নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি। কল্লোল লাহিড়ী

গার্লস স্কুলটা স্টেশনের পাশেই সেটা আমি জানি। আমারও যেতে ইচ্ছে করে মাঝেমাঝে ওই স্কুলটার সামনে। ঝমঝম করে ট্রেন গেলে ওদের গোটা স্কুলবাড়িটা নাকি কাঁপে। মনে হয় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। প্রথম প্রথম ওই স্কুল নিয়ে কত গল্প দিপালীর। ইদানিং আর তেমন করতে চায় না। তমালকে করে কী? কি জানি! অবশ্য রেল লাইনের ধারের জানলাগুলো এখন বন্ধ থাকে সব সময়। না হলে ছেলের দল ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে লাইনের পাশে। টুকরো টাকরা কাগজ ছোঁড়ে। তাতে বড় বড় করে লেখা থাকে “আই লাভ ইউ”। বাংলায় কেউ কেন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ এই কথাটা বলতে পারে না? হুলোর মতে আসলে কিছু জাহির করতে এখনও মানুষ তার চেয়েও বিত্তশালী বা শক্তিশালীর ভাষা ব্যবহার করে। কোন কিছু প্রমান করতে হলে রেফারেন্স দেয় ক্ষমতাশালীদের। তাতে সে নাকি মনের জোর পায়। “সাধে কি ইংরেজরা এতো বছর রাজত্ত্ব করে গেছে? মোটে ওই কটা ইংরেজ এতো এতো লোকের মাথার ওপর পা দিয়ে দেশ চালিয়েছে। আমাদের দেশে থেকেই আমাদেরকে ‘কালা আদমি’ বলেছে। ‘নেটিভ’ বলেছে। ভাব তো সব মানুষ যদি একসাথে মিলেও ওদের ফুঁ দিতো। জাস্ট ফুঁ তাহলে কী হতো? উড়ে যেত ওরা সেই কবে। কিন্তু যায়নি। আসলেই মানুষ রাজভক্ত হয়ে পড়ে। আর সেই রাজাদের কথায় ভালোবাসা জানালে ভাবে সত্যি হয়তো সে পেয়ে যাবে যা চাইছে তাই”। দিপালীকেও তমাল ইংরাজিতে ‘আই লাভ ইউ’ বলেনি তো? তাহলে দিপালীও প্রতি উত্তরে বলেছে “লাভ ইউ টু”। চিড়বিড় করে ওঠে পিঠটা এলার্জির চুলকানিতে। আমি যদি কাউকে কোনদিন বলি... সত্যিই বলি। নিজের মনেই তোতলাই। কী বলি? যে...আমি তাকে ভালোবাসি...। একদম গোটা গোটা বাংলাতে। কাকে ভালোবাসি? সামনের সেই মানুষটা কে? ধুর ছাই। দিপালীর চোখদুটো মনে পড়ছে খালি। বিনুনী দুলিয়ে হেঁটে যাওয়া। ঘাড় ঘুরিয়ে কথা বলা। আবার একটা অস্বস্তি ঘিরে ধরছে। তারচেয়ে পচার কথাটা বিশ্বাস করা ভালো। আজ অর্পিতাদি আসবে না। এই মুহূর্তে ক্লাসের সামনেও দাঁড়াতেও ইচ্ছে করছে না। দেখতে ভালো লাগছে না ভাদুড়ীর দাঁত বের করা ভিলেনি হাসি। সামনেই বাথরুমের পেছনের পাঁচিল। সেটাই টপকানো আপাতত ভালো। তাহলে সব কিছু থেকে মুক্তি। পচা তার লম্বা ঠ্যাঙ নিয়ে এক লাফে উঠে পড়লো পাঁচিলে। আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো হাত। খপ করে ধরে ফেললাম পচার হাতটাকে। এক ঝটকায় পচা তুলে নিলো আমাকে পাঁচিলের ওপরে। সেই প্রথম আমি পচার সাথে স্কুলের সীমানা পেরোলাম লুকিয়ে। নদীর ধারের কুশ ঘাসের ঘন ঝোপ যেন মাথা দোলালো। ফিসফিস করে বললো “পাপ করছিস...পাপ”। তাদের ফিসফিসানি আমি সেই মুহূর্তে শুনতে পেয়েছিলাম কিনা মনে করতে পারি না। যদি সত্যি শুনতাম তাহলে হয়তো আর পাপ করা হতো না। না পাপ করা সূচী শুভ্র মানুষ হয়ে ঠিক সমাজ যা চায় তেমন ভাবে থেকে যেতে পারতাম এক্কেবারে। কিন্তু অদৃষ্ট তা হতে দিলো না। তার অবশ্য আখ্যান সাজানো ছিল অন্যভাবে। জীবনে প্রথম একটা বড় পাপ করার বাসনায় পচার সাইকেলে চাপলাম। পেছনে সেকেন্ড পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঘন্টা বাজলো। 

নাইনটিন নাইনটি আ লাভ স্টোরি
কল্লোল লাহিড়ী

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: মেখলা ভট্টাচার্য
মুদ্রিত মূল্য: ২৮০ টাকা
#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।