Posts

Showing posts from September, 2022

দুর্লভ খুদকুড়ো ৫। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’র ধারাবাহিক পাঠ-আলোচনা লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। আজ পঞ্চম পর্ব। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। এমন পাঠ-আলোচনাও দুর্লভ।  .................................................... একটি ধারাবাহিক পাঠালোচনা                                 ৫ দাসদের মজারু তত্ত্ব এবং অনাদরের স্বাধীনতা  রিপাবলিকের দাসদের যোগ্য প্রতিনিধি শিবহরি। কেননা দাস দশা থেকে কোনোদিন উত্তরণ ঘটেনি তার। তা সত্ত্বেও সে কিন্তু নিজের জন্য একটি সচ্ছল ও আনন্দময় জীবন নিজের যোগ্যতায় তৈরি করে নিয়েছিল।   তার আগে জানানো দরকার, কারা রিপাবলিকের দাস। পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির অগণন ছাত্র যারা রিপাবলিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ তারাই রিপাবলিকের নীতি অনুসারে দাস শ্রেণিভুক্ত। সপ্তম শ্রেণিতেই ঝরে যাওয়া শিবহরির শিক্ষার ভারা যে অপূর্ণ থাকেনি তার মূলে ‘অনাদরের স্বাধীনতা’। সেই গল্প পাঠক বইটি খুলে পড়ে নেবেন, আমি শুধু এটাই জানিয়ে রাখি যে এই শিবহরিই উপযুক্ত সংজ্ঞা সহযোগে আহাম্মকের চরিত্র তারই সামনে উদঘাটন করতে পেরেছিল।  রিপাবলিকের ‘আর্কন’-রা যদিও অভিজাত শ্রেণি হিসাবেই গণ্য

দুর্লভ খুদকুড়ো ৪। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’র ধারাবাহিক পাঠ-আলোচনা লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। আজ চতুর্থ পর্ব। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। এমন পাঠ-আলোচনাও দুর্লভ।  .................................................... একটি ধারাবাহিক পাঠালোচনা     ৪ সপ্তকাণ্ড রিপাবলিক  রিপাবলিকের উপাখ্যান – হ্যাঁ, সাত পর্ব যুক্ত এই গ্রন্থের দীর্ঘতম এবং আশ্চর্যতম এই অধ্যায়টিকে উপাখ্যান ছাড়া অন্য কিছু আখ্যা দেওয়া অসম্ভব। আগাগোড়া স্নিগ্ধ কৌতুকে মোড়ানো বর্ণাঢ্য সব চরিত্র নিয়ে তৈরি হয়েছে এই উপাখ্যান।  একটি ইস্কুলকে সমর-শৃঙ্খলায় আবদ্ধ স্পার্টান রাষ্ট্রের বিপ্রতীপে ঢিলেঢালা জনতান্ত্রিক এথেনিয়ান নগররাষ্ট্রের মহিমান্বিত রূপে দেখতে গেলে কল্পনার যে স্ফুরণ দরকার হয়, বুঝতে অসুবিধে নেই, দুর্লভ সূত্রধরের মধ্যে তা রীতিমতো বিদ্যমান।  ঠিক কীরকম এই ইস্কুলটি? ‘পুরনো ঘর, আদ্যিকালের মতো গড়ন, ভাঙা ভাঙা দরজা, সংকীর্ণ অফিসঘর, …প্রায় ঘাসহীন অতীব ছোটো অঙ্গন, দেওয়ালে দেওয়ালে পরীক্ষায় টুকনক্রিয়ার কালিমা…’  সে এমনই এক ইস্কুল, যার ‘মান নিয়ে শহরজোড়া বাঁকা হাসি’; যে ইস্কুলে শহরের প্রতিটি পাড়ার

' শেষ মৃত পাখি ' পড়ে লিখেছেন শুভঙ্কর দাস

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যর উপন্যাস ' শেষ মৃত পাখি ' পড়ে লিখেছেন শুভঙ্কর দাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................................... বই: শেষ মৃত পাখি লেখক: শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য প্রকাশনা: সুপ্রকাশ প্রকাশনা  মূল্য: ৫২০ টাকা গত দু'দিন ধরে যে বইটি আমাকে, আমার নিবিষ্ট অভিনিবেশকে সুতীব্র আকর্ষণে বেঁধে রেখে পাঠ করে নিতে বাধ্য করেছে, তা একটি মার্ডার-মিস্ট্রি থ্রিলার ৷ প্রতিটি সৎ-সাহিত্যের সেটাই অন্যতম প্রধান গুণ ৷ কিন্তু থ্রিলার শুনে অনেক বিদগ্ধ পাঠক-সমালোচক হয়তো ভুরু কোঁচকাবেন, নাঁক সামান্য বেঁকিয়ে বলবেন, ক্ষণিকের রোমাঞ্চ-উত্তেজনা নির্মাণে এবং মানুষের রহস্যপ্রিয় সত্তার সাময়িক তৃপ্তিবিধানে যে সাহিত্যের অভিপ্রায় নিঃশেষিত হয়ে যায়, তা আর কতখানি গভীর বীক্ষণের দাবি রাখতে পারে? বস্তুত এই প্রশ্নের ভেতরে প্রচ্ছন্ন তুচ্ছতার, ভাবনা-চিন্তার খোরাকহীনতার দৃষ্টিভঙ্গিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য তাঁর সদ্য-প্রকাশিত রহস্য-কাহিনি 'শেষ মৃত পাখি'-র মাধ্যমে ৷ কীভাবে সে-প্রসঙ্গে পরে আসছি ৷ প্রথমে মূল প্লটটুকু সংক্ষ

সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুপ্রিয় ঘোষ।

Image
সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুপ্রিয় ঘোষ। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................................ সমর ভট্টাচার্য  এক অনাস্বাদিত মোহ  সুপ্রিয় ঘোষ  বিহারের কোনো এক হরিজন বস্তি থেকে চুমকি আর বিরজু ঘর বাঁধতে চলে এসেছিলো নিম্নমধ্যবিত্ত গল্প কথকের মফস্বল শহরে। তারা দুজনেই ঝাড়ুদার।  বাড়ির সামনের রাস্তা ঝাঁট দিতে আসার সূত্রে কথকের সঙ্গে তাদের সখ্যতা।চুমকির অভিযোগ কথকের কাছে তার স্বামী বিরজুর বিরুদ্ধে। বিরজু অকারণে অনেক খরচ করে। সে যেন বিরজু কে নিষেধ করে। চুমকির সাফ যুক্তি - ' এখন যদি খরচা না কমাই তবে কমাইবে কবে? ঘরে যে নতুন আদমি আসছে তার জন্য ভাবতে হোবে না? ' অথচ গল্পের কথককেই স্ত্রীর ঠুনকো মান বাঁচাতে বেচে দিতে হয় পিতার শেষ স্মৃতি সোনার ঘড়িটা। একটা ঝাড়ুদার দম্পতির ভালোবাসার কাছে হেরে যান কথক যখন দেখেন বিরজু চুমকির মাতৃত্বকে অভিনন্দিত করেছে ডুরে শাড়ি কিনে দিয়ে। গল্পকার সমর ভট্টাচার্য তাঁর 'ক্যাকটাস ' গল্পে এইভাবেই তুলে ধরেছেন নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজের অসহায়তা ও ঠুনকো মানের জন্য হৃদয়হীনতাকে। ' আম

