Posts

Showing posts from December, 2022

মেস-হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
"আমাদের হোস্টেলবাসের সময়ই পার্ক সার্কাসের মোড়ে আরসালান রেস্তোরা খোলা হয়। একদিন ঠিক হলো সবাই মিলে গিয়ে খেয়ে আসা হবে। মুশকিল হচ্ছে আমরা প্রায় সব্বাই ট্যাঁকখালির জমিদার ছিলাম। হোস্টেল আর ক্লাস চার্জ বাদ দিয়ে কলকাতায় ফুটানি করার মতো টাকা পয়সা হাতে থাকত না। তা কখনও সখনও জনাব এরদোগাদেরও তো নিজেকে গণতান্ত্রিক বলতে সাধ জাগে, সেই সুবাদেই একবার আরসালান যাওয়া হলো। গিয়ে দেখলাম ওখানকার ওয়েটারগুলো আমাদের থেকে পরিষ্কার জামা পরে ঘুরছে। বারো ক্লাসে ইংরেজিতে দুপেপার মিলে একচান্সেই পাশ করার অপরাধে সব্বাই ইংরেজিতে লেখা মেনুকার্ডটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। ভাবখানা এমন, 'হে তালেবের, অর্ডার দিয়া আমাদিগকে উদ্ধার করুন।' কিন্তু আমার দৌড় তো বহরমপুর বাস স্ট্যাণ্ডের আদি ঢাকা হিন্দু হোটেল আর নিতাইয়ের চপের দোকান অব্দি। কাতলা মাছের কালিয়া কি এঁচোড়ের চপ অব্দি বুঝতে পারি। পেয়াঁজির গুণমান নিয়ে বক্তিমে ঝাড়তে পারি। আরেকটু তোল্লাই পেলে হয়ত বিষ্ণু দে-ও দু-একলাইন অথবা বঙ্গ রাজনীতিতে দুর্বোধ্য কোনো দলের পলিটিক্যাল স্ট্যাণ্ড বোঝার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু জেলুসিল খাওয়া পেটে হরেক মোগলাই খানার মর

ঢাকার মেস হোস্টেল । মেস হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন

Image
দেখতে গেলে নগরায়নের প্রক্রিয়াগত দিক থেকে ঢাকা শহরের জন্য আলাদা করে বলার কিছু নেই। সমাজবিজ্ঞানগত নিয়মেই ঢাকা শহরের আড়ে বহরে বিস্তার ও জন-সমাগমের আকীর্ণতা। ক্রমেই ঢাকা 'বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি'র শহর হয়ে ওঠে। প্রথমে এসেছিলেন অর্থ-সন্ধানী স্বার্থবাহরা, প্রশাসনিক দপ্তরগুলিতে পেশাসন্ধানীরা, উচ্চ ও আধুনিক শিক্ষাগ্রহণেচ্ছুরা — তারপর আরও কত শ্রেণীর মানুষ। গড়ে উঠছিল এদের জন্য আবাস — বাসাবাড়ি মেসবাড়ি- হোস্টেল-ব্যারাক-বোর্ডিং হল ইত্যাদি। প্রথমদিকে ঢাকা শহরে পেশাসফল পিতা বা আত্মীয়দের সঙ্গে বাসাবাড়িতে ছাত্রদের বাস, কখনও কোনো স্বচ্ছল আত্মীয় বা পরিচিতের আশ্রয়ে। তারপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থাপনা, প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানেই ছাত্রদের জন্য বাসগৃহ স্থাপনার উদ্যোগ, পাশাপাশি চাকরিজীবীদের নিজস্ব-ব্যবস্থায় আশ্রয়-সন্ধান — ক্রমেই বহিরাগত বিপুল- সংখ্যক মানুষের জন্য পেশাদারিত্বের শর্তে আবাসস্থলের সংগঠিত বন্দোবস্ত — মোটামুটি এই ছিল সব নগরের মতোই ঢাকার নগরায়নকালে যৌথাবাস স্থাপনের প্রক্রিয়া। ঢাকায় প্রথম এই ধরনের যৌথাবাস করে গড়ে উঠেছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। ১৮৪১ সালে ঢাকা কলেজের ভিত্তি

