Posts

Showing posts from January, 2024

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘দার্জিলিং পাহাড় ও নিচের সমতলের, অর্থাৎ তরাই-ডুয়ার্স এলাকার যে সব বন এখন আমরা দেখি, যেখানে লোকে বেড়াতে আসে, সেই বনের বেশিরভাগটা সায়েব আমলের। ভালো কাঠের ও উৎকৃষ্টতর মুনাফার খোঁজে সায়েবমালিকেরা পুরোনো বনের পুরোটাই প্রায় বদলে ফেলেছিলেন। সাদা সায়েব বিদায়ের পর দিশি সায়েবদের কাল শুরু, সে সময় বাকিটাও মোটামুটি গেলো। বন বদলানো, অর্থাৎ যুগপৎ বন কাটা ও বন তৈরির এই অভিযান টঙিয়া ভিন্ন সম্ভব হতো না। টঙিয়া ব্যাপারটা খোলসা করা যাক। সায়েবরা এ দেশের জমি জঙ্গল নদী নালা পাহাড় সমতল সব যখন কব্জা করে ফেলেছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল দখলে আসা এলাকা থেকে কত তাড়াতাড়ি কত বেশি খাজনা আদায় হতে পারে। খাজনা আদায় ও রাজস্ব বা রেভিন্যু বাড়ানোর দুর্মর তাড়নায় বনটন সবকিছুতে যে অমোঘ লুঠেরা থাবা চেপে বসেছিল, সে কথা পূর্বে বলা হয়েছে। শুধু বাংলা নয়, ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষের সর্বত্র এক ঘটনা ঘটেছে, অন্তত বন নিয়ে তো বটেই। দেদার লুটপাটের পর সায়েবরা যখন ঠিক করলেন, শুধু বন কাটলেই চলবে না, বন বানাতেও হবে, কাজটা আদৌ সহজ হলো না। বন সাফ করে কাঠ বেচে দেওয়া সহজ, বনের জমিতে প্রজা বসানোও কঠিন নয়। বন বানানোটা একেবারে অন্য কিসিমের ব্যাপার, ব

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘একটা সময় যখন শহরগুলোতে পাইপলাইন দিয়ে জল সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল না, তখন ভারীওয়ালা বা ভিস্তিওয়ালাদের ওপরই নির্ভর করতে হতো শহুরে মানুষকে। ছাগলের চামড়ায় তৈরি একধরনের ব্যাগে তারা জল ভর্তি করে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পৌঁছে দিত। এই বিশেষভাবে তৈরি ব্যাগকে বলা হতো 'মশক'। অনেকে বলেন, 'বেহেশত' থেকে 'ভিস্তি' কথাটি এসেছে। 'বেহেশত' একটি ফার্সি শব্দ, যার বাংলা অর্থ 'স্বর্গ'। পশ্চিম এশিয়ার সংস্কৃতি অনুযায়ী মনে করা হয়, স্বর্গে রয়েছে প্রচুর নদী, খাল আর বাগান। একটা সময় মানুষের বিশ্বাস ছিল, ভিস্তিওয়ালারা জল নিয়ে আসে স্বর্গ থেকে। স্বর্গের জল তারা মানুষের কাছে পৌঁছে দিত বলে স্বর্গের দূতও বলা হতো তাদের। পুরোনো কলকাতা বলতেই অনেকের চোখে এখনও ভাসে ভোর-ভোর চায়ের দোকানের উনুন জ্বালানো থেকে গঙ্গা স্নানের জন্য মানুষের ঢল। কিন্তু তার মধ্যেও অনেকেরই চোখে পড়ত ঝকঝকে রাস্তাঘাট আর ভিস্তিওয়ালার মশক কাঁধে রাস্তা ধোয়া। ভিস্তিরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধেও মশক কাঁধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যুদ্ধের মাঝেই তারা যোদ্ধাদের তৃষ্ণা নিবারণ করত। যে -কোনো ধর্মীয় উৎসব, অনুষ্ঠান ব