নির্মুখোশ শারদ ১৪২৯

Image
আঁতঘরার গঞ্জ-বাজারে মোট তিনজন ডাক্তারবাবু ছিলেন–বিপুল ডাক্তার, উপেন ডাক্তার, বিপিন ডাক্তার। তিন ডাক্তার তিন ধারার। বিপুল ডাক্তার ছিলেন সেকালের এল এম এফ পাশ, বিপিন ডাক্তার ছিলেন এল এম পি আর উপেন ডাক্তারের ঘরের বাইরে একটা কালো রঙের কাঠের টুকরোয় সাদা রঙ দিয়ে ঈষৎ আঁকাবাঁকা হরফে লেখা থাকত আর এম পি। এর কোনোটার মানেই ঐ জনপদের কেউ বুঝত বলে মনে হয় না। এসব বোঝা না বোঝায় কারোরই কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি ছিল না। আঁতঘরার মতো গ্রামীণ জনপদগুলিতে রোগ-রুগি-ডাক্তার–সকলেই দিব্যি সহাবস্থানে ছিল। আঁতঘরা গঞ্জ হলেও তার একপাশে হাতার মধ্যেই ছিল দু-দুটি রাজ্য সড়ক, আর এক পাশে কংসাবতী নদীর সবচেয়ে চওড়া খাত। কাছাকাছি দু-চারটি শহরের সড়কবাহিত ও নদীবাহিত সমস্ত মাল আঁতঘরার সড়কের মোড়ে বা নদীর ঘাটে খালাস করা হতো। মনুষ্যচালিত যানে চেপে সেগুলি যেত কাছাকাছি জনপদগুলিতে। নদীর ধারের জায়গাটার নামই ছিল গোলাবাজার। এখানে বড়ো বড়ো ব্যবসায়ীদের মালের গোলা বা গুদাম ছিল। ফলে আঁতঘরার গঞ্জবাজারে লোকের আনাগোনার অভাব ছিল না। সেই সঙ্গে দেশে তখনও অভাব ছিল না ঘরে ঘরে ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়া, পাঁচড়া, এলার্জি, হাঁপানি, চর্মরোগ বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো নানাবিধ জ

দীনেন্দ্রকুমার রায় লিখিত ‘সেকালের সমাজচিত্র’ (সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা) পড়ে লিখেছেন মানস শেঠ

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দীনেন্দ্রকুমার রায় লিখিত ‘সেকালের সমাজচিত্র’ (সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা) পড়ে লিখেছেন মানস শেঠ। ........................................................ গদ্য বোধহয় এমনটা হওয়া উচিত,যেটা ভারাক্রান্ত নিজে না হয়ে মনকে করে তুলবে ভারাক্রান্ত।চোখকে নিয়ে সে পাড়ি জমাবে সেই ফেলে আসা পথের রাঙা ধুলো মাখানো পথে।বেশ কিছুমাস আগে "সেকালের সমাজচিত্র"বইটি পড়লেও নিজের অনুভূতি আর ভাগ করে দেবার ও নেবার সুযোগ হয়নি।      দীনেন্দ্রকুমার রায় শুধু সাহিত্যিক এই বন্ধনীতে না রেখে,তাকে যদি কথাচিত্রকর বলি তাহলে বোধহয় যোগ্য মর্যাদা পাবে।সমাজচিত্র কথাটা যতখানি সহজ,ততখানি বোধহয় প্রবেশে সহজ নয়।যা দেখি,তাই কি লিখে দেওয়া যায়!না বোধহয়।সে যাই হোক,তর্কের কথা ছেড়ে যদি এই বইটির অধ্যায়ে চোখ রাখি তাহলে বেশ কিছু টুকরো টুকরো চিত্র ফ্রেমে বাঁধানো যাবে।    'প্রজাপতির নির্বন্ধ'তে হরিমোহন মজুমদারের হাস‍্যরস।'নব বৈশাখের একদিন'এ 'মেছুড়ে মাস্টার'এর কান্ডকারখানা বেশ মজার।বিভিন্ন শিরোনামগুলো বেশ মজার,'পল্লীগ্রামের রথতলায়','গ্রাম্যদলাদলি'তে প্রকাশ হয়ে যায় গ্রামের মানুষদের ভেতরে

দুর্লভ খুদকুড়ো ২। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’র ধারাবাহিক পাঠ-আলোচনা লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। আজ দ্বিতীয় পর্ব।  তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। এমন পাঠ-আলোচনাও দুর্লভ।  .................................................... একটি ধারাবাহিক পাঠালোচনা                                     ২  শিয়ালে খাওয়া কুলে পোকার সোনার নাগরা দর্শন  যাকে শিয়ালে খায় তার ‘কুলে পোকা’ হতে বাধ্য এবং সোনার নাগরা দর্শনও তার অবধারিত। এ-সবই আহাম্মকের সাধারণ লক্ষণ।  শিয়াল প্রসঙ্গে আমার ছোটবেলার কথা মনে এসে যায়। আমি একদা অজ গাঁয়ের এক হাঁ-করা বালক ছিলাম। এই হাঁ করে থাকা অতি সন্দেহজনক লক্ষণ এবং সর্বদা যার মুখ হাঁ হয়ে থাকে তাকেও যে আহাম্মক আখ্যা দেওয়া যায়, সেটা দুর্লভ সূত্রধর প্রকারান্তরে একটু পরেই বলে দেবেন।  তো আমাদের বাড়িতে হাঁস পোষার চল ছিল। গোয়ালের এক পাশে হাঁসের খোঁয়াড়। সেই খোঁয়াড়ে নদী-বাঁধের লকগেটের মতো কাঠের পাতলা তক্তার দরজা ছিল। উপরের দিকে আটকানো দুটি বাঁশের ফাঁক দিয়ে দরজাটিকে নামিয়ে দিলেই খোঁয়াড় বন্ধ। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই খোঁয়াড়ের ভেতরে প্রবল প্যাঁকপ্যাঁক। কেউ একজ

