Posts

Showing posts from October, 2023

খন্ডপ্রহর।। অবিন সেন।। শারদ নির্মুখোশ ১৪৩০।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
শারদ নির্মুখোশ-এ প্রকাশিত অবিন সেনের উপন্যাস ‘খণ্ডপ্রহর’ পড়ে লিখেছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। উপন্যাসের সঙ্গের এই ছবিটি এঁকেছেন সৌজন্য চক্রবর্তী। ............................................................... সপ্তদশ থেকে বিশ শতকের প্রথম অর্ধ পর্যন্ত ভারতের সামাজিক ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চিত্তাকর্ষক রূপান্তরের পর্ব। এর অন্তত এক শতাব্দী আগে থেকেই ফিরিঙ্গি বণিকরা এই ভূখণ্ডে পা রাখলেও ভারতীয় সমাজকে প্রভাবিত করতে সমর্থ হয়েছিল সতেরো শতক থেকে। এই ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। কিন্তু এর মধ্যে নিহিত চিত্তাকর্ষক উপাদানগুলি যে ঐতিহাসিক উপন্যাসের আকর, সেটা বোধ হয় বাঙালি লেখকরা তেমনভাবে উপলব্ধি করেননি। নইলে এই পর্বকে আধারিত করে লেখা বাংলা উপন্যাসের সংখ্যা এত কম হওয়ার কথা নয়। অবিন সেনের এই উপন্যাস সেখানে এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে পারত বা পুনর্লিখনে এখনও সে সম্ভাবনা প্রবল। আমার এই পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা দেব উপন্যাসটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর।  অবিনের লেখা আগে পড়িনি। এই উপন্যাসের প্রথম বাক্যটি থেকেই তাঁর গদ্য আমাকে প্রবলভাবে টানতে শু

বীরেশ্বর সামন্ত হত্যারহস্য।। শাক্যজিৎ।। শারদ নির্মুখোশ ১৪৩০।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
শারদ নির্মুখোশ ১৪৩০ এ প্রকাশিত শাক্য জিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' বীরেশ্বর সামন্ত হত্যা রহস্য ' পড়ে লিখেছেন পায়েল দত্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................................... বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য আদতে কোনো রহস্য নয়, পাপ ও তার পরিণামের বহুবিধ সমীকরণের আড়ালে এ এক আদ্যন্ত রাজনৈতিক উপাখ্যান। এ কাহিনীতে কোনো রহস্য নেই, আছে যা তাকে বলা যায় বংশানুক্রমে ক্ষমতায়ন ও শোষণের নাগপাশে আবদ্ধ শোষিত মানুষের জীবনের গল্প, তাদের অসহায়তা, লাঞ্ছনা, ক্ষমতাশালীর দুরন্ত চালে নির্মম মৃত্যু এবং প্রতিশোধপরায়ণতা। এ কাহিনী আসলে সামন্ত ও বাগালদের পুরুষানুক্রমিক সম্পর্কের খতিয়ান। কাহিনীর শুরু থেকেই খুনীর পরিচয় জ্ঞাত। খুনী নিজেই ঘোষণা দিয়ে জ্ঞাত করিয়েছে তা দক্ষিণবঙ্গের সুন্দরবন ঘেঁষা জনপদের – যা কয়েক পুরুষ ধরে সামন্তদের অধিকার ও শাসনাধীন – মানুষগুলোকে, এমনকি প্রায় দিন ক্ষণ সহ সমস্তটাই। এমত পরিস্থিতিতে হত্যাটুকু অবশ্যম্ভাবী ছিল, স্বঘোষিত হত্যাকারীর স্পর্ধাটুকুই আসলে গুরুত্বপূর্ণ এখানে। নদীর মোহনার ধার ঘেঁষা এক ছোট্ট জনপদ, দূর থেকে গগনচুম্বী ইঁট

বীরেশ্বর সামন্ত হত্যা রহস্য।। শাক্যজিৎ।। শারদ নির্মুখোশ ১৪৩০।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
নির্মুখোশ শারদ ১৪৩০-এ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য' পড়ে লিখেছেন সায়ন্তন সেনগুপ্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................................................. উপন্যাস - বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য লেখক - শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য পত্রিকা - নির্মুখোশ শারদ ১৪৩০ পরিবেশক - সুপ্রকাশ  মুদ্রিত মূল্য - ৩৫০ টাকা  বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য। হত্যা রহস্য ! নাকি রাজনৈতিক উপাখ্যান ? " শেষ মৃত পাখি " - এর পর আমার পড়া শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় উপন্যাস। এবারের প্রেক্ষাপট রাজ্যের দক্ষিণতম অংশে । যেখানে নদীগুলো ভেসে যায় সমুদ্রের ডাকে সাড়া দিতে । নৌকায় যেতে চোখে পড়ে গগনচুম্বী ইটভাটার চুল্লি । মাঝেমাঝে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে বিষন্ন কালো ধোঁয়া । নদীর ধারে চোখে পড়ে ম্যানগ্রোভের বিক্ষিপ্ত  উপস্থিতি । পাওয়া যায় সুন্দরবনের প্রথম আভাস। কাকদ্বীপ থেকে কুলপির মধ্যে কোনো এক গ্রাম আর মফস্বলের মাঝামাঝি জনপদ।  উপন্যাসের শুরুতেই পাওয়া যায় মৃত ব্যক্তি আর সম্ভাব্য হত্যাকারীর পরি