শ্যাম বাউল। সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
তখন প্রত্যেক গৃহেই এক একটা চরকা থাকিত, ব্রাহ্মণীগণ অবসর পাইলেই পৈতা কাটিতেন, সূক্ষ্ম পৈতার তখন অত্যন্ত আদর ছিল এবং অনেক উপায়হীনা বিধবা ব্রাহ্মণী শুদ্ধ পৈতা বেচিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেন। সূতা কাটার এই রকম প্রাদুর্ভাব ছিল বলিয়া কোনো কোনো গ্রামে শ্যাম বাউলের কীর্তন হইবার কথা উঠিলে পল্লীবাসীগণ বলিত— বাজলো শ্যাম বাউলের খোল যত মাগী চরকা তোল।  রমণী সমাজে শ্যাম বাউলের কীর্তনের এতই প্রতিপত্তি ছিল। কৃষ্ণনগরের রাজবংশ চিরকাল শক্তিমন্ত্রোপাসক। ভবানন্দ মজুমদার এই বংশের আদি পুরুষ, মজুমদার মহাশয় স্বয়ং অন্নপূর্ণার উপাসক ছিলেন, অন্নপূর্ণা শক্তিরই রূপান্তর, কৃষ্ণনগরের রাজপরিবার বিভিন্ন স্থানে কালীমূর্তি এবং শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠাপূর্বক মন্দির নির্মাণ করিয়া দিয়াছেন এ দৃষ্টান্ত বিরল নহে; তন্মধ্যে কৃষ্ণনগরে সুবৃহৎ আনন্দময়ী কালীর মন্দির ও কৃষ্ণগঞ্জের সন্নিকটে শিবনিবাস নামক স্থানের মন্দিরত্রয়ের কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে। কিন্তু পক্ষান্তরে এই বংশে বিষ্ণুভক্তিরও নিদর্শন বিরল নহে, কৃষ্ণনগরের সুবিখ্যাত বারোদালে ইহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এই বারোদোল উপলক্ষে লক্ষ্মী নারায়ণের দ্বাদশটি বিভিন্ন নামীয় মূর্তি কৃষ্ণনগর

গদাই পণ্ডিত। সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
গোবিন্দপুরের গদাই পণ্ডিত বিখ্যাত লোক। তাঁহার পূর্ণনাম গদাধর দে। কিন্তু গদাই পণ্ডিত না বলিয়া গদাধর দে বলিলে কেহ তাহাকে চিনিতে পারে না। গদাই পণ্ডিতের বেতখানি গদারই সূক্ষ্ম সংস্করণ। তিনি যখন স্কুলের ছোটো ছোটো ছেলেদের ওপর কারণ-অকারণে সেই ভীষণ গদা উদ্যত করিতেন, তখন অনেক বালকের মূর্ছার উপক্রম হইত। গদাই পণ্ডিতের গদা-চালন-কৌশল জ্ঞাত হইয়া স্কুলের সম্পাদক একদিন তাঁহার একটাকা জরিমানা করিয়াছিলেন—সেইদিন হইতে দুগ্ধপোষ্য বালকবৃন্দের পৃষ্ঠে তিনি তাঁহার গদার শক্তি পরীক্ষার প্রলোভন ত্যাগ করিলেও তাঁহার প্রহরণখানির মায়া ত্যাগ করিতে পারেন নাই; এবং এখনও তিনি স্কুলে আসিয়া যখন-তখন তাহা মস্তকের উপর আন্দেলনপূর্বক শিশু হৃদয়ে মহা ত্রাসের সঞ্চার করেন। গদাই পণ্ডিত ষোলো বৎসর বয়সের সময় গোবিন্দপুরের মধ্য বঙ্গবিদ্যালয়' হইতে ছাত্রবৃত্তি পাশ করিয়া গত সিকি শতাব্দীর অধিককাল গোবিন্দপুর ইংরেজি বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় পণ্ডিতের পদে নিযুক্ত আছেন। এই ত্রিশ বৎসর কাল চাকরি করিয়া তাঁহার বেতন আট টাকা হইতে মাসিক দশ টাকা হইয়াছে। কিন্তু এই দশ টাকা মূল্যের পণ্ডিতের কথাবার্তা শুনিয়া মনে হয় বিশ্ব সংসারটিকে তিনি 'মধুপর্কে