দুর্লভ খুদকুড়ো ৩। লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’র ধারাবাহিক পাঠ-আলোচনা লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। আজ তৃতীয় পর্ব। ...................................... একটি ধারাবাহিক পাঠালোচনা           ৩ অন্নপূর্ণা মা ও দয়াবতী দিদিরা  এই গ্রন্থের উৎসর্গপত্র ছাড়াও দু-দুটি অধ্যায় আলোকিত করে বিরাজ করছেন অন্নপূর্ণা মা এবং দয়াবতী দিদিরা।  ক্ষুধার সংসারে “জীবনের সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হলো দু-বেলা দু-থালা ভাতের গল্প –”, “শুধু মা বোঝেন সন্তানের খিদের দামামা – সন্তানও বোঝে ‘মা’ নামের মহিমা”। এই ভাতের গল্পটাকে মন্ত্রবলে যিনি জীবন্ত রাখেন, ‘বুদ্ধি, শ্রম আর কল্পনাশক্তির অসামান্য মিশ্রণ’ দিয়ে যিনি অখাদ্যকে সুখাদ্যে পরিণত করতে পারেন তিনিই হলেন মা অন্নপূর্ণা। কেবল স্বামী সন্তান নয়, অতিথি অভ্যাগতদের জন্যও তার ভাঁড়ার অফুরন্ত থাকে। এই অতিথি-অভ্যাগতদের মধ্যে যেমন মান্যগণ্য বিশিষ্ট মানুষজন থাকেন, তেমনিই থাকেন কাসুন্দ-বিক্রেতা এবং শাকওলি মাসিরাও। অন্নপূর্ণা মায়ের সংসারে ফেলনা এবং খুদকুড়ো সহযোগে জলখাবারের এমনই সমারোহ যে পুরো একটি উপাদেয় অধ্যায় লেখক রেখে দিয়েছেন পাঠকদের পাতে সেগুলি পরিবেশন করার জন্য।  আগ্রাসী দারিদ

নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি। কল্লোল লাহিড়ী। পাঠ প্রতিক্রিয়া : আদিত্য ঢালী

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস ' নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি ' পড়ে লিখেছেন আদিত্য ঢালী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ..................... নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরিঃ ফেলে আসা সময়ের এক অরাজনৈতিক পাঠ মফস্বলের নস্টালজিয়ায় মুহূর্তেরা লোডশেডিং-এ জড়ো হয়। সেই লোডশেডিং এখন শহর এবং শহরতলী থেকে লুপ্ত। আসলে যা কিছু লুপ্ত তাইই হারিয়ে যাওয়ার সমান। তাই প্রথম প্রেম যখন শিয়রে চুম্বন করে জানিয়ে দেয় এই চুম্বনই শেষ চুম্বন, ভালোবাসার ভাড়ার শূন্য, তখন কালপুরুষ দেখার কথা মনে পড়ে। কারণ যারা কালপুরুষ দেখে তারা সর্বদা হারিয়ে যাবেই। এটাই নিয়তি। সে যৌবনে হোক কিংবা বয়সকালে। হারিয়ে যাওয়া তার কপালে লেখা আছে। হারিয়ে যাবে বলেই একটা গোটা দশক জোড়া নস্টালজিয়ায় ভোগে সে। কারণ মিলেনিয়াল আকাঙখায় নস্টালজিয়া নেই। মিলেনিয়াল আকাঙখায় স্মৃতি আঁকরে বেঁচে থাকার চাহিদা নেই। দ্রুত গতিবেগে শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সেই দিকে যার কোনো দিকনির্দেশ নেই, আছে শুধু বাহ্যিক কর্পোরেট চাকচিক্য। তাই আমাদের কাছে ফেলে আসা দিনগুলো বরাবরই সোনালী আর নস্টালজিয়া মানেই নব্বই। আর এই প্রেক্ষ

মেস-হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন। সম্পাদনাঃ সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
হোস্টেল। মেস। বোর্ডিং। তার বৈচিত্র্য সমাজ-পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী। প্রত্যেকটি মেস-হোস্টেলের নিজের নিজের গল্প আছে। একটি চিরন্তন গল্প বোধহয় এই—বাড়ি থেকে প্রথম প্রথম হোস্টেলে বা মেসে এসে বাড়ির জন্য মন খারাপ আর সারা জীবন সেই হোস্টেল বা মেসের জন্য মনখারাপ। মেস বা হোস্টেল তো এক রকমের নয়—তার মধ্যে অস্তিত্বের কত ধরনের যে কারুকাজ, স্বার্থ ও পরার্থের কত বোঝাপড়া, জীবন ও জৈবিকতার কত যে বিভিন্নতা এবং সমবায়িক বি-সৌসাদৃশ্য থাকে—তাকে এককথায় অন্তহীন বলা যায়। শিবনাথ শাস্ত্রী থেকে বিপিনচন্দ্র পালের মেসবাড়ি বৃত্তান্ত, সেকাল একালের শান্তিনিকেতনের ছাত্রাবাস, অগ্নিগর্ভ সময়ে ঢাকার মেয়েদের হোস্টেল, কিংবা কলকাতার হ্যারিসন রোড থেকে গড়বেতায় গৌর উকিলের মেস। স্মৃতিকথায় এ বই ছুঁয়েছে উনিশ শতক থেকে একবিংশ শতক পর্যন্ত ভৌগোলিক ভাবে সমগ্র বাংলাকেই। মেস-হোস্টেলের বিশ্বস্ত দলিল নির্মাণ করতে গিয়ে এসেছে সেকালের কলকাতার মেস, ঢাকার মেস-হোস্টেল ছুঁয়ে বহরমপুর শহরের মেস-হোস্টেল-বোর্ডিং। আলোচিত হয়েছে সাহিত্যে মেস, সাহিত্যিকদের মেস। সেখানে শিবরাম, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, তারাশঙ্কর থেকে ব্যোমকেশ-শরদিন্দু হয়ে ঘনাদা।

শরৎ স্মৃতি পুরস্কার পেলেন কথাসাহিত্যিক অভিজিৎ সেন।

Image
শরৎ স্মৃতি পুরস্কার পেলেন আমাদের আপনার জন, কথাসাহিত্যিক অভিজিৎ সেন।  বাংলা ভাষার গরিষ্ঠ সংখ্যক পাঠকের কাছে যত পৌঁছাবে অভিজিৎ সেনের লেখা, তত সুপ্রকাশ তার লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছবে। শুভেচ্ছা অভিজিৎদা।  ছবি : দেবাঞ্জন বাগচী

