Posts

Showing posts from 2020

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। কল্লোল লাহিড়ী

Image
  “নারকেল কোরা হয়ে গেছে ইন্দুবালার। এই বয়সে দশটা নারকেল কোরা চাড্ডিখানি কথা নয়। ঘামছেন তিনি। এবার বাটতে হবে শিলে ফেলে পুরোটা। মিহি করে। যাতে একটু এবড়ো খেবড়ো কুচি না পড়ে মুখে। জিভে দেওয়ার সাথে সাথে যাতে গলে যায় চন্দ্রপুলি। দিনের বেলা হলে ধনঞ্জয় জোর করে মিক্সিতে বাটতে বলতো। কিন্তু ইন্দুবালা জানেন প্রাচীন এক শিলায় নারকেল বাটা আর যন্ত্রে বাটার মধ্যে অনেক তফাত থাকে। পাথরের ওই স্বাদটা কি তিনটে স্টেনলেস স্টিলের ব্লেড দিতে পারে? কখনোই না। ইন্দুবালা তাঁর শ্বশুর বাড়ির সেই কবেকার ভারী শিল  খানা পাতেন। বাটতে বসেন। আর ওই দিকে তখন কবেকার যুগ এফাল ওফাল করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে বড় খোকা, ছোট খোকা তার কোলে আবার খুকী। “আমরাও খাবো মা”। ইন্দুবালা বলেন “আগে হোক। তারপর খেও। এখন ঘুমিয়ে পড় যাও”। কিন্তু কেউ যেতে চায় না। তিনজনেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে ইন্দুবালার দিকে। ইন্দুবালা বুঝতে পারেন এরা এখান থেকে কেউ নড়বে না। মায়ের জেদ আর ধৈর্য্য দুটোই তারা পেয়েছে যে। বড় ছেলেকে উনুনে দুধটা নাড়তে দিয়ে ছোট ছেলেকে এলাচ ছাড়াতে বলেন। মেয়েটা কোলে ঢুললেও বারবার জেগে উঠছে। ছোটোর দিকে তাকিয়ে দাদ-দা বলছে। ও বাবা বলতে শেখেনি। কার

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। কল্লোল লাহিড়ী

Image
  ইন্দুবালা ভাতের হোটেল সম্পর্কে প্রকাশকের পক্ষ থেকে ---------------------------------------------------------------------- ইন্দুবালা আমাদের বিগত প্রজন্মের। দেশ-ভাগের সময়বলয়ের জাতক যাঁরা। যাঁরা আমাদের ভুলে যাওয়া দেশের বাড়ির দরজা। বরিশাল কিংবা খুলনার খাল-বিলে ঘেরা স্বপ্নরাজ্য থেকে আধপেটা খাওয়ার খাদ্য-আন্দোলনের শহরে যাঁদের নির্বাসন। দু বাংলাকে ধরে রাখেন তাঁরাই। কেউ রান্নায়, কেউ বরিশালি চান্দ্রদ্বীপি কথার টানে। পূর্ব পাকিস্তান যেদিন হলো বাংলাদেশ, সেদিনই ছেনু মিত্তির লেনে প্রথম আঁচ পড়লো ইন্দুবালা ভাতের হোটেলে। এই উপন্যাসে ছেনু মিত্তির লেনের ইন্দুবালা ভাতের হোটেল ছুঁয়ে আছে এক টুকরো খুলনা আর আমাদের রান্নাঘরের ইতিহাস– মন কেমনের গল্প। ইন্দুবালার ঠাকুরদার মধ্যস্থতায় লেখক যখন বলেন, "দ্যাশ কি লাউটা না কুমড়োটা যে ভাগ করলিই হলো" , তখন তা পুরো বাঙালির কথন হয়ে ওঠে। আসলে এ উপন্যাসটি পুরোটাই বাঙালির কথন– ইন্দুবালার মধ্যস্থতায়। ইন্দুবালার স্মৃতি আর বর্তমানের ক্যালাইডোস্কোপে কল্লোল মুন্সীয়ানায় বুনতে পারেন একটা বিরাট সময়কে।– সেই কথন ছুঁয়ে থাকে আমাদের রান্নাঘর– পোস্ত ছিটানো কুমড়ো

অবিকল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। শতঞ্জীব রাহা

Image
  প্রবেশিকা পরীক্ষা দেওয়ার আগেই মানিকের মাতৃবিয়োগ হয়, তখন মানিকের বয়স ষোলো বছর। ১৯৩৫ এর মধ্যেই অর্থাৎ লেখকজীবনের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার কাল সূচিত হবার আগেই মৃগীরোগে আক্রান্ত হন। ক্রমিক আর্থিক অসম্পন্নতার আঘাত, অর্থের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম, বাধ্যতামূলক বহুপ্রসূতা—সব মিলিয়ে আমৃত্যু এক অলাতচক্রে পাক খেয়েছেন মানিক। রোগের সূত্রেই তিনি অতি প্রত্যক্ষভাবে মধ্যবিত্তের ক্রমবর্ধমান সমাজবিজ্ঞানগত অন্তর্বিরোধকে দেখতে পান। ফলত কোনোরকম চেষ্টাকৃত আরোপণ ছাড়াই মানিকের রচনায় সময়ের, সমাজ-সংসারের বস্তুপর িচয়ের প্রামাণ্যতা থেকে যায়। —তাঁর রচনার রসায়নে দ্রবীভূত হয়ে থাকে আবহকালের পরম্পরা থেকে জাত বিশ শতকের কয়েক দশকেের ভারতীয় তথা বাঙালি জীবনের সত্য পরিচয়। সমকালের সঙ্গে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পৃক্ততার অপর একটি প্রান্ত স্পর্শ করে থাকে তাঁর মতাদর্শগত বিশ্বাস, সময়কে বোঝার প্রচেষ্টা-তাড়িত তাঁর তাত্ত্বিক ও সক্রিয় কর্মকাণ্ড—দিগন্তের মতোই তার মাটি-ছোঁয়ার আকাঙ্ক্ষা। আড়ালে বসে মানুষকে নাচাবার মতো পুতুলওয়ালা যদি কেউ থাকেন, তবে সেই নিয়ামককে শশী ডাক্তার ‘হাতে পেলে দেখে’ নিতে চেয়েছিল। আসলে মানিক নিজেই সারা জীবন সেই পুতুলওয়ালার

