Posts

Showing posts from September, 2023

ছায়ার পাখি।। অভিজিৎ সেন।।

Image
এইসময় শিশু গাড়ির শব্দ শোনে। সে ত্বরিতে মায়ের কোল ছেড়ে লাফ দিয়ে ওঠে। তার সমস্ত শরীরে আনন্দ আর অস্থিরতার বিদ্যুৎস্পর্শ। গাড়ির যান্ত্রিক শব্দ এবং অবিশ্বাস্য একটা চলমান আয়োজন শিশুকে উদ্‌ভ্রান্ত, আহ্লাদিত এবং আবেগস্পৃষ্ট করে। সে একলাফে বাইরে আসে এবং রোদে আর হাওয়ায় তার যাবতীয় চপলতা ও আনন্দ মিশিয়ে দৌড় দেওয়ার আগে এক মুহূর্তের জন্য থমকে তার মায়ের মুখের দিকে তাকায়। চুলশূন্য তার মাথা নীচে তার চোখদুটো অবিশ্বাস্য প্রাপ্তির শিহরণে ছটফটিয়ে ওঠে। সে বলে, "মাওরে, মোর বাপ আসে!' চন্দ্রাবলী ছিলা-ছেঁড়া ধনুকের মত লাফ দিয়ে ওঠে। চিৎকার করে সে সবাইকে সতর্ক করে। বলে, ‘না – আঃ, কে কুনঠি আছেন গো, মোর চ্যাংড়াক্ ধরেন, মোর চ্যাংড়াক ধরেন –।' সে সেখানেই আবার বসে পড়ে। আঃ, এই তাহলে আঘাত! শিশু এখন এই এগারো দিন পরে তার আসল আঘাত পাবে! এই তাহলে এই! অথচ তাকে তো জানতেই হবে! জানুক সে, এভাবেই তার মোহভঙ্গ হোক! যা হয় হোক, আমি আর ভয় পাই না। যে আমার সুখের দিন কেড়ে নিয়েছে, যে আমার শিশুর পৃথিবীকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করেছে, হে ভগবান, তার যেন, হে ভগবান, তার যেন- অনিল ছুটে গিয়ে শিশুকে ধরে। —কুনঠি যাহ

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
পুরুলিয়া স্টেশনের আগে আদ্রায় বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়ায় ট্রেনটা। আদ্রা থেকে তারপর ট্রেনের একটা ভাগ চলে যাবে বোকারো; অন্য ভাগটা পাড়ি দেবে পুরুলিয়ার দিকে। ঘুম যখন ভাঙল, আদ্রা পেরিয়ে গেছে ততক্ষণে। এতদিন পর যাতায়াতে নতুন লাগছে যেন সব কিছুই। অচেনা নামের স্টেশন। বদলে যাওয়া মানুষের চেহারা। এবং ভয়ঙ্কর রকম ঠাণ্ডা একটা। বাইরে জমাটবাঁধা কুয়াশা। কুয়াশার আবরণ একটু হালকা যেখানে, সেখানে দূরে কোথাও চোখে পড়ছে ঝাপসা পাহাড় বা টিলা। পাঁচ টাকা এগিয়ে দিয়ে গরম চায়ের ভাঁড় চেপে ধরি হাতে। হঠাৎ সহযাত্রীদের মধ্যে একটা উশখুশ ভাব লক্ষ করা যায়। জিজ্ঞেস করি, 'দাদা, পুরুলিয়া স্টেশনটা?' —এই তো আসছে। আপনিও নামবেন নাকি? ট্রেন থেকে নেমেই কেঁপে গেলাম আরো। এটা কেমন ঠাণ্ডা! জ্যাকেটের ভিতরে হাফহাতা সোয়েটার। তাও যেন তীরের মতো বিধছে হাওয়া। যেখানে পৌঁছোতে হবে সেটা আরো প্রায় পঞ্চাশ বা পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে। এখানেই এমন ঠান্ডা হলে সেখানে যে কী অবস্থা হবে, সেটা ভাবতে ভাবতেই একটা রিক্সা ধরে পৌঁছে গেলাম পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড। হাতে কোনো সাড় নেই। আঙুলগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আবার গরম চায়ের গ্ল

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
অভিমানভূম  প্রথম দর্শন : এক অপার্থিব লা লা ল্যাণ্ড টিকিট চলে এল। দু’দিন পরে রাতের ট্রেন। এগারোটা পাঁচের চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। নামতে হবে বলরামপুর স্টেশন। সেখান থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। কী ব্যবস্থা থাকবে, সেটা তখনও জানা নেই। কিন্তু নিজের মতো করে গুছিয়ে নিলাম খাতা, পেন। একটা রেকর্ডারও দেওয়া হল না; নতুন ছেলে কী করতে কী করবে! একটা ছোটো ওয়ান শট ক্যামেরা জোগাড় করা গিয়েছিল কোনোভাবে। বারবার বলে দেওয়া হয়েছিল, স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা না বলে ক্যামেরা যেন বের না করা হয় একদমই।  হিম-কুয়াশায় আবছা চারপাশ। কুয়াশা রেললাইনের উপরেও। মোটা চাদরে শরীর ঢাকা মানুষের যাতায়াত প্ল্যাটফর্মের উপর। একটা রাতের যাত্রাপথ কতটা দূরে এনে দেয় আমাদের? ভাবতে ভাবতেই হুইসল দিয়ে এঁকেবেঁকে দূরের পাহাড়টার নিচে হারিয়ে যেতে থাকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। কে জানতো, পরবর্তীতে এতবার এই ট্রেনে চড়তে হবে যে, মজা করে ছড়াও কাটবে একজন, “তোমার বাড়ি কি রেলগাড়ি?” অভিমানভূম শুভদীপ চক্রবর্ত্তী প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায় অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা সুপ্রকাশ