সুপ্রকাশ আয়োজিত বই-প্রকাশ অনুষ্ঠান ও আলোচনা

Image
সুপ্রকাশ আয়োজিত বই-প্রকাশ অনুষ্ঠান ও আলোচনা আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ (বৃহস্পতিবার) কলেজস্ট্রীট কফিহাউসের দোতলায় বইচিত্র সভাঘরে বিকেল সাড়ে চারটে থেকে। আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হবে সুপ্রকাশের তিনটি বই — ১. অনন্যবর্তী। দুর্লভ সূত্রধর ২. শেষ মৃত পাখি। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য ৩. রাস্তার শুরু। জয়া মিত্র প্রকাশ করবেন— অভিজিৎ সেন, জয়া মিত্র, অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী, কল্লোল লাহিড়ী, শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য, সৌজন্য চক্রবর্তী, মেখলা ভট্টাচার্য।  📙আলোচনা📙 ​📖​'সাহিত্য : লেখক-পাঠক-প্রকাশক'📖​  লেখক কী লিখছেন, কেন লিখছেন? প্রকাশক কী প্রকাশ করছেন, কেন প্রকাশ করছেন, কার লেখা প্রকাশ করছেন? পাঠকই বা  কীভাবে দেখছেন লেখা এবং প্রকাশককে? এই তিন পক্ষের পরস্পরের কাছে প্রত্যাশাই বা কী? এসব অমীমাংসিত প্রশ্ন-উত্তর, যুক্তি-তর্ক-আবেগ— সব কিছু সঙ্গে নিয়েই উপস্থাপক এবং শ্রোতাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় থাকবেনঃ অভিজিৎ সেন, জয়া মিত্র, অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী, কল্লোল লাহিড়ী এবং শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।  সবাইকে সাদর আমন্ত্রণ। #সুপ্রকাশ

দুর্লভ খুদকুড়ো ১। লিখছেন : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের ‘আহাম্মকের খুদকুড়ো’র ধারাবাহিক পাঠ-আলোচনা লিখছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। এমন পাঠ-আলোচনাও দুর্লভ।  .................................................... একটি ধারাবাহিক পাঠালোচনা   ১  দুর্লভ খুদকুড়ো মিহির সেনগুপ্তের সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম যখন সুপ্রকাশ থেকে নবরূপে প্রকাশিত হল, তখন আমি ‘পরবাস’ ওয়েবজিনে বইটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। মিহিরের স্মৃতিগদ্যের স্বরূপ নির্ধারণ করতে গিয়ে সেখানে বলেছিলাম যে বাংলাসাহিত্যের স্মৃতিগদ্যের নবকিশোরীর মতো সলজ্জ মেদুর চলনরেখায় মিহিরের গদ্য বাঁধভাঙ্গা জলের মতো তৎসম-চান্দ্রদ্বীপি বাকবন্ধের ঢেউ তুলে এক পৌরুষ গতির সঞ্চার করেছে।আজ দুর্লভ সূত্রধরের আহাম্মকের খুদকুড়ো পড়া শেষ করার পর প্রথম যে কথাটা মাথায় আসছে, সেটা হল, স্মৃতিগদ্যের আরও একটি স্বতন্ত্র এবং বিশিষ্ট চলন যুক্ত হল বাংলাসাহিত্যে।  মিহিরের গদ্যের সঙ্গে দুর্লভ সূত্রধরের গদ্যের মিল যৎসামান্য। যেটুকু আছে সেটা কৌতুকপ্রবণতায়। কিন্তু প্রথম জনের উচ্চকিত পরিহাস যেখানে রক্ষণশীলতার বেড়া ভেঙ্গে আলি সাহেবের রঙ্গরসিকতাকে মনে করিয়ে দেয়,

রাস্তার শুরু। জয়া মিত্র

Image
বহমান বাক্যধারা যেন রেখার আঁচড়ে পুরোনো দিনের কার্শিয়াঙের ছবি এঁকে চলেছে এই আখ্যানে। ছবির কেন্দ্রে মা, তাঁর তিন সন্তান— তিতির, তিন্নি, বুলবুল এবং 'বন্দী রাজকন্যা' যশোদাদিদি, যে পালিয়ে এসেছে দুষ্টু রাজার কাছ থেকে। এ আখ্যান ঘিরে থাকে কার্শিয়াঙের পাহাড়-প্রকৃতি, তিন্নির ‘পাউডার ফুল’, পাকদণ্ডী পথ, ঝরণা। মানুষও যে কত রকম— ‘উপরের ঠাকুমা', তিতির-তিন্নি-বুবুলের বাবা, চিরকাকা, সন্ধ্যাদি, জনাদা, দিলীপদা, পুলুদি, আম্মা, মুকুপিসি, মীনাদি, ঢকনি দাজ্যু— আরও অনেকে। চলে যাওয়ার শুরু দিয়েই শেষ হয় গীতিকবিতার মতো এই আখ্যান ৷ একেক জনের এক এক রকম চলে যাওয়া। পড়ে থাকে দূরবীন দারা, তিনধারিয়া, পাগলাঝোরা।  রাস্তার শুরু জয়া মিত্র প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য দাম : ১৮০ টাকা #সুপ্রকাশ

নির্মুখোশ শারদ ১৪২৯

Image
জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের একটি রাত্রিবেলা আমাদের টাউনের গা ঘেঁষা কান্ট্রি রোডস অ্যাসাইলামে আগুন লেগে হাসপাতাল, ডাক্তারখানা ও রোগীদের বাসগৃহ ভস্মীভূত হয়ে গেল। চার মৃতদের মধ্যে দুজন ছিল হাসপাতালের স্টাফ, একজন বুড়ো রোগী ছিল। চতুর্থজন পুবের পাহাড়ের প্রান্তবর্তী রেজারেকশন ভিলা নামক হোমস্টের কর্ত্রী ধৃতি সান্যাল, তাকে সবাই নিনি বলে চিনত। এছাড়া কয়েকজন খাতায় কলমে নিখোঁজের তালিকায়, যাদের মধ্যে ছিল চোদ্দ বছর বয়েসের কিশোর রোগী সায়ম অগাস্টিন গোমস।  আমাদের টাউন পাহাড় ও জঙ্গলের কোল ঘেঁষে, যার হলুদ মাঠ ও মহুয়ার বন নীল আকাশ কাঁধে হাহা অন্তরঙ্গে ছুটে আসে, বুকের ঠিক মাঝখানে প্রকাণ্ড রক্তক্ষতের মত সূর্য, সূর্য ঝরে যায়। দীর্ঘ গোলাপের অবসানের মতো সে পেছনে চলে গেলে শালমহুয়ার জঙ্গল, শুকনো নালা, জমজমে মাঠে আগুন জ্বলে ওঠে। আলু ক্ষেতে সন্ধ্যা ঘুলিয়ে উঠলে ধোঁয়ার পরত আচ্ছন্ন রাখে টাউনকে, জমাট অন্ধকারে আমাদের শ্বাস ঘন হয়ে আসে। তখন দেহাতীপাড়ার ছোট্ট খোকা জন্মের সাতদিনের মাথায় শ্বাস টানতে টানতে নীল হয়ে মরে গেলে তাকে ক্যাথাকানি শুদ্ধ গোর দেওয়া হয় শিশুদের কবরখানায়। ঝুরঝুরে কালো মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় হলুদ সব। অনেকদিন প