ঘোষাণী। সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
অনেককাল পর্যন্ত বামা আমাদের বাড়ি দুধের যোগান দিয়াছিল, যখন সে প্রথম আমাদের দুধ দিতে আরম্ভ করে, তখন আমরা বাংলা ইস্কুলের ছোকরা। তাহার বয়স বোধ করি তখন ত্রিশ পার হইয়া থাকিবে, তাহার সুদীর্ঘ চারি হস্ত পরিমিত দেহ, তাহার ওপর এক অপরিচ্ছন্ন শাড়ি — আজীবনে তাহা আর রজকের করস্পর্শে পবিত্রতা লাভ করিতে পারে নাই, মস্তকে অপরিসর অঞ্চলের সম্মুখে ও নিম্নে রুক্ষ চুলের গোছা, নাসিকায় লাল ও সবুজ পাথর বিশিষ্ট ঝুমকো পরানো দুল্যমান নথবতুল, এবং কক্ষে বংশচোদা সমলঙ্কৃত দুগ্ধপূর্ণ প্রকাণ্ড এক কলস দেখিয়া মনে। হইত রক্ষাকালী স্বয়ং ঘোষাণী মূর্তিতে পল্লীশিশুগণের জীবন রক্ষার্থ গৃহে গৃহে সুধাবিতরণ করিয়া ফিরিতেছেন— সেই সুধায় এত পর্যাপ্ত পরিমাণে জল সংমিশ্রিত। থাকিত যে তাহা গলাধঃকরণ করিতে কোনো শিশুরই প্রবৃত্তি হইত না, শিশুর পিতামাতাগণ ঘোষাণীর দুগ্ধ বিশ্বেশ্বরকে দান করিয়া নিশ্চিন্ত ছিলেন। বামা ঘোষাণী গোবিন্দপুরে সর্বজনপরিচিতা ছিল। গোবিন্দপুরের সীমানার মধ্যে কে তাহাকে না চিনিত! কোন পাড়ার অন্তত দুই এক পরিবারেও সে দুধের যোগান না দিত! সে তাহার গৃহস্থালির ষোলোআনা মালিক ছিল, আর তাহার স্বামী কালাচাঁদ স্বগৃহে নিতান্ত নির্লিপ

সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ।। সম্পাদনা: শতঞ্জীব রাহা।।

Image
"সার্কিস্তাবয় মাইকেল শিবু মুর্মুর মৃতের উদ্দেশে ঘন্টাধ্বনি শুনে ঘুম ভেঙে গেল যোশেফ ইউসুফের। এখনও রাত্রি শেষ হয়নি। তাকিয়ে দেখল চারিদিকে। এখনও রাত্রি ধূসর চাদর গায়ে খোলা জানালার বাইরে দণ্ডায়মান। মনে করবার চেষ্টা করল, শব্দটা সে নিদ্রায় না জাগরণে শুনেছে। স্বপ্নের ভিতর নয় তো? কিন্তু না, শব্দটা এখনও হচ্ছে। ধাতব শব্দ... সেই একই লয়ে, পরিচিত সুরে বেজে চলেছে ঢং-ঢং-ঢং-ঢং-ঢং... ইউসুফ মরিয়মকে ডাকল—'এই ওঠো, ওঠো—' —'কী হলো?' ধড়মড়িয়ে উঠে প্রশ্ন করল মরিয়ম। —'কেউ গেল মনে হচ্ছে। শুনতে পাচ্ছ না ঘন্টা বাজছে।' —'হ্যাঁ, তাই তো—চলো বাইরে বেরিয়ে দেখি।' যোশেফ ইউসুফ আজকাল লাঠি ছাড়া হাঁটতে পারে না। মাথায় পিথেনের পাশেই রাখা আছে সেটা। মরিয়ম আগে উঠেই দরজা খুলেছে। যোশেফ লাঠি ঠুকে ঠুকে এসে দাঁড়ায় মরিয়মের পাশে। গির্জেতে যাওয়ার সদর রাস্তার পাশেই তাদের বাড়ি। বাঁ হাতে চৌমাথা। ডান হাতে সোজা গির্জেতে যাওয়ার ইট বাঁধানো রাস্তা। ভোর হয়ে আসছে। পূর্বদিকে একটি দিন শুরু হওয়ার আশ্চর্য দ্যুতি। এসময় চৌমাথায় গাব্রিয়েল তার চায়ের দোকানের উনুনে আঁচ দেয়। ধোঁয়া ওঠে। ওপাড়ায

মেস-হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন।। সম্পাদনা: সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।