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
ভিন্নতর সাংবাদিকতা  পুরুলিয়া স্টেশনের আগে আদ্রায় বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়ায় ট্রেনটা। আদ্রা থেকে তারপর ট্রেনের একটা ভাগ চলে যাবে বোকারো; অন্য ভাগটা পাড়ি দেবে পুরুলিয়ার দিকে। ঘুম যখন ভাঙল, আদ্রা পেরিয়ে গেছে ততক্ষণে। এতদিন পর যাতায়াতে নতুন লাগছে যেন সব কিছুই। অচেনা নামের স্টেশন। বদলে যাওয়া মানুষের চেহারা। এবং ভয়ঙ্কর রকম ঠাণ্ডা একটা। বাইরে জমাটবাঁধা কুয়াশা। কুয়াশার আবরণ একটু হালকা যেখানে, সেখানে দূরে কোথাও চোখে পড়ছে ঝাপসা পাহাড় বা টিলা। পাঁচ টাকা এগিয়ে দিয়ে গরম চায়ের ভাঁড় চেপে ধরি হাতে। হঠাৎ সহযাত্রীদের মধ্যে একটা উশখুশ ভাব লক্ষ করা যায়। জিজ্ঞেস করি, 'দাদা, পুরুলিয়া স্টেশনটা?' —এই তো আসছে। আপনিও নামবেন নাকি? ট্রেন থেকে নেমেই কেঁপে গেলাম আরো। এটা কেমন ঠাণ্ডা! জ্যাকেটের ভিতরে হাফহাতা সোয়েটার। তাও যেন তীরের মতো বিধছে হাওয়া। যেখানে পৌঁছোতে হবে সেটা আরো প্রায় পঞ্চাশ বা পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে। এখানেই এমন ঠান্ডা হলে সেখানে যে কী অবস্থা হবে, সেটা ভাবতে ভাবতেই একটা রিক্সা ধরে পৌঁছে গেলাম পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড। হাতে কোনো সাড় নেই। আঙুলগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
জলের কাছে চুপ এই বিশাল জোয়ার-ভাটা নদী আর তার পলি-কাদার গন্ধ নিয়ে বেড়ে উঠেছে যে, সেই তার কাছে পাথুরে মানভূমের এই রোগাসোগা পাঁজরের হাড় বের করা নদী ভাল লাগতে পারে কি? কিন্তু এতই আশ্চর্য এখানকার নদীদের রং আর রূপ, এমনিতেই বসে পড়তে ইচ্ছা হয় পাথরের গা ঘেঁষে। এদিকে বুকের ভিতর লুকানো ভীষণ ‘চাঁদের পাহাড়’। আনমনা ছেলেটা প্রথম যেদিন নদী দেখতে গেল, পাথুরে উপত্যকা দেখে বলে উঠেছিল, “আরে, এতো আমাদের ভেরি ওন রিখটারসভেল্ড!” অভিমানভূম শুভদীপ চক্রবর্ত্তী প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায় অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা সুপ্রকাশ

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
অভিমানভূম  চা য়ে পে চ র্চা কোথাও দেখার বা পড়ার আগে পুরুলিয়া জেলার এই ইতিহাস আমি জানতে পেরেছিলাম শেখরদার চায়ের দোকানে বসে। আমার থাকার বাড়িটা থেকে স্টুডিও অবধি রাস্তায় চায়ের দোকান মোটামুটি দুটো। যে বাড়িতে থাকি, তার উল্টোদিকেই ভগবানদার দোকান, আর, কলেজের ঠিক পাশে শেখরদার দোকান। মোটামুটি বাইরে ঘোরাঘুরি না থাকলে, সকালে দশটা থেকে দিনের বাকি সময়টা কাজের ওখানেই। তাই বেশ খানিকটা সময় কেটে যায় শেখরদার দোকানে। শেখরদা বা তপনদার সঙ্গে মাঝেমাঝেই জমে ওঠে একদম খাঁটি চায়ের দোকানের আড্ডা। বিশেষ করে সন্ধের পর কার্বনের দাড়ি-গোঁফে সাজানো হলুদ বাতিটা জ্বলে উঠলে, আড্ডায় রং লেগে যায় আরও। মাঝে মাঝেই স্থানীয় কেউ কেউও অংশীদারী হয়ে উঠলে এইসব উত্তেজনার, চুপচাপ বসে শুধু শুনে যাই যাবতীয় মতবাদ। তার কিছু কিছু কিম্ভূতকিমাকারও বটে! সাইকেল নিয়ে দূরের গ্রাম থেকে চলে আসেন সুজিতদাও। সাদা-চুল দাড়ির সুজিত হাঁসদা এখানকার আদিবাসী সাঁওতালদের মধ্যে মোটামুটি নেতা গোছের একজন। আড্ডার বিষয় বহুবিধ। দেশ বা রাজ্যের সরকার কিংবা সমকালীন রাজনীতি। গ্রামীণ রাজনীতির অন্দরমহলটা নিয়ে এখানকার মানুষেরা কী ভাবেন, সেটাও বোঝার চেষ্টা চালাই এ