শারদ নির্মুখোশ ১৪২৯

Image
শারদ নির্মুখোশ ১৪২৯ #সুপ্রকাশ

শেষ মৃত পাখি। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য

Image
'মদনমোহন ধিংড়া আমাকে বহাল করেছিলেন। দিল্লির বাসিন্দা। সুপ্রিম কোর্টের উকিল ছিলেন। বাড়িটা  বানিয়েছিলেন ছুটিছাটায় আসবেন বলে। প্রতিদিন সকালবেলা ছটার মধ্যে চলে আসি। দশটার মধ্যে ফিরে যাই। যখন সাহেবরা থাকতেন, তখন সারাদিন। না থাকলে, ওই তিন-চার ঘণ্টার জন্য। তবে আজকাল তো কাজ থাকেও না তেমন। ধিংড়া সাহেব চোখ বোজার আগেই একটা ট্রাস্ট বানিয়ে গিয়েছিলেন, যার থেকে বিভিন্ন এনজিও, সমাজসেবামূলক প্রকল্প ইত্যাদিতে অনুদান দেওয়া হতো। আমার মাইনেও আসত সেই ট্রাস্ট থেকেই।  দিব্যি চলছিল। কিন্তু সাহেব চোখ বুজবার পর কিছুদিন যেতে না যেতেই সম্পত্তির দখল নিয়ে ধিংড়ার তিন ছেলের মধ্যে লাগল লাঠালাঠি। সাহেব যেহেতু উইলে এই বাড়ি কোন ছেলের ভাগে পড়বে লিখে যাননি, তিনজনেই বলে এই বাড়ি তার। মাঝখান থেকে হলো কী, বাড়ি ডিসপুটেড হয়ে গেল। কেউ তার রক্ষণাবেক্ষণ করে না। মেরামতির টাকা দেয় না। ইলেক্ট্রিকের লাইন কেটে দিল। জল বন্ধ করে দিল। কিন্তু আইনের কী একটা মারপ্যাঁচে ট্রাস্টের টাকা আমার কাছে আসা আজও বন্ধ হয়নি। প্রতি মাসে নিয়ম করে ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়ে। ধিংড়া সাহেব ঝানু উকিল ছিলেন, এমন কলকবজা করে গিয়েছিলেন যে ডিসপুটেড ল্যান্ডের কেয়ারটেক

রাস্তার শুরু। জয়া মিত্র

Image
দুর্গাপুজোর একটু পরে, কালীপুজো হয়নি তখনও। শীত পড়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল সারাদিন, রাত্রিবেলাতেও। সে আর তিন্নি যে ঘরে ঘুমোয়, তার পায়ের দিকের দরজা খুললে রাত্রিবেলা কীরকম যে দেখাচ্ছিল! মাঝখানে সবকিছু আবছা, অন্ধকার আর দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা শাদামত...যেন জ্যোৎস্নাটাই জমে আছে। মা আর ওপরের টুকুপিসি মুকুপিসিরা সন্ধ্যেবেলা ওই দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দেখছিল। সে নিজে তো কোন কথাও বলে নি। তার কেমন একটা লাগছিল, যেন এটা তাদের রোজ দেখতে পাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘাই নয়। কিছু বলতে পারছিল না, খালি গলার কাছে কীরকম একটা ব্যথা করছিল। মায়ের শোবার ঘরের খাটে মা আর বুবুল ঘুমোয়। মা কোনদিন গায়ের কাছাকাছি তাদের নিয়ে ঘুমোয় না। তারা দুইবোন পাশের ছোটঘরের খাটে শোয়। বাবা এলে বাবা ওখানে শোন তখন কয়েকদিন আবার তারা ঘুমোয় বসার ঘরের ছোট চৌকিতে। তাদের ওই শোবার ঘরটার জানলাটা খুব বড় আর পুরোটা কাচ দেওয়া বলে তার ভারি ভালো লাগে। শীতে কিংবা বর্ষাকালে যখন বেশি বেরোন যায় না, তখন ওইখানে বসে বাইরেটা দেখা যায়। ওখানে একটা খুব ভারী গদিওয়ালা চেয়ার আছে, সেটার একটা মোটে মোটকামত পা, বসে চেয়ারটা  এদিকওদিক ঘোরানো যায়। সেটায় বসে বসেই

রাস্তার শুরু। জয়া মিত্র

Image
"তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই মাটির রাস্তাটার  ডানদিকের জমিটা একটু উঁচু, পাহাড়ে যেমন হয়, সব জায়গাই তো ঢালু, একদিকে উঁচু আরেকদিকটা নীচে চলে গিয়েছে। সেই উঁচুর ওপর ঘাসপালার মধ্যে আছে একটা বড়ো নাসপাতি গাছ। গরমকালে এক একদিন পাকা হলদেটে রঙের নাসপাতি পড়ে থাকে গাছতলায়। কুড়িয়ে নিয়ে না ধুয়েই কামড় লাগায় তারা, সে আর বোন। ধোবে আর কোথায়? খালি দেখে নেয় পোকায় কাটা আছে কিনা। কামড় দিলেই রসে মুখের ভেতরটা ভরে যায়। আরো কিছুটা এগোলে গাছপালা ঝোপঝাড়ের পেছনে একটু ওপরে দেখা যায় সেই বাড়ির পেছনের দেওয়ালটা যে বাড়ির মহিলাকে মা ‘আম্মি’ বলে। আর বাঁদিকে মানে যেদিকটা ঢালু হয়ে ইলি-দের বাড়ি, তার ওপরের ধাপে রাগী মেমদের বাড়ি- সেখানটা সারাবছর অমনিই থাকে। শুকনো ঘাসে ঢাকা মাটির দুটো ধাপ। কখনো সখনো তারা একটু নামে খেলা করার জন্য কিংবা শরতকালের সময় বুনোফুল তোলার জন্য। খুব ফুল হয় ওখানটাতে। এমনি সময়ে তারাফুল, কসমস, সেই যে খুব ছোট্ট পদ্মফুলের মত দেখতে গোলাপি ফুলগুলো, অনেক ফার্ন। শীতের শুরুতে গাঢ় বেগুনির মধ্যে একটু সাদা দাগ দেওয়া কার্পেট ফুল মাটিটা একেবারে ঢাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু শীত যখন খুব বেড়ে যায়, সকালে সামনে দূরের পাহাড়গুলোর ম

