংড়ি, কেউ শামুক, কেউবা চিতল মাছ। অক্টোপাসও আছে। তারা সামুদ্রিক মুদ্রা নিয়ে সে মুক্তোগুলো কিনতে এসেছে। ঝিনুকের এই ব্যাংক মূলত মুক্তোর বাজারে পরিণত হয়েছে। সমস্ত সমুদ্রে মুক্তোর সরবরাহ এখন এই ব্যাংক করে। এইসব মুক্তোর প্রচুর চাহিদা । ফলে ঝিনুকের এখন রমরমা অবস্থা। যে ঝিনুক যত বেশি মুক্তো উৎপাদন করতে পারে সে ঝিনুকের তত বেশি দাম, তত বেশি সম্মান। ব্যাঙ্ক থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবতে ভাবতে উদাস হয়ে পড়ে জাফি। এমনিতে অবশ্য জাফি উদাস কমই হয়। সে অরুণোদয়ের তরুণ ঝিনুক। সারাদিন হল্লা করতে করতে তার সময় কাটে। এই সে ঝিনুকের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খাচ্ছে, তো এই বাইমমাছের

জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

Image
"মাস খানেক পর জ্ঞান ফিরল জাফির। তার আগে তাকে নিয়ে যে কত চিকিৎসা কত সেবা কত প্রার্থনা ঘটে গেছে তার বিন্দুমাত্র খবর সে রাখে না। চেতন-অবচেতনের মাঝে পৃপার স্পর্শটুকু সে আলাদা করতে পারত। তখন তার খুব শান্তি শান্তি লাগতো । দারুণ ঘুম পেত। পৃপার শরীরের ঘ্রাণ নিতে নিতে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ত। চোখ মেলে বুঝতে পারল সে আসলে খোলসের মধ্যে রয়েছে। পেটের কাছটা ব্যথা করছে। কেন করছে কে জানে! ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরোনোর চেষ্টা করল জাফি। খোলসটা একটু ফাঁকা করতেই বাইরে উদ্বিগ্ন মুখ দেখল জুনোর। সাথে সাথে খোলস বন্ধ করে দিল জাফি। এক মাস পর চোখ খুলে আর যাই হোক জুনোকে দেখতে চায় না সে।  ভেতর থেকে ব্রের কণ্ঠ শুনল জাফি, ‘বন্ধু কেমন আছে, জুনো ?”  জুনো বলল, ‘ভালো কিংবা ভালো না... বুঝতে পারছি না। একবার মনে হলো নড়াচড়া দেখলাম।' ‘বলো কী...' ব্রের কণ্ঠ উৎসাহী ‘কখন?’ এরপরেই আরেকটি কণ্ঠ শুনতে পেল জাফি। যে কণ্ঠ শোনার জন্যই জন্মেছিল সে, এমন মনে হয় তার। ................. বাইরে শত শত শামুক ও ঝিনুক নিজেদের কাজে ব্যস্ত। ব্রে তাদের ঘুরে ঘুরে জানাল, জাফির জ্ঞান ফিরেছে... আর জাফির ভেতর তৈরী হচ্ছে দারুণ এক মুক্তো... সবা

জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

Image
"জাফি আর নেই। মারা গেছে। প্রথম দর্শনে জাফিকে দেখে এমনই মনে হয়েছিল ব্রের। ছুটে গিয়েছিল বন্ধুর কাছে। উদার সাহসী এই বন্ধুর প্রতি মনে মনে এক রকমের শ্রদ্ধাও জন্মেছে তার ভেতরে ভেতরে। ভালোবাসার মানুষ যখন শ্রদ্ধারও হয়ে যায় তখন এক অদ্ভুত আত্মীয়তার সৃষ্টি হয়। মৃত জাফিকে দেখে ব্রের সেই আত্মার আত্মীয়টা ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। ছুটে গিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে দেখল বন্ধুর বিধ্বস্ত শরীর। খোলসের অন্তত তিনটি জায়গা ফেটে গেছে। মাথা থেকে রক্তের সরু ধারা গড়াচ্ছে। কোমরের কাছেও আঘাত। কিন্তু হেহেহে করে হেসে উঠল ব্রে। যে কেউ দেখলে ভাবত বন্ধু শোকে হয়ত পাগল হয়ে গেছে। আসলে জাফিকে জড়িয়ে ধরেই বুঝতে পেরেছে বন্ধুটি বেঁচে আছে। খুবই আহত । জ্ঞান নেই। বাঁচানো যাবে কিনা সন্দেহ, কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেঁচে আছে! খুবই ধীর লয়ে শ্বাস চলছে... হ্যাঁ শ্বাস তো চলছে! সবকটা ঝিনুক আর শামুককে লাল পাথরের চাঁইয়ের কাছে পৌঁছে ব্রে চলে এসেছিল বন্ধুর খোঁজে। পৃপাও আসতে চেয়েছিল। কিন্তু বেশ কয়েকজন ঝিনুক আর শামুক আহত অবস্থায় থাকায় এবং বিশেষত মহামান্য সুমোর জ্ঞান না ফেরায় ওদের সাথে থাকতেই বাধ্য হয়েছিল। ব্রে এখন জাফিকে ধরে হাঙরের

জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

Image
"দু হাত-পা লাগিয়ে, বুক ঠেকিয়ে তার ঠেলে ঠেলে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে জাফি। একটু উঠছে ওপরে, আবার পরক্ষণেই পিছলে যাচ্ছে। পানিতে থেকে থেকে তারটাও অনেকটা পিচ্ছিল হয়ে গেছে। পানি থেকে এবার বেশ খানিকটা ওপরে উঠে গেছে জাফি। বাতাস বইছে। রাতের অন্ধকার আছে, তবে আকাশে মৃত চাঁদ থাকার জন্য যথেষ্ট আলোও রয়েছে। তাতে আশপাশের কিছুদূর মোটামুটি স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। বড়ো করে দম নেয় জাফি। নৌকার গলুই দেখতে পাচ্ছে সে। আর কিছুটা উঠলে বুঝতে পারবে এটাই কাঙ্ক্ষিত নৌকা কিনা । তবে হাত টনটন করছে তার। মাংসপেশী কাঁপছে। যে কোনো মুহূর্তে তার থেকে হাত পিছলে যেতে পারে। ফলে এখন তাকে অনেকখানি ভরসা করতে হচ্ছে পায়ের ওপর। পা দিয়েই সবচেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করছে সে। ওপরের দিকে নিজের পুরো শরীরটা ঠেলে দিচ্ছে। তারপর শরীরটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুবই শ্লথ গতিতে ওপরের দিকে শক্তি দিয়ে যাচ্ছে। শরীর ঘোরাতে গিয়ে কয়েকবার খোলসের সাথে তারের সংঘর্ষও হয়েছে। প্রতিবার পিঠ বেদনায় ভরে উঠছে। মাছের লোভে সমুদ্রে ঘুরতে থাকা একটা মাছরাঙা দূর থেকে দেখতে পেল জাফিকে। একটা ঝিনুক ধীরে ধীরে ওপরে উঠছে, এ দৃশ্যটা ঠিক হজম হলো না তার। দূর থেকে তারটা সে

জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

Image
"জাফি ছুটছে। সমুদ্রের একবারে তলদেশে দিয়ে ছুটছে। যত শক্তি তার আছে তার সবটাই ব্যবহার করছে ছোটায়। তবু মনে হচ্ছে যতটুকু একবারে অতিক্রম করতে চায় তা করতে পারছে না। একবার ভাবল এখন যদি একটা বাইমমাছ পাওয়া যেত তবে তার পিঠে চেপে যাওয়া যেত দ্রুত। বাইমের গতি তো তার চেয়ে বেশি। পরক্ষণেরই জাফি ভাবল, এই ছোটা তার একান্ত নিজের ছোটা। এখন তাকে একা ছুটতে হবে, একাই ছুটতে হবে। এটাই সত্যিকারের জীবন, এবং এটাই বেঁচে থাকা। সমুদ্রের তলদেশের শৈবাল আজ তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারল না। পিঠে লাল ফুটকি দেওয়া একঝাঁক মাছ তার পাশ দিয়ে চলে গেল, অন্যসময় হলে তাদের পিছু নিত, তাদের সাথে কিছুক্ষণ খেলত, আজ তাদের দিকে ফিরেও তাকালো না জাফি। তার এখন একটাই লক্ষ্য— লাল পাথরের চাঁইয়ের কাছে যাওয়া। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে পৌঁছানো। সবাইকে সাবধান করে দেওয়া। সেখান থেকে সবাইকে সরিয়ে ফেলা। কিন্তু জাফি যখন প্রাণপণে ছুটছে ভয়ঙ্কর মানুষগুলো ততক্ষণে লাল পাথরের চাঁইয়ের কাছে আসলে পৌঁছে গেছে। মাঝারি এক নৌকায় তারা এসেছে। দুজন। পানির ওপর থেকেই উবু হয়ে তারা লাল পাথরের চাঁইটা দেখার চেষ্টা করছে। অতিকায় এক লগি দিয়ে হাতড়ে হাতড়ে পাথরটা

