Posts

Showing posts from March, 2023

হিমশীতল রহস্য।। সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
'আমাদের এখানকার ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপের মেয়াদ কালই শেষ হতে চলেছে। ভাবতে ভাবতেই দেখি জন বিমর্ষ হয়ে গাড়িতে উঠল। কদিন ধরেই ওর মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। থিংভেলিরে আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাব। জায়গাটার ভৌগোলিক গুরুত্ব অনেকখানি। ইউরেশিয়ান প্লেট আর উত্তর আমেরিকান প্লেটের চলাচলের কারণে কোথাওবা ফাটলের মতো হয়ে যায়। সেই ফাটলের জমা জলে স্কুবা ডাইভিং করে অনেকে। এরকম এক ফাটলের নাম সিলফ্রা। তার পঞ্চাশ ফুট গভীরতায় স্কুবা ড্রাইভাররা ডুব দিয়ে থাকেন। প্লেটের নড়াচড়ার জন্য উপত্যকার দক্ষিণে জল জমে আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বড় সরোবরটির উদ্ভব হয়েছে। যার নাম 'থিংভালভান'। সরোবরটি বিশাল আর মুগ্ধ হবার মতোই সুন্দর। থিংভেলির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চলেছি এবার। সুদূর অতীতে আইসল্যান্ডের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে গোষ্ঠীপতিরা যখন আইনের অনুশাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন তখন উপযুক্ত স্থান খুঁজতে খুঁজতে তারা থিংভেলিরে পৌঁছে যান। এক বিশাল সমতলের ওপরের টিলায় বসে সেই আসর, যেখানে সাধারণ আইনের অনুশাসন ঘোষণা করেন আইনাধক্ষ্য। নীচের বিশাল চাতালে বসে জনগণ শোনেন সেই আলোচনা। দ্রষ্টব্য জায়গায় পৌঁছে আমি দেখলাম

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'শেষ মৃত পাখি' পড়ে লিখেছেন আজরফ ইসলাম অর্ক। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................. রহস্য কাহিনী কবিতার সৌন্দর্যকে ছুঁয়ে থাকে। রহস্যের যে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে দ্বিধা,অনিশ্চয়তা আর বিশৃঙ্খলার মাঝে, তার থেকেই পুষ্টি নিয়ে ডালপালা মেলে কবিতা। কঠিন কবিতার মানে খুঁজে বের করবার আনন্দ তো খুনের অপরাধীকে শনাক্ত করবার থেকে কম নয়। তাই বুঝি,‘মানুষ বড় শস্তা , কেটে, ছড়িয়ে দিলে পারতো’ শুনলে গা-টা শিরশির করে উঠে।  মেঘ পাহাড়ের দেশ দার্জিলিং। বৃষ্টি অবিরত। গাঢ় সবুজে জলকণা,পাতার সিক্ত মুখ। ময়াল সাপের একসা শরীরের মতোই ভিজে যাচ্ছে ম্যাল,জলাপাহাড়,লেপচাজগৎ,কার্ট রোডের কবরখানা আর ঋষি রোডের সেই বাড়িটা। বৃষ্টি আর কুয়াশার ধোঁয়াশায়,হিমেল হাওয়ায় অতীত খুঁড়ে এক দুঃসহ স্মৃতিকে জাগাতেই যেন সেখানে হাজির হলেন সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের সাংবাদিক তনয়া ভট্টাচার্য। অমীমাংসিত খুনের কাহিনী নিয়ে তিনি ধারাবাহিক লিখছেন পত্রিকায়। দার্জিলিংয়ে আসার উদ্দেশ্য— সেই ধারাবাহিকের শেষ কাহিনীটার শেকড় সন্ধান