শারদ নির্মুখোশ ১৪২৯

Image
সমস্ত আঙিনায় নৈঃশব্দ নেমে এসেছে। হেমন্তের সন্ধ্যে। ধোঁয়া ধোঁয়া অন্ধকার। টালিখোলার দিক থেকে মাঝে মাঝে মাটি কাটা মেশিনের দূরশ্রুত ঘটাং ঘটাং। আঙিনার মানুষগুলোর শ্বাসও যেন শোনা যাচ্ছে। যেন দীর্ঘকাল অনাস্বাদিত প্রশান্তির খোঁজ পেয়েছে তারা। ফকির কথা থামালেন। বিষাণের বউ-মেয়ে মুড়ি-চা এনে দিল, আজ মুড়ির সঙ্গে লাল মুলোর কুচি। গৌর লক্ষ্য করলেন—আজও সুজি নামের ছেলেটি বসেনি, ঠিক বাড়ির আঙিনার ভেতরেও আসেনি। সেদিনের জায়গাটাতে সেদিনের ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা ভারি কাঁচুমাচু। তার চোখ টুনাকে ততদূর অনুসরণ করছে যতদূর দেখলে অন্যদের থেকে নিজের দৃষ্টি, নিজের লক্ষ্যের গতিপথকে আড়াল করা যায়। টুনা কিন্তু মোটেও তাকে দেখছে না। কিন্তু তার চোখ দুটো হাসছে যেন। গৌর সুনন্দর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। সুনন্দ হেসে বললেন—'দেখেছি, দেখেছি। বিয়ে-থা করা হয়ে ওঠেনি বলে ভেবো না একেবারে কাঠখোট্টা বনে গেছি। নতুন একটা গল্পের জন্ম হচ্ছে।' মুড়ি খেতে খেতে সকলেই পাশাপাশি মানুষটার সঙ্গে অনুচ্চ স্বরে কথা বলছে। আজ কয়েকজন মেয়ে-বউকেও দেখা যাচ্ছে। গৌর আর সুনন্দ এই সব কথা মধ্যে মানুষগুলোর সুখ-দুঃখের, দৈনন্দিনের খবর পেলেন। ক

শারদ নির্মুখোশ ১৪২৯

Image
আসছে শারদ নির্মুখোশ ১৪২৯ মহালয়ার একটু আগে। #সুপ্রকাশ

মেস-হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন। সম্পাদনাঃ সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
হোস্টেল। মেস। বোর্ডিং। তার বৈচিত্র্য সমাজ-পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী। প্রত্যেকটি মেস-হোস্টেলের নিজের নিজের গল্প আছে। একটি চিরন্তন গল্প বোধহয় এই—বাড়ি থেকে প্রথম প্রথম হোস্টেলে বা মেসে এসে বাড়ির জন্য মন খারাপ আর সারা জীবন সেই হোস্টেল বা মেসের জন্য মনখারাপ। মেস বা হোস্টেল তো এক রকমের নয়—তার মধ্যে অস্তিত্বের কত ধরনের যে কারুকাজ, স্বার্থ ও পরার্থের কত বোঝাপড়া, জীবন ও জৈবিকতার কত যে বিভিন্নতা এবং সমবায়িক বি-সৌসাদৃশ্য থাকে—তাকে এককথায় অন্তহীন বলা যায়। শিবনাথ শাস্ত্রী থেকে বিপিনচন্দ্র পালের মেসবাড়ি বৃত্তান্ত, সেকাল একালের শান্তিনিকেতনের ছাত্রাবাস, অগ্নিগর্ভ সময়ে ঢাকার মেয়েদের হোস্টেল, কিংবা কলকাতার হ্যারিসন রোড থেকে গড়বেতায় গৌর উকিলের মেস। স্মৃতিকথায় এ বই ছুঁয়েছে উনিশ শতক থেকে একবিংশ শতক পর্যন্ত ভৌগোলিক ভাবে সমগ্র বাংলাকেই। মেস-হোস্টেলের বিশ্বস্ত দলিল নির্মাণ করতে গিয়ে এসেছে সেকালের কলকাতার মেস, ঢাকার মেস-হোস্টেল ছুঁয়ে বহরমপুর শহরের মেস-হোস্টেল-বোর্ডিং। আলোচিত হয়েছে সাহিত্যে মেস, সাহিত্যিকদের মেস। সেখানে শিবরাম, শরৎচন্দ্র, জীবনানন্দ, তারাশঙ্কর থেকে ব্যোমকেশ-শরদিন্দু হয়ে ঘনাদা।

শারদ নির্মুখোশ ১৪২৯

Image
"প্রথমে দেখলেই মনে হবে জায়গাটা বুঝি 'ঠাকুমার ঝুলি'র দুয়োরানির নির্বাসনের ঘর। উনুনের ধোঁয়ায় কালশিটে পড়া দেওয়াল। ভিজে ঘরের স্যাঁতসেঁতে মেঝে। ওপরের কড়িকাঠ বরাবর চারিদিক থেকে নেমে আসা ঝুল। পায়ের কাছে হেঁটে বেড়ানো দু একটা আরশোলা। কুলুঙ্গির দিকে এগিয়ে যাওয়া একটা টিকটিকি। আর এইসবের সাথে ঘুলঘুলিতে বাস করা চড়ুইয়ের পরিবার। তাদের বাসা থেকে আলগোছে ঝুলতে থাকা কয়েকটা খড়ের সুতো। কিন্তু একটু দাঁড়ালে, ভালো করে দেখলে বুঝতে পারা যাবে আসলে এইঘরটা পরম মমতায় আর আদরে সাজানো কোনো এক নিম্নমধ্যবিত্ত বাড়ির রান্নাঘর। যে ঘরে ঢুকলেই পাওয়া যায় মন ভোলানো অথচ খুব সাধারণ মুখোরোচক প্রতিদিনের সব রান্নার সুবাস। যার দেওয়ালে সিমেন্টের একটা স্থায়ী পাল্লাবিহীন আলমারি। সেই আলমারির চারটে তাক। তাতে কত কী-ই না জিনিস সাজানো, জমা করা, এদিক ওদিক রাখা। একদম ওপরের তাকে যেখানে বাড়ির ছোটোদের হাত পৌঁছবে না সেখানে আছে নারকেলের কুরনি। বহুদিনের পুরোনো ঘিয়ের শিশি। তাতে জমানো সেই কবেকার পচে যাওয়া ঘি। খাওয়ার জন্য নয় বাড়ির কারো ফোড়া হলে তাতে লাগানোর জন্য।  শিল কী, তা নিশ্চই উইকিপিডিয়াতে এই মুহূর্তে আমরা খুঁজতে যাবো না। রান্নাঘরে রা

