আহাম্মকের খুদকুড়ো। দুর্লভ সূত্রধর

মণিবাবু স্যার বলেছিলেন— ‘নিজের দুঃখের কথা মানুষকে বোলো না বাবা, অন্য-কারও কথা মানুষ শুনতে চায় না, শুধু নিজের কথা বলে আর অন্যের দুঃখের সুযোগ নেয়। যদি কাউকে বলার না পাও তো দেওয়ালের কাছেও বোলো না— ঐ দেওয়ালও তো মানুষের তৈরি! যদি বলতেই হয়, নদীর কাছেই বলা যায়। নদী সব শোনে তারপর সব দুঃখ নিয়ে বয়ে চলে যায়, ফিরে তাকায় না মোটে।’
নদীর কাছে!
নদী মানে তো আমাদের রূপেশ্বরী। 
বিকেলবেলা লাইব্রেরি থেকে বইটি সংগ্রহ করে চলে যেতাম রূপেশ্বরীর সান্নিধ্যে। খেয়াঘাটের পাশে, ওদিকে পাকুড় আর এদিকে যেখানে পিটুলি গাছটা আশপাশের দোতলা বাড়ির মাথা ছাড়িয়ে মেলে দিয়েছে তার ডালপালা। গ্রীষ্মমণ্ডলের ঈষৎ এই পাথুরে দেশে গাছটা সারাদিন জলজ হাওয়া গায়ে মেখে হাত-পা নেড়ে চলে। গাছের শিকড়েরা রূপেশ্বরীর ঢালের মাটি-বালি আঁকড়ে নেমে গেছে যেখানে নেমে গেছে জলের দিকে, সেখানে ঘাসের আস্তরণ। আমি বইটা কোলে নিয়ে বসি। বই পড়া হয় না। 
বিকেলের আলো, ওপারে নির্জন খেয়াঘাট থেকে যে মাটির রাস্তাটা চলে গেছে গাঁয়ের দিকে— সেই পথটির সুদূরতা, পিটুলি গাছের পাতায় শব্দ জাগিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাস, রূপেশ্বরীর জলে জেগে থাকা জীবনের কলকল শব্দ— সব মিলিয়ে কোথাও একা হওয়ার আয়োজন! বইটা খোলা থাকে কোলের ওপর। রূপেশ্বরীর কাছে কোন দুঃখের কথা বলার ছিল— তা আর মনে পড়ে না।

আহাম্মকের খুদকুড়ো
দুর্লভ সূত্রধর

প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
অলংকরণ: দুর্লভ সূত্রধর
মুদ্রিত মূল্য: ২৮০ টাকা 

#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।