Posts

Showing posts from February, 2024

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস  'শেষ মৃত পাখি' পড়ে লিখেছেন ঋষিকা। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................ 📚 শেষ মৃত পাখি ✍️ শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য         (সুপ্রকাশ)         ৫২০ টাকা " মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়..." . . দার্জিলিং এর এক তরুণ সম্ভাবনাময় কবি অমিতাভ মিত্র খুন হয়েছিলেন এবং খুনের অভিযোগ উঠেছিল তাঁরই ছোটবেলার বন্ধু অরুন চৌধুরীর দিকে।৪৫ বছর আগের এই অমীমাংসিত রহস্য কাহিনী নিয়ে ধারাবাহিক লেখার জন্য দার্জিলিং আসেন এক সাংবাদিক তনয়া ভট্টাচার্য।  . . অনেক দিন থেকেই ইচ্ছে ছিল উপন্যাস টা পড়ার। গত তিন দিনে পড়ে ফেললাম এই ৪০৩ পাতার রহস্য উপন্যাস টি। বই টির শুরু থেকেই পাতায় পাতায় কবিতার ছড়াছড়ি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ছন্দহীন কবিতা খুব একটা বুঝতে পারি না তবুও ধৈর্য ধরে পড়তে পড়তে যত এগিয়েছি ততই পড়তে ভালো লেগেছে। নতুন নতুন চমক, একটার পর একটা জট খোলার চেষ্টা এবং ফের তা জটিল আকার ধারণ করা, আর সবার উপরে দার্জিলিং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য- সব মিলিয়ে উপন্যাস টা বেশ

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের বই 'আহাম্মকের খুদকুড়ো' পড়ে লিখেছেন মহুয়া বৈদ্য। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................................................. “...তখন আমাদের গাঁয়ে ছিল ঝুপো ঝুপো ঘন বাঁশবন। এমন এক বাঁশবনের ধারে ছিল শেয়ালখেকো জোহরার বাড়ি…” এইটুকু মুখবন্ধ করে বাবা সেদিন সন্ধ্যার গল্পের আসরে আমাদের দিকে হাসি হাসি মুখ করে চেয়ে রইলেন। তারপরের গল্প অবশ্য আদায় করে ছাড়লাম… জোহরা যখন এইটুকুন, সবে তার আকিকা হয়েছে, এইসময় এক সন্ধ্যে বেলায় সে দোলায় ঘুমাচ্ছিল। এমন সময় এক শেয়াল এসে তার সদ্য নেড়া করা মাথাটি মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে সবে কামড় বসাতে যাচ্ছে, এমন সময় সবাই হইহই রইরই করে উঠলে বেচারী শেয়াল পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়। গাঁয়ের কবরেজের নিদান অনুযায়ী বাঁশগাছের সবুজ ছাল নতুন শিলে শিশির দিয়ে বেটে জোহরার মাথায় লাগানো হয়। ওর মাথায় শেয়ালের দাঁতের আঘাতে ক্ষত তৈরি হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক সবকিছু পালটে যায়। আমাদের সেই গল্প শোনার কালও গেছে। বহুদিন পর সেইসব সন্ধ্যার আঘ্রাণ যেন এক লহমায় ছুঁয়ে দিল দুর্লভ সূত্রধরের লেখা “আহাম

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
বাড়ি বাড়ি লম্ফের নানা প্রকারভেদ ছিল। লম্ফ দিয়ে চেনা যেত বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতি। যাদের অবস্থা ভাল তাদের পিতলের লম্ফ। এ লম্ফেরও নানা প্রকার। কোনওটা গোল। কোনওটা লম্বাটে, সুদৃশ্য ছাঁদের দীপদান। সাধারণ গৃহস্থের ঘরে টিনের বা কর্কেটের লম্ফ। যাদের অবস্থা আরও খারাপ তারা ওষুধের বা অন্য কিছুর কাচের শিশিতে পলতে লাগিয়ে লম্ফ বানিয়ে নিত। লম্ফের স্থান সাধারণত দাওয়ায়। গোয়ালঘরে। বা উঠোনের কাঠের উনুনশালের কাছে। এর কারণ বোধহয় লম্ফের ধোঁয়া। হারিকেনের থেকে একটু বেশি ধোঁয়া বেরত লম্ফ থেকে। তাতে ঘরে ঝুল জমত। তাই ঘরে ঠাঁই হতো না লম্ফের।  কল থাকলে বিকল হবেই। হারিকেনের তো কল-ই ছিল। কলকা বলতাম আমরা। পলতে বাড়ানো কমানোর কল। সেটা বিগড়ে যেত। কারও পলতে বাড়ানো কমানো যেত না। প্রয়োজন না থাকলে হারিকেনের আলো মৃদু করা হতো পলতে কমিয়ে। তাতে কেরোসিন বাঁচত। কল খারাপ হলে বাড়াতে কমাতে গিয়ে হারিকেনের নীচের তেলের ডাব্বায় সেঁধিয়ে যেত পলতে। তা বার করা এবং পুনঃস্থাপন ছিল ঝক্কির। কোনও হারিকেনের কাচ লাগানো যেত না। খাপ আলগা হয়ে ঢলঢল করত। আর হারিকেন, লম্ফ নির্বিশেষে তেল চোঁয়ানোর রোগে ধরত বয়সকালে। মানে ব্যবহারে জীর্ণ হলে। তেল চোঁয়ানো হারিকে