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘হ্যালো, হ্যালো, এক-দুই-তিন... হ্যালো... কিংবা—একটি ঘোষণা, আজ বৈকাল চার ঘটিকায়... নাহ্, সেই সুর তো কানে বাজছে না। এতো অন্য কণ্ঠ। রিক্সায় মাইক বেঁধে একটি বস্ত্রবিপণির বিপুল ছাড়ের ঘোষণা করে যাচ্ছে, কিন্তু সেই কণ্ঠ উদাত্ত, ভারি, ভরাট... নাহ, তেমন নয়, সে কণ্ঠ ছিল গোরাদার, লম্বা, ফর্সা, ঘাড়ের পিছনে অনেকটা চুল নামানো, ইউকাট—সেই সময় খুব চলত কীনা। কয়েক বছর পর শহরে ফিরেছি। চোখ ফিরিয়ে দেখলে নজরে পড়ে অনেক কিছুর বদল। তাহলে গোরাদাও কি বদলে গেল? না। গোরাদা আর নেই। সে এখন অন্য পৃথিবীতে। অথচ একটা সময় ছিল, শহরের মানুষকে কোনও কিছু জানানোর প্রয়োজন পড়লেই হালদার ইলেকট্রিক্সের শব্দযন্ত্র আর গোরাদার কণ্ঠ— 'আনন্দ সংবাদ, আনন্দ সংবাদ, আনন্দ সংবাদ। আজ সন্ধ্যা ছয় ঘটিকায় কালীমাতা হাই ইস্কুল প্রাঙ্গণে বিশ্ব বিখ্যাত যাদুকর পি সি সরকারের যাদু প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হইবে এ-এ-এ....। টিকিটের মূল্য এক টাকা, দুই, টাকা পাঁচ টাকা। আগে এলে আগে পাবেন...' রিক্সার চাকা গড়িয়ে যায়। কিংবা ঘোষণা থামিয়ে হ্যান্ডবিল বিলি করা হয়। হলুদ রঙের সেই হ্যান্ডবিল মানুষের হাতে ধরিয়ে দেওয়াও ছিল তার কাজ। শহরবাসীর চোখ এসব দেখতে অভ্যস্ত ছিল। সেই

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘আমাদের এই পোড়া মফস্বলে শীত পড়ে না আর। নরম হয় না রোদ্দুর। শীতের দেশ থেকে আসে না পাখির দল। আর কাশ্মীর থেকে আসে না শালওয়ালা। মফস্বলের অলিগলিতে বাজে না আর নতুন কেনা সবজে হিরো সাইকেলের ক্রিং ক্রিং। সেই কোন ভিনদেশে বাড়ি, অথচ প্রতি বছর শীতের আগের যাতায়াতে গঙ্গা সমতলের ভাষাও কেমন আয়ত্তে এসে যায় তাদের। ছোটোখাটো, মফস্বল ঘেরা নিচু নিচু বাড়ির মা-কাকিমাদের সঙ্গে কেমন করে সখ্যও জমিয়ে ফেলে তারা দ্রুত অথচ ধীর লয় আলাপে। কুয়াশা কুয়াশা শীতকালে ঘেরা ছোটো টাউনের সেই মায়েরা যেমন হয় আর কী—তটস্থ সারাদিনই ক্রমশ ছোটো হয়ে আসা দিনের থেকে কুড়িয়ে রাখতে উত্তাপ বাকি সংসারের জন্য। কিন্তু তাও যাবতীয় সেলাই-রিফুর পরেও দরকার হয়ে পড়ে কখনও কখনও নতুন উত্তাপ যোগানের। মুশকিল আসান হিসেবে হাজির তখনই মর্ত্যের স্বর্গ থেকে সমতলে নেমে আসা লম্বা-চওড়া আর আপেলের মতো টুকটুকে রঙের শালওয়ালা। বেলা একটু বাড়লেই, দোহারা বাড়ির গেটের সামনে ক্রিং ক্রিং। ভাঙা ভাঙা বাংলা। “কী লাগবে মাসিমা? ও বৌদি, কী লাগবে?” শালওয়ালার চোখ ছিল নীল রঙের। তার সাইকেলের পিছনের সিটে বাঁধা কালো ব্যাগে শুধু কম্বলই নয়, বরং রং-বেরঙের নতুন একটা দেশ। কার্পেট, কাজ করা কাপড়, শ

