নাইনটিন নাইনটি- আ লাভ স্টোরি। কল্লোল লাহিড়ী

অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আমি ছুটন্ত মানুষটার দিকে। একের পর এক গুলি লাগছিল তার গোটা শরীর জুড়ে। যেন পিতামহ ভীষ্ম সজ্জিত হচ্ছেন তীরের বর্ণমালায়। এবার তাঁর অন্তিম শয্যা। ফাইভ স্টার হোটেলের তেরো তলার সুইমিং পুলের নীলসাদা জল আস্তে আস্তে ভরাট হয়ে যাচ্ছিল চিৎ হয়ে পড়ে থাকা মন্টুর ফুসফুস বিদীর্ণ রক্তে। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল একটা লাল শালু যেন চারপাশ থেকে মুড়ে ফেলছে মন্টুকে। এক্ষুনি ইন্টারন্যাশানাল গাওয়া হবে। ঝিরঝিরে বরফের মধ্যে উঠে দাঁড়াবেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন তাঁর শেষ বক্তৃতাটা দেওয়ার জন্য। হয়তো তখনি শহরের যত ঝুপসি বা্রে নেশাতুর মাতালরা, ঝলমলে  রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেকে শস্তায় বিক্রি করা রঙমাখা ছেলেরা, সিমেন্ট বালি ইঁট সাপ্লাই করা সিন্ডিকেটের খুব অল্প টাকায় মাস্তানি করা লোকেরা, ভয় পাইয়ে এবং ভয় খেয়ে বেঁচে থাকা মানুষজনরা রুদালির মতো সুর করে কেঁদে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কেউ কাঁদেনি। কেউ ট্যাঁ ফু শব্দ করেনি। যদিও এরা ছিল মন্টুর খুব কাছের। দিনগত পাপক্ষয়ে এদের নিয়েও তার ছিল কবিতা লেখার এক মহৎ প্ল্যান। কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। না হওয়ার কারণও ছিল অনেক। সেইগুলো যে সব আমি জানতাম তেমনটা নয়। মন্টুও জানতো কিনা সন্দেহ ছিল। আসলে সব কিছু জানা যায় না। মেনিফেস্টোতে সব কিছুর দিক নির্দেশ থাকে না। আর থাকলেও মানতে দেওয়া হয় না। ততদিনে উলটে দিয়ে পালটে দেখার ধান্দাবাজির হাওয়ায় ভেসে গিয়েছিল সবাই। যারা ভেসে যেতে পারেনি তাদের এদিক ওদিক পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ধাপায় পুড়েছিল বেওয়ারিশ হয়ে কেউ কেউ। ক্রমিক সংখ্যাটুকুও পায়নি তারা। এদের থেকে মন্টু ছিল অনেক দূরে। ক্লাইম্যাক্সের জন্য নিজেকে সে সজ্জিত করেছিল অন্যভাবে। তাই সুইমিংপুলের জলে ভেলার মতো ভাসতে অসুবিধে হয়নি তার মোটেই। চোখদুটো ছিল খোলা। আকাশের দিকে তাকানো। ওই তেরো তলায় উন্মুক্ত আকাশের নীচে শুয়ে মন্টু তখন তারা দেখছিলো। যদিও দৃষ্টি ছিল স্থির। পলক পড়ার কোন অবকাশ ছিল না তার নিস্প্রান দেহে। ঘাড় ঘুরিয়ে আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পেয়েছিলাম ভুতুম পেঁচার দলটাকে। বাতাসের হালকা স্তর ধরে উড়ছিল ওরা। যাদের ছবি এঁকে রেখেছিল মন্টু সেই কবে কোন ছোট্টবেলায় স্কুলের বেঞ্চে কম্পাসের কাঁটায় আঁচড় কেটে কেটে। 

নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি
কল্লোল লাহিড়ী

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: মেখলা ভট্টাচার্য
মুদ্রিত মূল্য: ২৮০ টাকা
#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।