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'শেষ মৃত পাখি' পড়ে লিখেছেন রাকা দাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................................................................. পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ বইঃ শেষ মৃত পাখি লেখকঃ শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য প্রকাশকঃ সুপ্রকাশ পৃষ্ঠাঃ ৪০৩ মূল্যঃ ৫২০/- টাকা বর্ষাকালের দার্জিলিঙের পটভূমিতে উপন্যাসটির সূচনা হয়। সময়কাল ২০১৯। এক সাংবাদিক তনয়া এসে উপস্থিত হয় এক বিখ্যাত সাহিত্যিক অরুণ চৌধুরীর বাড়ি। চুয়াল্লিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া এক অমীমাংসিত খুনের রহস্য নিয়ে এক ডকুমেন্টারি লেখার উদেশ্যে তার আগমণ। কিন্তু ধীরে ধীরে সে জড়িয়ে পরে এই রহস্যের সঙ্গে।এই মনে হচ্ছে সে রহস্যের সমাধানের দিকে এগচ্ছে, পরক্ষণেই আবার কুয়াশার মতো ভীড় করে আসছে রহস্যের ভিন্ন এক রূপ। দার্জিলিঙের আবহাওয়ার মতো রহস্যের মেঘ ঘিরে ফেলছে তনয়াকে সাথে পাঠকদেরও। অপরাধ ও শাস্তি। কে আসল অপরাধী? এবং তার কী শাস্তি হওয়া উচিত? উপন্যাসটি মাঝে মাঝে আমাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে নকশাল আন্দোলনের সময়ের সেই অশান্ত পরিবেশে। সেই সময়ের উদীয়মান কিছু তরুণ কবিদের লেখায়

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
আঠারো শতকের শেষ থেকেই ডাক রানারের নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে সচেতন পদক্ষেপ রাখতে লক্ষ করা যায়। এই সময় প্রায় সর্বত্রই পোস্টমাস্টার এবং ম্যাজিস্ট্রেটদের পক্ষ থেকে স্থানীয় কৃষকদের কাছে রানার হিসেবে কাজ করার জন্য আবেদন রাখা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে যারা গ্রাম সমাজের ভিত্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিল, সমাজের নিম্নস্তরের সেই সামাজিক শ্রেণি থেকেই ডাক রানার হিসেবে নিয়োগ করা হতো। যদিও সরকারি আধিকারিকদের পক্ষ থেকে উদারনৈতিক নীতির মাধ্যমেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা বলা হত, বাস্তবে অবশ্য কোম্পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য রানার পদে যোগ দিতে বাধ্য করা হতো। উনিশ শতকের প্রথম ভাগের সরকারি চিঠিপত্রে পোস্টাল কর্তৃপক্ষকে সাধারণত সুস্থ, সবল এবং সক্রিয় ব্যক্তিদেরই এই চাকরিতে নিয়োগ করার কথা বলা হয়। নিয়োগের সময় ডাক রানারদের কানে মন্ত্রগুপ্তির মত প্রবেশ করানো হতো যে তারা কোম্পানির রানার। এর অন্যতম প্রধান কারণ তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা এবং কোম্পানি এলাকার বাইরেও তাদের কাজের উৎসাহ বৃদ্ধি করা। ক্রমশ ডাক রানারদের নিজেদের প্রাপ্য নিয়ে সরব হতে দেখা যায়। কারণ ততদিনে কোনো কোনো ডাক সড়কে