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

Image
১.  ২. ৩.  ৪.  সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম মিহির সেনগুপ্ত মুদ্রিত মূল্য: ৪৮০ টাকা প্রচ্ছদ : তিস্তান #সুপ্রকাশ 

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

Image
"বজরা বলে, ডডডড। প্রান্তিক বৃক্ষ আত্মজনেরা বলছেন-- রররর। বলছেন খাড়অ, দণ্ড দুই জিরাইয়া যা। নাও হান বানদ্ মোর শেহরে। যাবি যেন কই? বলি-- যাব সিদ্ধিগঞ্জের মোকামে। বৃক্ষ বলে-- ধীরে সুস্থে যা, দৌড়াইস না। বৃক্ষের কথা শুনে ট্রলার তার শেকড়ের কাছে নামিয়ে দেয়। বৃক্ষ পাতা খসিয়ে সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়, আর বলে, তোরা বেয়াকে সুখে থাক। বেয়াক মানুষ সুখী হউক। বেয়াকের ভালো হউক। বালামুসিবৎ দূর হউক। এখান থেকে ক্যারায়া অর্থাৎ ভাড়া করতে হবে একটি পছন্দমতো ডিঙ্গি। ছই-অলা। তারপর মাঝি জানতে চাইবে-- যাইবেন যেন কই? আমাকে তখন পথের নিশানা বলতে হবে-- গাবখানের খাল ডানহাতি রেখে, বাঁ হাতি কীর্তিপাশার খাল ধরে সোজা, বাঁ কিনারে গ্রাম পড়বে শশীদ অশ্বথ্থ কাঠি, বেউখির। ডান কিনারে সারেঙ্গল পাক মহর, গলুইয়াখোলা, রণমতি, বাউলকান্দা এবং আরও কতসব। সে-সব পেরিয়ে আমার শেষ ঘাট সিদ্ধিগঞ্জে পৌঁছোব।" সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম মিহির সেনগুপ্ত প্রচ্ছদ : তিস্তান সঙ্গে ছবি: পারভেজ সাজ্জাদ মন্ডল মুদ্রিত মূল্য: ৪৮০ টাকা #সুপ্রকাশ

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

Image
সবাই চলে যেতে কার্তিক আবার পূর্বভাবে ফিরে আসে। আবার সেই আগের প্রক্রিয়ায় গাঁজা সাজানো হয়। গল্প চলতে থাকে।  কার্তিক দেখছি খলিলের খুব গুণগ্রাহী। বলে, "এগুলোর মইদ্যে বোজজেন নি, খলিল ঠাহুর অইল এট্টা মাইনসের ল্যাহান মানুষ। বাহিগুলান বাহুত্রা।"  জিজ্ঞেস করি, "খলিল তো মুসলমান, ওকে সবাই ঠাকুর বলে কেন?" --ও হেয়া বুঝি জানেন না। হেয়া বড় রগড়ের কতা। --কীরকম, কীরকম? --তয় হোনেন, মা-য় (অর্থাৎ রায়গিন্নি) তো এহন বুড়া অইছে। য্যাদ্দিন হাতরথ আছেলে, তহন হেনায় দশহাতে ভগবতী। কোনো দিগে কোনো ডিরুডি দ্যাহে নাই কেউ। দুইশো আড়াইশো মাইনসের রান্ধন এক হাতে রান্ধইয়া খাওয়াইতেন। এহন কি হেয়া পারেন? এহন পোলার বউরা আইছে, হে তাে দ্যাহেন এহেক জোন পোকছাও। দশ নম্বরি ড্যাগ আহালের থিহা লামাইতে হ্যারেগো মাজা বেক্কুরা(বেঁকা)। এইসব দেইখ্যা পোলারা কইলে, অইছে বাওন, কাশি যাওন, খলইয়া তুই দ্যাখ, কিছু করণ যায় কিনা। মানুষগুলান পূজা গোণ্ডার দিন না খাইয়া থাকপে? তো হেই অইলে আরাম্ব। আমি এবার ধন্দে। মুসলমানের ছেলে, যাকে বলে যবনপুত্র। সে হিন্দু বাড়ির বলির পাঁঠার মাংস রাঁধবে, বিনা পেঁয়াজে, হিং দিয়ে। সবাই সার

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

Image
বেলা ডুবুডুবু। ফকির সাহেব তার কাজেকামে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে দু-একটা মামুলি কথা বলছেন। আমরা যে এতগুলো মানুষ অনাহূত অতিথি হলাম, তার জন্য কোনো উত্তেজনা দেখছি না তাঁর। মুখের ভাব দেখে বেশ বোঝা যায় তাঁর খুব আনন্দ হয়েছে। বাইরে হাটের ভিড় ক্রমশ কমে আসে। ব্যাপারীরা তাদের অবিক্রীত মাল নৌকায় তুলছে। কারুর বা নৌকা নোঙর তুলে চলতে শুরু করেছে। নদীর জলে শেষ সূর্যের লাল। অজস্র কচুরিপানার কাফেলা প্রবল স্রোতে সাগরের দিকে ছুটে চলেছে। মাঝে মাঝে দু-একখানা যাত্রীবাহী লঞ্চ বা রকেট এসে নোঙর করেছে। মানুষজন উঠছে-নামছে। হইচই হট্টগোল হচ্ছে। ফকিরের মোকাম থেকে সব দেখতে পাচ্ছি। ছোটো ছোটো মাছমারা ট্রলারগুলো দক্ষিণে সাগরের দিকে যাচ্ছে। ছোটো ডিঙিগুলোতে হাটুরেরা যে যার বাড়ি ফিরছে। আস্তে আস্তে ছইওলা নৌকাগুলোতে ডিবরি বা হারিকেন জ্বালানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক বিগত কালের স্বাদ, অনুভূতি পাচ্ছি, নদীর ধারের এই পরিবেশ আমার কাছে শাশ্বত-প্রায় ছবি। এর প্রতিটি রঙ, শব্দ, ছন্দ, ভাষা বা এর পুরো অবয়ব এবং আত্মাটিও যেন আমার একান্ত পরিচিত। মাঝের কয়েক বছরের নাগরিক বিচ্ছিন্নতা বাদ দিলে আমিও তো এর অংশ, অথবা সব মানুষই কি তাই নয়?