Image
"পরদিন সকালে কিন্তু ঠাকুরকে মাছের কথা বলবার সুযোগ পেলাম না। তাকে একান্তে পেলাম একেবারে খাবার সময়ে। রাত্রিকালে সকলে একত্রে আহার করে দিনের বেলা কিন্তু সে যার প্রয়োজনমতো যখন সুবিধে খেয়ে নেয়। সে সময়ে বেলা এগারোটায় সময়ে প্রেসিডেন্সি কলেজ আরম্ভ হতো, বাকি সব কলেজই শুরু হতো সাড়ে দশটা বেলায়। সুতরাং আমি যখন খেতে বসলাম, তখন প্রায় সকল সদস্যই আহারাদি সমাপন করে বেরিয়ে গেছে। ঠাকুর থালা এনে আমার পাতের সামনে রাখলে। পরিপাটি ক'রে বাড়া অন্ন, বেশি বেশি ব্যঞ্জন, চার খণ্ড মৎস্য। তা-ও প্রত্যেক খণ্ডই বৃহদাকার, পূর্বরাত্রে যে আকারের মাছ খেয়েছিলাম তার অন্তত দেড়া।  থালা রেখে আমার সামনে বসে স্মিতমুখে ঠাকুর বললে – বাবু, যদি রাত্রেও এখানকার মতো একটু আগে-পাছে করে বসেন, তা হলে একটু জুৎ করে খাওয়াতে পারি।'  চারখানা মাছ দেখেই মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল, তার উপর এই কথা শুনে পিত্ত জ্বলে গেল। তথাপি নুতন লোক আমি, কতকটা নরম সুরেই বললাম—'তুমি কি মনে করছ ঠাকুর, মাছের লোভে আমি সকলের পরে খেতে বসেছি?'  সবেগে মাথা নেড়ে জিভ কেটে ঠাকুর বললে — 'রাম। রাম। তাই কখনও মনে করতে পারি? মাছের আপনার কি অভাব?

মেসবাড়ির সত্যান্বেষী। মেস-হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন

Image
এ শহরের বয়স তো কম নয়। এ শহর তার বুকে ব্রিটিশদের পদধ্বনি সয়েছে, সাক্ষী থেকেছে দুটো বিশ্বযুদ্ধের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সাম্প্রদায়িক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা, দেশভাগ, ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের হাহাকার— এ শহর সবকিছুরই নীরব সাক্ষী। প্রাচীন বট বৃক্ষের মতো সব কিছুকেই প্রত্যক্ষ করেছে সে। আবার বটবৃক্ষ যেমন পাখালিদের আশ্রয় দেয়, তেমনি বিভিন্ন সময় আশ্রয় দিয়েছে এ শহরে আসা মানুষদের। উৎপাটিত চারাগাছকে নতুন মাটিতে প্রোথিত করলে যেমন দিব্যি শিকড় গজিয়ে নতুন স্থানকে আপন করে নেয়, বাইরে থেকে আসা মানুষজনও একটু করে তার হৃদয় মূল প্রোথিত করেছে এ শহরের বুকে। ক্রমে এ শহর হয়ে উঠেছে তাদের ভালোবাসার শহর। এমনি ভাবেই আজ থেকে প্রায় একশো পাঁচ বছর আগে মুঙ্গের থেকে এক কিশোর এসেছিলেন ও শহরে। উচ্চশিক্ষার জন্য। থাকবেন কোথায় এ শহরে? বহিরাগত মানুষজনের জন্য এ শহরে সস্তায় থাকার ব্যবস্থা- এ শহরের হস্টেল আর মেসবাড়ি। এ কিশোরও আশ্রয় নিলেন সেখানেই। ক্রমে এ শহরের কাছে কিশোর আর বহিরাগত রইল না। পড়াশুনায় ছেলের তেমন মন নেই। প্রতি সপ্তাহে সিনেমা থিয়েটার, টেনিস, ক্যারাম, মেসের বন্ধুদের সাথে রাত জেগে আড্ডা আর অফুরান কাব্যচর

একটি শিশির বিন্দু

Image
পায়রা ওড়াতে পারতো বাবুদা। বাড়ির উঠোন থেকে পায়রা উড়িয়ে, নিখুঁত হাততালিতে আবার নামিয়ে নিয়ে আসতো তাদের। তারপর ভাড়া বাড়ি ছেড়ে বাবুদারা নিজেদের নতুন বাড়িতে উঠে গেলে, নিভে গেল একটা যোগাযোগ। স্কুল পড়ুয়া সিক্স-সেভেনের কাছে হাইস্কুলের বাবুদা ছিল একজন নিখাদ বিস্ময়। ফুটবল মাঠে ঘামে ভেজা শরীরের মতো আকর্ষণ। তার দীর্ঘদিন পরে এই নিভে যাওয়া যোগাযোগ বাতি পায় লাস্ট লোকাল ট্রেনে। শীতকাল, তবু দরজাতেই দাঁড়ায় দু’জন। হাতে লাল তাগা। সেই ঠোঁট ছড়ানো হাসি। শৈশবের সেই ম্যানড্রেক! “কতদিন পর দেখা হল বাবুদা! পায়রা ওড়াও এখনও?” “ধুর, পাগল! তোর চশমা হল কবে? বাড়িতে আয় একদিন, গল্প হবে!” বাড়িতে যাওয়া হয়। বলে ফেলা হয় না-পারাগুলো সব। কলেজ, বাড়ি, টিউশন, আড়চোখ। সবাইকে লুকিয়ে কবিতা। একা একা গঙ্গার ধার। — বড় হওয়াটা ভাল লাগছে না বাবুদা। চারপাশে এত ভিড় ভাল লাগছে না। — তাতে কী? তুই একটু একলা হাঁট, বাবুদা বলে। নিজের সঙ্গে একলা হওয়া একটা আর্ট। নিজের ধর্মটা বুঝতে পারলেই নিজেকে খানিকটা বুঝতে পারবি তুই। — ধর্ম কী বাবুদা? আমি তো ঠাকুর মানি না! — আরে ধুর! ঠাকুর-দেবতা মানাটা ধর্ম নাকি? ধর্ম হল, যা ধারণ করে। তুই তোর ভিতরে ভালবাসা ভরে নে, স