জাফির অ্যাডভেঞ্চার। আহমেদ খান হীরক।

Image
"..আর ঠিক এ রকম সময়ে, হঠাৎই প্রচণ্ড এক শব্দ হলো। মনে হলো যেন বাজ পড়েছে। দানু জাফির বাহুলগ্না হয়ে ঘুরতে ঘুরতে প্রায় নেতিয়ে পড়েছিল। শব্দে সম্বিৎ ফিরল তার। বলল, শালা হাঙর...! জাফি কিছুই বুঝল না। তবে সবাইকে তটস্থ মনে হলো খুব। যে যেভাবে পারছে জায়গাটা ছেড়ে পালাবার তাল করছে। ছুটছে ক্রমাগত। আবার শব্দ। এবার ধসে এলো একটা বড় পাথরের চাঁই। চাঁইটা গড়াতে গড়াতে এসে পড়ল বৃত্তের মাঝামাঝি জায়গাটিতে, একটু আগে যেখানে উদ্দাম নৃত্যরত ছিল দিলিয়া। এখন থাকলে পাথরচাপা পড়ে ঘিলু বেরিয়ে যেত নিশ্চিত। জাফি কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সে কখনো পড়েনি। আসলে পরিস্থিতিটা যে কী সেটাই সে বুঝে উঠতে পারছে না। পাশ দিয়ে ব্রেকে ছুটে যেতে দেখল। ঘাড়ে গোঁত্তা লাগিয়ে, পানি কেটে ব্রের কাছাকাছি গিয়ে বলল, কী হয়েছে? ব্রে তার ছোটার গতি বিন্দুমাত্র কমালো না। বলল, ভাগো..... "কিন্তু কেন?" “কেন? হাঙরদের হামলা! তুমি বুঝতে পারছ না... ব্যাটারা ক্ষেপে গেছে... গত বছরের দিকেও একবার এমনটা করেছিল... মাথানষ্ট হাঙর... সামনে যা পাবে গুঁড়িয়ে দেবে! ভাগো !'  পাথরের আরেকটা চাই গড়িয়ে এলো। ব্রে তার

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
আসছে দ্বিতীয় সংস্করণ .................................. "আমাদের শহরে তখন আইসক্রিমের অতি বাড়-বাড়ন্ত ছিল। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছিল বেশ কয়েকটা আইসক্রিম কল। সারা বছর কলগুলো মাছবাজারে ব্যবহারের বরফ বানাতো, আর গরম পড়লেই আইসক্রিম। তখন সবই ছিল কাঠি আইসক্রিম, কাপের বাবুয়ানা তখনও তেমন চালু হয়নি। একটা সাধারণ বরফ-আইসক্রিমের দাম ছিল পাঁচ পয়সা, দুধ বা সাদা ফুসফুসে আইসক্রিম দশ পয়সা, গাঢ় মেরুণ রঙের চকলেট আইসক্রিম পনেরো পয়সা, সুপার কোয়ালিটি চকলেট আইসক্রিম বিশ পয়সা। আমার জ্ঞান হওয়ার ঠিক আগেই নাকি বরফ আইসক্রিমের দাম ছিল দুই থেকে তিন পয়সা। আমার পরীদিদি বলত, খুব খারাপ সময়ে নাকি আমার জন্ম। যা হোক, আমরা সেই পাঁচ পয়সার বরফ আইসক্রিম খেতাম মাঝে মাঝে। কোথা থেকে যে পয়সা আসত, তা বলতে পারব না। চিনির জোগান চিন্তামণি জোগাতেন কিনা জানি না, কিন্তু ছুটির দিনে আইসক্রিমওয়ালার হাঁক কানে এলে এবং বাবা বাড়িতে না থাকলে দিদিদের বইয়ের ফাঁকফোকড় থেকে দু-চারটে পয়সা, দশ পয়সা, তিন কোণা তিন পয়সা, দু পয়সা, এক পয়সা বের হতো।-- সেই রেজগিগুলো গেঁথে গেঁথে আইসক্রিম কেনা হতো। এখানে আইসক্রিম খাওয়ার পশ্চাদপটটি বলে রাখা

