Posts

Showing posts from July, 2023

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
"টিকিট চলে এল। দু’দিন পরে রাতের ট্রেন। এগারোটা পাঁচের চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। নামতে হবে বলরামপুর স্টেশন। সেখান থেকে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। কী ব্যবস্থা থাকবে, সেটা তখনও জানা নেই। কিন্তু নিজের মতো করে গুছিয়ে নিলাম খাতা, পেন। একটা রেকর্ডারও দেওয়া হল না; নতুন ছেলে কী করতে কী করবে! ক্যাননের একটা ছোট ওয়ান শট ক্যামেরা জোগাড় করা গিয়েছিল কোনোভাবে। বারবার বলে দেওয়া হয়েছিল, স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা না বলে ক্যামেরা যেন বের না করা হয় একদমই।  হিম-কুয়াশায় আবছা চারপাশ। কুয়াশা রেললাইনের উপরেও। মোটা চাদরে শরীর ঢাকা মানুষের যাতায়াত প্ল্যাটফর্মের উপর। একটা রাতের যাত্রাপথ কতটা দূরে এনে দেয় আমাদের? ভাবতে ভাবতেই হুইসল দিয়ে এঁকেবেঁকে দূরের পাহাড়টার নিচে হারিয়ে যেতে থাকে চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার। কে জানতো, পরবর্তীতে এতবার এই ট্রেনে চড়তে হবে যে, মজা করে ছড়াও কাটবে একজন, “তোমার বাড়ি কি রেলগাড়ি?” প্রথম যাত্রায় হাওড়া থেকে রাতের ট্রেনে সাইড লোয়ার বার্থ। এই বার্থটাই সব থেকে প্রিয়ও বটে। রাতের বেলা তেমন কিছুই বোঝা না গেলেও, খড়গপুর পেরিয়ে যাওয়ার পরেই কনকনে হাওয়া আসতে থাকে একটা জানালা দিয়ে। কাচ ফেলে দ

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
একটা মাঠ জ্বলে যাচ্ছে রোদ্দুরে। রোদে পুড়ে হলদে হয়ে গেছে মাঠের ঘাস। মাঠের মাঝে মাঝে খেজুর বা তালগাছ। তার পিছনে, গরম হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে ওঠার মতো দূরে রুক্ষ পলাশ গাছ খান কয়েক। পলাশের সঙ্গে শাল। সোনাঝুরিও। মাঠের পাশে আলের ধারে একটা অশ্বত্থ গাছ ঝাঁকড়া। তার তলায় এই আকাশ ফাটা রোদেও ছায়ার প্রলেপ কেমন। সেখানে বসে একটা আদুল গায়ের ছেলে... না, বাঁশি বাজাচ্ছে না। ফোন ঘাঁটছে গাছে হেলান দিয়ে। ‘বাজার’ তার সর্বস্ব নিয়ে হইহই করে ঢুকে পড়ছে প্রান্তিক মানভূমেরও কোণায় কোণায়। এই ঠাঠা পোড়া দুপুরে বাইরেই বা কেন আদুল গায়ের ছেলে? গাছের ছায়া থেকে একটু দূরত্বে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বাইরে বেরোনোর উপলক্ষ্যেরা। উপলক্ষ্যদের রুগ্ন সাদা-কালো-ঘিয়ে-খয়েরি শরীরের মধ্যে উজ্জ্বল শুধু গলার টুংটুং ঘন্টিটা। তাদের সারা গায়ে ছোপ ছোপ দাগ। আসলে রোল নম্বরের মতো দাগিয়ে দেওয়া, যাতে গুলিয়ে না যায় এই চারপেয়ে শাবকদের আসল সংসারের প্রমাণ। মোবাইল ঘাঁটতে থাকা ছেলের পাশ দিয়ে এগিয়ে আসে এতক্ষণ ধরে মাঠে কাজ করে চলা কয়েকটা শরীর। এই গরমে খোলা মাঠের রোদ্দুরে অসুস্থ হয়ে পড়া আশ্চর্য নয়। অথচ এদের হবে না কিছু। কিছু হয় না এদের। সকালেই তাল বা খেজুরের তাড়ি খে