মরুনির্ঝর। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য

Image
মরুনির্ঝর সূর্যনাথ ভট্টাচার্য প্রচ্ছদঃ সৌজন্য চক্রবর্তী মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৫০ টাকা #সুপ্রকাশ

নাম তার কমিউন। অনন্ত জানা। মেস হোস্টেল ঘটিত এ বাঙালি জীবন

Image
"রুশ বিপ্লবের অভিঘাত, সমাজতান্ত্রিক তাত্ত্বিকতার প্রসার, সংগঠন গড়ে তোলার তাগিদে সর্বক্ষণের রাজনৈতিক কর্মী হওয়ার দায় এবং সর্বোপরি 'পেশাদার বিপ্লবী' হওয়ার লক্ষ্যে ক্রমান্বয়ে পার্টি অফিস ও অন্যান্য কমিউনিস্ট রাজনৈতিক কর্মীদের যৌথাবাস গড়ে তোলা হয়। হয়তো কমিউন অভিধাটি রুশ বিপ্লবের উদ্দীপনার অবদান। পার্টি-বিভাজনের আগে পরে ছোটোবড়ো নানা ধরনের যৌথ আবাসে— এই সব কমিউনে স্থায়ী বা অস্থায়ীরূপে থেকেছেন মুজফ্ফর আহমদ, সরোজ মুখোপাধ্যায়, মুহম্মদ আবদুল্লাহ রসুল, মহাদেবপ্রসাদ সাহা, নীরদ চক্রবর্তী, প্রমথ চক্রবর্তী, প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসু, কমল সরকার, প্রমোদ দাশগুপ্ত, রবীন সেন, হাসি দত্ত, বাসবপুন্নাইয়া, বি টি রণদিভে, পি সুন্দরাইয়া, নাম্বুদ্রিপাদ, সুকুমার গুপ্ত, বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়, নন্দগোপাল ভট্টাচার্য, মহম্মদ ইসরাইল, রণেন সেন, বিনয় রায়, কনক দাশগুপ্ত, মলিনা সরকার, বিভূতি গুহ, শচী লাহিড়ী, বেলা চট্টোপাধ্যায়, সোমনাথ লাহিড়ী, বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়, ঊষা দত্ত, জলিমোহন কল, মণিকুন্তলা সেন— পরবর্তী যুগের বিমান বসু প্রমুখ অজস্র নেতা-কর্মী এমন-কী পরবর্তী যুগের বিখ্যাত শিল্পী সোমনাথ হোর

একটি শিশির বিন্দু

Image
সম্ভবত ইংরেজরা কিছুতেই চিনা সাহেবের নাম ঠিক মতো উচ্চারণ করতে পারত না। ইংরেজদের উচ্চারণে ইয়াং দাইজাং হয়ে যান টং আছু। সেই থেকেই চিনা আছু সাহেবের নামেই এলাকার নাম হয়ে যায় ‘আছিপুর’। যদিও পরবর্তীতে সেই চিনা বসতি সরে যায় কলকাতারই ট্যাংরা অঞ্চলে, যে জায়গা এখন চায়না টাউন হিসেবে বিখ্যাত। কিন্তু সব ঠিক থাকলে আছিপুরই হতে পারত একটা বিশিষ্ট শিল্পাঞ্চল এবং ভারতে চিনা মানুষদের বাসভূমি। বস্তুত, একটা সময় পর্যন্ত চিনা জুতো ছাড়া মন ভরত না অনেক বাঙালিরই। কাঠের কাজ বা কাঁচ শিল্পেও কাজ করতেন অসংখ্য চিনা শ্রমিক। কিন্তু চিনি, চিনামাটি, চিনাবাদাম ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন এই দেশে চিনাদের অস্তিত্বকে প্রমাণ করলেও, অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে ভারতবর্ষে কোনও চিনা উপনিবেশের সন্ধান পাওয়া যায় না। বর্তমানে চিনা বসতি হিসেবে বিখ্যাত কলকাতার যে অঞ্চলটা, সেটাও গড়ে ওঠে অনেক পরে। অথচ শুধু কলকাতা বা বাংলাই নয়, ভারতবর্ষেই প্রথম চিনা বসতি গড়ে উঠেছিল যেখানে, সেই জায়গা এবং তার স্থপতির নাম প্রায় মুছে যাওয়ার জোগাড় এখন ইতিহাস থেকে। সেই সময় কলকাতার ইংরেজ সাহেবরা পা বাড়িয়েই আছে চিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। ক্যান্টনের বিখ