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
এক হাতে বন্দুক অন্য হাতে জীবন্ত বালিহাঁস ঝুলিয়ে বাড়ির পথ ধরেন অহিভূষণ। সাঁতার বাহিনী হাঁসের কথা ভুলে বালির চড়ায় হাডুডু খেলার জন্য তৈরি হয়। দুটো দল, বিভিন্ন মাপের ছ’জন করে খেলুড়ে এক একটা দলে। মাথার উপর চড়া রোদ, পায়ের নীচে গরম বালি। তা হোক, দু-পা দূরেই তো দহের ঠান্ডা জল। খেলা চলবে এক পক্ষ হেরে না যাওয়া পর্যন্ত। এক সময় সেই সম্ভাবনা দেখতে পাওয়া যায়। বালকের দলে বালক বাদে সবাই ‘মোর’। বিপক্ষে সুধাংশুশেখর মানে খোকন সহ চার জন জ্যান্ত। বালকের ডাকের পালা। সে ‘ডু ডু’ করতে করতে বিপক্ষের ঘরে ঢোকে। খোকন আচমকাই বাঘের মতো লাফিয়ে তার কোমর জাপটে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে অন্য তিন জনও। বালির উপর উপুড় হয়ে পড়ে বালক। তার ডান পা খোকনের দুই পায়ের মধ্যে সাঁড়াশির মতো ধরা। তখনও দম আছে বালকের। ঘাড় তুলে দেখে, নিজেদের সীমানা থেকে মাত্র ইঞ্চি দুয়েক দূরে পড়ে আছে তার বাড়ানো বাঁ হাত। খোকনসহ ওদের তিনজন জ্যান্ত খেলুড়ে বালককে চেপে ধরে আছে। বালকের বুকে এখনও আছে খানিক দম। ওই দুই ইঞ্চি পেরিয়ে যদি তার বাড়ানো হাত ছুঁয়ে দিতে পারে সীমারেখা, উলটে যাবে দান। ওই চারজনকে ‘মোর’ করে বালক একাই জিতিয়ে দেবে তার দলকে। মরিয়া চেষ্টায় নিজের শরীরে মোচড়

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
ইস্কুল থেকে ফিরেছে বালক। এখন একটু একটু করে গরম পড়তে শুরু করেছে। বিকেল থেকেই বনের হাওয়া এসে কোয়ার্টারের বারান্দায় দোল খায়। খুব মিষ্টি হাওয়া। গোস্বামী বাবু ডে-ডিউটিতে যাওয়ার সময় সাইকেলটাকে বারান্দায় বের করে রেখে গেছেন। বালক জানে, ইস্কুল থেকে ফিরে একমুঠো জুট দিয়ে সাইকেলটাকে মুছতে হবে। তারপরে পেনে কালি ভরার ড্রপারে এক রকমের তেল ভরে ফোঁটা ফোঁটা করে চেন আর প্যাডেলের খাঁজে খাঁজে দিতে হবে। আশালতার নিয়ম মেনে ইস্কুলের জামা-প্যান্ট ছেড়েছে বালক, বাথরুমে গিয়ে হাতপাও ধুয়েছে। তারপর সাইকেল মোছার সরঞ্জাম নিয়ে বারান্দায় এসে দেখে পিছনের স্ট্যান্ডের উপর সাইকেল দাঁড়িয়ে আছে আর বুবুবুড়ি সাইকেলের প্যাডেলটাকে একহাতে ধরে ঘোরানোর চেষ্টা করছে। ছোটো হাতে কি আর অত জোর থাকে! বালক তাড়াতাড়ি এসে বুবুকে কোলে নিয়ে সাইকেলের পাশে বসে হাত দিয়ে সজোরে প্যাডেল ঘোরাতে থাকে। স্ট্যান্ডের মাঝখানে ঝুলে থাকা পিছনের চাকা বাঁইবাঁই করে ঘুরতে থাকে। বুবু ঠোঁট ফুলিয়ে গলা ফাটিয়ে চেঁচায়। মানে তার প্যাডেল বালক কেন ঘোরাবে! তাড়াতাড়ি করে উপরে নীচে ঘুরতে থাকা প্যাডেলে বালক বুবুবুড়ির হাত চেপে ধরে। নিমেষে হাসি ফোটে তার মুখে। চাকা ঘোরার হালকা ঘর্ঘর