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
‘হালুইকর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ আসলে কী? সংসদ বাংলা অভিধান জানাচ্ছে—‘মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক, ময়রা।’১ ১৯৫৭ সালে সাহিত্য সংসদ-প্রকাশিত এবং শৈলেন্দ্র বিশ্বাস-সংকলিত এই অভিধানে দেওয়া এ শব্দটির এহেন সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের ব্যাপারে মতৈক্য দেখতে পাচ্ছি কাজী আব্দুল ওদুদের ‘ব্যবহারিক শব্দকোষ’ (প্রথম প্রকাশ, ১৯৫৩)২ এবং ড. মুহম্মদ এনামুল হক ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী-কৃত ‘ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এ (প্রথম প্রকাশ, ১৯৭৪)৩। ১৯১৭ সালে ইন্ডিয়ান প্রেস থেকে প্রকাশিত জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের ‘বাঙ্গালা ভাষার অভিধান’-এ ‘হালুইকর’-এর অর্থ লেখা হয়েছে—‘যে হালুয়া—তাহা হইতে মিষ্টান্ন প্রস্তুত করে।’৪ প্রায় একইরকম প্রতিধ্বনি ঘটেছে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এও (প্রকাশকাল, ১৩৪০-১৩৫৩ বঙ্গাব্দ)—‘যে হালুয়া করে, মিঠাইকার, ময়রা।’৫ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য ‘হালুইকার’ বানান ব্যবহার করেছেন, তা নিশ্চিতভাবেই উচ্চারণ-ভিন্নতা থেকে উদ্ভূত। আরও একটু বিস্তৃত বিবরণ পাচ্ছি সুবলচন্দ্র মিত্রের ‘সরল বাঙ্গালা অভিধান’ (প্রথম প্রকাশ, ১৯০৬) এবং রাজশেখর বসুর ‘চলন্তিকা অভিধান’-এ (প্রথম প্রকাশ, ১৯৩০)। প্রথম অভিধানে হালুইকর সম্পর্কে লেখা হয়েছ

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
নবাব আলিবর্দী খাঁ তাঁর রাজত্বকালের সিংহভাগ সময় কাটিয়ে দিলেন ‘ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে’-র মোকাবিলা করতে করতে। বর্গী আক্রমণে ছারখার হয়ে যাওয়া বাংলায়, কাঁসারিরা এক মহল্লা থেকে আর এক মহল্লায় বসতি স্থাপন করতে বাধ্য হল। গড়ে উঠল নতুন নতুন পিতল-কাঁসা অঞ্চল। গঙ্গারামের ‘মহারাষ্ট্র পুরাণ’-এ বর্গী আক্রমণের ভয়াবহতা— কোনো কোনো গ্রাম বর্গী দিল পোড়াইয়া সেসব গ্রামের নাম শুন মন দিয়া চন্দ্রকোণা মেদিনীপুর আর দিখগপুর খিরপাই খড়ার আর বদ্দমান সহর। মেদিনীপুর পুড়িয়ে বর্গীরা চলে গেল হুগলির দিকে। হুগলি অঞ্চল থেকে কিছু কাঁসারি পরিবার বর্গীর হাত থেকে বাঁচতে চলে এল মেদিনীপুর। স্থানীয় কাঁসারিরা হাত মেলাল। বর্গী হানায় ছারখার হয়ে যাওয়া খড়ার হয়ে উঠল এই শিল্পের পীঠস্থান। বর্গী হানা থেকে বাঁচতে মুর্শিদাবাদের বড়নগর, ধননগর অঞ্চল থেকে পিতল-কাঁসা শিল্প ছড়িয়ে পড়ল খাগড়া, কান্দি, জঙ্গিপুর, পাঁচগ্রাম, জিয়াগঞ্জ, বীরভূমের টিকারবেতা, পাথরকুচি, নদিয়ার নবদ্বীপ, মুড়াগাছা। শিল্পের অভিমুখ গেল বদলে। অভিজাত সম্প্রদায়ের আভিজাত্য ছেড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় বাসনকোসনের গার্হস্থ্যে পরিণত হলো শিল্প। ব্যবসা বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়ল। পরিবহণ মূলত

মগ্নপাষান।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের ঐতিহাসিক উপন্যাস 'মগ্নপাষাণ' পড়ে লিখেছেন অনিরুদ্ধ রায়। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ................................................................... গতকাল পড়লাম একটি ঐতিহাসিক কাহিনী নির্ভর উপন্যাস " মগ্নপাষাণ " , সুপ্রকাশ প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত, মূল্য ~ ৩৯০/- । সূর্যনাথ ভট্টাচার্য প্রণীত এই উপন্যাসটি আবর্তিত হয় মগধনরেশ দেবনাংপিয়ানো পিয়দসি অশোক  এর সিংহাসনে আরোহণ কে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে অন্তঃসলিলা হয়ে ভেসে চলে প্রেম ,বিরহ, আশাভঙ্গ, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ইত্যাদি নানাবিধ জাগতিক বন্ধন। খৃষ্টজন্মের দুইশত সত্তর বৎসর পূর্বে মগধ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন বিন্দুসার পুত্র অশোক । কিন্তু এই অধিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম ছিল না। কারণ অশোক বিন্দুসারের এক অখ্যাত রাণীর পুত্র। অগ্রমহিষী পুত্র না হওয়ার কারণে খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর অধিকার অনেকাংশেই কম ছিল সিংহাসনের উপর। তিনি অগ্রমহিষী পুত্র সুসীম কে পরাস্ত করে কীভাবে তিন দশক রাজত্ব করলেন সেই কাহিনীই লেখকের কলমে ফুটে উঠেছে এই পরিসরে ‌।  উপন্যাস টি শুরু হয়েছে খৃষ্টপূর্ব ২৪১ এ

