Posts

Showing posts from November, 2023

রহু চন্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
চারিদিকে হাটুরে মানুষের ভিড় গোল হয়ে। মাঝখানে ছটি সাপের ঝাঁপি। একটির মুখ খোলা। তার ভেতর থেকে মাথা তুলে আছে এক বিশালকায় গোক্ষুর, স্থানীয় ভাষার গোমা। রূপা ঢোলকে কাঠি মারে, ঘুরে ঘুরে ভিড়ের বৃত্তকে বড়ো করে। শরমীর কাপড় হাঁটুর উপরে তোলা। পায়ের চেটোয় ভর দিয়ে বাঁ উরু আন্দোলিত করে গোক্ষুরের সামনে। যুবতী নারীর ভরাট উরু। মানুষের ভিড় বাড়ে। গোমা তার উত্তোলিত দেহ বাঁকা করে পিছন দিকে, আরো পিছনে। শরমী হাতের মুদ্রা করে। গোমা ছোবল মারে, শরমী হাঁটু সরিয়ে নেয় এবং একই সাথে বাঁ হাতে সাপের গলার নিচে হাত দিয়ে সাপকে প্রতিহত করে। একটা পূর্ণবয়স্ক গোক্ষুরের ছোবলের শক্তি মাঝারি শক্তির ঘুষির মতো। শক্ত মাটিতে ছোবল আছড়ে পড়লে সাপ জখম হবে। শরমী বলে, খা-খা-খা, বক্কিলাক্ খা, কিপ্লুনাক খা-।     রূপা ঢোলক রাখে। মাথার রঙিন ফেট্টি খুলে আবার নতুন করে বাঁধে। রক্তাভ বিশাল তার চোখ, পাকা গমের মতো গায়ের রঙ, বলিষ্ঠ চেহারা। অচিন মানুষকেও সে আকৃষ্ট করতে পারে। ঝুলির ভেতর থেকে একটা শুকনো শিকড় সে বের করে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ঢঙে সে বলে, এই যে ভদ্দরলোক-ইয়ার নাম মণিরাজ গাছ। তারপর অদ্ভুত ভঙ্গিতে স্বরগ্রাম উঁচুতে ন

রহু চন্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
খাটিয়ায় শুয়ে তাঁবুর পর্দা সরিয়ে একফালি চাঁদ দেখে হানিফ। নিঃসঙ্গ মানুষ প্রকৃতি থেকেও যে সুখ পায়, এমন নয়। সারাদিন যে মানুষ কাজের ভিড়ে অন্য অনেকের মাঝখানে থাকে, রাত হলে তার নিজের কথা মনে পড়ে। তখন সে পর্দা সরিয়ে চাঁদ দেখে, চাঁদ না থাকলে অন্ধকার আকাশের তারা আর ছায়াপথ দেখে হয়তো আরো একাকী হয়ে যায়।      তখন তার দাঙ্গার কথা মনে হয়, মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর কথা মনে হয়, মনে হয় বোনের নিখোঁজ হওয়ার কথা। তখন চাঁদ থেকে হিম ঝরে, তারা থেকে বরফের কণা যেন ছিটকে এসে তার গায়ে লাগে। আলো কিংবা অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ যদি কোনও পেঁচা কাঁপিয়ে পড়ে মাঠের আলে, কর্কশ চিৎকার করে, তখন তার চমক ভাঙতে পারে।      কিন্তু চাঁদ তাকে আবিষ্ট রাখে। সে আয়নার খাঁড়িতে দেখা জলপরির কথা ভাবে। ভাবতে ভাবতে অদ্ভুত সব পরিকল্পনা করতে থাকে সে, যা তার আয়ত্তের এবং সামর্থ্যের বাইরে। পলবির কথা ভাবতে তার ভালো লাগে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার বিষণ্ণ মুখ, তার চিবুকের উপরের উল্কি। একসময় নিজের অজান্তেই সে ঘুমিয়ে পড়ে তারপর।      ঘুম ভেঙে গেলে অন্ধকারে নিজেকে মনে হয় ছায়ার শরীর। এতক্ষণ অন্য কোনো জগতেই সে ছিল। আদিনার মিনা করা সুসজ্