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
"নিরন্তর যাতায়াতের মজা হল, তাতে সবসময় একটা ‘ইন বিট্যুইন’ থাকে। সেইসব লাইনের ভাঁজে ভাঁজে জমে থাকে ফেলে আসা গল্প। সেসব গল্প পুজোর রাতে, গ্লাসের আড্ডায় বা অনেক রাতে কানে ফোন নিয়ে বলে চলা গেলেও, লেখা যে কখনও হয়ে উঠবে ভাবা যায় না। এই লাগাতার যাতায়াতের সময়টাতেই একসময় ফিরে এলে মফস্বলের দোহারা বাড়িতে, দেখি মন টেনে ধরে পুরুলিয়ায় গ্রামের ওই ছোটো এক কামরার রংচটা স্যাঁতস্যাতে ঘরটা; সারাদিনের ঘুরে-ফিরে আসা চরিত্রগুলো। আর পুরুলিয়া চলে গেলেই কদিন পর থেকে মনে ভিড় করে আসে একা হেঁটে আসা গঙ্গার ধার, স্টিমার চেপে পেরিয়ে যাওয়া নদী, পুরোনো শ্যাওলা পড়া দেয়ালের পাড়া ধরে হেঁটে চলা একা একাই কিংবা অলিগলি উত্তর কলকাতা দুপুর বা বিকালে। আজ লালমাটি মহল্লায় যাওয়া হয় না কতদিন! মনে মনে ভাবি, অতগুলো দিন থেকে আসার পরেও সে হয়তো সেভাবে ডাকল না বলেই আমাকে, আমারও গিয়ে থাকা হল না আর। কেন ডাকল না? অভিমান হয়। আর, এই যে আমিও তো যাই না অনেকদিন, তার অভিমান হয় না একটুও ? কিংবা নিদেনপক্ষে, দু-এক পশলা মনখারাপও, অবরে-সবরে? সেইসব মান-অভিমানের হিসেব-নিকেশ করতে করতেই আপাতত রুখা পাহাড়, পাথুরে নদী আর হাবুডুব

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
বেঞ্চ বাজিয়ে গান মানেই, ক্লাসের ফাঁকে হল্লা চরমে। আর লাস্ট বেঞ্চ হলে তো কথাই নেই! সেই ডানদিকের লাস্ট বেঞ্চ বাঁধা ছিল তাদের জন্য। দুটো ছেলে। লাস্ট বেঞ্চ বলেই, অনেকটা বড়ো হয়ে যেত তাদের কাছে ক্লাসরুম। ঘণ্টা বাজলেও তাড়াহুড়ো নেই। পায়ে পায়ে ওড়া ধুলো খানিকটা থিতিয়ে গেলে, স্কুল ছুটির পর কিংবা শনি-রবির বিকেলে ছোট্ট সবুজ মফস্বলের পাশ দিয়ে বাঁক নেওয়া গঙ্গার ধার। জংলা মতো জায়গাটা পেরিয়ে ঢালু হয়ে নেমে যাওয়া একটা সিমেন্টের চাতালে বসলেই, পায়ের সামনে জল। ছলাৎ ছলাৎ শব্দের আবহে 'আমার ভিতর ও বাহিরে'। কখনও কখনও বয়স খানিকটা বেড়ে যাওয়ার পরেও গঙ্গার উপরের বাতিল কাঠের জেটিতে নাদান ছেলেমানুষি একগাদা। চিৎকার করে ‘সুন রি সখী' কিংবা ‘মেঘ বলেছে’ হয়তো। বলতোও মেঘ। হঠাৎ বৃষ্টি দিলে কোনোদিন, কাক ভেজা ঝুপ্পুস। তারপরে আরও খানিকটা পাড় ভেঙে এগিয়ে এলে নদী, টান পড়ে কখন সেই বন্ধু-বৃত্তের ব্যাসার্ধে। ছেলেটাও আজগুবি হয় আরও। খুব মনখারাপ থাকলে আচমকা চলে যায় দক্ষিণেশ্বর বা গঙ্গা পেরিয়ে বেলুড়। এই বিশাল জোয়ার-ভাটা নদী আর তার পলি-কাদার গন্ধ নিয়ে বেড়ে উঠেছে যে, সেই তার কাছে পাথুরে মানভূমের এই

অভিমানভূম।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।।

Image
কালো একটা চাদর ঢেকে ফেলছে ক্রমশ আকাশ। তার কালো ছায়ায় আরও গাঢ় হয়ে উঠছে কালচে সবুজ। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে চোখ মেলছে জংলি লতা। মাথা তুলে যেন বুলি ফোটা বাচ্চাদের মতো শোনাতে চাইছে কিসসা, যেন কোনো দূরের দেশের। বৃষ্টি আসছে খুব। খুব বারিষ! খলবল করতে করতে ছুটছে কোথায় ছেলেপুলের দল? ‘বাঁধের ধারে। মাছ উঠবে তো!' শিলাই মাঠের হরিমণ্ডপে আড্ডা খানিক প্রৌঢ় বা মধ্যবয়স্কদের। তাদের আশেপাশে, সামনে বা পিছনের দিগন্তে সবুজ খুব বেশি এখন। সবুজ খুব ঘাস। গাছের পাতা। রুখা জমিতে কদিনের জন্য যেন আদরের প্রলেপ। পুরুলিয়া টাউন থেকে কাজ সেরে ফেরার পথে দেখা হয় এইসব কিছু কিছু অল্প চেনা জানা মুখের সঙ্গে। ডাক আসে অধিকারের টানে। কী সেই অধিকারের নাম? জানা নেই। ভালবাসা কি এতই সহজে পাওয়া যায়? কিংবা নিছক স্নেহ বা বন্ধুত্ব? দু'গ্লাস চায়ের পরে উঠতেই হয় অগত্যা। খুব বৃষ্টি চলে এলে আটকে পড়তে হবে। সঙ্গে অফিসের কাগজপত্র রয়েছে বেশ কিছু। আর এই গ্রাম থেকে ভোরবেলা টাউনে গিয়ে সারাদিনের কাজ সেরে ফেরা তারপর আরও পঞ্চান্ন কিলোমিটার ব্যাপারটা একটু ক্লান্তিকরও বটে। ‘চললো?' ‘উঠি এবার!' এখন আর 'বাড়ি যাব' বলা হয়