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

Image
নাম মোকছেদ আলি। বলে ইণ্ডিয়াথে আলেন বুঝি? কনে যাবেন? সব শুনে বলে, সে তো মেলা দূর। রাস্তায় ভালো খাবার জাগা নাই। বলেন তো দিতি কই। পরামর্শটা খারাপ না, আবার বৃষ্টিও ছাই ধরছে না। রাজি হতে মোকছেদ তার কর্মচারীদের হাঁকডাক করে। নদীর পারের হোটেল। তায় এ আবার এ দেশ ইলিশকুমারীর বাপের বাড়ি, নদী থেকে উঠে সোজা কড়াইয়ে। দেশটা অবশ্য আমার আর আমার গিন্নিরও বাপের বাড়ি। তাই সামনে সাজিয়ে রাখা নানা জাতের মাছের মধ্যে ইলিশই নজর কাড়ে আগে। আহা! কী আকার, কী রূপ! বড় কাঁধ উঁচু পরাতের মধ্যে রাঙা টুকটুক ঝোলে সাঁতার কাটছেন রাজকন্যে। গিন্নির চোখে চোখ পড়তে সেখানে প্রথম প্রেমের আকুতি দেখি। ইলিশ ছাড়াও আছে আরও নানা জাতের মৎস্যকন্যারা। কিন্তু ইলিশ হলো প্রকৃতই রাজকন্যা। ওই ইলিশ যদি রূপসার প্যাডের ছাও না হয়, তবে আমি বাঙালবাচ্চা, ভাটিকুমার নই। মোকছেদ ধরে ফেলে। সে এতক্ষণ বোধ করি আমাকে আর আমার পত্নীকে নজর করছিল। বলে, কী দেখতিছেন? উনি ওই ওখানদে উঠিছেন আর সোজা এখেনের রসুইঘরে আইসে সেধুয়েছেন, বাজার ঘুইরে আসেননি। বইসে পড়েন। আরে হেই সুমুন্দির পুতেরা--- বাবুগো মায়েগো খাওনের জাগা করতি পার না? মোকছেদ বেশ চোটপাটের হোটেল মা

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

Image
"বেরাম বেড়ে অগাধ পানি, তার নাই কিনারা তরণী পারে।" ফকিরের গানটি এখন চলমান ট্রলারে আমার মাথার মধ্যে যেন আরও বেশি সুরেলা এবং অর্থবহ মনে হচ্ছে। ফকির আরও গেয়েছিলেনঃ "নোনা জলে ভাসাইলি রে তোর সোনার বজরাখান।/ এ তরী জীর্ণ হবে কে সামলাবে, ডাকবে যদিন হড়পা বান।" এখন যে নদী দিয়ে আমার সোনার বজরাখানা ভেসে চলেছে, অনেক রক্ত, অশ্রু, ঘামে তার জল তো নোনা বটেই। হুলারহাট পেরিয়ে এসেছি। ডডডড আওয়াজ করে আমার সাধের বজরাখানা চলেছে। সিদ্ধিগঞ্জের মোকামের শেষ ঘাটের দিকে। ট্রলারকে বজরা বলায় দোষ নেই। শব্দটির মধ্যে যতই বাঙালি বাবুয়ানির উনিশ শতকীয় নস্টালজিয়া থাকুক, তার ঔরসদাতা ইংরেজি বার্জ শব্দটি। কিন্তু হায়, বাংলাদেশে কি এখন আর একটিও বজরা আছে? তা সে যাকগে, যার নাম বজরা, সে-ই মোটরযুক্ত হলে বার্জ হয়। নামে কী আসে যায়। তা সোনার বজরা আমার এখন নোনাজল কেটে পাড়ি দিচ্ছে কচানদীর বুক চিরে। নামে কী আসে যায়। কাল শরৎ, সময় ঊষা। কচার দু পাশের দৃশ্য এবং সামনে নদী, আকাশ আর হালকা কুয়াশার আস্তরণ মাখামাখি দেখে কাব্যি করে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। তার মধ্যে দেখো, আবার বালার্ক বিচ্ছুরণের বর্ণালী। ঋক মন্ত্রের

বাবার ইয়াশিকা ক্যামেরা। কল্লোল লাহিড়ী

Image
এই যে রাঙা সিঁড়ির ওপর দিব্যি বসে আছে চুপটি করে হাতদুটো সামনের দিকে জড়ো করা। আসন পাতা হয়েছে রাঙা বসবে বলে। এই ছবিটাই কি আমি প্রথম তুলেছিলাম বাবার ইয়াশিকায়? মনে পড়ছে না। তবে এটা বেশ মনে আছে পুজোর সময় ছবি তুলবো বলে যেই না গিয়েছি খুশি হয়েছে রাঙা। একটা নতুন শাড়ি পরবে না? রাঙা বলেছিল “ধুর! শেষকালে ছবির রাঙাকে যদি চিনতে না পারিস তোরা?” সত্যিই তো এই রাঙাকেই দেখে আসছি সেই কবে থেকে। এইরকম আটপৌরে একটা থান। মাথার ওপর দিয়ে ঘোমটা টানা। দাদা ইচ্ছে করে নিজের চশমাটা পরিয়ে দিয়েছিল রাঙাকে। ক্যামেরার পেছনে আমরা যারা ছিলাম সবাই হেসেই কুটিপাটি। এবার একটু গম্ভীর গম্ভীর লাগছে তোমাকে। “আর পা টা? দেখা যাচ্ছে তো? না দেখা গেলে বল ঠিক করে নিই। চন্দন তুলসী দিবি না তোরা?” রাঙার মুখে মিটি মিটি হাসি। কি যে বলো না রাঙা! তাকাও দেখি ক্যামেরার দিকে। শরতের রোদ এসে পড়েছে রাঙার গায়ে। আমি মনে মনে প্রার্থনা করছি এমন রোদ যেন এই লেখাটা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। গঙ্গার ধারে এই মুহূর্তে সেই না থাকা বাড়িটা যেন আবার হঠাৎ করে ফিরে আসে। মন কেমনের অলি গলি বেয়ে বহুদিন পরে যেন জেগে ওঠে সবাই এক মুহূর্তের জন্য হলেও। বাবার ইয়াশিকা ক্যামেরা