টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি। মিহির সেনগুপ্ত
যখন লছমনপুরের শাল-পিয়ালের গাঁওখানা পেছনে ফেলে দুই স্যাঙাৎ বেলামু টাঁড়ের ফরেসে ঘুসে যায়, তখন তাদের পেছনে পেছনে ছায়ার মতন পা বাড়াই। সে অবশ্য ছুটি-ছাটার দিনেই। আর তা যদি শীতের মরশুম হয়, তাহলে তো দারুণ ব্যাপার। আকাশ-ছোঁয়া শত্রুঘন আর তাঁর কোমর অবধি দৈর্ঘ্য নিয়ে ত্রিবেদীজি। কাঁধে একটি করে ঝোলা নিয়ে চলতে থাকেন পাকদণ্ডী ধরে। বেলামু বা বেলমা পাহাড়ির এই রাস্তা কেউ এখানে ঠিকেদার বা মজুর দিয়ে বানায়নি। মানুষ আর বন্যপশুরা চলতে চলতে এর সৃজন হয়েছে। লাল কাঁকুড়ে মাটি, পদচিহ্নে পথ। অতএব প্রস্থে হ্রস্ব। দীর্ঘ-ডগা ঘাস অথবা অন্য কোনো উদ্ভিদ তাকে বিলোপ করতে চায় প্রাণপণে। কিন্তু নিরন্তর পদপাতে পেরে ওঠে না। সদ্য-বিবাহিতার সিঁথির মতোই তার ঔজ্জ্বল্যের প্রকাশ থাকে। এই লালকে ঘাস-উদ্ভিদজনেরা ঢেকে রাখতে চায় তাদের সতত সবুজ বহতায়। যেন এখানে যে নিরন্তর রক্তপ্রবাহ, তাকে তারা ঢেকে রাখবে সবুজ আস্তরণের ভালোবাসা দিয়ে। কিন্তু তা হবার নয়। যারা এই পথের পথিক, তারা তো এই রক্তের ধারাবাহী। তারা তা হতে দেয় না। তারা উদ্ভিদের ভালোবাসা স্বীকার করে নিয়েও যেন বলতে চায়, এটুকু থাক। কারণ, এই লাল তো আর সত্যিই কোনো সদ্য-বিবাহিতা 'কুড়ি'-র সিঁথির সিঁদুরের লাল নয়। এই লাল অনেক রক্তপাতের। অনেক যুগ ধরে এখানকার মানুষের রক্ত, ঘাম, কান্না এবং অবশ্যই ক্রোধের নির্যাসে এই মাটির রঙ এমন হয়েছে যেন।
টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি
মিহির সেনগুপ্ত
প্রচ্ছদ: শুভশ্রী দাস
অলংকরণ: পার্থপ্রতিম সরকার, আত্রেয়ী সাহা
মুদ্রিত মূল্য: ২৫০ টাকা
#সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment