টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি। মিহির সেনগুপ্ত

কুলহির মাঝের আয়তাকার প্রাঙ্গণে আসর বসেছে। দু-পাশে ঘর। ঘরগুলি মাটির দেওয়াল, কাঠ বাঁশের ফ্রেমের ওপর গোল টালির ছাউনি। দেওয়ালে সাজিমাটির পলেস্তারার ওপর গেরিমাটির ফ্রেসকো। গলির এখানে সেখানে ঘরের গা ঘেঁষে মহুল গাছ দু-একটা অবশ্য আছে। তা থাকারই কথা। আর আছে শার্জম কা প্যেড়। এ-সব না থাকলে সাঁওতালি বনেদিয়ানা থাকে না। থাকে না ঐতিহ্যও।
উঁচু নীচু গলি। মাঝে চড়াই-এর খাঁজগুলিতে পাথরের চাঙাড়ি দিয়ে ঘিরে করা হয়েছে অগ্নিকুণ্ড। প্রাচীন কালে বোধ করি এ ভাবেই রাত্রির উৎসবকে উদ্ভাসিত করা হত। পরম্পরা পালটায়নি। সেই কুণ্ডের আগুনের আলোতে কুচকুচে কালো, তেল চকচকে সব মুখ। তারা নাচছে এবং গাইছেও।
কুলহি কুলহিয়ে ঝমর ঝমর।
নাচ গানের আসরে এসে দেখি বুঢ়াগুলান বড়্যঅ লিশা কইরছে গ। ছোকরাগুলান চোখা চাহুনি ছুইড়ছে ছুকরিগুলার দিকে। আজ যে কী হব্যেক, কে জানে! কোড়া কুড়ি বেবাক যেন উথাল পাথাল করছে। এদের মতো করেই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে-- জগমাঝিকে ডাক কেন্যে। 
আনুষ্ঠানিক সব কর্ম শেষ। এখন রাত সাড়ে আট ঘড়ি। আসরে এসে দেখছি ত্রিবেদী দিব্য চনমনে। চনমনে শত্রুঘন সরেনও। বোধহয় যতক্ষণ আমরা ছিলাম না, ততক্ষণ এই দু-জন দিব্যি ঘুমিয়ে চাঙ্গা হয়ে নিয়েছেন। কুলহির গলিতে আলোর অভাব পূরণ করেছে সারি সারি অগ্নিকুণ্ড। পাথরের চাঙাড়ি ঘেরা কাঠের গুঁড়িতে আগুন। যে যখন আসছে, যাচ্ছে একমুঠো পাতা বা খড় ফেলে দিচ্ছে তার মধ্যে। তাতেই যা উদ্ভাস। সেই উদ্ভাসে নৃত্যরত যুবক-যুবতীদের চিনে নেওয়া যাচ্ছে। ভাব বোঝা যাচ্ছে তাদের। এ নাচে বিজলির ঝাঝাঁলো রোশনি থাকার দরকারই নেই। আলো আঁধারি ব্যাপারটাই এ উৎসবের এক অপরিহার্য অঙ্গ। এ যেন আদিমতার সঙ্গে বর্তমানের এক মেলবন্ধন। আদিমও নয়, আবার বর্তমানও নয়, একটা আলো-আঁধারি সেখানে তো থাকবেই।  

টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি
মিহির সেনগুপ্ত

প্রচ্ছদঃ শুভশ্রী দাস
অলংকরণঃ পার্থপ্রতিম সরকার, আত্রেয়ী সাহা

মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা
#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।