রহু চণ্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
রমজানের নির্দেশে জামির লড়াই করে। পেটে খোরাক জোটে না সবদিন। তরমুজের খেতে কাজ করতো হয় বলে গঞ্জের ঘাটে কুলির কাজে যেতে পারে না। লুবিনির সামান্য রোজগারের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়।     তারপর সেইসব জালিতে ফল আসে, ফল ক্রমশ বড়ো হয়। নতুন জালি আসে, ভ্রমর আর মৌমাছি সারা খেতে উড়ে বেড়ায়, প্রজাপতি লতার উপর দোল খায়। তারপর ফলের রঙ সাদা থেকে হালকা সবুজ হয়, তারপরে গাঢ় সবুজ, তারপরে ক্রমে কালো রঙের বৃহৎ আকারের তরমুজ খড়ের বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকে।     এসব দেখে রমজানের মতো জামিরের কলিজা ঠান্ডা হয়, খিদের পোকা আর পেটের ভেতর মোচড় মারে না, অথবা মোচড় মারলেও, আর তেমন করে মালুম হয় না জামিরের।     তারপর চৈত্রের শেষে যখন তরমুজ হাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়, তখন তরমুজ খেতের আসল দুশমনেরা এসে হাজির হয়। এরা ধসা রোগ বা কাটাপোকার থেকেও ভয়ঙ্কর। এদের বাগ মানানোর কোনও উপায় রমজানের জানা নেই।     এরা সব শহর ও আশপাশের বাবুঘরের জোয়ান ছেলে। দূরের থেকে তাদের আসতে দেখে রমজান বলে, পতিবার ভাবি আর তরমুজের চাষে যাব না, এতো উৎপাত আর সহ্য হয় না। কিন্তু মন যে মানে না। এতো পরিশ্রমের ফসল, দেখো, এখন কেমন নিজে

রহু চণ্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
রহু তার মানুষ নিয়ে সেই ভূখণ্ডে থাকত, যেখানে জীবন ছিলো নদীর মতো, নদীতে ছিলো অফুরন্ত স্রোত, বনে অসংখ্য শিকারের পশু এবং মাঠে অজস্র শস্য। মানুষ ছিলো স্বাধীন, সুখী।     তারপর সেই মানুষটা এলো। তার চোখ স্থির, তাতে পলক পড়ে না। সে এসে প্রথমেই মাঠ থেকে বহর সেরা ঘোড়াটি ধরে নিলো।     এই ঘোড়া আমার।   কেউ কোনও প্রতিবাদ করেনি। সবাই তাকিয়ে দেখছিলো তাকে। সে কিছু স্বতন্ত্র, রহুর মানুষদের সঙ্গে তার মিল নেই।     সে ঘোড়াটা ধরে নিলো এবং তাতে সওয়ার হলো। কিন্তু ঘোড়াটা তাকে সওয়ার করতে রাজি হলো না। তাকে ছিটকে ফেলে দিল। সে ক্রুদ্ধ হলো এবং আবার সওয়ার হলো। ঘোড়া আবার তাকে ধুলোয় ফেললো।     ক্ষিপ্ত মানুষটা তখন কোষ থেকে খড়্গ নিষ্কাশন করলো। ঘোড়া তার সামনে ঘাড় সোজা করে বেয়াড়া ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। ক্ষিপ্ত ও ক্রুদ্ধ মানুষটা এক কোপে সেই দুর্বিনীত স্বাধীন ঘোড়ার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করলো।     সব মানুষ হতবাক হয়ে গেলো। এমন পাশবিক হত্যা সেখানে কেউ কোনোদিন দেখেনি। সবাই স্তব্ধ।     তখন সে মানুষটা হা-হা করে হাসলো। তাতে সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়াল এবং তাকে শাস্তি দিতে চাইল।     অদ্ভুত! সেই মানুষটার চোখে মুখে কোনও আতঙ্ক নেই! 