সেকালের চিত্র-চরিত্র

Image
গ্রামীণ বঙ্গই দীনেন্দ্রকুমারের স্ববিশ্ব, সেখানে তিনি স্বরাট-সম্রাট। বিষয়ের, চরিত্রের, দৃশ্যের বর্ণনাকে সানুপুঙ্ক্ষতায় রূপায়িত করার কাজে দীনেন্দ্রকুমার অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দীনেন্দ্রকুমার তাঁর দেখা চিত্রাবলীতে যেখানে নিজস্ব সমমান-নিঃসৃত বর্ণ লেপন করেন, কিংবা চােখের দেখার সঙ্গে নিজস্ব দর্শনকে অঙ্গীভূত করতে চান, নিছক দৃশ্যের সঙ্গে মেলাতে চান তার অন্তরার্থকে -- তখনই রচনাগুলি পাঠকের কাছে সেকালের সামগ্রিক ও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটটি সম্পর্কে সচেতনতা ও সতর্ক-প্রযত্ন দাবি করে। কিন্তু প্রায় সর্বত্র লেখক হিসেবে এমন এক বিষয়-সংগঠনের মধ্য দিয়ে দীনেন্দ্রকুমার পাঠককে নিয়ে যেতে চান, যাতে দেশ-কাল-সমাজের ইতি-নেতি চিহ্নিত হয়ে যায়। দীনেন্দ্রকুমার যে পল্লীবাংলাকে দেখেছিলেন, তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিষাক্ত নিশ্বাসে পুড়ে যাওয়া গ্রাম। যে গ্রামে অভাব, দারিদ্র্য আর বেঁচে থাকার অসংগতি পদে পদে। যে গ্রামে পুরোনো সমাজ ভেঙে গেছে অথচ নতুন সমাজ গড়ে ওঠেনি। তাঁর পর্যবেক্ষণের পরিসরে সমাজ-ইতিহাসের অনেকানেক উপাদান ও উপকরণ ছড়িয়ে আছে।  সব থেকে বড়ো কথা দীনেন্দ্রকুমারের লেখার পরতে পরতে মুদ্রিত হয়ে থাকে কৃষি ও গ্রামভিত্তিক সমাজে বাসক

দে পাড়ার মেলা। সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
দে পাড়া অতি ক্ষুদ্র গ্রাম, আমরা একেবারে মন্দিরের নিকট উপস্থিত হইলাম, মন্দিরের নিকট এক মাইলের মধ্যে কোনোদিকে বসতি নাই। চতুর্দিকে চষা জমি, তবে মন্দিরের চতুর্দিক জঙ্গলপূর্ণ, অশ্বত্থ, বট, তেঁতুল, বেল প্রভৃতি বড়ো বড়ো গাছেই এই জঙ্গল হইয়াছে; মন্দিরটি সমতল ভূমিখণ্ডের উপর নহে, একটি উচ্চঢিবির উপর, মন্দিরটি ক্ষুদ্র। ক্রমে যতই বেলা বাড়িতে লাগিল, চতুর্দিকস্থ নিকটবর্তী গ্রামসমূহ হইতে জন সমাবেশ হইতে লাগিল। আমরা একটি বৃক্ষতলে বিশ্রাম করিবার জন্য বসিলাম; কিয়ৎক্ষণ বিশ্রামের পর নিকটস্থ একটি সরোবরে স্নান করিয়া আসিলাম, তাহাতে জল যদিও অধিক ছিল না, কিন্তু তাহা শীতল ও পরিষ্কার। স্নান শেষ করিয়া কিঞ্চিৎ জলযোগ করা গেল, তাহার পর সেই জঙ্গলের মধ্যে ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিতে লাগিলাম। বড়ো বড়ো বৃক্ষ, তাহার তলদেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যাত্রীগণের বিশ্রাম স্থান। বৃক্ষতলেই নানাবিধ দ্রব্য বিক্রয়ার্থ আনীত দেখিতে পাইলাম আম, লিচু, তালের শাঁস, বঁইচি প্রভৃতি ফল স্তূপাকারে রহিয়াছে, নানাবিধ মিষ্টান্ন দ্রব্যও দেখা গেল। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলি অখাদ্য। বেলা দুইপ্রহরের সময় তরমুজ, খরমুজ প্রভৃতি আরও অনেক ফল চারি-পাঁচ ক্রোশদূ

