Posts

Showing posts from March, 2024

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর স্মৃতিকথন 'হাফ প্যাডেলের কাল' পড়ে লিখেছেন তাপস ব্যানার্জী। আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  .............................................. পড়ার অভ্যেস আর তেমন নেই।খুব ভালো না লাগলে কোনো বই শেষ করতে পারি না।সেদিন হাতে এলো একটা বই ‘হাফ প্যাডেলের কাল’, লেখক অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।বইটা পড়তে পড়তে ছোটবেলায় পৌঁছে গিয়েছিলাম।রুদ্ধশ্বাসে পড়েছি। শেষ করার পর মনে হল এই বইটার প্রসঙ্গে দু’একটি কথা বললে, আরো কিছু মানুষ হয়ত আমার তৃপ্তির ভাগীদার হতে পারবেন। এই বয়সে পুরনো জীবনের স্মৃতি ঘুরে ঘুরে আসে।আমরা মফস্বলে মানুষ, অথচ ওই গ্রামের হাফ প্যাডেলে সাইকেল চালানো ছেলেটির সঙ্গে আমার ছোটবেলার অনেক  কিছুই একেবারে মিলে গেল।বইএর নামটি সঠিক।ওইরকম হাফ প্যাডেলে সাইকেল চালাতে চালাতেই আমরাও বড় হয়েছি।আর ওই ছেলেটির মতই জীবনের ভালোমন্দ বুঝেছি, ধাক্কা খেয়েছি, আনন্দও  পেয়েছি।বইএর ঘটনাগুলো যেন পাতায় সাজানো আমাদের সকলের ছোটবেলা থেকে বড়বেলার দিকে এগিয়ে চলা জীবনের কথা।এমনকি চরিত্রগুলো এত স্পষ্ট ফুটেছে, যে আমি সবাইকে দেখতে এবং চিনতে পারছিলাম। দাদার পরিণতি যেমন কষ্ট

ছায়ার পাখি।। অভিজিৎ সেন।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অভিজিৎ সেনের উপন্যাস 'ছায়ার পাখি' পড়ে লিখেছেন মণিপদ্ম দত্ত। আমরা নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। বইটির প্রচ্ছদশিল্পী : সৌজন্য চক্রবর্তী। ................................................................................................... অভিজিৎ সেনের মহাকাব্য ছায়ার পাখি .......... ছায়ার পাখি মূলত একটি পাখিরই আখ্যান। এক অসহায়া সহজ স্বপ্নবিলাসী  মেয়েকে ঘিরে গড়ে ওঠা এক সময়ের উপাখ্যান। পুরনো স্বপ্নের মৃত্যু ও ক্রমবিবর্তন ঐ পাখিটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এক জানা গল্প যার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে অনাবিষ্কৃত মনুষ্যত্বের খণ্ড খণ্ড চিত্র। ঐ গর্ভবতী পাখিটিকে অনন্ত যত্নে প্রতিপালনের জন্যেই যেন সমস্ত চরিত্রের সৃষ্টি। সে যে জন্ম দেবে নতুন প্রাণের। তার প্রতারক প্রেমিক এক আধুনিক ক্ষমতা বিস্তারি রাজনৈতিক  লুম্পেন । তাই  সকলের পক্ষ ছায়ায় রাজেশ্বরীর আশ্রয়। খানিকটা  সে কারণেই যেন লেখক এ কাহিনীর নামকরণ করেন ছায়ার পাখি। সে তো জন্ম দেবে আর একটি পক্ষী শাবকের। এবং তাই তাকেও ছায়া হয়ে উঠতে হবে, ছায়া দিতে হবে।  অসংখ্য চরিত্রের মধ্যে আমাদের জানা একটি চরিত্র পাই। গোপাল মজুমদার। অনেকটা কেন

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।। সুপ্রকাশ।।

Image
রবীন্দ্রনাথের ‘ভুল স্বর্গ’ গল্পের সেই নেহাৎ বেকার লোকটির কথা মনে আছে? তার কোনো কাজ ছিল না—কাজ যে করবে তার সময়ই ছিল না মোটে। কেবল শখ ছিল নানারকমের—মাটির ওপর ছোটো ছোটো ঝিনুক সাজিয়ে সে এঁকে তুলতো ছবি। বাড়ির লোক ও পরিজন-প্রতিবেশের কাছে সে ছিল মূর্তিমান উৎপাত। সমস্ত জীবনটা তার অকাজে গেল। মৃত্যুর পর স্বর্গীয় দূতেরা মার্কা ভুল করে তাকে রেখে এল কেজো লোকের স্বর্গে। সেখানে সকলেই কাজ করে, সেখানে সবই আছে নেই শুধু অবকাশ। এ বেচারা কোথাও ফাঁক পায় না, খাপ খায় না। একদিন স্বর্গের উৎসতলায় ঘড়া-কাঁখে জল নিতে আসা মেয়েটির সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায়। ভারি ব্যস্ত । মেয়েটির ঘড়াটি চেয়ে নিয়ে তার গায়ে সে চিত্র করে দেয়। সেই আলিম্পনে কত রঙের পাক কত রেখার ঘের। রাতে মেয়েটি বিছানা ছেড়ে দীপের আলোয় বার বার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চিত্রটা দেখতে লাগল—তার বয়সে সে এই প্রথম এমন কোনো কাজ দেখল যার কোনো মানে নেই। এর পরে সেই বেকার লোকটি মেয়েটিকে রঙিন সুতো বুনে বুনে বানিয়ে দিল বেণী বাঁধবার দড়ি। এখন উৎসতলায় এলে মেয়েটির ব্যস্ত পা-দুটি কোন অভাবিতপূর্ব ছন্দে শ্লথ হয়ে আসে, আয়না হাতে বেণী বাঁধতে তার হয়ে যায় দেরি। কেজো স্বর্গে সমস্ত কাজে, ব্যস্ততার

বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।।

Image
দুটো আলাদা কারণে বীরেশ্বর সামন্ত খুন হতে পারে। হয় ভীষ্ম বাগাল সম্পর্কিত প্রবাদ সত্যি হয়েছিল, আর নয়ত রোহিণী বাগাল সম্পর্কিত লোককথা সত্যি হয়েছিল। কিন্তু দুটো একসঙ্গে ঘটতে পারে না কিছুতেই, কারণ একজন সত্যি হলে অপরজন মিথ্যে হতে বাধ্য। তা সত্ত্বেও সবাই বিশ্বাস করেছিল দুটোই ঘটেছে, কারণ সবাই জানত, যেনতেন প্রকারেণ বীরেশ্বরকে মরতেই হবে। সামন্ত না থামলে বাগালি থামবে না।   রহস্য নয়, নয় সমাধানও, অপরাধ কেন ঘটেছিল আর সেটা অপরাধীর সত্তাকে কীভাবে আচ্ছন্ন করল, সেই প্রশ্নের তদন্ত করাই আমাদের সময়কার ডিটেকটিভের একমাত্র কাজ। বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা তাই গুরূত্বপূর্ণ নয়। গুরূত্বপূর্ণ হলাম আমরা, আমাদের অস্বস্তিকর বিবেক। বীরেশ্বর সামন্তর হত্যা রহস্য শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী সুপ্রকাশ আসছে.. এই বৈশাখেই।

চক্ষুষ্মতী গান্ধারী।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।

Image
সাধারণের জিজ্ঞাসা কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধ বিষয়ে, বিদুর বিষয়ে এবং মহাভারতকারের (দের) পাণ্ডব তথা কৃষ্ণের পক্ষানুবর্তিতা বিষয়ে। যুগ যুগ ধরে নিন্দিত হয়ে আসা দুর্যোধনাদি কৌরবদের বিষয়ে সাধারণ বুদ্ধিতে তারা প্রশ্ন তোলে যে, তারা এমন কী অতিরিক্ত অন্যায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন, যা পাণ্ডবেরা করেননি? এমনকি বিদুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই, তাঁর উরস-পিতা মহর্ষি ব্যাস, তাঁর গর্ভধারিণীকে বলেছিলেন : অয়ষ্ণ তে শুভে গর্ভঃ শ্রেয়ানুদরমাগতঃ। ধর্মত্মা ভবিতা লোকে সর্ব্ববুদ্ধিমতাং বরঃ।।(আদি ১০৯।।২৭) সেই তিনিও কৌরবদের, বিশেষ করে দুর্যোধনের প্রতি তাঁদের শিশুকাল থেকেই বিরূপ ছিলেন। গঙ্গার জলক্রীড়ার সময়কার দুর্যোধন কর্তৃক ভীমের নিগ্রহ নিঃসন্দেহে হিংস্রতার পরিচায়ক এবং নিন্দার যোগ্য। অনুরূপভাবে ভীম তাঁর কিশোরকাল থেকেই এই শত ভ্রাতাদের যে নিগ্রহ করে এসেছিলেন, সেই হিংস্রতারও যথোচিত নিন্দাবাদ কি হওয়া উচিত ছিল না?  পরিণামে বুঝি কোনো যুদ্ধই ধর্মযুদ্ধ নয়, কোনো যুদ্ধই কখনও ধর্ম হতে পারে না। যুদ্ধ বা যুদ্ধেচ্ছা ক্ষমতাকামী মানুষের স্বভাবধর্ম। তার সঙ্গে পুণ্যকর্মের কোনো যোগ নেই, বরং পাপকর্মেরই আছে।  মিহির সেনগুপ্ত এই আখ

ধর্মায়ুধ।। অভিজিৎ সেন।। সুপ্রকাশ।।

Image
বাবা: রাজা গণেশ। ছেলে: জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ। এরকম অদ্ভুত ঘটনাই পাওয়া যায় ইতিহাসে। রাজা গণেশ ও তাঁর পুত্রদের মিলিত শাসনকাল পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয় দশক। উপন্যাস আবর্তিত হয়েছে রাজা গণেশের সিংহাসনে আরোহণ ও তদপরবর্তী ঘটনা পরম্পরায় তার ছেলে যদুর ধর্মান্তরকে কেন্দ্র করে। উপন্যাসের ভূগোল গৌড়কে কেন্দ্র করে ভাতুড়িয়া পর্যন্ত আবর্তিত। উপন্যাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রাজা গণেশের মন্ত্রী—নাড়িয়াল। যিনি বৌদ্ধ-অবশেষ। সেই বৌদ্ধ ধর্ম, কয়েকশো বছরেই হিন্দুদের আক্রমণে যারা বিলুপ্তপ্রায় হয়েছে, আবার পরে হিন্দুধর্মে মিশেও গেছে। সেই বৌদ্ধ-অবশেষ নাড়িয়ালকে ‘হিন্দু রাজ্য’ গঠনের স্বপ্নে রাজা গণেশকে বিভোর করে রাখতে হয়। সে কি শুধু ধর্মরক্ষা? না বোধহয়, তা শুধু ধর্মরক্ষা হয়ে থাকে না, তাতে মিশে থাকে সিংহাসন আর ক্ষমতা–এমনকি অর্থসম্পর্কও। ধর্ম শুধু ব্যবহৃত হয় আয়ুধ আর অজুহাত হিসেবে। তবু রাজা তো কেবল সিংহাসন নয়।—বিরোধ আসতে থাকে সারা বাংলা জুড়ে লোকায়ত মুসলিম দরবেশদের কাছ থেকে। স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামজীবনের সঙ্গে রাজধানীর সাংস্কৃতিক বিচ্ছেদ এর একটা কারণ বটে। সে বিরোধ ঘনিয়ে ওঠে সেই ধর্মকে কেন্দ্র করেই। ইব্রাহিম শর্কির হাত

হাফ প্যাডেলের কাল।। অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামীর বই 'হাফ প্যাডেলের কাল' পড়ে লিখেছেন শ্রাবণী পাল। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................................................ 📒বইয়ের নাম - হাফ প্যাডেলের কাল📒 ✍🏻লেখক - অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী 📇প্রকাশক - সুপ্রকাশ      মূল্য - ৩৫০/- 📜সদ্য পড়ে শেষ করলাম সাহিত্যিক অর্দ্ধেন্দুশেখর গোস্বামী মহাশয়ের লেখা ‘হাফ প্যাডেলের কাল’ বইটি। লেখকের লেখা আগে কখনো পড়া হয়নি, ‘হাফ প্যাডেলের কাল’ বইটির মাধ্যমে লেখকের লেখার সাথে‌ প্রথম পরিচয় হলো।  📜এই বইয়ের গল্প নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, এটি লেখকের স্মৃতিচারণ মূলক লেখা। অনেক দিন পর এমন কিছু পড়লাম যা পড়ে একটা অন্য অনুভূতি তৈরি হলো। এখানে গল্পের সময়কাল ১৯৬০ সাল। সেই সময়ের দূর্গাপুর শহর ছিলো না। এই গল্পের শুরুতেই দেখতে পাই পাড়াগাঁয়ের একটি বালক, সেই বালকের দাদা তাকে দূর্গাপুরে নিয়ে আসে এবং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয় তার পড়াশোনার জন্য। দাদার একটি সাইকেল ছিলো সেটা নিয়েই বালক মাঝে মাঝেই লুকিয়ে বেড়িয়ে পড়তো....... 📜বইতে তুলে ধরা হয

একটি শিশির বিন্দু (বজবজ ও বাটানগর সংলগ্ন অঞ্চলের ছুঁয়ে দেখা গল্প-কথা-রাজনীতি-ইতিহাস)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শুভদীপ চক্রবর্তীর বই 'একটি শিশির বিন্দু' পড়ে লিখেছেন তানিয়া মজুমদার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................................................ বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে  বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে  দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।  দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া  ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া  একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু। "একটি শিশির বিন্দু" লেখক শুভদীপ চক্রবর্তী। পড়া হয়ে গিয়েছিল অনেকদিন আগেই। ভাবছিলাম কিছু লিখি কিন্তু আমি লেখায় একদমই পটু নই।তবুও শুভর লেখা বই পড়ে কিছু লিখব না এটা হতেই পারে না। শুরুটা করলাম কবিগুরুর লেখা দিয়ে কারণ এই পড়ে আমার তাই মনে হয়েছে।আমার জন্মস্থান ও তার পার্শ্ববর্তী বজবজ ঘিরে এত ইতিহাস, এত গল্প কথা জড়িয়ে আছে তা এই বই না পড়লে হয়তো জানা হতো না।  কিভাবে বাসের রুট তৈরি হলো তারপর তা কিভাবে বাটানগরের সাথে যোগসূত্র হলো এইসব তথ্য খুব সুন্দর করে বলা আছে এই বইতে। বজবজ স্টেশন যা ২০১৪ সাল থেকে কোমাগতামারু বজবজ  হলো।সেই কোমাগাতামারু জাহাজ নিয়ে যে ইতিহা