রহু চন্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
"রাজমহল, বারহেট, তিনপাহাড়, সাহেবগঞ্জের হাটেবাজারে পীতেমের দল রঙিন কামিজ আর ঘাঘরা উড়িয়ে নতুন বিহ্বলতা আনে। মোষের শিঙে বাঁধা দড়ি দুপাশে বাঁশ দিয়ে ঠেলে টনটনা করা হয়। তার উপরে লম্বা বাঁশ হাতে যে রমণী চলে ফিরে আগুপিছু করে তার শরীর বড়ো টান টান, তার চোখমুখে আগুনে মসৃণতা, তার গায়ের চামড়া পাকা গমের রঙের। নিচের যে মানুষটা ঢোলক বাজায় তার মাথায় রঙিন ফেট্টি। আর একজন উপরআলির চলার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে বিচিত্র গান গায়, যে ভাষা কেউ বোঝে না, কিন্তু সুরের মাদকতা এড়াতে পারে না।                                    মাধোয়া ধাইর্ যারে                                    মাধোয়া ধাইর্ যারে                                ছোটি ছোটানি মাধোয়া ধাইর্ যা                                তিলেক্ পঢ়োরে তিলেক্ পঢ়োরে                                ছোটি ছোটানি মাধোয়া ধাইর্ যা                                হেরছি ফক্ড়িরে হেরছি ফক্ড়িরে                                ছোটি ছোটানি হেরছি ফক্ড়ি। নতুন নতুন বসতি সব, নতুন নতুন মানুষ, উঠতি বড়োলোক, জাঁকজমক, ঠাট, সবই নতুন। বাজিকর ভাবে, হ্যাঁ, এমন জায়গাই বাজিকরের

রহু চন্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
রহু তার মানুষ নিয়ে সেই ভূখণ্ডে থাকত, যেখানে জীবন ছিলো নদীর মতো, নদীতে ছিলো অফুরন্ত স্রোত, বনে অসংখ্য শিকারের পশু এবং মাঠে অজস্র শস্য। মানুষ ছিলো স্বাধীন, সুখী।     তারপর সেই মানুষটা এলো। তার চোখ স্থির, তাতে পলক পড়ে না। সে এসে প্রথমেই মাঠ থেকে বহর সেরা ঘোড়াটি ধরে নিলো।     এই ঘোড়া আমার।   কেউ কোনও প্রতিবাদ করেনি। সবাই তাকিয়ে দেখছিলো তাকে। সে কিছু স্বতন্ত্র, রহুর মানুষদের সঙ্গে তার মিল নেই।     সে ঘোড়াটা ধরে নিলো এবং তাতে সওয়ার হলো। কিন্তু ঘোড়াটা তাকে সওয়ার করতে রাজি হলো না। তাকে ছিটকে ফেলে দিল। সে ক্রুদ্ধ হলো এবং আবার সওয়ার হলো। ঘোড়া আবার তাকে ধুলোয় ফেললো।     ক্ষিপ্ত মানুষটা তখন কোষ থেকে খড়্গ নিষ্কাশন করলো। ঘোড়া তার সামনে ঘাড় সোজা করে বেয়াড়া ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। ক্ষিপ্ত ও ক্রুদ্ধ মানুষটা এক কোপে সেই দুর্বিনীত স্বাধীন ঘোড়ার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করলো।     সব মানুষ হতবাক হয়ে গেলো। এমন পাশবিক হত্যা সেখানে কেউ কোনোদিন দেখেনি। সবাই স্তব্ধ।     তখন সে মানুষটা হা-হা করে হাসলো। তাতে সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়াল এবং তাকে শাস্তি দিতে চাইল।     অদ্ভুত! সেই মানুষটার চোখে মুখে কোনও আতঙ্ক নেই! 