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
"ট্রেনের দরজা এক ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক অষ্টাদশী তরুণী। প্ল্যাটফর্মে মুখোমুখি দাঁড়ানো তরুণটি সম্ভবত তার পাণিপ্রার্থী। দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে, ওদের মধ্যে 'অ্যাফেয়ার চলছে'। দু'জনে খুব নীচু স্বরে হেসে হেসে কথা বলছেন। তরুণীর নরম হাত পরম যত্নে তরুণের কাছে গচ্ছিত। ট্রেন ছেড়ে দেবে, এই আর মিনিটের তিন-চার বাকি। ওদের হয়ত এবার অনেকদিন পর দেখা হল, এরপরও অনেকদিন আর এত কাছাকাছি আসা হবে না। তখন আর মিনিট দুয়েক বাকি হঠাৎ দেখি তরুণ হাত ছেড়ে কোথায় ছুটে গেলেন। ওমা এত সুন্দর প্রেমের শেষটুকু দেখা হবে না! আফশোস হল। চালক হর্ণ বাজালেন। বেশ লম্বা হর্ণ। এবার ছাড়বে ট্রেন। এমন সময় দেখি সেই তরুণ কোত্থেকে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসছেন। হাতে থার্মোকলের বাটিতে সাদা ধোঁয়া ওঠা সফেদ মোমোর ওপর লাল-সবুজের নকশা -- লঙ্কা আর টমাটোর চাটনি। ট্রেন ছেড়ে দিল। ক্ল্যাইম্যাক্সে তরুণীর হাতে মোমো, দু'জনের দু'জোড়া চোখ শেষটুকু মুছে নিতে চেয়ে অপলক। ব্যাকগ্রাউন্ডে নীল-সাদা রেলিং, সিমেন্টের বেঞ্চ আর টকটকে কমলা সূর্য, মনে মনে গুনগুন "রুক যা না, তুমসে মিলনে কো দিল করতা হ্যায়..."। রেল স্টেশনের খাবারে যেন এক আলাদা স

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
"রাঙা পথের ধুলো ওড়ে। কালো পিচ রাস্তা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে কাঁকড় বিছানো রাঙাপথ। এগিয়ে চলেছি উদ্দেশ্যহীন। সঙ্গী সদ্য কলেজ-উত্তীর্ণ স্থানীয় দুই যুবক। ওরা এখন আমার বন্ধু। আমি তো ভিন জেলার মানুষ। এখানে এসে গেঁড়ে বসার চেষ্টা করছি। পরিত্যক্ত চিনির কারখানা সরকারি বদান্যতায় নতুন করে সেজেগুজে আবার চালু হয়েছে। বাবার দৌলতে ওখানেই ছোটো একটা কাজ পেয়েছি। একটা ইস্টিশান আছে এখানে— আহমদপুর। লোকের মুখে আমোদপুর। বীরভূমের অখ্যাত জায়গাটা চিনির কলের সৌজন্যে এখন বেশ নাম করেছে।  এই বীরভূমের রাঙা মাটিতেই তো নকশালবাড়ি আন্দোলনের বহু কাহিনি লেখা হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছে, সেইসব বিপ্লবের জায়গাগুলোকে ছুঁয়ে যাওয়া। তখনও বিপ্লবের গোপন আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে ইতিউতি। সময়টা তো সত্তরই। ক্ষমতায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সরকার। জরুরি অবস্থা ঘোষণা হয়েছে। মানুষের চোখে চোখে সন্দেহ। নতুন মানুষ দেখলেই প্রশ্ন, কোথাকার মানুষ বটে? আমার শহর কৃষ্ণনগর থেকে দেবগ্রাম হয়ে ঘাট পেরিয়ে কাটোয়া। ওখানে ন্যারোগেজ, চলতি কথায় ছোটো ট্রেন ধরার অপেক্ষায় বড্ড টান ধরছে পেটে। ইস্টিশানের পাশেই এক ঝুপড়িতে ঢুকেছি চা খাব বলে। পাশে বসে অন্য এক অভুক্ত