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘প্রথম যুগে যে সব ইংরেজ কলকাতায় আসতেন তাদের কাছে এখানকার আবহাওয়া ছিল অসহনীয়। গ্রীষ্মপ্রধান কলকাতায় অসহ্য গরমে নাকাল হতে হতো তাদের। মাঝে মাঝে ধুলোর ঝড় উঠতো। বর্ষাকালের বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি দিলেও ভ্যাপসা গরম থেকে রেহাই পাওয়া ছিল মুশকিল। নন্দকুমারের বিচার চলাকালীন ইম্পে ব্যারিস্টার ফেরারকে বলছেন: 'মিস্টার ফেরার! এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে কখনও পূর্ণ নিদ্রা হয় না। আমরা নিদ্রিতাবস্থায় প্রায় অর্ধজাগ্রত থাকি।' বেশ কিছুকাল পরে লর্ড ওয়েলেসলি লিখেছেন: 'দুপুরবেলার গনগনে রোদের তাপ এখানে সারা বছরই। যে যেমন ধাতের লোকই হোক না কেন, গরমে এখানে সকলেই পঙ্গু। তাই সন্ধ্যের পর কাজকর্মে সকলেরই হাত- পা অচল-অবশ।’ জেমাইমা কিন্ডারসলে কলকাতায় এসেছিলেন সেই কোন সুদূর অতীতে ১৭৬৫ সালে। তাঁর অধিকাংশ লেখা চিঠিপত্রের মাধ্যমে। এক চিঠিতে লিখেছেন: 'কাঠ বা কাগজের ব্যবহার কলকাতায় অচল। বাড়ি বানানোর সময় এই দুটো বস্তু বাদ দিয়ে করতে হবে। পোকামাকড় আর অস্বাভাবিক গরমের জন্য এই ব্যবস্থা।...ঘরগুলো বেশিরভাগই কাঁচের জানলা দেওয়া।' ১৭৭৭ সালে কিন্ডারসলের লেখা বই বার হয়েছিল লন্ডন থেকে। ১৭৮২-তে আর এক মহিলা এলিজা ফে-র চিঠিপত্

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘স্বর্গে ছিলেক নারী, 'নারি' নামো ধরে;  নর নোকে আনি' জুদায় ফোড় করে। কাম নাই, কাজ নাই— সোদায় গোড়ত-গোড়ত করে। থাকের উপর থাক তারে উপর কালা কুক্কা তারে উপর বায়। ধাঁধা দুইটির আবডাল সরিয়ে চিনতে পারা গেল কি বস্তুটি কী? বেশ, আরেকটু সহজ ইঙ্গিত দেওয়া যাক তবে। যার মাথায় আগুন পেটে পানি তারে আমি ওস্তাদ মানি। একটু একটু আন্দাজ করতে পারা যাচ্ছে এইবারে, তাই না? নিজের মাথায় ধিকিধিকি আগুন জ্বেলে রসিকের মন মাথা বরফিলা করতে যার জুড়ি মেলা ভার, সেই 'অ্যাসাইটিস'-ওয়ালা বস্তুটি হুঁকো ছাড়া আর কী-ই বা হবে!? হ্যাঁ, তৃতীয়টির মতোই প্রথম দুটিরও উত্তর হুঁকো। কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা করলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হতে পারে। গ্রিক পুরাণে বলে, প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুন নিয়ে এসেছিলেন মানুষের প্রয়োজনে। অ্যাসকাইলাস ও বোকাচ্চিও থেকে গ্যেটে হয়ে বায়রন ও শেলী— সকলেই বিভিন্ন সময়ে সেই পৌরাণিক গাথা নিয়ে গেঁথেছিলেন অনবদ্য সব বীরত্ব আখ্যান। সেই গল্প মাথায় রাখলে এই ধাঁধাটি আদতে একটি চমৎকার মক হেরোইক ন্যারেটিভ মনে হবে। কীভাবে? এটির বক্তব্য স্বর্গবাসিনী নারী-কে মানুষ নামিয়ে এনেছে নরলোকে। তারপর জুদায় ফোড় করেছে অর্থাৎ এক জোড়া ফুটো ক