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের বই আহাম্মকের খুদকুড়ো পড়ে লিখেছেন দেবলীনা চক্রবর্তী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ..................................................................... 📚পুস্তক - আহাম্মকের খুদকুড়ো📚 🖊লেখক - দুর্লভ সুত্রধর🖊 📜প্রকাশক - সুপ্রকাশ📜 📖পৃষ্ঠা সংখ্যা - ১৮৯ পাতা📖 💵মুদ্রিত মূল্য - ২৮০ টাকা💵  কথা বলা প্রতিদিনই কমে যাচ্ছে... এটা ভালো লক্ষণ বোধহয়.. তাছাড়া শোনবার লোক যে হারে কমে যাচ্ছে, তাতে এই একা বোকা টা আর যাবেই বা কোথায়? কথাই বা আর কি বলবে? কাকেই বা বলবে? শোনার লোকই বা কোথায়! আমাদের মনি বাবু বলেছিলেন,''কথা বলার ইচ্ছে হলে মানুষকে বেশি ঘাঁটিও না বাপু। মানুষ শুধু নিজের কথা বলে, কেউ কারো কথা শোনে না!! তার চেয়ে কিছু বলবার ইচ্ছে হলে লিখে রাখো কল্প খাতায়, ভেবড়ে যাওয়া পুঁথির পাতায়... আর যদি সে সব কাছে না থাকে তবে তোমার কথা আকাশকে বলো, বাতাসকে বলো, কিংবা গাছপালাকে বলে রাখো..'' কিন্তু মুশকিল হয়েছে কী -- আকাশ ব্যাপারটা বড্ড সুদূর, অত পর্যন্ত বামুনের হাত পৌঁছবে না.. তাছাড়া আকাশ মানে তো শূন্য থেকে মহাশূন্য, শূ

গরিলার ঘরকন্না।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর বই 'গরিলার ঘরকন্না' পড়ে আরেকরকম পত্রিকায় লিখেছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। এখানে রইলো লেখাটি।  লেখাটির লিঙ্কঃ https://arekrakam.com/issues/11th-Year-21st-Issue-1-15-november-2023/details/?details=853 ............................................................................................... সুলেখক অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী নানা বিষয় নিয়ে লিখে ইতিমধ্যেই নিজেকে সুলেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। সম্পাদক হিসেবেও তাঁর যোগ্যতা এবং দক্ষতা প্রশ্নাতীত। গরিলার ঘরকন্না বইটি তাঁর নিজস্ব ঘরানার গল্প-র থেকে পাঠককে এক অন্য স্বাদ এনে দেবে। যাকে আমরা ইংরেজি কেতায় 'পোস্টস্ক্রিট' বলে থাকি, এই বইটির শুরু হচ্ছে সেই পোস্টস্ক্রিপ্ট দিয়ে, বাঙালি পাঠকের পাঠ-রসনার তৃপ্তির জন্য তিনি এই অংশের এক জব্বর নাম দিছেন, 'মুখশুদ্ধি'। রিচার্ড লিকি-র স্নেহধন্যা ওরাংওটাং-গোরিলা-শিস্পাঞ্জি গোষ্ঠী, জীববিজ্ঞানীরা এইসম স্তন্যপায়ীদের বর্গীকৃত করেছেন 'প্রাইমেট' হিসেবে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয় যে এই শিম্পাঞ্জি, তাদের তুতো ভাই-বেরাদর বোনোবো, ওরাংওটাং-রা আধুনিক