লেবেদেফ্ চর্চা।। শতঞ্জীব রাহা।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শতঞ্জীব রাহার 'লেবেদেফ্-চর্চা' পড়ে লিখেছেন প্রিয়গোপাল বিশ্বাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................................................................... লেফেদেফের মত বিচিত্রকর্মা মানুষটির সামগ্রিক পরিচয় পেলাম। ভাগ্যান্বেষী মানুষটা কোথাও থিতু হননি। এইরকম একজন মানুষের সম্বন্ধে লেখা অধ্যবসায় ও পরিশ্রমসাপেক্ষ। লেখার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এর পরিচয় পাওয়া যায়। সাধারণত গবেষণা গ্রন্থের স্থবিরতা নেই, কিছুটা কথকতার ঢং-এ লেখা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদিও তথ্য ও প্রতিতথ্যের  উপস্থাপনা সত্ত্বেও কোথাও ক্লান্তিকর মনে হয়নি। সত্যিই আমরা হেরাসিম সম্পর্কে খুব কম জানি। বাংলায় প্রথম তিনি নাট্যশালা নির্মাণ করেন দুটো নাটকের অভিনয় করান। এইটুকুই আমরা জানি। ওঁকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষা , সংস্কৃতি ও ইতিহাস কতখানি উথাল-পাথাল হয়েছিল এই বইটি না পড়লে জানতে পারতাম না। ঔপনিবেশিক বাংলায় কেন হেরাসিম টিকতে পারলেন না লেখক তার যুক্তিসহ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।  এমন কিছু তথ্য যা জেনে চমৎকৃত। যেমন হেরাসিমের আগেও একজন রুশ ব্যবসায়ী ভারতে এসেছিলেন। একমাত্র গোলকনাথ দাস যি

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
গড়বেতায় বিদ্যুতের লাইন আছে কিন্তু উকিলবাবুর মেসে নেই। খরচ বাড়িয়ে আরামে অভ্যস্ত হওয়ার কী দরকার – বিজলি বাতির কথা উঠলেই উকিলবাবু এটা বলেন। মেসে যারা থাকে তাদের যেসব গাঁয়ে বাড়ি, সেসব গাঁয়ের ধারেকাছেও বিদ্যুৎ নেই। লন্ঠন হ্যারিকেনের আলোয় তারা দিব্যি দেখতে পায়, পড়াশোনাও করতে পারে। বালকের একটি বেঁটে হ্যারিকেন আছে। সন্ধের আগে ন্যাকড়া দিয়ে তার কাচ পরিষ্কার করে, কেরোসিন তেল ভরে রাখতে হয়। সেদিন সবাই শুয়ে পড়ার পর বারান্দায় শতরঞ্চি পেতে বেঁটে হ্যারিকেনের আলোয় পড়ার বইয়ের নীচে ‘চরিত্রহীন’ রেখে নিশ্চিন্তে পড়ে যাচ্ছে সে। বারান্দার অন্য প্রান্তে খাটিয়া পেতে ঘুমোচ্ছে আদিত্যদাদা। তার নাক ডাকার আওয়াজ যত বাড়ছে, বালক ততই বেশি করে ডুবে যাচ্ছে অন্য এক মেসবাড়ির সতীশ আর সাবিত্রীর গল্পে। কখন যে তার পড়ার বই চরিত্রহীনের উপর থেকে সরে গেছে খেয়াল নেই। হঠাৎ ‘দেখি তো কী বই পড়ছ এতো রাতে–’ শুনে চমকে ওঠে বালক। আদিত্যদাদা বইটা কেড়ে নিয়ে বইয়ের নাম পড়ল। বলল, –এই বয়সেই চরিত্রহীন পড়ছ! দাঁড়াও, কাল সকালেই আমি উকিলবাবুকে বলছি। বইটা নিয়ে নিজের বালিশের নীচে রেখে শুয়ে পড়ল আদিত্যদাদা। উকিলবাবু লম্বা, টকটকে ফরসা, খাড়া নাক, চোখের কোটর গ