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'অনন্যবর্তী' পড়ে লিখেছেন নবনীতা। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................................................................ "...একদিন তোমাকে সাতপর্ণীতে নিয়ে যাবো টুকু। দেখবে কাব্যি করে বলা 'আমার সোনার বাংলা' কবেই মরে হেজে গেছে।  আমি যাচ্ছি ঐ গাঁয়ে। ওদের আলো দিতে হবে। ওদের বোঝাতে হবে, জমি চষে ওরা, আর ওরাই আধপেটা খেয়ে থাকে। একদিন এই সব জমি ওদের ছিল, আজ ওদের এক ছটাক জমি নেই... ...ওদের বোঝাতে হবে, ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেননা, ওরাই তো আসল ভারতবর্ষ...হাতে-কলমে এসব কাজ শিখতে হবে। আমাদের মতাদর্শ আসলে কর্মের পথ-নির্দেশিকা। তুমি তো জানো টুকু, আমি কী স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নে বাড়ি-গাড়ি নেই, আছে সকলের হাসি-আনন্দ গানে ভরা পৃথিবীর স্বপ্ন। বদলানোর কাজটা কিন্তু সহজ নয়। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সেটা হবে না? নিশ্চয়ই হবে।  আমার পাশে থাকা চাই..." সদ্য মাধ্যমিকের গণ্ডী পেরোনো এক নব্য যুবকের তার কিশোরী প্রেমিকাকে লেখা অকপট প্রেমপত্র। প্রেমপত্র নাকি প্রেমের ইস্তেহার? দুর্লভ সূত্রধর -এর "অনন্য

মরুনির্ঝর।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'মরুনির্ঝর' পড়ে লিখেছেন সুদেষ্ণা রাহা। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। .......................................................................... মরু নির্ঝর  সূর্যনাথ ভট্টাচার্য  প্রকাশক : সুপ্রকাশ  প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী  মূল্য ৩৫০/- সূর্যনাথ ভট্টাচার্য'র প্রথম বই পড়েছিলুম  " মগ্নপাষাণ "। কে  রিভিউ করেছিল, কোন গ্রুপে,  সব ভুলে গেছি শুধু  বইয়ের খোঁজটি তুলে রাখা ছিল এবং সুযোগমতো আনিয়ে নিয়ে পড়ে ফেলাও হয়েছিল। ধ্রুব চন্দ্রিমা, মগ্ন পাষাণ  এবং মরু নির্ঝর—লেখকের ঐতিহাসিক গল্পের ট্রিলজি।  মগ্ন পাষাণ পড়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলুম যে, আরেক বই প্রেমীর কাছে যখন মরু নির্ঝর দেখতে  পেলুম, তখন  অন্য সব বই সরিয়ে রেখে  মরুনির্ঝর পড়ে ফেলতে দুবার ভাবিনি। বলা বাহুল্য  এবারেও পাঠানুভূতি সুখকর ।  বইয়ের  শুরুতেই লেখক বলে দিয়েছেন   —এটি ইতিহাস নয়, ঐতিহাসিক  উপন্যাস; ইতিহাসের সময়  চরিত্র ও কিছু ঘটনাকে ভিত্তি করে এর নির্মাণ।  যদিও অনুপ্রাণিত  হয়েছেন সংস্কৃত মুদ্রারাক্ষস নাটকের  থেকে, কিন্তু এটি নাটকের বিনির্মান না হল

শঙ্কর মাস্টার।। বরুণদেব।।

Image
দশমীর ভাসান-কোলাহল শেষ হলে, মধ্যরাতে বিষাদের সুর তুলে জেগে থাকে রুইদাসপাড়া। ছাদে মাদুর পেতে নীল আকাশে সাদা মেঘেদের ভেসে যাওয়া দেখতে দেখতে ঘুম আসে আমার চোখের পাতায়। ভোরের আলো ফুটলে দেখি, কখন শঙ্কর মাস্টার এসে গায়ে দিয়ে গেছে চাদর। ছাদের দরজা ভোরের বাতাসে দুলে ওঠে... আমি স্পর্শ করি ছাদের দরজা। একটা একটা করে ইঁট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে সে দরজা। সমাধি এক। কান্না উঠে আসে কবরের নীচ থেকে। ছেলের কবরের পাশে এসে দাঁড়ায় শঙ্কর মাস্টার। উদভ্রান্ত। কাঁধে চালের পুঁটুলি। —রহমত, ঘুমিয়ে পড়েছিস? উঠে আয় বাবা। কবরের পাশে বসে পড়ে শঙ্কর মাস্টার। চালের পুঁটুলি খুলে আঁজলা ভরা চাল নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কবরের দিকে ঝুঁকে পড়ে। গলা কাঁপে।  —এই দ্যাখ রহমত, চাল এনেছি। আয়, বাপ ব্যাটা মিলে ভাত রেঁধে খাব। তুই যে বলেছিলিস— আব্বু, বড় ক্ষিধে, ভাত দাও। চালভর্তি হাত দুটো চোখের সামনে তুলে ধরতে ধরতে কবরের দিকে পিছন ফেরে, হাত থেকে চাল পড়ে যেতে থাকে... —এ পৃথিবীতে ভাতের গন্ধ ভীষণ দামি রে রহমত! কেউ দেয় না। কেড়ে নিতে হয়। এক পা এক পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায় শঙ্কর মাস্টার...... —নায়েব মশাই এর পা দুটো জড়িয়ে ধরে কত করে বললাম—বাবু, ছেলেটার অস