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস ' অনন্যবর্তী ' পড়ে লিখেছেন রামামৃত সিংহ মহাপাত্র। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  .......................................... নতুন লেখকের লেখা পড়ায় একটা আলাদা কৌতূহল থাকে।এর আগে আমি দুর্লভ সূত্রধরের কোন লেখা পড়িনি।সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের লেখা অনন্যবর্তী পড়তে আগ্রহ জাগায় উৎসর্গ পত্রের লাইনগুলি-"ঘরেও নহে,পারেও নহে,/যে জন আছে মাঝখানে',..../সেই তাঁদের/প্রতিদিনের বেদনাকে/সেই তাঁদের/জেগে ওঠা ভোরগুলোকে।"      পড়তে কখনো মনে হয়েছে এই উপন্যাসে লেখক তুলে ধরতে চেয়েছেন মফস্বলের এক দঙ্গল ছেলেমেয়েকে, আবার কখনো মনে হয়েছে এ উপন্যাস কতগুলো পরিবারের গল্প। শেষ করে মনে হয় এই উপন্যাস একটা সময়ের গল্প বলতে চেয়েছে।যে গল্প আবর্তিত হয়েছে কুন্তি নদীর পাড়ের গ্রাম গ্রাম শহরকে কেন্দ্র করে।সেই সময়ের গল্প যখন,গ্রামে গ্রামে পূর্বতন জমিদারেরা দুর্বল হয়ে জেলা সদর বা মহকুমা শহরগুলিতে পূর্বপুরুষদের করে রাখা নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন-তাঁদের বদলে গ্রামে দেখা দিয়েছে বড়ো বড়ো জোতদার। এই জোতদারেরা একই স

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
বালকদের পশ্চিম দিকের বাড়ি, যার ন্যাড়া ছাদে ওঠার জন্য কাঠের সিঁড়িতে বসে হিমাংশু আশালতার অপেক্ষায় থাকতেন, কিছুটা বদলে গেছে। ছাদের তিন দিকে ইটের দেওয়াল উঠে সেটি বারান্দা হয়ে গেছে। মাথায় উঠেছে টিনের চাল। পাকা সিঁড়ি হয়েছে। ঘর দুটির একটিতে বালকের নতুন বৌদি রাতে থাকেন, সঙ্গে থাকে জোসনা বা তার পরের বোন পতু। গৌরীশঙ্কর বাড়ি এলে মেয়েগুলো বারান্দাতেই শোয়। অন্য ঘরটায় চন্দ্রশেখর আর বড়ো বৌদি ছোটো দুটো মেয়ে আর ছেলেটাকে নিয়ে রাতে ঘুমোন। দিনের বেলায় পশ্চিমের বাখুলে আসার সময়ই হয় না কারোর। বউদিদের সারা দিনই কাটে রান্নাঘরে। বালক বাড়ি এলে খেলার মাঠে, গাছে আর নদী কিংবা খালের জলে কাটাবার ফাঁকে দুপুর বেলায় খানিক সময় বই খাতা নিয়ে বসে। রাতে বারান্দায় দড়ির খাটিয়া পেতে ঘুমোয়। বালক বাড়ি থাকলে দুপুরের দিকে এখানেই পড়তে আসে ফেলি। গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি এল বালক। প্রথম কয়েক দিন ফেলি বই খাতা নিয়ে এসেও ফিরে গেল। বালক ভাত খাওয়ার পর সেই ঘরে ঢুকে পড়তে না বসে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। তবুও একদিন ফেলি তাকে ধরে ফেলল রাস্তায়, নির্জন দুপুরে। –এই ভূত, কুথায় থাকুস? পড়াবি না? বালকের চোখ ফেলির বুকের দিকে তাকিয়ে সম্মোহিত হয়ে যায়। আবার সেই