স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন।। জয়া মিত্র।।

Image
তুমি বলছিলে কাজের জায়গায় লোকেরা তোমাদের খারাপ ভাবে দেখত? যমুনার কথাটা কারিয়াপ্পার কাছ থেকে শুনে নিয়ে একটু চুপ করে থাকে চিরি। তারপর বলে, —সবাই জানত আমরা দেবদাসীদের মেয়ে, নাগহল্লি থেকে সাভাদাত্তি থেকে নীরহল্লি থেকে এসেছি। মেয়েরাও আমাদের কথা মন দিয়ে শুনত না। উল্টে আমাদের বাজে বাজে কথা জিজ্ঞেস করত। —ও! তো তোমরা তোমাদের অফিসারদের কাছে সাহায্য চাইতে না কেন?  এবারে চিরি একটু উত্তেজিত ভাবে অনেক কথা বলে যায়। শেষদিকে কারিয়াপ্পা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে,  'ও বলছে অফিসাররাই সবচেয়ে খারাপ ছিল। সিডিপিও-র রিপোর্ট খারাপ থাকলে আমাদের চাকরি চলে যায়। সেজন্য সব মেয়ে সিডিপিওর কথা শোনে। ও আমাদের হুকুম দিত কবে কোন অফিসারের বাড়ি রাতে যেতে হবে।' যমুনা এতটা ভাবতে পারেনি। সে স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকে খানিকক্ষণ, চিরিও মাথা নিচু করে থাকে। তারপর যমুনা আস্তে আস্তে চিরিকে জিজ্ঞেস করে, আর তোমরা যেতে? এবারে অবাক, কারিয়াপ্পা কথাটা অনুবাদ করার আগেই চিরি মাথা নাড়ে। তারপর মাথাটা আরও নিচু করে নেয়। যমুনা যেন কিছুটা ভয়ে ভয়ে জিগেস করে,— স্বর্ণাভা?  এবারও কারিয়াপ্পা কিছু বলবার আগেই চিরি ঝট করে সোজা তা

স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন।। জয়া মিত্র।।

Image
উঁচুজাতের মেয়েরাও দেবদাসী হয়। যারই চুলে জটা থাকে তাদেরই ইয়েলাম্মার মন্দিরে এসে দেবদাসী হতে হয়। ওই জটাই ইয়েলাম্মার ইচ্ছাপত্ৰ। জটা না থাকলেও দেবদাসী হয় মেয়েরা, যাদের মা কিংবা বাপ-মা মেয়েকে মানত করে ইয়েলাম্মার মন্দিরে সেবাদাসী বলে। কতো কারণে মানত করে, পরপর বাচ্চা মরে গেলে মানত করে, এরপর যে জন্মাবে তাকে তোমার সেবায় দেব। যাদের কোন ছেলে নেই তারা ছেলে পাবার জন্য একটা মেয়েকে দিয়ে দেবার মানত করে, কেউ বা অন্য মেয়েদের বিয়ে-থা হয়ে গেলে কে দেখবে বলে সবচেয়ে বড় মেয়েটিকে দেবদাসী করবে বলে মানত করে দেয়। যেমন ললিতার মা-বাপ করেছিল। কোন ছেলে ছিল না, কেবল তারা পাঁচবোন বলে ললিতার বাবা-মা তাকে মানত করেছিল ইয়েলাম্মার কাছে। আট বছর বয়সে শেষট্টি মন্দিরের মেলায় দীক্ষা হয়েছিল তার। মা বাবার কাছেই ছিল। ভাই জন্মাল অরো দু বছর পর। তাই আর বাবা-মাকে মেয়েকে ঘরে রাখতে হল না। যখন ছেলে জন্মাল, 'ফুল ভাঙা'র জন্য মানে কুমারী মেয়ের সঙ্গে প্রথম রাত কাটানোর জন্য টাকা-পয়সা, গয়না দিতে রাজি গৌড়েও পাওয়া গেল, তখন পুরোহিত আর পাটিলের কথামত রাজি হয়ে গেল তারা। এই প্রথম রাতের যে মালিক, সেই দেবদাসীর ‘স্বা