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের স্মৃতিগদ্য  'আহাম্মকের খুদকুড়ো' পড়ে লিখেছেন অর্ঘ্যদীপা চক্রবর্তী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। . . 🍁বই:- আহাম্মকের খুদকুড়ো 🍁লেখক:- দুর্লভ সূত্রধর 🍁 প্রকাশনা:- সুপ্রকাশ 🍁 মুদ্রিত মূল্য:- ২৮০ টাকা 🍁 পৃষ্ঠা সংখ্যা:- ১৮৯ 🍁 প্রচ্ছদ:- সৌজন্য চক্রবর্ত্তী 🍁 অলংকরণ:- দুর্লভ সূত্রধর  "মণিবাবু স্যার বলেছিলেন— ‘নিজের দুঃখের কথা মানুষকে বোলো না বাবা, অন্য-কারও কথা মানুষ শুনতে চায় না, শুধু নিজের কথা বলে আর অন্যের দুঃখের সুযোগ নেয়। যদি কাউকে বলার না পাও তো দেওয়ালের কাছেও বোলো না— ঐ দেওয়ালও তো মানুষের তৈরি! যদি বলতেই হয়, নদীর কাছেই বলা যায়। নদী সব শোনে তারপর সব দুঃখ নিয়ে বয়ে চলে যায়, ফিরে তাকায় না মোটে।’ নদীর কাছে! নদী মানে তো আমাদের রূপেশ্বরী।" এই বই লেখকের জীবনের আত্মকথা। না, ছোটো থেকে কষ্ট করে বড়ো হয়ে কোনো কীর্তি প্রতিষ্ঠার আখ্যান নয় এই বই। নিতান্তই সাদামাটা জীবনের গল্প; সহস্রাব্দ শুরু হওয়ার আগে মানুষের জীবনের চেনা ছকে মোড়া এই আত্মকথা। এই আখ্যান শুরু হয় "তাহাকে শিয়ালে খাইয়াছে" অধ্যায় দিয়ে। ছো

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'অনন্যবর্তী' পড়ে লিখেছেন অর্ঘ্যদীপা চক্রবর্তী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। . . বই:- অনন্যবর্তী লেখক:- দুর্লভ সূত্রধর প্রকাশনা:- সুপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য:- ৩২০ পৃষ্ঠা সংখ্যা:- ২৩৬ প্রচ্ছদ:- সৌজন্য চক্রবর্ত্তী অলঙ্করণ:- সৌজন্য চক্রবর্ত্তী ও দুর্লভ সূত্রধর "দূরের আকাশ নীল, ঘনঘোর নীল আকাশ থেকে বাতাস থেকে গাছের সবুজ পাতার থেকে শব্দহীন কথা বলছে ডেকে আমাদেরই অশ্রুহীন ব্যথা।" ছোটো কুন্তী নদীর তীরে অবস্থিত এক ছোট্ট মফস্বল। সেখানেই বাস করে এক দঙ্গল ছেলেমেয়ে আর তাদের পরিবার। তনয়, তপেশ, শোভন, তরণী, শিবু, মনোজ, টুকু প্রমুখ আর তাঁদের অভিভাবকরা। এই উপন্যাস বন্ধুত্বের গল্প বলে। প্রযুক্তি যখন আমাদের জনজীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি, সম্পর্ক ভাঙা গড়ার কাজ শুরু করেনি, মানুষের বিনোদনের প্রধান কারণ হয়ে ওঠেনি সেই সময়কার বন্ধুত্ব। তখন হয়তো সেই সম্পর্কে কোনো দেখনদারি ছিলো না, নিজস্বী তোলার রমরমা ছিল না কিন্তু মনের গহীন থেকে উঠে আসা আনন্দ ছিল, প্রাণবন্ত ছিল সম্পর্কগুলো। কোনো সাফল্যের উদযাপনে আনন্দ ছিল বাঁধনছাড়া অথচ সংযমী।