Posts

Showing posts from January, 2023

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া।। সম্পাদনা : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
"গঙ্গা থেকে বয়ে আসে একটা সিরসিরে বাতাস, ছোটোকাকার হাতের রেডিয়াম ঘড়ির কাঁটা একটু একটু করে সরে সরে যাচ্ছে। সেই সন্ধে থেকে বড্ড তাড়াহুড়োর কেটেছে সময়টা। ডাক্তার, সার্টিফিকেট, খাট, ফুল, অগুরু, ধূপের ব্যবস্থা মিটতেই পারিবারিক প্রথা মেনে রাতেই দেহ নিয়ে আসা হয়েছে নিমতলা। কিশোরটি একবার শ্মশানযাত্রী হওয়ার কথা বলতেই কেউ খুব একটা আপত্তি করলো না। আর তাই তার শ্মশানের রাত দেখার প্রথম সুযোগটাও হয়ে গেল। কাঠের চুল্লিতে দাহ হচ্ছেন পিতামহী। এক জীবন ভরা শোক-তাপ-রোগ-ব্যাধির সঞ্চয় নিয়ে পাকা ফলের মতো বোঁটা থেকে খসে পড়া মানুষের জন্য উথালপাথাল শোকের তরঙ্গ ওঠে না। নিমতলা শ্মশান ঘাটের বাঁধানো ধাপগুলোর উপর ভাটার হালকা ঢেউয়ের মতো এক-দুটো টুকরো স্মৃতি ভাঙে। সঙ্গে থাকা আত্মীয় প্রতিবেশীদের কথায় তেমনি ছোটো ছোটো ঢেউ গুনতে গুনতে চোখ লেগে আসে। কিছুটা ক্লান্তিতে, বাকিটা খিদেয়।  —চল কিছু খেয়ে আসি। এখনো বেশ কিছুক্ষণ লাগবে। -ভোর হওয়ার আগে তো বাড়ি ঢোকাও যাবে না। —হ্যাঁ, তেমনি নিয়ম, আলো ফোটার পর নিম, আগুন, লোহা ছুঁয়ে বাড়ি ঢুকতে পারবে সবাই।  টুকরো টুকরো কথা কানে আসে। রেডিয়াম ঘড়ি জানান দেয়— রাত দুটো

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া।। সম্পাদনা : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
"......শুরু করেছিলাম বিরিয়ানির গল্প দিয়ে। হোটেলে বিরিয়ানি খেলে শেষ পাতে ফিরনি ছাড়াও যে পদটি আমাদের খুব প্রিয়, শেষ করি সেই শাহী টুকরা'-র কথা বলে। আমরা 'শাহী টুকরা' খাই হায়দ্রাবাদি বা মুঘলাই খাবার ভেবে। কিন্তু এর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় তার জন্ম ক্রুসেডের ডামাডোলের বাজারে। সাধারণ গৃহস্থ ঘরে তখন নষ্ট হয়ে যাওয়া রুটিটুকুও ফেলে দেওয়া বাহুল্য। আমাদের বাঙালি ঘরের মায়েদের মত ইউরোপীয় গৃহবধুও নষ্ট হয়ে যাওয়া রুটি দিয়ে বানিয়ে ফেললেন এক পুডিং। পরবর্তীকালে যার নাম হল 'পুওর ম্যানস পুডিং"। মাখনের অভাবে সেখানে দেওয়া হত মাংসের হাড়ের মজ্জা। সেই খাবারটাই নানাভাবে পালটে আমাদের সামনে হাজির হল ‘শাহী টুকরা’ হয়ে। বোঝা যায় যে আকাল বা অভাবের সময়ে পরিবারের মুখে দুটি খাবার তুলে দেওয়ার মাতৃ-চিন্তা থেকেই অনেক খাবারের জন্ম।  আজ আমরা এমন বহু খাবার খাই, যার উদ্ভাবনের সঙ্গে মিশে আছে ইতিহাসের অনেক অশ্রু সজল উপাখ্যান। রুজির সন্ধানে দেশান্তরের পথ ধরা থেকে শুরু করে দেশ হারিয়ে কখনো উদ্বাস্তু বা দাসত্বের শৃঙ্খলিত জীবন। অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর দুর্ভিক্ষ, অনাহার আর মৃত্যু, এ