স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন।। জয়া মিত্র।।

Image
বিভাবতী জানা তার সঙ্গে আলাদা করে খারাপ ব্যবহার করেননি কখনও। বরং তার সামনেই মিসেস সায়গলকে, যাঁর তখনও নামও জানত না জানকী, বার বার বলেছিলেন, তাকে হোম থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা। বলেছিলেন, দেখুন এ মাইনর নয়, কোর্ট একে জোর করে বাবার কাছে পাঠাতে পারে না। কিন্তু এখানে পড়ে থেকে এ নষ্ট হয়ে যাবে। পচে যাবে। পড়াশোনা জানে, বুদ্ধি আছে, স্বাস্থ্য ভালো, একটা বিশ্রী অভিজ্ঞতার পর ট্রমার মধ্যে আছে, চিকিৎসা হলে ভালো হয়ে যাবে। আঠেরো বছর বয়স। ও নিজে যেতে চাইলে, আপনি কোর্টে আন্ডারটেকিং দিয়ে দরখাস্ত করলে হয়ে যাবে। নিজের মত ইংরিজি আর হিন্দিতেই কথা বলেছিলেন তিনি, কিন্তু তাতে তাঁর আগ্রহ বুঝতে অসুবিধা হয়নি, জানকী আসবার আগেও যে তাঁদের মধ্যে কথা হয়েছে সেটাও স্পষ্ট ছিল। হোমের ওই প্রায় একবছর যেন একটা বিরাট ইরেজারের মত জানকীর আগের জীবনটাকে একেবারে ঘষে ঘষে মুছে দিয়েছিল। তাকে হোম থেকে বারে বারে নিয়ে যেত, কার কাছে? ম্যাজিস্ট্রেটের? বারে বারে একই কথা জিজ্ঞেস করা— মা বাবার কাছে ফিরে যাবে? কে ছিল সেই মা-বাবা? সে ফিরে যায়নি, স্পষ্টভাবে বলেছিল, 'না যাব না। ওখানে পাঠালে নিজের গায়ে আগুন দেব। আমার মা-বাবা নেই। কেউ

স্বর্ণকুমারীর মৃত্যু ও জীবন।। জয়া মিত্র।।

Image
এত রোদ্দুর এদেশে যে বাজরায় হাতে করে গড়া মোটা চাপাটি, যাকে বলে জোলাডা রোটি, দুপুরে পাথরের গায়ে মেলে দিলেও চলে। চলে মানে তাই করে লোকে। এক ঘণ্টার মধ্যে শুকিয়ে ঝনঝনে হয়ে যায়। জ্বালানি বাঁচে। কাজ করতে করতেই দুপুরের খাবার তৈরি হয়ে যায় এরকম করে। কাই বা খাবার, ওই তো রোটি আর এক মুঠো বাদাম, একমুঠো শুকনো লঙ্কা পিষে একটু চাটনি। রাতে কোন কোন দিন তার সঙ্গে তুর ডালের সম্বর কি পুঁইশাকের তরকারি। পল্ল্যা। বেঙ্গন পল্ল্যা কি ভিঙে পল্ল্যা। অন্ন হয় কেবল মুত্তাইদে হুন্নিমের দিন, বড় গোল চাঁদ ওঠে, সেদিন ইয়োলাম্বা কুমকুম পরেন আর চুড়ি। ইয়েলাম্মা সধবা হবার আনন্দে মন্দিরে সেদিন আরতি হয়। অন্ন প্রসাদ হয়। নিজেদের ঘরে ভাত রাঁধে মেয়েরা। মাসে একদিন। বাকি দিনগুলো কাটে ওই রকমই। ছোটো ছেলেদের মন তবু পড়ে থাকে কখন খাওয়া হবে সেইদিকে। মুখে বলতে ঘরের কাজ, কাজ তো আসলে বাইরের ঘরের চৌহদ্দির মধ্যে সকাল বেলা ঘরের কাজ বলতে কেবল ঘর থেকে আগের রাত্রের আবর্জনা সব বার করে ফেলে ঘরের দরজা-গোড়া থেকে দু হাত আঙ্গিনাটুকু পরিষ্কার করা। দরজার পাশে যেখানে নিমপাতার গোছা ঝুলিয়ে রাখা আছে তার পাশে হলুদ গুঁড়ো দিয়ে চিহ্ন দেওয়া। ওটি