স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন।। জয়া মিত্র।।

Image
১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে টেলিগ্রাফ কাগজে ব্যাঙ্গালোর থেকে সাংবাদিক জানকী নায়ারের করা একটি ছোটো রিপোর্ট ছিল। উত্তর কর্ণাটকের দলিত জাতির একটি মেয়ে কিছুতেই দেবদাসী জীবন মেনে নিতে চায়নি, গণধর্ষণে খুন হয় সে। খবরে তার নাম উল্লিখিত ছিল স্বর্ণাভা বলে। একুশ বছর বয়স ছিল মেয়েটির।  জীবন ভালো করে শুরুও হয়নি তার। সম্পূর্ণ অচেনা এক জগৎ থেকে এসেছিল সোনাবরণ সে মেয়েটি। ওড়িশা কিংবা তামিলনাড়ুর দেবদাসীদের যে অস্পষ্ট কুহক ছবি দিয়ে আমাদের মনে দেবদাসী ধারণাটি তৈরি হয়, যাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবলম্বনে বেঁচে ছিল ভারতবর্ষের অন্তত দুটি ধ্রুপদী নাচ—ওড়িশি আর ভরতনাট্যম, যে দেবদাসীদের লীলামূর্তি মন্দিরের আপাদমস্তক ভাস্কর্যে হিল্লোল তোলে, তা থেকে একেবারে ভিন্ন এক বাস্তবতায় বাস করে এই দেশেরই দশটি হতদরিদ্র জেলার অন্তত বারো হাজার অচ্ছুৎ কন্যা।  উত্তর কর্ণাটকের দেবদাসীদের রক্ষয়িত্রী দেবী ইয়েলাম্মা। উত্তর কর্ণাটকের দশটি জেলা ছাড়িয়েও বিস্তৃত এই ইয়েলাম্মা-সংস্কৃতি এক ভিন্ন, জটিল ও অপ্রকাশ্য জীবনচর্যা হয়ে বিদ্যমান ছিল নব্বইয়ের দশকেও। সুস্থভাবে, স্বাধিকারে বাঁচতে চাওয়া একটি প্রায় কিশোরী মেয়ের বীভৎস মৃত্যু সেই লাঞ্ছনাময় জীবনের ঢাকা

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
গোস্বামীবাবুর হাসপাতাল থেকে ফিরে আসা এক মাসের উপর হয়ে গেল। তাঁকে দেখলে বোঝাই যায় না, অমন একটা মারাত্মক ব্যাপার ঘটে গিয়েছিল। বি শিফট ডিউটি না থাকলে তিনি আগের মতোই সন্ধেবেলায় ভলিবল খেলতে যাচ্ছেন। কারখানায় তাঁকে নাইট ডিউটি দেওয়া হচ্ছিল না। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এখন আর নাইট করতে তাঁর অসুবিধে হবে না। বালকের ইস্কুল খুলে গেছে কিন্তু সে এখনও নতুন ক্লাসে যায়নি। দাদা রোজই ভাবছেন বুকলিস্ট নিয়ে বেনাচিতির বাজারে যাবেন নতুন ক্লাসের বই কিনতে কিন্তু সময় পাচ্ছেন না। কোয়ার্টারে কেউ না কেউ আছেনই গত এক মাস ধরে। গোস্বামীবাবুকে দেখতে আসছেন আত্মীয়রা বিভিন্ন জায়গা থেকে। কিছুদিন আগে ভবেশদা এসেছিলেন। তিনি আশালতার বড়ো দাদা। তিনি এক সপ্তাহ ছিলেন। এখন আছেন আশালতার বাবা। তিনি জামসেদপুরের স্টিল প্ল্যান্টে চাকরি করেন। ছুটি নিয়ে জামাইকে দেখতে এসেছেন। রোগা, লম্বা আর ফরসা। মাথাজোড়া টাক। খুব রাগি লোক, থেকে থেকেই রেগে যান তিনি। দুপুরে বালক যে বুবুবুড়িকে নিয়ে একটু খেলাধুলা করবে তার উপায় নেই। তিনি তখন ভাত খেয়ে ঘুমোন। খেলাধুলায় তো একটু আধটু আওয়াজ হবেই। তিনি প্রচণ্ড রেগে গিয়ে হাঁক দেবেন, –আশা – আশা। দৌড়ে আসবেন আশালতা। তিনি মুখ