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
দুপুর রোদে ক্লাসরুমটা তেতে। সিলিং ফ্যানটা ঢিমে তালে ঘুরছে। সবাই মিলে ফুঁ দিলেও ওর চেয়ে জোরে ঘুরবে। উঁচু পাটাতনের উপর পাতা পাটাতনে বসে স্যার ক্লাস নিচ্ছেন। পড়াচ্ছেন বটে, কিন্তু তিনি হয়ত নিজেও জানেন এসময়ে ছেলেদের পড়ানো বৃথা। মাথায় কিছুই প্রায় ঢুকছে না। স্কুলের ঝিমিয়ে পড়া ফোর্থ পিরিয়ড। টিফিনের ঘন্টা পড়তে সামান্য কিছুক্ষণ বাকি। পিছনের বেঞ্চে একটা ছেলে এর মধ্যেই ঘুমিয়ে কাদা। ব্যাগের উপর মাথাটা এলানো। কেউ আবার কাটাকুটি খেলছে। একজন আবার খিকখিক করে হেসে আরেকজনের গায়ে গড়িয়ে পড়ছে। ঝড়ের পূর্বে যেমন মৃদু মৃদু ঠান্ডা হাওয়া দেয়, ছেলেদের মধ্যে থেকে থেকে কোলাহল উঠছে। একটা হুল্লোড় বার বার বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে। স্যার, কোর্টের জজ সাহেবের মতো স্কেলখানি টেবিলের উপর কয়েকবার আছড়ে ছেলেদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। ছেলেরা স্কেল ঠোকার তালে তালে মাথা নাড়তে থাকে। কয়েক মুহূর্তের জন্য গুঞ্জন মিলিয়ে যায়। আবার শুরু হয়। অবশেষে আসে মাহেন্দ্রক্ষণ। ঢং ঢং ঢং ঢং ধাতব শব্দ। পরমুহূর্তেই স্কুল বাড়ির উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে যায়। দুদ্দাড় করে ছেলেদের দল ধুলো উড়িয়ে পিলপিল করে বেরোতে থাকে দরজা দিয়ে। কেউ বা আনন্দে বেঞ্চ পিটাচ্ছে

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
'চুনু হজমিওয়ালা তার কাঠের ডালাটা নিয়ে চলে আসতো ঠিক বিকেল চারটে নাগাদ। রাসবাড়ির বড়ো গেটটার পাশে তার ডালা সাজিয়ে বসতো। সাজানোর তেমন কিছু ছিল না যদিও। বড়ো বড়ো কাচের কয়েকটা বোয়াম, বিট নুনের কৌটো। আলুকাবলি মাখার একটা ছোটোখাটো এনামেলের গামলা। এইসব ছোটোখাটো টুকিটাকি আর কী। যেসব বাচ্চারা ঘড়ির ছোটো কাঁটাটা চারের ঘরে আর বড়ো কাঁটাটা বারোর ঘরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করত, তারাই ছিল চুনু হজমিওয়ালার ফার্স্ট কাস্টমার। গ্রীষ্মের সেই বিকেলে খালি পায়ে হাঁটলে পিচের রাস্তা বুঝিয়ে দিত ছ্যাঁকা কাকে বলে। তবুও বিকেলে মাঠে যাওয়ার তাড়া ছিল সবার। একটু আগে গেলে খেলার সময়টা অনেক বেশি পাওয়া যায়। দল বাড়ানো যায়। লুকোচুরি খেলায় চোর হলে তাড়াতাড়ি ধরা হয়ে যায় সবাইকে। ধাপ্পা খাওয়ার তেমন আর ভয় থাকে না। তাছাড়া আরও একটা সুবিধে হয়, রাধারমণের 'বৈকালিক' পাওয়া যায়। এই সময় বিকেলে শিব মন্দিরে আলাদা করে পুজো হয়। আর কয়েক দিনের মধ্যে শিব বিয়ে করতে যাবেন বলে কথা! তোয়াজ করতে হবে না! ওদিকে প্রধান পুরোহিত বৃদ্ধ মোহিনীমোহনবাবু রাধারমণকে দুপুরের ঘুম থেকে তুলে ভালো-মন্দ খেতে দিচ্ছেন। বৈকালিকের খ