পাথারে। সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
ভৈরব প্রাচীন নদী। কিন্তু এমন বাঁক বোধ হয় বঙ্গের কোনো নদীতে নাই। নদীপথে যাইতে যাইতে নদীকূলে দুই একটি বটগাছ দেখিতে পাওয়া যায়, নদীর বাঁক ঘুরিয়া সেই বটতলায় আসিতে সমস্ত দিন লাগে, এরূপও দেখা গিয়াছে। একে মূল নদী পদ্মা জলাভাবে এই শাখায় যথেষ্ট জলধারা ঢালিয়া দিতে পারে না, তাহার ওপর এই রকম বাঁক, সুতরাং বৎসরের অন্যান্য ঋতুতে নদীতে জল থাকে না। কোথাও এক গলা, কোথাও এক বুক জল থাকে, তাহাও শৈবালদাম-সমাচ্ছন্ন। স্রোতের অভাবে নদীর অধিকাংশ স্থলই মজিয়া গিয়াছে। কৃষকেরা জলের ধার পর্যন্ত হল-চালনা করিয়া শস্য বপন করে, সেই জন্য নদী আরও অধিক ভরাট হইয়া উঠিয়াছে ; তাই শীর্ণকায়া অগভীর বক্রগামিনী স্রোতহীনা নদীর অবস্থা দেখিলে নিকটবর্তী পল্লীবাসীগণের চক্ষুতে জল আসে। দুই শত মণ বোঝাই নৌকাও নদীপথে চলিতে পারে না, স্থূল শৈবাল বা টোপা পানার স্তূপ ভেদ করিয়া পল্লীবাসীগণ নদীপথে নৌকারোহণে গ্রামান্তরেও যাইতে পারে না; শৈবালদলে দাঁড় বাধিয়া যায়, পালেও নৌকা চলে না। বন্ধনদী ম্যালেরিয়া ও মশকের আশ্রয়দুর্গে পরিণত হইয়াছে। বর্ষাকালে কোনো কোনো বার নদীতে অল্প জল আসে, তখন নদীবক্ষ যৎসামান্য স্ফীত হইয়া ওঠে মাত্র, তাহাতে নদীবক

শীতের দিনে পল্লীগ্রামে । সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
গরুর গাড়ি সুদীর্ঘ নয় ক্রোশ পথ অতিক্রম করিয়া যখন গ্রামের সন্নিহিত হইল, তখন পৌষের রাত্রি প্রায় শেষ হইয়াছে। সন্ধ্যার পর রেলের স্টেশন হইতে যাত্রা করিয়া এই গরুর গাড়িতে সমস্ত রাত্রি কাটাইয়াছি। গাড়ির 'ফড়ের' উপর নূতন ধান্যের 'বিচালি' পুরু করিয়া বিছানো আসন, তাহার উপর বিছানা আমার সর্বাঙ্গ একখানি বিলাতি কম্বলে আবৃত, আমি ‘চোদ্দ পোয়া' লম্বা হইয়া গাড়িতে নিদ্রা যাইতেছিলাম। গরুর গাড়ির নাম শুনিয়া যাঁহাদের হৃৎকম্প হয়, তাঁহারা শুনিয়া বিস্মিত হইবেন—সমস্ত রাত্রির মধ্যে আমার সুখনিদ্রা ভঙ্গ হয় নাই। এই রকম শীতের রাত্রিতে যে গরুর গাড়িতে চড়িয়া আরাম আছে— ভুক্তভোগীরা, এ কথা অস্বীকার করিবেন না। অন্ধকারে সমস্ত প্রকৃতি সমাচ্ছন্ন; সম্মুখের পথ দেখা যায় না, সুদীর্ঘ পথে—এই অন্ধকার শীতের রাত্রে —জনমানবের সাড়া-শব্দ নাই, কেবল ঊর্ধ্বে নৈশাকাশে লক্ষ লক্ষ উজ্জ্বল নক্ষত্রের শুভ্র-দীপ্তি। সপ্তর্ষিমণ্ডল স্নেহোজ্জ্বল নতনেত্রে ধরণীর দিকে চাহিয়া আছেন— যুগ যুগ ধরিয়া এমনভাবেই চাহিয়া আছেন। তাঁর অপরিবর্তনীয় ভাব। শৈশবের সুখের কথা মনে পড়িল, যৌবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা মনে পড়িল, অবশেষে জীবনে