শঙ্কর মাস্টার।। বরুণদেব।।

Image
কলাবউ স্নান, যুদ্ধ যুদ্ধ সন্ধিপুজো, নবমী নিশির করুণ সানাই, ঘট বিসর্জন। এ জনপদে নদীর সাথে উৎসবের নিত্য আলাপন। দশমীর রাতে নদীর বুকে আলোকিত ভাসান, নৌকাবিহারে মা দুর্গার সান্ধ্যভ্রমণ, এপাড় ওপাড়। পঞ্জিকামতে মা দুর্গার প্রস্থান যাতেই হোক না কেন, এ গাঁয়ে দুর্গার কৈলাস গমন নৌকায়। চিরকাল। নদীপথে ভুটভুটি বিপ্লবের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত এ জনপদের ছেলেছোকরাদের দশমীর রাত, মা দুগ্গার ভাসান নৌকার পাশ দিয়ে চল-পানসি-এপাড়-ওপাড় 'ইয়াম্মা ইয়াম্মা, ইয়াম্মা ইয়াম্মা, এ খুবসুরৎ সামা, ব্যস আজ কি রাত হ্যায় জিন্দেগী, কাল হম কাঁহা তুম কাঁহা'। সানাইয়ের করুণ সুরে দশমীর রাত ঘরে ফেরে। পুজো ফুরোয়। নারকেল নাড়ু, মুড়কি, বেসন দিয়ে তৈরী সিঁড়ির নাড়ু জিবে জল আনে। আর পুজোর ছুটির অবকাশে শঙ্কর মাষ্টার বই খুলে বসে। পুজোসংখ্যা নয়, যাত্রার বই। নতুন পালা। আবার মহড়া। আসছে শীতের যাত্রামঞ্চের ঘণ্টা বাজে ঢং ঢং ঢং। 'গল্পদাদুর আসর' আর 'ছোট্ট বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা'-র 'শিশুমহল' চেটেপুটে খাওয়া আমাদের শৈশব- কৈশোর, যাত্রা প্যান্ডেলের ধুলোয় আমোদিত। রুইদাস পাড়ায় বাঁশঝাড়ের পাশ থেকে, সেনপাড়ায় সাহেবের আটা-তেলের কল

শঙ্কর মাস্টার।। বরুণদেব।।

Image
বাস থেকে নেমে মাটির রাস্তা ধরে ধানের জমির সাথে আলাপ করতে করতে, গরুর গাড়ির পিছনের বাঁশ ধরে ঝুলে ঝুলে ধুলো খেতে খেতে, কানফলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যেতে যেতে, 'নপা এলি? জামাই এলো না ক্যানে? নপা কেমন আছিস? ব্যাটাবিটি বড় হয়ে গ্যালো তো', এসব কুশল বিনিময়ে ঠোক্কর খেতে খেতে, আমাদের মা নপা অর্থাৎ নূপুরের হাত ধরে আমরা, দিদি আর ভাই, বুড়ি পুকুরের জলে পা ধুয়ে এক ছুট্টে মামার বাড়ি। আমার সেই 'নো ছাপছুপ, নট কিচ্ছু, ঠকাস ঠাঁই' মার্বেল-গুলি খেলার বয়সে বা দিদির 'আতা আতা আতা, দুধ-কলমির পাতা'-র কার্তিকেয় প্রদীপ জ্বালানোর সময়ে, মামাবাড়ির গ্রামের 'কানফলা' নামটি নিয়ে আমাদের সঙ্গীসাথীদের টিপ্পনি কম ছিল না, এমন নাম হলে রঙ্গব্যঙ্গ তো হবেই! আমাদের গঞ্জ টাইপের মাটিয়ারির সাথে এই ছোট্ট গাঁ কানফলার আসমান জমিন তফাৎ। কৃষিপ্রধান ছোট্ট গাঁ। আমার দিদিমার কথায়—ধানপানের দ্যাশ। ধান দিয়ে যায় চেনা। দ্যাড় ফ্যার, এক ফ্যারের বেচাকেনা। অর্থাৎ দেড় বা এক পাল্লা ধানের বিনিময়ে শাকসব্জি ফলমূল। সপ্তাহে দু'একদিন আসা ফেরিওয়ালার সাইকেলে শক্ত করে বাঁধা এক ধামা। দু আনা চার আনা ষোলো আনার ঠং করার বদলে