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
শীতের দুপুর। ঝোপে ঝোপে পাখি লাফায়, ডেকে ওঠে কখনও কখনও। বালকের সাইকেল চালনা দেখবে বলেই তারা অপেক্ষা করছে বলে মনে হয়। তার ডান হাতের বগল চেপে ধরে সেন র‌্যালের সিট। বাহু নিচু হয়ে এগিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে সাইকেলের রড। এবার ডান প্যাডেল উঁচু করে রেখে ডান পায়ের পাতা রাখে তার উপর। বাঁ হাত হ্যান্ডেলে, বাঁ পা মাটিতে। ডান পা প্যাডেলে চাপ দিতেই গড়িয়ে যায় সাইকেলের চাকা। তার সঙ্গে তাল রেখে বাঁ পা মাটিতেই লাফ দিয়ে দিয়ে এগোতে থাকে। ডান প্যাডেল নীচে নেমে এলে চাকা থামে। ডান পায়ের পাতা প্যাডেলের নীচে চাপ দিয়ে আবার তাকে ওপরে ওঠায়। পায়ের চাপে চাকা গড়ায়। এবার একটু জোরে আর বাঁ পা বাঁ প্যাডেলে ওঠার চেষ্টা করে। টলমল করে ওঠে হ্যান্ডেল, চাকা আর বালকের শরীর। উল্টে পড়তে গিয়ে দুই পা মাটিতে নামিয়ে সামাল দেয় বালক। টানা তিন দিন চলে দাদার অজান্তে গতির উপর ভর করে সাইকেল ও শরীরের ভরকেন্দ্রটিকে আয়ত্তে আনার চেষ্টা। শিয়াকুলের ঝোপে সাইকেল সহ উল্টে পড়ে হাতেপায়ে কাঁটার আঁচড়, সাইকেলের শরীরে মাটির দাগ, তবু যখন মাটি থেকে পা তুলে হ্যান্ডেলকে বশ মানিয়ে কিছুটা সময় ছুটে চলে বালক, দুটো অদৃশ্য ডানা গজায় মনে। তিন দিনের দিন হ্যান্ডেল আর রড

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
প্রায় প্রতি বর্ষায় বন্যার সময় এক দিকের পাড় ঘেঁষে প্রবল ঘূর্ণি জাগে আর সেদিকের পাড় ভেঙে বালি তুলে নিয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে নদীর তলদেশ পনেরো - কুড়ি ফুট গভীর হয়ে যায়। বন্যার জল সরে যাওয়ার পরও গভীর নীল জল সেখানে টলটল করে। তার নাম 'দহ', সবাই বলে দ'। কুড়ি - পঁচিশ ফুট উঁচু পাড়ের উপর থেকে দায়ের গভীর জলে ডিগবাজি দিয়ে লাফিয়ে পড়ে সাঁতার কাটা যেসব ছেলেদের খুব প্রিয়, তাদের মধ্যে বালকও একজন। গ্রামের সব ছেলেরাই একসঙ্গে চানে যায়, সবাই পাড় থেকে না লাফালেও সাঁতার কেটে হুটোপুটি করায় কেউ কম যায় না। এক প্রস্থ সাঁতার হয়ে গেলে বালির চরে দুটো টিম করে হাডুডু খেলা হয়। খেলা শেষে আবার সাঁতার, তারপর বাড়ি ফেরা। এবার গ্রীষ্মে দ'য়ের জল ঘেঁসে একদিকের বালির চরে প্রচুর লম্বা লম্বা ঘাস হয়েছে। প্রায়ই সেখানে বালি হাঁস নামছে। বালি হাঁসের মাংস নাকি খুব ভালো খেতে। বালকের বাড়িতে বা বামুন পাড়ার কোনো ছেলে মাংস খায় না। কিন্তু মেয়েরা তো খায়। বালকের বিয়েওলা দিদিরা বাপের বাড়িতে এলেই গোয়ালঘরে পোষা ষাঁড়া (পুরুষ) হাঁস রান্না করে খায়। বালি হাঁস নেমেছে শুনে বৌদিরাও মনে হয় মাংস খাব বলে

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।।

Image
হাফ প্যাডেলে পা দিয়ে আকাশে ডানা মেলার সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠছে চিত্তাকাশ, মননের গতি; বয়ঃসন্ধির অনুভব, হৃদয়ের আবেগ, যৌনতার স্ফুরণ। বালক থেকে কিশোর হওয়ার পথে জীবন যখন সমগ্রতায় ভরে উঠতে চায়, তখন তার সমান্তরালে উড়ে চলা এক কালো পাখির ভ্রুকুটি-করাল ছায়া। খণ্ড খণ্ড জীবনকে সমগ্রতায় জোড়ার বিভক্তি অনুসর্গগুলি প্রহেলিকা হয়ে থেকে যায় বালকের মনে।  ষাট বছর পিছিয়ে গিয়ে তাঁর বালক থেকে কিশোরবেলার ছয় বছরের স্মৃতিকে তুলে এনেছেন লেখক। ধরেছেন তার মন, তার চিন্তা, তার আবেগ, তার সরল সংস্কার। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে সেই সময়কে আলোড়িত করা দেশবিদেশের ঘটনা, সেইসব মানুষ, যাদেরকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছিল বালকের জীবন। সব মিলিয়ে এক টুকরো সামাজিক ইতিহাস।  বাংলা সাহিত্যে অকপট স্মৃতিকথা সংখ্যায় নগণ্য। সেখানে নিজের স্খলন-পতনের এমন অর্গলহীন, দুঃসাহসিক বিবরণ প্রকৃতই দুর্লভ।  হাফ প্যাডেলের কাল অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী প্রচ্ছদ : সুলিপ্ত মণ্ডল অলংকরণ : অদ্বয় দত্ত মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা সুপ্রকাশ