রহু চণ্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
'খাটিয়ায় শুয়ে তাঁবুর পর্দা সরিয়ে একফালি চাঁদ দেখে হানিফ। নিঃসঙ্গ মানুষ প্রকৃতি থেকেও যে সুখ পায়, এমন নয়। সারাদিন যে মানুষ কাজের ভিড়ে অন্য অনেকের মাঝখানে থাকে, রাত হলে তার নিজের কথা মনে পড়ে। তখন সে পর্দা সরিয়ে চাঁদ দেখে, চাঁদ না থাকলে অন্ধকার আকাশের তারা আর ছায়াপথ দেখে হয়তো আরো একাকী হয়ে যায়।      তখন তার দাঙ্গার কথা মনে হয়, মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর কথা মনে হয়, মনে হয় বোনের নিখোঁজ হওয়ার কথা। তখন চাঁদ থেকে হিম ঝরে, তারা থেকে বরফের কণা যেন ছিটকে এসে তার গায়ে লাগে। আলো কিংবা অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎ যদি কোনও পেঁচা কাঁপিয়ে পড়ে মাঠের আলে, কর্কশ চিৎকার করে, তখন তার চমক ভাঙতে পারে।      কিন্তু চাঁদ তাকে আবিষ্ট রাখে। সে আয়নার খাঁড়িতে দেখা জলপরির কথা ভাবে। ভাবতে ভাবতে অদ্ভুত সব পরিকল্পনা করতে থাকে সে, যা তার আয়ত্তের এবং সামর্থ্যের বাইরে। পলবির কথা ভাবতে তার ভালো লাগে। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার বিষণ্ণ মুখ, তার চিবুকের উপরের উল্কি। একসময় নিজের অজান্তেই সে ঘুমিয়ে পড়ে তারপর।      ঘুম ভেঙে গেলে অন্ধকারে নিজেকে মনে হয় ছায়ার শরীর। এতক্ষণ অন্য কোনো জগতেই সে ছিল। আদিনার মিনা করা

রহু চণ্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
চারিদিকে হাটুরে মানুষের ভিড় গোল হয়ে। মাঝখানে ছটি সাপের ঝাঁপি। একটির মুখ খোলা। তার ভেতর থেকে মাথা তুলে আছে এক বিশালকায় গোক্ষুর, স্থানীয় ভাষার গোমা। রূপা ঢোলকে কাঠি মারে, ঘুরে ঘুরে ভিড়ের বৃত্তকে বড়ো করে। শরমীর কাপড় হাঁটুর উপরে তোলা। পায়ের চেটোয় ভর দিয়ে বাঁ উরু আন্দোলিত করে গোক্ষুরের সামনে। যুবতী নারীর ভরাট উরু। মানুষের ভিড় বাড়ে। গোমা তার উত্তোলিত দেহ বাঁকা করে পিছন দিকে, আরো পিছনে। শরমী হাতের মুদ্রা করে। গোমা ছোবল মারে, শরমী হাঁটু সরিয়ে নেয় এবং একই সাথে বাঁ হাতে সাপের গলার নিচে হাত দিয়ে সাপকে প্রতিহত করে। একটা পূর্ণবয়স্ক গোক্ষুরের ছোবলের শক্তি মাঝারি শক্তির ঘুষির মতো। শক্ত মাটিতে ছোবল আছড়ে পড়লে সাপ জখম হবে। শরমী বলে, খা-খা-খা, বক্কিলাক্ খা, কিপ্লুনাক খা-।     রূপা ঢোলক রাখে। মাথার রঙিন ফেট্টি খুলে আবার নতুন করে বাঁধে। রক্তাভ বিশাল তার চোখ, পাকা গমের মতো গায়ের রঙ, বলিষ্ঠ চেহারা। অচিন মানুষকেও সে আকৃষ্ট করতে পারে। ঝুলির ভেতর থেকে একটা শুকনো শিকড় সে বের করে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ঢঙে সে বলে, এই যে ভদ্দরলোক-ইয়ার নাম মণিরাজ গাছ। তারপর অদ্ভুত ভঙ্গিতে স্বরগ্রাম উঁচুতে ন

রহু চণ্ডালের হাড়।। অভিজিৎ সেন।।

Image
"রাজমহল, বারহেট, তিনপাহাড়, সাহেবগঞ্জের হাটেবাজারে পীতেমের দল রঙিন কামিজ আর ঘাঘরা উড়িয়ে নতুন বিহ্বলতা আনে। মোষের শিঙে বাঁধা দড়ি দুপাশে বাঁশ দিয়ে ঠেলে টনটনা করা হয়। তার উপরে লম্বা বাঁশ হাতে যে রমণী চলে ফিরে আগুপিছু করে তার শরীর বড়ো টান টান, তার চোখমুখে আগুনে মসৃণতা, তার গায়ের চামড়া পাকা গমের রঙের। নিচের যে মানুষটা ঢোলক বাজায় তার মাথায় রঙিন ফেট্টি। আর একজন উপরআলির চলার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে বিচিত্র গান গায়, যে ভাষা কেউ বোঝে না, কিন্তু সুরের মাদকতা এড়াতে পারে না।                                    মাধোয়া ধাইর্ যারে                                    মাধোয়া ধাইর্ যারে                                ছোটি ছোটানি মাধোয়া ধাইর্ যা                                তিলেক্ পঢ়োরে তিলেক্ পঢ়োরে                                ছোটি ছোটানি মাধোয়া ধাইর্ যা                                হেরছি ফক্ড়িরে হেরছি ফক্ড়িরে                                ছোটি ছোটানি হেরছি ফক্ড়ি। নতুন নতুন বসতি সব, নতুন নতুন মানুষ, উঠতি বড়োলোক, জাঁকজমক, ঠাট, সবই নতুন। বাজিকর ভাবে, হ্যাঁ, এমন জায়গাই বাজিকরের