পূজার ছুটি। সেকালের চিত্র চরিত্র

Image
"সারাবছর বিদেশে কাটাইয়া পূজার ছুটিতে যেদিন বাড়ি আসিলাম, সেদিন শারদীয়া শুক্লা তৃতীয়া। আমার কার্যস্থান হইতে বাড়ি আসিতে হইলে একটা নদী পার হইতে হয়, এই নদী পার হইয়াই আমাদের গ্রাম। অন্যান্য বারের ন্যায় এবার আমাদের এই নদীতে বেশি বান হয় নাই, জল অল্প বাড়িয়াছিল, এখন শুকাইয়া যাইতেছে। দূরবর্তী পদ্মাতীরে থাকিয়া নদী সম্বন্ধে আমার ধারণাটা কিছু প্রশস্ত হইয়াছে ; বর্ষার সেই বিশালকায়া, পলিতোয়া, কলগামিনী, কামচারিণী, পর্বতনন্দিনীর ক্রোড়দেশে কালাতিপাত করিয়া তাহার এই ক্ষুদ্র শাখাটিকে আর নদী বলিয়া ধারণা হয় না। তথাপি এই ক্ষুদ্র তরঙ্গিনী আমাদের গ্রামের নদী, আমরা আবাল্য তাহার সহিত পরিচিত, এখনও মনে। পড়ে কতদিন আমরা সকাল সকাল পাঠশালা হইতে পালাইয়া এই নদীর জলে বাল্যসাথীগণের সঙ্গে মাতামাতি করিতাম, এবং বৈশাখের বৈকালে ঝড় উঠিলে পাঁচ-সাত বন্ধুতে একত্র হইয়া পরিধান বস্ত্র আজানু উত্তোলনপূর্বক ইহার সংকুচিত জল পার হইতাম এবং বর্গির হাঙ্গামার মতো ওপারের দত্তদের আমবাগানে ছুটিয়া পড়িতাম। সন্ধ্যাকালে যখন নদীর ধারে আসিয়া আমার গাড়ি থামিল, তখন সন্ধ্যা অতীত হইয়াছে ; তখন চন্দ্র পশ্চিম আকাশে অশ্বত্থ গাছ

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
"টুকু বা তনয় কেউ বাড়িতে নেই। ফাইনাল পরীক্ষার পর তনয়ের টিকি খুঁজে পাওয়া ভার। টুকু গেছে প্রাইভেট পড়তে। বাড়িতে একা কুসুমিতা, তাঁর গনগনে অভিযোগ—বুক পকেটে টুকুর বখে যাওয়ার অকাট্য প্রমাণ— সহসা ভারি অসহায় বোধ করলেন শচীপ্রসাদ। বাবা হওয়া তো সোজা ব্যাপার নয়! দরজা ভেতর থেকে ভেজিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে চিঠিটা পকেট থেকে বের করলেন। হাত কেঁপে গেল তাঁর, আত্মজার গোপন চিঠি পড়তে গিয়ে নিজেকে তস্করের থেকেও হীন বলে মনে হলো। কুসুমিতা হয়তো এক সপ্তাহ ধরে চিঠিসহ উত্তপ্ত হচ্ছিলেন, আজ অগ্ন্যুৎপাতের সবটাই শচীপ্রসাদের অঙ্গে বর্ষিত হয়েছে। কাগজটার চেহারা দেখে আদৌ প্রেমপত্র বলে মনে হচ্ছে না। সাধারণ ময়লা ময়লা হলদেটে সাদা কাগজ। কাঁপা হাতে চিঠিটার ভাঁজ খুললেন --- বা! কী চমৎকার হাতের লেখা। ঝক্ ঝক্ করছে। সমান সুন্দর টানা টানা লাইন। কোনো সম্বোধন নেই। একটি মাঠের বর্ণনা। ধু ধু করছে ফসল কাটা মাঠ, আকাশ নেমে আসছে অনেক দূরে, মাঝে মাঝে দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে কয়েকটি এলোমেলো বাবলা গাছে। সূর্য তখন মাঝ আকাশ থেকে সামান্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। আমি হাঁটছি দিগন্তরেখার দিকে। শীতের এই রোদ বড়ো আরামদায়ক। এই এত বড়ো দি