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘শীত পেরিয়ে গেলেই খেজুর গুড়ের দিন শেষ। রস হয় না। হলেও টকে যায়। এমনকি আগে থেকে তৈরি করে রাখলেও, খেজুড় গুড় সামান্য গরম পড়লেই টকে যায়। আসে তাল গুড়ের দিন। তালগাছের গায়ে তাল ডাঁটার গোড়া লেগে থাকে না। তাল গাছ মোটা হওয়ায় তাতে বেয়ে ওঠাও সম্ভব না। তাল গাছের গায়ে বাঁধা হতো লম্বা বাঁশ। বাঁশের কঞ্চিগুলো একেবারে গোড়া থেকে না কেটে সামান্য রেখে রেখে কাটা হতো। সেই কঞ্চির গোড়ায় পা দিয়ে দিয়ে তাল গাছের মাথায় ওঠা হতো। তারপর একই পদ্ধতিতে রস আনা। তালগাছে রস হয় বেশি; স্বভাবতই বাঁধতে হতো বড়ো কলসি। রস-ভরা কলসির মুখে দড়ি বেঁধে নামিয়ে দেওয়া হতো। নিচে কাউকে থাকতে হতো ভরা কলসি খুলে নিয়ে, খালি কলসি বেঁধে দেওয়ার জন্য। তালরসে সামান্য চুন মেশানো হতো নামানোর সঙ্গে সঙ্গে। তারপর রস বাড়িতে এনে একই পদ্ধতিতে গুড় তৈরি। খেজুর-গুড় জমিয়ে রাখা যায় না, স্বভাবতই সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে তালগুড়ের পাকও বেশি হতে হয়। আমাদের ছোটোবেলা অধিকাংশ বাড়িতেই সারাবছরের মাপে গুড় তৈরি করে নেওয়া হতো। নিজেদের গাছ না থাকলে সামান্য বিনিময়-মূল্যে প্রতিবেশির গাছ বায়না নেওয়া হতো। রান্নাবান্নায় বউ-মেয়েদের সুনামের পাশাপাশি গুড় তৈরির মতো গৃহস্থালী কাজে পারঙ্গ

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘ঘরের পাছত মোর হরিয়ারে তাঁতি, শাড়িখান বানেয়া দে' অথবা 'দুয়ারে দাঁড়াইয়া রানি ডাকো দিয়া বলে বাণী, ও তাঁতিয়া, সুন্দর করিয়া গড়িয়ো বিয়ার জোড়'—এরকম গানের পঙক্তি কোচবিহার বা বরিশালেই শুধু নয়, শোনা যেত গোটা বাংলা জুড়েই। কখনো পছন্দ মতো শাড়ি অথবা ছেলে- মেয়ের বিয়ের জোড় বুনে দেবার জন্য আর্জি জানানো হতো ঘরের পাশের পড়শী তাঁতি বন্ধুদের। তাঁতের কাজটা খানিকটা বংশানুক্রমিক কিন্তু মাকু চালাবার আগের এবং পরে নানা ধরনের কাজ করেন তাঁতিঘরের মেয়েরা। এছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মেয়েরাই সুতোকাটা, তুলো পরিষ্কার করা—এইসব কাজে যুক্ত থাকতেন; এটাকে তাঁরা সম্মানজনক পেশা হিসেবেই গ্রহণ করতেন। ফলে বস্ত্র শিল্পের ওঠাপড়ায় মেয়েদের জীবনের ওঠাপড়াও জুড়ে থাকতো। ১৯৩৫ সালে প্রবাসীতে ইতিহাসবিদ রাধাগোবিন্দ বসাক একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন 'প্রাচীন ভারতের সুতাকাটায় স্ত্রীসহায়তা'। এখানে তিনি জানাচ্ছেন, অন্যান্য আরো কিছু শিল্পের মতো বস্ত্রবয়ন ও সুতাকর্তন শিল্প যে কেবল গৃহস্থগণ নিজ নিজ তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবেই সম্পাদন করতেন তা নয় রাজকীয় সূত্র বিভাগেও অনেকে, বিশেষত স্ত্রীলোকেরা কার্যকরী জীবনযাত্রা নির্ধারণের উপায় করে নিতে