রাস্তার শুরু।। জয়া মিত্র।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত জয়া মিত্রের উপন্যাসিকা ' রাস্তার শুরু ' পড়ে লিখেছেন অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................... বহমান বাক্যধারা যেন রেখার আঁচড়ে পুরনো দিনের কার্শিয়াঙের ছবি এঁকে চলেছে। ছবির কেন্দ্রে মা, তাঁর তিন সন্তান, তিতির তিন্নি বুবুল এবং ‘বন্দী রাজকন্যা’ যশোদা দিদি, যে পালিয়ে এসেছে দুষ্টু রাজার কাছ থেকে। সে সুন্দর নাচে, শুধুই হাসে, আর বাড়ির অনেক কাজ করে দেয়।  তিতিরের আবৃত্তি, তিতিরের অঙ্কভীতি, বড়োদের কথা কিছু অন্য রকম, সে কথা টানে তিতিরকে, সে সপ্তম শ্রেণি। কুমারসম্ভবের হিমালয়-সৌন্দর্যের সঙ্গে যে অন্য কথাও আছে, সেটা কি পড়া উচিত তিতিরের? তিন্নি ডানপিটে, তিন্নি খেলাপাগল, প্রতিটি কুকুরের সঙ্গে তার গাঢ় বন্ধুতা, বুবুলের সঙ্গে তার নিঃশব্দ মারামারি, তার ‘বিদ্যা করতে’ ভালো লাগে না। বুবুল শান্ত, বুবুল চুপচাপ, তিন্নি খেলতে খেলতে মজা করে একটু লুকোলেই তার কান্না।  আর মা। কতো যে তাঁর রূপ! ইজিচেয়ারে বসা বই-পড়া বা উল-বোনা মা, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাইতেও বেশি শুনতে-মিষ্টি গান-গাওয়া মা, কালীঠাকুরের

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'শেষ মৃত পাখি' পড়ে লিখেছেন Akash Singh। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ..................................... কিছু কিছু গল্প থাকে, যেগুলো নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে - এমনও হতে পারে? এই কাহিনী অনেকটা সেরকমই। সারাংশ - একজন সাংবাদিক এবং তার বহুল জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিক, যার মূল বিষয় হলো অমীমাংসিত পুলিশ কেস জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা, সেই সূত্রেই একটি ঘটনার উন্মোচন করতে দার্জিলিং শহরে আসেন। ঘটনার সময়কাল সত্তরের দশকে, যখন বাংলায় পুলিশি বর্বরতা ও নকশালবাদ এর চরম পর্যায়, বিনা কারণেই গুম হয়ে যায় অসংখ্য তরুণেরা। এরকমভাবেই খুন হওয়া এক উদীয়মান কবি অমিতাভ - অথচ মারা যাওয়ার আগে সেই জবানবন্দি উপন্যাস আকারে লিখে দিয়ে গেছেন, তবুও খুনি অধরা। ঘটনার চল্লিশ বছর পরে কি সেই কেসের জট খুলবে? পাঠ প্রতিক্রিয়া - বইটা অনেক সময় নিয়ে (প্রায় ২ সপ্তাহ) পড়তে হয়েছে কারণ শুরুর দিকে সেই উদ্দীপনা পাইনি। প্রথমে পড়তে পড়তে মনে হয়েছে লেখক গল্পটিকে একই জায়গায় গোল গোল ঘুরিয়েছেন, ইংরেজিতে যাকে বলে "beating around the

মরুনির্ঝর।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের ঐতিহাসিক আখ্যান 'মরুনির্ঝর' পড়ে লিখেছেন পাপাই সরকার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।। 👉 পাঠপ্রতিক্রিয়া 🌼মরুনির্ঝর 📚সূর্যনাথ ভট্টাচার্য, সুপ্রকাশ প্রকাশনী 👉দাম-৩৫০ টাকা,১৯০ পৃষ্ঠা এক অসাধারণ ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়লাম। এইটা লেখকের তৃতীয় ঐতিহাসিক উপন্যাস। আমার কাছে আগের দুটির থেকে এই উপন্যাসটি আরো বেশি ভালো লেগেছে। প্রেম,কলহ, রাজনীতির ছলাকলা, নৃত্য,সংগীত নিয়ে বহু সংমিশ্রণে তৈরি এক অনবদ্য ঐতিহাসিক উপন্যাস। মগধের সিংহাসনে নন্দ বংশের অযোগ্য রাজা ধননন্দ। ধননন্দের কাছে জ্ঞানসভায় অপমানিত হয়েছিলেন রাজনীতির বিশেষজ্ঞ পণ্ডিত বিষ্ণুগুপ্ত বা চাণক্য। তার সংকল্পে পরবর্তী সময়ে ধননন্দকে অপসারণ করে রাজা হয়েছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। এই নিয়ে আর বিস্তারিত গেলাম না। কম বেশি সবাই জানেন। বই এর নাম মরুনির্ঝর কেন হলো? মরুনির্ঝর হলো এক রাগিনী তথা সুরের নাম।এই সুর যে গাইবে তার মৃত্যু অনিবার্য। আমত্য কাত্যায়ন বা রাক্ষসের কন্যা নির্ঝরের সঙ্গে এক গরীব চালচুলোহীন অজ্ঞাত যুবকের প্রেম হয়। যার জন্যে আমত্য তার মেয়েকে ত্যাগ করেন। এরপর ধননন্দ