শঙ্কর মাস্টার।। বরুণদেব।।

Image
আসরাফ আলি গ্রীনরুমে সাজে। ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়, গালে রুজ চড়ায়, পরচুলোয় লম্বা বেণী ঠিক করে, ঘাঘরা পরে। আট রাতের যাত্রামঞ্চে, প্রথম বা শেষ রাতে আসরাফ আলি যাত্রা শুরুর আগে নটী সেজে নাচে। ফ্লুট বিউগল হারমোনিয়াম তবলা বাজে। দু'পায়ে ঘুঙুর বেঁধে ছেলে বুড়ো সকলের আসরাফদা নাচে। রেশন দোকানের চাল-চিনি ওজনের দাঁড়িপাল্লা যে আসরাফ আলি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যাত্রা-নাটকের মেকআপের রঙ-তুলি যে আসরাফ আলি, মেলা খেলা থেকে উত্তম-সুচিত্রা-বিশ্বজিত-মাধবীর 'কালিকা টকিজ' পেরিয়ে প্রসেনজিত-চিরঞ্জিত-মহুয়া-দেবশ্রীর ভিডিও যুগের ক্যানভাসার যে আসরাফ আলি, ঈদমুবারক থেকে মহরমের জুলুস, সরস্বতী ভাসান থেকে রামনবমী মেলা, যে আসরাফ আলির কণ্ঠ ছাড়া উৎসব হয় না, উৎসব জমে না, সেই আসরাফ আলি ছাদফুটো ঘরের বর্ষা-পলিথিনে মাথা বাঁচিয়ে, জল ছপছপ উঠোনে সাদা ধুতি গুটিয়ে, বাংলা শার্টের পকেটে যাত্রার বই নিয়ে হেঁটে যায়। যে আসরাফ আলি এই জনপদ ছেড়ে গিয়ে পেশাদার যাত্রাদলে নাম লেখাতে পারে নি, কলকাতার অপেরা যাত্রার যন্ত্রের সুরে নটী আসরাফ হয়ে মঞ্চে নেচে চলে। বাইজীর ঠমক, খেমটার ঝলক, চাবুক খাওয়া নারীর প্রলয়, অসুরদলনী দুর্গা ঝড় হয়ে আছড়ে পড়ে ম

শঙ্কর মাস্টার।। বরুণদেব।।

Image
মোমবাতির কাঁপা শিখায় খেয়াঘাটের একমাত্র চায়ের দোকানে আলো ছায়ার ত্রিকোণমিতি। আকাশে গুটিকয় তারা। চাঁদের ইশারা নিয়ে রাত্রি নিবিড় হয়। খণ্ডিত অন্ধকারে গাছেরা দোলায় মাথা। শেষ খেয়া পাড়ে ভিড়লে দিনের ক্লান্তি মুছে ফেলে আত্মমগ্ন হয় খেয়াঘাট। 'সেই হরিনাম তুমি গাইবে কবে'। ঘাটে নৌকা বেঁধে গান গাইতে গাইতে মাঝি উঠে এসে বসে চা-দোকানের বেঞ্চে। 'তুমি শঙ্কর মাস্টারের ছেলে না?' মাঝি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আমার দিকে। হাওয়া বয়। জনক জননী হাওয়া। দোকানের বেঞ্চ থেকে উঠে পড়ি আমি। ঘাটে এসে দাঁড়াই। হাওয়ারা বয়। সন্ন্যাসী গ্রীষ্ম, বৈরাগী বসন্ত, জলপরী বর্ষারা ঋতুচক্রের নাগরদোলায় নদীর পাড় ধরে বয়ে যায় জনপদে জনপদে। শিউলি ঝরা শরত শেষে মরচে রঙা কাশের সাথে আলাপনে বসে জনপদের বাতাস। জবুথবু শীতে দুয়ার আঁটে। ঋতুচক্র বয়ে চলে। বয়ে চলে নদী। জনপদ। সময়। সময়ের কথা সময় জানে। আর জানে ভেসে যাওয়া খড়কুটোরা। কালের নিয়মে নশ্বর এ দেহ চিতার আগুন, কবরের মাটি হয়ে বিলীন হয়ে যেতে যেতে রেখে যায় তরঙ্গ কিছু, সময়ের হাত ধরে, সময়ের কাছে। বাতাসে রেণু রেণু স্মৃতি। সেই স্মৃতির সুবাস নিয়ে কণা থেকে কণায় ভাঙতে ভাঙতে, তরঙ্গের সাথে তরঙ্গ জুড়তে জুড়তে,