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
"ভারতীয় সেনা ঢোকে ঢাকা শহরে! সুতো ছাড়ার সময় যাঁরা ছিলেন, সুতো গোটানোর সময় তাঁদেরই ব্যস্ত দেখা যায়। শরণার্থী শিবিরগুলো ভেঙে ফেলা হয়, স্কুলগুলো খালি হতে থাকে। মানুষজন ফিরে যেতে থাকেন তাঁদের যুদ্ধবিধ্বস্ত বাসভূমিতে— পোড়া ভিটে, ভাঙা গ্রাম আর চালের ওপর একদা যত্নে তুলে দেওয়া লাউ-চালকুমড়ো লতার সবুজে, ঘরের পাশের গাঁদা গাছটির সান্নিধ্যে। শিবেশ্বরদার কবিবন্ধুও ফিরে যান দেশে, স্বাধীন দেশে—তাঁকে আবার কবিতার কাগজটা বার করতে হবে। আতিথ্যের জন্য ধন্যবাদ আর তাঁর কাগজে লেখার জন্য সকলকে দরাজ আমন্ত্রণ জানিয়ে যান তিনি— এমন-কী এই আমন্ত্রণ থেকে কবি চঞ্চলও বাদ যায় না।  ফলত দাদার সঙ্গে আমীরাও ফিরে যায়।  এই শহর, তার পুরোনো পুরোনো বাড়ি, সোঁদা-গন্ধের শতাব্দী-প্রাচীন স্কুলবাড়িগুলি তেমনই রয়ে যায়। থেকে যায়— এক-একটি অঞ্চলে জড়াজড়ি করে এক এক সম্প্রদায়ের বিভাজিত বাসভূমি। যেদিন আমীরারা চলে যায়, তার পরদিন গিয়ে মেজর দেবেশ্বরকে বাড়িতে পাই না আমরা। তাকে আবিষ্কার করি বেজনা বিলের ধারে।  দেবেশ্বরের রোগাটে মুখে, সর্বাঙ্গে স্বপ্নঘোরের মতো বিষাদের আল্পনা। সহসা মনে হয়— একটা কুসুম-কুসুম গন্ধ, শব্দহীন কবোষ্ণ এক ছায়া, মোমের মতো ম

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
'মায়ের হাঁড়িতে কখনও ভাতের অভাব হতো না। যদি-বা কখনও হতো তা আমরা টের পেতাম না—তার চোটটা হয়তো মায়ের পাতের ওপর দিয়েই যেত! মায়ের হাতে টাকা জমলেই মা চাল কিনে রাখতেন। রীতিমতো মুটে নিয়ে আসত বিরাট চালের বস্তা—আড়াই মণ—একশো কেজি বা এক কুইন্টাল চাল ৷ একটা বড়ো কালো ড্রামে (তদানীন্তনকালের কেরোসিন তেলের ড্রাম) তা ভর্তি করা হতো। তাতে না ধরলে বড়ো বড়ো হাঁড়িতে চাল রাখা হতো। এইভাবে যথেষ্ট পরিমাণে গমও মজুত থাকত। চাল ফুরোবার আগেই আবার নতুন চাল কেনা হতো। সস্তার সময়ে কয়েক বস্তা আলু কিনে রাখতেন মা। চৌকির তলায় সাদা বালির আস্তরণের ওপর আলু বিছিয়ে ছিল মায়ের নিজস্ব হিমঘর ! মজুতের প্রক্রিয়াটা শুনতে যতটা সহজ, কাজে ততটাই কঠিন ছিল। চাল বা গমে পোকা লেগে যেত বলে নিম পাতা বা পরতে পরতে চুন ছড়িয়ে রাখা হতো এবং নিয়মিত তদারকি করতে হতো। আর প্রত্যেকদিন চৌকির তলায় ঢুকে আলুগুলোকে উল্টে পাল্টে দিতে হতো, বেছে বেছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল আলুগুলোকে সেদিনের রান্নার জন্য বের করতে হতো। মায়ের এসব উদ্যোগে দিদিদের কঠোর শ্রম করতে হতো। মায়ের কাছ থেকেই স্থৈর্য পেয়েছিল আমাদের দয়াবতী দিদিরা— আমার মতো আকাটরা তাই তরে যেতে

