নদীয়া জেলার নাট্যচর্চা। শতঞ্জীব রাহা

“নদীয়া জেলার গণনাট্য আন্দোলন দেখা দেয় মোটামুটিভাবে পঞ্চাশের দশকে। ষাটের দশকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় দেড় দশক ধরে গণনাট্য আন্দোলন এই জেলায় তার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৫২ সাল নাগাদ নদীয়ায় গণনাট্যের শাখাগুলি বাস্তবত দেখা দিলেও তারও কয়েক বছর আগে থেকেই নদীয়ার কিছু নাট্যকর্মী গণনাট্যের মূল ধারাটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছিলেন। প্রাথমিকভাবে যোগাযোগের মুখ্য ছিলেন প্রখ্যাত মার্কসবাদী তাত্ত্বিক প্রমোদরঞ্জন সেনগুপ্ত। এছাড়া যতদূর জানা যায় তৎকালে স্বনামধন্য সুধী প্রধান কলকাতার বেগবান ধারাটির সঙ্গে নদীয়ার প্রগতিপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মীদের যোগাযোগে সহায়তা করতেন।
এই সময়কালে উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ কলকাতা থেকে কৃষণনগরে গণনাট্যের আগমন ও বিসর্জন নাটকের অভিনয়। দেবনাথ হাইস্কুল প্রাঙ্গণে নাটকটি অভিনীত হয়। পরিচালনা করেছিলেন ঋত্বিক ঘটক। অভিনয় করতে এসেছিলেন উৎপল দত্ত, শোভা সেন, কালী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। লোকারণ্যময় সেই নাট্যাভিনয় কৃষ্ণনগরের তরুণ সংস্কৃতিকর্মীদের আলোড়িত করেছিল।

নদীয়া জেলার গণনাট্য আন্দোলনের ধারা ও প্রকৃতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই জেলায় গণনাট্য আন্দোলনের শুরু স্বাধীনতা সম্পর্কে মোহভঙ্গের প্রক্ষাভূমিতে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত জনপ্রিয় দাবিদাওয়া আন্দোলনের উদ্দীপনা থেকে গণনাট্য প্রাণরস সংগ্রহ করে। স্বাধীন দেশের সরকারের বামপন্থার ওপর কায়িক আক্রমণও কমিউনিস্ট পার্টির তরুণদের আকর্ষণ করে গণনাট্যের দিকে। আবার অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির আমলের বেগবান ধারাটি স্তিমিত হতে থাকে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের সময়। এক ধরনের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দেখা দেয় গণনাট্যকর্মীদের মনে। কারও কারও ক্ষেত্রে তা সংশয় ও বিশ্বাসের সংকটে পরিণত হয়। এই স্তিমিত ধারা নদীয়া জেলায় আবার কিঞ্চিৎ বেগপ্রাপ্ত হয় মতাদর্শের সংকট কিছুটা কেটে যাবার পর—কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনে। ১৯৬৭-৬৮ সাল পর্যন্ত নদীয়ার নতুন প্রজন্মের নাট্যকর্মীদের সক্রিয় দেখা যায়। এর পর নকশালবাড়ি আন্দোলনের পটভূমি প্রস্তুতের কালে নতুন করে আসে ভাটার টান। নকশালবাড়ি আন্দোলন নদীয়া জেলায় বেশ ধাক্কা দেয়, ফলে গণনাট্যের স্থিতাবস্থা বজায় থাকে না।”

‘নদীয়া জেলার নাট্যচর্চা’ থেকে।

নদীয়া জেলার নাট্যচর্চা
শতঞ্জীব রাহা

প্রচ্ছদ: তিস্তান
মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা

#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।