অবিকল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শতঞ্জীব রাহা

Image
আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা, সাহিত্যক্ষেত্রে স্বপ্রতিষ্ঠ মহিমায় উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ— এগুলি একজন তরুণ লেখকের ক্ষেত্রে বাইরের স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই এসবের চিহ্নিতকরণ মানিকের পক্ষে সহজ ছিল। কিন্তু সময়ের চিহ্নসমূহ বস্তু পাথরে স্পর্শগম্য নয় বলে তাকে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না—তা ছিল আসলে মানিকের অতিমাত্রায় জিজ্ঞাসু ও সোৎসুক অস্তিত্বের সঙ্গে অনবচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত। সে এমন এক সময় — (মানিকের জন্মকাল থেকেই যে সময়ের সূচনা আর তাঁর গোটা সাহিত্যজীবন জুড়ে যার ব্যাপ্তি। অন্ততপক্ষে সাহিত্যে মানিকের আবির্ভাব-লগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৯৩৫-৩৬ সাল ও তারপর) যে সময়ের বৈশ্বিক-জীবন 'রক্তপ্লাবনে পঙ্কিল পথে বিদ্বেষে বিচ্ছেদে আচ্ছন্ন।' এই 'কালটি বিশ্ব-সংকটেরও একটি তমিস্রা ঘন পর্ব। এক মানিক জানিয়েছেন যে, জীবনকে তিনি ‘যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছিলেন 'অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেবার তাগিদে তিনি লেখেন। পুনশ্চ তাঁর দাবি ছিল : 'আমি যা জেনেছি এ জগতে কেউ তা জানে না।' (কেন লিখি) সময়ের, জীবনের যে ঘাতকতার শিকার মানিক হয়েছিলেন তার কথা আমরা সকলেই জানি, তাকে আমরা শুধু সূত্রায়িত করতে

আহাম্মকের খুদকুড়ো। দুর্লভ সূত্রধর। পাঠ প্রতিক্রিয়া।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের  বই ' আহাম্মকের খুদকুড়ো ' পড়ে লিখেছিলেন এনাক্ষী মুন গোস্বামী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................... 'যা হারিয়ে গেছে তা আগলে বসে রইব কত আর...' স্মৃতিগদ‍্য পড়ছি, বেশ কিছুদিন। ভিন্ন ভিন্ন সময়, তাদের বিভিন্ন রূপ-রঙ-বর্ণ-গন্ধ-স্বাদ। সে বর্ণণ এক-একজনের কলমে এক-এক কলেবর পায়। বেড়ে ওঠে। বুড়ো হয়ে, হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া যেখানে, ঠিক সেখানেই একলা বাঁশির সুরে ভেসে আসে মেলানকলিয়া। অন্ধকারের সিল‍্যুয়েট জাদুগরিতে ভেসে ওঠে এক একলা কিশোর, যুবক কিম্বা আহাম্মকদের গল্প। যার সাক্ষী থাকে হারিয়ে যাওয়া এক জোছনা রাত, আর নির্জন নদীপাড়।  কথা হচ্ছে দুর্লভ সূত্রধরের 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' নিয়ে। একজন বালক, সেখান থেকে কৈশোর হয়ে, আহাম্মকত্বের চূড়ান্তে পৌঁছে যাওয়ার সফরনামা। আহাম্মক কারা প্রসঙ্গে লেখক নিজেই বলেছেন গুস্তাভ্ ফ্লবেয়ারের উদ্ধৃতি কোট করে: "দোজ হু ডিফার উইদ ইউ" দোজ আর ইডিয়টস। আমি আপনি আমরা সবাই কোথাও না কোথাও গিয়ে ইডিয়ট।  স্মৃতির সঙ্গে সর্বক্ষণ ভারাতুর জুড়ে যারা নিজেদের ফেল

বাঙালির শিকার স্মৃতি। জাফরনগরের শের।মিহিরলাল চট্টোপাধ্যায়

Image
গত বছরের মতো এবারও অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম থেকেই বাঘের উপদ্রব শুরু হয়। সাতখানা গ্রামের লোক ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। জাফরনগরের বীর আসরে নেমেছেন। আজ হিজুলী, কাল হালালপুর, তার পরের দিন জাফরনগর, প্রত্যহই গো হত্যার সংবাদ আসতে থাকে। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বীরের অভিযান হয় শুরু। প্রত্যহই খোরাকের জন্য চাই একটা আস্ত গরু আর তাছাড়া জলযোগের জন্য দেশী কুকুর, ছাগল ও ভেড়া প্রায়ই প্রয়োজন হয়। স্থানীয় শিকারী মহলে সাড়া জাগে। কেউ জানোয়ার চলা পথের উপর মাচা বাঁধলেন, কেউ মরী'র উপর বসে রাত কাটালেন, কেউবা লোক দিয়ে জঙ্গল ঘিরিয়ে বন পেটালেন; কিন্তু সবই বিফল হল। জাফরনগরের বীর যে বিভীষণের পরমায়ু নিয়ে এসেছে, ওকে মারে কে? সংবাদটা মহাকুমা হতে সদরে গেল এবং সেখান থেকে গেল কলকাতা শহর পর্যন্ত। এবার কলকাতা হতে মোটর বোঝাই হয়ে শিকারীর আমদানী হতে লাগলো; কিন্তু ফল কিছু হল না। টিফিন কেরিয়ার খালি করে ক্লান্ত দেহে ফিরে যেতে লাগলো। সংবাদ পেয়ে আমেরিকান সৈনিকের দল এসে তাঁবু গাড়লেন জাফরনগরের বনের কিনারে। উজ্জ্বল তাদের স্বাস্থ্য, লোভনীয় তাদের পরিচ্ছদ, আর সকলের হাতেই একটা করে দামী মানুষ মারা রাইফেল। গ্রামে গ্রামে সাড়া জাগে। এবার বাঘ মরব

সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ। সম্পাদনা : শতঞ্জীব রাহা। গল্প — অসুখ।

Image
এক বছর আগে বইটি পড়তে পড়তে একটি গল্পের অংশ উদ্ধৃত করেছিলেন পায়েল দত্ত। ............................................ ‘স্বরাজ’ মানে কী, কে জানে! সৌদামিনীর বয়স তখন সবে বছর কুড়ি। মনটা সবুজ ফসলি মাঠের মতো বিস্তৃত। স্বরাজের মানে না বুঝলেও মনে হয়েছিল সেটা নিশ্চয় বড়ো সুন্দর কিছু একটা হয়তো, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে জোচ্ছনা ধোয়া চাষিবাড়ির এলুনি দেয়া তকতকে উঠোনের মতো। কিংবা শরতের মেঠো রাস্তায় পড়ে থাকা শিউলি ফুলের মতো পবিত্র। যে শিউলি দুলে বাগদি ভদ্দর শুদ্দুর সকলে একসাথে কুড়িয়ে, বোঁটা শুকিয়ে বাসন্তী রংয়ে কাপড় ছুপিয়ে পরে যেমন আনন্দ পায়— এমন নিশ্চয় কিছু একটা হবে। তবে ভালো লেগেছিল সেই রাজপুত্তুরকে। মধুর মতো কানে লেগেছিল তার কথা। মনে পড়েছিল ঠাকমার কাছে শোনা রাজপুত্তুর মন্ত্রীপুত্তুর আর সেই কোটালপুত্তুরের গল্প। রাজপুত্তুর অত লোকের মধ্যে ভিক্ষে করেছিল। সবাই খুলে দিয়েছিল গা থেকে গয়না। সদুর সামনে যখন এসেছিল তখন কুড়ি বছরের সৌদামিনীর চোখ দুটো ভরে উঠেছিল জলে। মন হাহাকার করে উঠেছিল – না না, এ তুমার সাজে না গো – সাজে না। কিন্তু সদু সোনার গয়না কোথায় পাবে। কান্না ভিজে গলায় বলেছিল তাই কুড

সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ। সম্পাদনা : শতঞ্জীব রাহা

Image
১৯৮৮। শতঞ্জীব রাহার সম্পাদনায় 'প্রতিভাস' পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ হচ্ছে সমর ভট্টাচার্যর উপন্যাস 'জলছবি'।   সমর ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন ২০০২ সালে। আমরা পত্র পত্রিকা ঘেঁটে, পাণ্ডুলিপি খুঁজে নির্মাণ করেছিলাম সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ। প্রকাশনা শুরুর পরপরই। ২০১৮ সালে। এ আমাদের প্রজন্মান্তরের স্বনির্বাচিত দায়ও বটে। অপরিচিত ও বিস্মৃত সমর ভট্টাচার্যর সেই বইয়ের একাধিক মুদ্রণ আমাদের সাহস দেয়।  সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ সম্পাদনা : শতঞ্জীব রাহা প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : মেখলা ভট্টাচার্য মুদ্রিত মূল্য : ৩৯০ টাকা সুপ্রকাশ

বাঙালির শিকার স্মৃতি। শ্বাপদ সন্ধানে। দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী।

Image
'জঙ্গল নিস্তব্ধ। একটি পাখির ডাকও শোনা যায় না। বসে বসে পায়ে ঝিনঝিনি ধরে গিয়েছিল। একটু নড়ে বসতে হলো। পাতার আড়ালেই ছিলাম, বাইরে থেকে আমাকে দেখতে হলে খানিকক্ষণ খুঁজতে হয়, কিন্তু আমার সামান্য নড়ায় গাছের তলায় কুটো ভাঙ্গার শব্দ শুনলাম। যেভাবে বসার ভঙ্গীতে আরাম কায়েমি হয়েছিল, তাতে পিছন ফেরা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবু ফিরতে হলো। ফিরে যা দেখলাম তাতে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হলো। সেই প্রকাণ্ড বাঘ ঠিক আমার গাছের তলায় এসে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে কাঁটা বন পাশ কাটিয়ে নিঃশব্দে এখানে উপস্থিত হলো, অনুমান করা শক্ত। বন্দুক ঘুরিয়ে বাঘের দিকে নেবার উপায় নেই, আরামের প্রণালী মস্ত বড় বাধা হয়ে আছে— আমার চারপাশে ডাল আর পাতা। ইতিমধ্যে বাঘ নিচের ডালে সামনের পা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার পা থেকে বাঘের থাবা মাত্র কয়েক ইঞ্চি তলায়। বাঁচার কোনোরূপ উপায় না থাকায় সামনের দিকে বন্দুকের নল রেখেই বাঁট বগলে তুলে নিলাম, তারপরে ঘোড়া টিপে দিলাম। বিকট আওয়াজ করে গুলি বেরিয়ে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে বাঘ আমার সামনে লাফিয়ে পড়ল। স্ন্যাপ শটে রিফল্-এ বহুদিন হাত পাকিয়েছিলাম। বাঘকে সামনে পেয়ে আর একবার গুলি চালালাম। সামন