আহাম্মকের খুদকুড়ো।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
‘সে-সময় বিদ্যুৎ দপ্তরের অফিসের পর থেকে মাহেশ্বরীতলা পর্যন্ত রাস্তাটা অত জমজমাট ছিল না। সদ্য ঘরবাড়ি দোকানপাট গড়ে উঠছিল—পূর্ববঙ্গ থেকে আগত মানুষেরা এই অঞ্চলে সবে বসতি স্থাপন করে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করছিলেন। পাশাপাশি দেশভাগের ভাগফলজনিত কারণে গজিয়ে ওঠা একাধিক কলোনি ছিল এমনই সব প্রবর্তিত বসতি। তখনও এই পল্লীগুলিতে ইলেক্ট্রিসিটি আসেনি। অঞ্চলটি তুলনামূলকভাবে নির্জন, পল্লীর পেছনের সীমানা দিয়ে রেললাইন, চারদিকে ঝোপঝাড়, সন্ধ্যার পরেই ঝুপসি অন্ধকার। সেদিন গ্রীষ্মকাল, বিখ্যাত গা-জ্বালানো গরম দিদিরা ভেতরের বারান্দায় তাদের পড়ার জন্য বরাদ্দ লণ্ঠনের চারপাশ ঘিরে পাঠে এবং পড়ার নামে খুনসুটিতে মত্ত, দাদারাও দিদিদের কাছে বসে সুর করে কিশলয়ের ছড়া বলছে, আর আমি তাদের অনতি দূরে খালি গায়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। সহসা আমার কান্না এবং আমার দিকে মুখ করে বসে থাকা মেজদির প্রবল আর্তনাদ।—কিছু একটা আমার নাভি-সংলগ্ন কোমরের কাছে কামড়ে দিয়েছে! মেজদির মতে একটা বিরাট মাপের শিয়াল আমাকে কামড়ে মুখে করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল, ছোড়দির মতে জন্তুটা ছিল একটা বড়োসড়ো কুকুর, দাদার মতে সেটা শিয়াল বা কুকুর নয় অদ্ভুত দেখতে একটা জন্তু! কান্না

আহাম্মকের খুদকুড়ো ।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
'আমাদের ইস্কুল ছিল প্রকৃত অর্থেই প্লেটোর নগররাষ্ট্রের থেকেও এক আদর্শ রিপাবলিক। উকিল-মোক্তার-ডাক্তার-অফিসার থেকে শুরু করে ছোটো ব্যবসাদার-ভেণ্ডার-বাজারের তরকারি বিক্রেতা-রিক্সাচালক-পরিচারিকা-সব পরিবারের ছেলেরাই আমাদের ইস্কুলে পড়তো। রুশ লোককথার 'দাদুর দস্তানা'র মতো সকলের সেখানে ঠাঁই ছিল। শহর-লাগোয়া আশেপাশের গ্রামগুলির জুনিয়ার হাইয়ের ছেলেদেরও আশ্রয় ছিল আমাদের আমজনতার বিদ্যালয়টি। যথাসম্ভব অনভিজাত হওয়ায় আমরা আমাদের ইস্কুল নিয়ে নিশ্চিন্ত আরামে ছিলাম। সেবার বছরের মাঝখানে একটি ছেলে এসে আমাদের ওপরের ক্লাসে ভর্তি হলো। নতুন কোনো ছেলে ভর্তি হলে তখন কিছুকাল সে গোটা ইস্কুলের কৌতূহলী নজরে থাকত। শোনা গেল সে নাকি আমাদের শহরে নবাগত উচ্চপদস্থ সরকারি অফিসারের পুত্র। বড়ো সরকারি অফিসার, বছরের মাঝখানে বদলি হয়ে এসেছেন বলে তাঁর ছেলে নিয়মমাফিক বছরের মাঝখানেই ভর্তি হতে পেরেছে। সকলের সঙ্গে আমরাও উঁকি দিয়ে নবাগত জীবটিকে দেখে নিলাম। নেহাৎই গোলগাল ভালোমানুষ চেহারা, সুমধুর ও আন্তরিক ব্যবহার—শুধুমাত্র পোশাকে ঈষৎ বড়োমানুষী। কারোর দিকে তাকিয়ে ঈর্ষা করবার মতো আত্মবোধের চর্চা ছিল কম। বরং এমন একজন শহরের এত স্কুল

মুর্শিদাবাদের নবাবি কেল্লার কথা।। ফারুক আবদুল্লাহ।।

Image
'মীরজাফর পরবর্তী নবাবদের সাধ থাকলেও সাধ্য ছিলনা নতুন প্রাসাদ নির্মাণের। কারণ এমনিতেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নানান বাহানায় নবাবদের ভাতা কমিয়ে আসছিল। ফলে নবাবরা যা ভাতা পেতেন তা দিয়ে তাঁদের নবাবি ঠাটবাট বজায় রাখা ছিল কষ্টকর। এমতাবস্থায় তাঁদের পক্ষে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করা ছিল বিলাসিতার নামান্তর। কিন্তু পরিবার পরিজন নিয়ে এভাবে বসবাস করাও ছিল খুব কষ্টসাধ্য। ফলে নিজামত পরিবারের পক্ষ থেকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে তাঁদের পুরানো প্রাসাদের দৈন্যদশার কথা উল্লেখ করে নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রচুর চিঠি লেখা হয়। চিঠি পেয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এসে নতুন প্রাসাদ তৈরীর স্থান নির্বাচন, মাপ এবং খরচের হিসেব করেও শেষ পর্যন্ত কাজ আটকে যেত টাকার জন্য। কারণ কোম্পানি কখনোই এই খাতে খরচ করতে চাইতো না।  ঊনবিংশ শতকের প্রথমদিকে বিশেষ করে মীরজাফরের পত্নী মুন্নি বেগমের মৃত্যুর পর তাঁর এবং নিজামত পরিবারের বাকি মৃত সদস্যদের কয়েক বছরের বকেয়া ভাতা এবং মুন্নি বেগমের ব্যক্তিগত কিছু সম্পদ (সোনা, মণিমুক্ত, হীরে জহরত) বিক্রি করে একটি তহবিল গঠন করা হয়। যদিও পরবর্তীকালে আরও ক