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
‘শান দেওয়ার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাচ্ছি, সেই আদিম কাল থেকে মানুষ শান দেওয়া হাতিয়ারের কদর বুঝেছিল। ভোঁতা পাথরের তুলনায় ধারালো পাথরের ব্যবহারের কথা আমরা সবাই ইতিহাসে পড়েছি। খ্রীস্টপূর্ব পঞ্চম সহস্রাব্দের কাছাকাছি সময়ে মানুষ কাঁচামাল হিসেবে লোহার ব্যবহার শেখে এবং ধাতুর প্রক্রিয়াকরণ শেখে। খ্রীস্টপূর্ব দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারত, ককেশাস এবং তুরস্কের কিছু বিশেষ অঞ্চলে ইস্পাত গলানোর কাজ হয়েছে। কিন্তু এইসময় কিভাবে যে হাতিয়ার ধার দেওয়া হতো সে ব্যাপারে কিছু জানা যায় না। ধারণা করা হয়-তখন প্রাকৃতিক পাথর-ই ছিল হাতিয়ার ধারালো করার মূল উৎস। প্রধানত সিলিসিয়াস সেল, বালিপাথর বা বিভিন্ন ধরণের জ্যাস্পার দিয়ে হাতিয়ার ধার দেওয়া হতো। প্রাচীন গ্রীস ইতিহাসে আবার পাওয়া যাচ্ছে 'ক্রিটান স্টোন'-এর কথা। পাথরের উপর বালির মতো ধারালো কোনো ধুলো রেখে শান দেওয়ার কথাও অনুমান করা হয়। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শান দেওয়ার মেশিনেও দ্রুত পরিবর্তন আসে। বাণিজ্য এবং সুরক্ষার কারণে তখন শান দেওয়া ব্যক্তিদের কদর বাড়তে শুরু করে। সেই সময় শান দেওয়ার মানুষেরা ছুরি তৈরি করতে এবং তাকে তীক্ষ্ণ করে ধারালো করে তুলতে অত্যন্ত দক্ষ হ

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়

Image
‘তখন খুব ছোটো। নানি আমার শরীরে সর্ষের তেল মাখাতে মাখাতে গাইছেন-'কে আমার রসিক নাগর, আমার আপেলের বাগানে এসেছে? কে আমার রসিক নাগর...'। শুনে তো আমি হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার মতন। নানিকে জিজ্ঞাসা করলাম- 'নানি অ্যা কি গান গাহাইছেন গো?' নানি বললেন-'এইটো হলো বিহ্যার গীদ, বুঝল্যা ভাই? তুমার যখন বিহ্যা হবে তখুন তুমার গায়ে হলদি-ত্যাল মাখাবো আর গান গাহাবো। আর বড়ো সাউনবক্স ভাড়া করে লিয়ে এসে ড্যান্সও দিবো কিন্ত'। শুনে তো আমার মুখ লজ্জায় লাল। মা মারা যাওয়ার পর এক বিধবা নিরক্ষরা নারীর কাছে আমার বেড়ে ওঠা। তাঁর থেকে শেখাও অনেক কিছু। নানীর সাহচর্যে থেকেই কীনা জানিনা বিয়ের গীত, বিয়ে গাউনি শব্দগুলো শুনলে ছোটোবেলার মায়া মাখানো এক টান টের পাই ভেতর থেকে। সে মায়ার টানে পরবর্তী সময়েও বহু বিয়ে গাউনি শিল্পীদের কাছ থেকে দেখা এবং সাহচর্য পাওয়াও। রসিদা বিবি, সাইরা বিবি, লাইলা বিবি কত নাম...। তাঁদের থেকে শোনা বিয়ে গাউনি, মিরাশিন পেশা নিয়ে কত নতুন-পুরোনো গল্প। স্মৃতি।  পশ্চিমবঙ্গের যে অঞ্চলটিতে আমাদের বাস সেটি মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর পশ্চিমপাড়। মহকুমা কান্দী। এক কথায় রাঢ় বাংলা। ফলত কথ্য