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া।। সম্পাদনা: অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
"...সামনে তাকিয়ে দেখি আমরা একটা খালের ধারে উপস্থিত হয়েছি। সাধারণ সেচ খাল, কিন্তু এখানে বেশ চওড়া। এই ধরনের সেচ খাল বেশি বৃষ্টির দিনে নিকাশি খালেরও কাজ করে—জমির বাড়তি জল টেনে নেয়। এটা বোধহয় খালের ঘাট। খালের ওপারেও ফসলের ক্ষেত, যতদূর চোখ যায় বসতি চোখে পড়ে না। একটা মাঝারি নৌকা ঘাটে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা। ঘাটের ধারে জনমনিষ্যি নেই। শুধু একটা বেড়ার চিরাচরিত দোকান। সামনে বাঁশের মাচা। কোথায় এসে পড়লাম রে বাবা! আমরা দোকানটার দিকে এগোলাম । কাছে যেতে দোকানির দেখা পাওয়া গেল। সব শুনে দোকানি বললেন— 'আপনারা বৈকুণ্ঠপুর থেকে যে রাস্তা সোজা ধরেছিলেন সেই রাস্তায় মিনিট পাটেক আগুলেই বাঁয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে ঐ রাস্তা ধরতে হতো। আপনারা সোজা আসে পড়েছেন।' আমাদের শরীরে শক্তি ছিল না। বসে পড়লাম বাঁশের মাচায়। -“কিছু খাবার মতো পাওয়া যাবে ?? —চা আর লেড়ো বিস্কুট।' –‘শুধু এই ?’ হতাশা ফুটে উঠল বিনোদের গলায়।  —এখেনে আর কী পাওয়া যাবে বলেন? বিক্কিরি করি তো পান-বিড়ি, কেউ এক-আধ কাপ চা খায় বলে ব্যবস্থা রাখা।” “কোনো খাবার রাখেন না?” —“এই ঘাটে আসে কে? এই যে এতটা পথ আলেন, একডাও লোক চক্ষে দেখছ

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।

Image
"নদীর কথা ভাবলেই তিস্তার কথা মনে পড়ে। আর তিস্তার কথা মনে করলেই মনে পড়ে যায় প্রথম তিস্তা দেখার কথা। বাড়ি থেকে দুপুরবেলায় বেরিয়ে কালিম্পঙ যাওয়া হয়েছিল। পাহড়ের ধার দিয়ে খাড়া সরু পথ, ডানদিকে অনেক নীচে নদী, মেঘে কুয়াশায় আচ্ছন্ন অন্ধকার। নীচে তাকাতে ভয় করে। যদি পড়ে যাই? তাহলে কী হবে? সেই থেকে কতদিন চলে গেল, সরু পথ চওড়া হলো, পাহাড় নদী কিছুই আর আগের মতো থাকলো না, কিন্তু তিস্তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকলো ভয়, অচ্ছেদ্য বন্ধনে। ফি বছর খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে প্রায় নিয়ম করে নদীতে পড়ে যায় ছোটো-বড়ো গাড়ি, মানুষ। নদী যাদের নেয় তাদের সবাইকে খুঁজে পাওয়া যায় না, বিশেষত বর্ষায়। ডুবুরি নামে, ভেলা নামে, নৌকা নামে, জল তোলপাড় করে ফেলা হয়, তবু পাওয়া যায় না। তিস্তার কথা মনে করলে দ্বিতীয় যে বিষয়টা মনে পড়ে সেটা আটষট্টির বন্যা। তখন পুজোর ছুটি চলছে, আমরা অনেক দূরের চুনারে, একটা পাথুরে টিলার মাথায় একটা ছোটো বাড়ি ভাড়া নিয়ে আছি। তখনও ওইরকম বেড়ানো হতো। অতদূর থেকে এদিকে কী হচ্ছে খবর পাওয়া যেত না, তাও খবরের কাগজ কিংবা রেডিও কিছু একটা মারফত জানা গেল বন্যায় তছনছ হয়ে যাচ্ছে পাহাড়-ছো

বাঙালির পথঘাটের খাওয়া-দাওয়া।। সম্পাদনা : অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
"রেডিওর ঘুম ভাঙানিয়া সিগনেচার টিউন এই জনপদের ঘুম ভাঙায় যখন, তখন নদীর ওপারের প্রাচীন শহর দাইহাটের ছিন্নমূল অ্যাসবেস্টস চালা থেকে বেরিয়ে পড়ে লালসাধু, কালোসাধু। গন্তব্য, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি। কিছু সময়ের মধ্যে তারা খেয়া নৌকায়। পাড়ি দেয় এই গঞ্জের দিকে। ঈশ্বর পাটনি আইসক্রিম বাক্সের ডালায় বর চায়— 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে- ভাতে।' সর্বাঙ্গে গঞ্জের গন্ধ মাখা এ জনপদ, মাটিয়ারি, জেলা নদীয়া। সকাল হলেই ঘরে ঘরে পিতল শিল্পের ঠুংঠাং অহংকারী শব্দে ধ্রুপদী চোখ মেলে তাকায় আশেপাশে। পড়শির ঈর্ষা। ব্যাঙ্ক পোস্ট অফিস-ইস্কুল-লাইব্রেরি। স্টেথোস্কোপ-মার্গো সাবান-জামা-জুতো-সিমুই। উৎসবে- শ্মশানে, রামসীতা-রাধাকৃষ্ণে, গঙ্গার শুদ্ধ জলে- আশপাশের বিস্তর জনপদ মাটিয়ারিমুখী।  ........................... এ-জনপদ এক সময় ঘাটের ধারে সারি বেঁধে অবাক বিস্ময়ে দেখেছিল হিলারির জেটবোটে গঙ্গা সফর। দাঁইহাট, কাটোয়া পাড়ি দেওয়া দাঁড়-বৈঠা-পালের গল্পের আসর, ছিপছিপে পানসিগুলির চপলতা। হাইস্কুলের দু-চারজন মাস্টারমশাই এর হাত ধরে ভুটভুট করতে করতে মোটরবোট হল যখন, গাঁয়ের লোক স্মৃতি হাতড়ে নাম দিল তার — হিলারি। &#