বাবার ইয়াশিকা ক্যামেরা।। কল্লোল লাহিড়ী।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত কল্লোল লাহিড়ীর বই 'বাবার ইয়াশিকা ক্যামেরা' পড়ে লিখেছেন দেবশ্রী মাইতি বিশ্বাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ........................................................................... #বুক_রিভিউ বাবার ইয়াশিকা ক্যামেরা লেখক- Kallol Lahiri  প্রকাশক-সুপ্রকাশ  মুদ্রিত মূল্য- ৩৩০.০০ কি বলা যাবে একটা লোককে যে বারে বারে তার নিজের জীবনটা নিয়ে লিখে যেন আমার জীবনের গল্প লিখে যায়। যে আমার এক দশকেরও পরে জন্মেছে। যার সঙ্গে আমার কোনো মিল নেই। না বয়সের, না লিঙ্গের, না বেড়ে ওঠার জায়গার, না বেড়ে ওঠার সময়ের, না বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতার।  তবুও কেন তার বই পড়লে মনে হয় এতো আমারও গল্প, এতো আমাদেরও গল্প।  আমাদের পরিবারকে দেশ ছাড়া হতে হয় নি। কিন্তু আমার মায়ের পরিবারের মূল ছিলো ওপারে। আমার দাদু দিদা চাকরির সূত্রে তখনকার অবিভক্ত বাংলার যেখানে যেখানে পোস্টেড ছিলেন, ঘটনাচক্রে সেগুলো এ দেশেই ছিলো। কিন্তু মায়ের জেঠামশাইদের উপর দেশবিভাগের আঘাত পড়েছিলো। যদিও সম্পন্ন ব্যবসায়ী পরিবার হওয়ার জন্য এদেশেও তাঁদের এসে ওঠার বাড়ি ছিলো। কিন্তু তাঁরা সঙ্গে করে কিছুই আনতে পারেন ন

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

Image
'দিন-কয়েক পর থেকেই অদ্ভুত এক যাত্রা শুরু হলো সুমনের। দু-দিন আগেই এমন জীবনের কোনো প্রকল্পনা তাঁর নিরালম্ব-শূন্যতায় বেপথু হাওয়া হয়েও প্রবেশ করেনি। হাটতলা পেরিয়ে খানিক এগিয়ে তেঁতুলতলা মোড়ে গোপাল বাড়ুজ্যের শালার বাড়িতে একটা ঘর নিয়ে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হলো। সুধাময় আর তাঁর নবলব্ধ বন্ধুরাই চৌকি-বিছানা, মশারি-বালিশ, লেপ-কাঁথা প্রয়োজনীয় চায়ের সরঞ্জামের ইন্তেজাম করে ফেললেন। দোকানের ফাঁকে ফাঁকে সুধাময় তাঁকে সদরে নিয়ে গিয়ে রং-তুলি ইতি-ইত্যাদি কিনে দিল। আড্ডাড়ুদের মধ্যে কাঠমিস্ত্রি ছিল খোকন শেখ। সে-ও সাইন বোর্ড নির্মাণে তাঁর সঙ্গে লেগে গেল। সদর থেকে এক-টুকরো ভালো ও মোটা টিন এনে গোপাল বাড়ুজ্যের বাড়ির পুরোনো কাঠ থেকে বাটাম বের করে তাই দিয়ে বাঁধিয়ে সাইনবোর্ড তৈরি হয়ে গেল। তার ওপরে হালকা ক্রিম কালার লাগিয়ে তার ওপর ডার্ক-ট্যান রঙে পুরোনো পুঁথির হরফে লেখা হলো 'রাধাকৃষ্ণ টেলার্স', তার তলায় বিদ্যাসাগরীয় ফেস-ফন্টে টেলার অ্যান্ড আউট ফিটার্স। তার তলায় প্রো : গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ডার্ক-ট্যানের এক-একটি শেডে এক-একটি লাইন। সঙ্গে ডানদিকের কোণায় শ্রীকৃষ্ণের শিখীপুচ্ছ আর রাধার নূপুরের প্রতীকী সাইন! দ