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া। সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
পা ফেললেই পাড়া। পাড়া পেরিয়ে পথ এসে একটু থামে ইস্কুলে, টিফিনের ঘন্টা বাজে যে! পথের চলন এবার দ্রুত এবং আঁকাবাঁকা। ট্রেন ছোটে হুইসল্ বাজিয়ে, সে-ও তো এক পথ। পথ কখনও ঘাটে মেশে, জলপথের শুরু। পথ চলে পশ্চিম থেকে পুবে, দক্ষিণ থেকে উত্তরে। পাহাড় চড়ে পথ।  চঞ্চলপদ বাঙালি পথে নামতে ভালোবাসে। পথ চলতে চলতে খোঁজ চলে প্রিয় খাবারের। অঞ্চল থেকে অঞ্চলে বদলে যায় তার রূপ। এই বইয়ে ছত্রিশটি স্মৃতিকথা ও নিবন্ধে উঠে এসেছে বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়ার বিচিত্র আখ্যান।  বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া সম্পাদনাঃ অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৮০ টাকা #সুপ্রকাশ

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া দাওয়া। সম্পাদনা : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
গঙ্গা নদীর পাড় ঘেষে আমাদের পাড়া। রিফিউজি কলোনিপাড়া। পাশাপাশি দুটি কলোনি তাদের ফেলে আসা দেশ ও ফেলে আসা সংস্কৃতি নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ আমার শৈশবে দেখা। স্বপনকাকার মা ঠাকুমা; যখনই বের হতেন, কোঁচড়ে করে অন্তত খানপাঁচেক পান নিয়ে বের হতেন। বেশ খানিকটা চুন সুপারির সঙ্গে গোপাল জর্দা। দুপুরে খাওয়ার পর একটু পাড়া বেড়ানো ছিল তাঁর অভ্যাস । দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যেত। রায় ঠাকুমার বাড়ি, বণিক বাড়ি, এমনি আরও চার-পাঁচ বাড়ি সেরে আমাদের উঠোনে এসে বসতেন। তারপর কোঁচড় খুলে পান মুখে দিয়ে লাল টুকটুকে রসালো ঠোঁট চেটে বলতেন— 'যাই কও ব্যালার মা দিদি, পথে ঘাটে কে বিনা পয়সায় আমার লাইগ্যা পান সাজাইয়া বইয়া থাকব! আমি তাই আমার পথের খোরাক হগল সময় সঙ্গে লইয়াই চলি।’ সাজানো পানই আমার দেখা বাঙালি বা বলা যায় এক হদ্দ বাঙালের পথেঘাটের প্রথম খাওয়া। যদিও এতে পেট ভরে না। সেই অর্থে আহার নয়। কিন্তু মন তো ভরে! খাওয়ার সঙ্গে যে ঋতুর সম্পর্ক গভীর, আধুনিক বাঙালি সেটা নাও মানতে পারেন। তার ওপর আমাদের জীবন ও জীবিকায় বাংলা মাসের গুরুত্বও ততটা নেই। কিন্তু গরমকালে মানে বৈশাখে যে একটু ঠান্ডা খাবার খেতে হয় তা সবাই জানে। এই সম