কীর্তনীয়া।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত সমরেন্দ্র মণ্ডলের উপন্যাস  কীর্তনীয়া পড়ে লিখেছেন বই আলোচনার পেজ Journal of a Bookworm । আমরা তাঁদের অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................... কীর্তনীয়া  লেখক - সমরেন্দ্র মণ্ডল প্রকাশক - সুপ্রকাশ মূল্য - 280/- সদ্য পড়ে শেষ করলাম সাহিত্যিক সমরেন্দ্র মণ্ডলের লেখা ‘কীর্তনীয়া’ উপন্যাসটি। লেখককে লেখার সাথে এই উপন্যাসের মাধ্যমেই প্রথম পরিচয় হলো। বইটি আমায় উপহার স্বরূপ পাঠিয়েছেন সুপ্রকাশ প্রকাশনা থেকে। প্রচ্ছদ টা অসাধারণ সুন্দর। প্রচ্ছদ দেখেই আমার এই বই সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মেছিলো। বইটি শেষ করতে একটু বেশিই সময় লেগে গেছে, উপন্যাসটি শেষ করে উপলব্ধি খুবই ভালো। অসংখ্য ধন্যবাদ সুপ্রকাশ প্রকাশনা কে। সামাজিক উপন্যাস আর তার সাথে খ্রীষ্ট কীর্তন এর সাথে বৈষ্ণব কীর্তনের অসাধারণ বর্ণনা উপন্যাস টিকে আরো বেশি সুন্দর করে তুলেছে।  পটভূমি -  নদীয়ার এক দরিদ্র খ্রিস্টান পরিবারের ছেলে রাফায়েল, কীর্তনের সুরে বয়ে যাওয়া জীবন তার। ক্লাস টেন পাশ করার পর, হঠাৎ করে একদিন বাড়িতে কিছু না জানিয়ে ঘড়ছাড়া হলো রাফায়েল। অনেক আশা নিয়ে পাড়ি দিলো নবদ্বীপ

কীর্তনীয়া।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত সমরেন্দ্র মণ্ডলের উপন্যাস 'কীর্তনীয়া' পড়ে লিখেছেন সোমদত্তা রায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ................................ তিনদিনের ছুটিতে গোটা পৃথিবীর মানুষ(?!) যখন কোথাও না কোথাও ঘুরতে গেছে, সেই অবস্থায় গৃহবন্দি আমি এই বইটা পড়া শুরু করলাম। জাস্ট পড়া শেষ করে এটাই মনে হল ভাগ্যিস!! এই বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া কিভাবে লিখব বুঝতে না পারা আমি এটাও বুঝলাম যে কিছু না লেখাটাও ধৃষ্টতা। যারা পড়তে ভালোবাসেন তারা এই বইটা পড়ুন আমি মন থেকে চাই। বৃষ্টির দিনে এই বই পড়তে পড়তে যেন আশেপাশের থেকেও ভেসে আসছে কীর্তন গানের সুর, সোঁদা গন্ধ। এক সাধারণ বাড়ির ছেলের জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার পথই এই বইয়ের সারমর্ম। সঙ্গীতের ব্যাপ্তি যে কতখানি এবং সেই সঙ্গীতের সাথে যাপন করা মানুষের জীবন যাপনও যে কি অদ্ভুত সেটা টের পেলাম এই বই পড়ে। খ্রিষ্টান পরিবারের ছেলে রাফায়েল। তাকে ঘিরেই এই গল্প। বাবার কীর্তন দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে বের করে নিয়ে যায় বাড়ির থেকে সঙ্গীত সাধনার উদ্দেশ্যে, শেখার উদ্দেশ্যে। সত্যিই তো এভাবে শিখতেই বা ক'জন