দীনেন্দ্রকুমার রায় লিখিত সেকালের চিত্র চরিত্র।। সম্পাদনা : শতঞ্জীব রাহা।।

Image
'ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি এক কৃষ্ণাচতুর্দশী, রাত্রে বাহিরে যেমন দুর্ভেদ্য অন্ধকার, ঘরে তেমনই দুঃসহ গুমট; রাত্রি দশটার সময় আমার পাঠ-গৃহে টেবিলের ওপর দুই পা তুলিয়া দিয়া চেয়ারের ওপর অর্ধশায়িতভাবে বসিয়া কেরোসিনের উজ্জ্বল আলোকে একখানি ইংরেজি নভেল পড়িতেছিলাম। নভেলের নায়ক জাপানি, নায়িকা ইংরেজ দুহিতা; রস বেশ জমিয়া আসিয়াছিল। আমাদের গৃহপ্রান্তবর্তী রাজপথ জনশূন্য, কোনো দিকে জনমানবের সাড়াশব্দ ছিল না ; কেবল অদূরে বাঁশ-বনের অন্তরালবর্তী একটি জলপূর্ণ গর্তে নানাজাতীয় ভেক সমস্বরে বর্ষার আহ্বান-সংগীত গাহিতেছিল; তাহাদের সেই অশ্রান্ত মকধ্বনি বর্ষাসলিলে সিক্ত পল্লী-প্রকৃতির রহস্যভাষের ন্যায় কর্ণে প্রবেশ করিতেছিল। গৃহপ্রান্তে নিবিড় দূর্বাদলের অন্তরালে ঝিঁ ঝিঁর দল যেন করাত দিয়া কাঠ চিরিতেছিল; সে শব্দের বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই। গৃহপ্রাঙ্গণস্থিত কাঁঠাল গাছ ও শিশু গাছের পাতায় পাতায় সহস্ৰ সহস্ৰ জোনাকি টিপ টিপ করিয়া জ্বলিয়া প্রকৃতির অন্ধকার যবনিকার ওপর হীরকচ্ছটার বিকাশ করিতেছিল এবং দুই একটা শৃগালকে মধ্যে মধ্যে আম বাগানের ভিতর দিয়া যাইতে দেখিয়া আমাদের ‘বাঘা' কুকুরটা রোয়াকের ওপর বসিয়া এক

অলৌকিক বাগান।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' অলৌকিক বাগান ' পড়ে লিখেছেন সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................................................... "..... এখানে এখনো মফস্বল প্যাড পরে মরণপণ জেদে ক্রিজ কামড়ে আছে। " এই একটা লাইন যেন আসলে আমার নিত্যদিনের যাতায়াতের এলাকাকে পরিষ্কার তুলে ধরে। প্রতি রবিবার সকালে অগ্রাসীর মাঠ (পুরনো কিশোর সংঘের মাঠ) পেরিয়ে পশুপতি ভট্টাচার্য্য রোড টপকে মজলিস আরা রোডে ঢুকলেই একখন্ড মফস্বল উঁকি দেয়। প্রতি নিয়ত বদলে যাওয়া চারপাশ আরও বেশি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সেই সব বাড়ি, প্রায় জঙ্গলে পরিণত হওয়া বাগান, বড় তাল গাছ, আম গাছ, সুপারি গাছে ঢাকা এলাকাকে। কচুরী পানায় ভর্তি ঝিল, সেখানে মাছ ধরা পড়ে এখনো। গাছে নজর রাখলে এখনও কাঠ ঠোকরা বা ঝিলের জলে মাছরাঙা দেখা যায়। বছর পাঁচেক আগে বক ও দেখেছি।  আর আছে খটাস, ভাম, বেজী। সর্বোপরি আছে এক অন্য বেহালা। পুরোনো, পলেস্তারা খসা। স্মৃতি হাতড়াতে থাকা বেহালা। আমি রোজ দেখি। প্রাচীন গঙ্গার ক্ষুদ্র শাখানদী থেকে প্রাকৃতিক দ'মোহন

ছায়াবৃতা।। সুনীল সেনশর্মা।।

Image
জায়গাটার নাম ভালুকপং, চীন আক্রমণের পরে এই জায়গা থেকে উত্তরে বমডিলার দিকে উপদিষ্ট প্রণালী-মাফিক আধুনিক রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছিল। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে উপলবিক্ষতা জিয়া ভরেলী নদী। আমার থাকার তাঁবুটি নদীর প্রায় দশ ফিট উপরে এক প্রশস্ত সমতলভূমির এক প্রান্তে— ঝুঁকে তাকালে নীচে নদীর জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়। পরদিন কাক-ভোরে ঘুম ভেঙে তাঁবুর এক চিলতে জানালার ফ্রেমে বাঁধানো আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেল। সারারাত বৃষ্টিস্নাত নির্মল ঘন নীল আকাশের এখানে-সেখানে পেঁজা তুলোর মতো এক এক টুকরো হালকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, কখনও ঘন সবুজে আচ্ছন্ন উঁচু পাহাড়ের নাগালের মধ্যে অবিশ্রান্ত কলস্বরে জিয়া ভরেলী তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। সুরের সেই মূর্ছনা দিক-দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে নীল আকাশে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের রাজ্যে তরঙ্গ তুলছে। এমন একটি অনির্বচনীয় মুহূর্তে তাঁবুর মধ্যে বিছানা আঁকড়ে পড়ে থাকা যায় না। বেরিয়ে এলাম। জিয়া ভরেলী সত্যি জিইয়ে উঠেছে, উথলে উঠেছে। ওর পান্নার রঙে গেরুয়ার ছোপ লেগেছে। কালকের বৃষ্টির ফল। বিভিন্ন আয়তন ও অবয়বের শিলারাশি যুগ যুগ ধরে গড়িয়ে গড়িয়ে আদিরূপ ফেলেছে হারিয়ে। এখন সবই