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। কল্লোল লাহিড়ী

Image
  "ইন্দুবালা কুরনিতে কচু আর নারকেল কোরে্ন। সেই কচু আর নারকেল সরষে, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বড় শিলটায় বাটতে থাকেন। চারপাশটা ভরে উঠতে থাকে এক বুনো গন্ধে। অনেকদিন পর খুলনার কলাপোতা যেন হাতছানি দেয় তাঁকে। ইন্দুবালাকে ডাকে বোসপুকুরের পাশে বাঁশ ঝাড় পেরিয়ে কচু বোন। শীতের অবেলার বৃষ্টি। মাথায় দুটো বড় কচুপাতা নিয়ে দুই ভাইবোন কচু তুলতে যায়। গা হাত পা চুলকোয়। মা বকে। ঠাম্মার কাঁদো কাঁদো মুখটা আজও কেমন যেন মনে পড়ে যায় ইন্দুবালার। জ্বরের পরে স্বাদহীন মুখে খেতে চেয়েছিলেন কচুবাটা। মাকে বলেননি। জানেন এই বাদলায় কিছুতেই তিনি ইন্দুবালাকে পাঠাবেন না। ইন্দুবালাকে ডেকে বলেছিলেন “নিয়ে আসবি নাকি ইন্দু? বোসেদের বাগান থেকে একটা কচু তুলে?” ইন্দু না বলতে পারেনি। ভূতের ভয় ছিল তার। তাই ভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু ইন্দু চিনবে কী করে ভালো মানকচু? সেসব তো অনেক দিন আগেই ঠাম্মা নিজে হাতে করে শিখিয়েছে। “চারপাশ থেকে ছড়ার মতো পাতা যার বেরিয়েছে। ফুলের মতো হয়ে আছে গাছ। সে জানবি গর্ভবতী। মাটির নীচে লুকিয়ে রেখেছে সন্তানকে। তার মধ্যে টইটম্বুর দুধ। গোড়ায় ডেউ পিঁপড়ে গুলোকে দেখেছিস? লোভীর মতো কেমন ঘুরে বেড়াচ্ছে?” ঠাম্মা

প্রেমপত্র। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  রাধানাথ বিদ্যাবিনোদ তাঁর 'দাম্পত্যসুখচন্দ্রোদয়' নামের একটি চটি বইতে দাম্পত্যসুখের নানা উপায় প্রসঙ্গে প্রেমপত্র-লিখনের কথাও বলেছিলেন। "পতি যদি প্রবাসে থাকিবে, স্ত্রীকে পত্র দিবে। স্ত্রীকে যদি লজ্জাবশত পৃথক পত্র দিতে সংকোচ বোধ হয়, তবে গৃহকর্তার পত্রাভ্যন্তরেই স্ত্রীকে পত্র দিবে। তাহতে প্রেমবার্তা না থাকিলেও স্বামীর পত্রে কোন স্ত্রী না পুলকিত হয়! স্বামী সেই পত্রে সাংকেতিক বার্তা প্রয়োগ করিতে পারেন, যাহা কেবল ঐ দম্পতিই বুঝিবে।" রাধানাথ পত্রবিনোদ কোনো উদাহরণ দেননি বটে, তব ে এই নিবন্ধকার কল্পনায় সেরকম একটি চিঠি রচনা করতেই পারে। চিঠিটি তাঁর মায়ের প্রতি লেখা খামের ভিতরে আছে ধরা যাক। তাঁর পিতার প্রতি প্রেরিত পত্রাভ্যন্তরে স্ত্রীকে লেখা চিঠি পাঠাতে সংকোচ বোধ হতেই পারে। ১৯৩৮ সালে পত্রলেখকের মাতাঠাকুরানি হয়তো পড়তে পারেন না। পত্রলেখকের পিতাঠাকুরই ওই চিঠি পড়ে দেন। কিংবা সাক্ষরা নবপুত্রবধূ। কিন্তু পত্রলেখকের একটু রিস্ক থেকেই যাচ্ছে। উনি জানতে পারছেন না চিঠিটি কার হাতে প্রথমে যাবে। ফলে একটু বুঝেসুঝে। পরম কল্যাণীয়াসু, কর্মস্থলে নিরাপদে পৌঁছিয়াছি। পথে মায়ের দেওয়া নারকেল ন

হ্যান্ডবিল। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  'কলি যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অদ্ভুত অবতার' হেডিং-এর হ্যাণ্ডবিল অনেকের হাতেই এসেছে, আসতে বাধ্য। কারণ এইসব হ্যাণ্ডবিল জি পি সিরিজে ছড়ায়। যার হাতে পড়ে, হ্যাণ্ডবিল অনুসারে তাকে কিন্তু ছেপে বিলি করতেই হবে, এরকমই নির্দেশ থাকে। 'দক্ষিণ ভারতের তিরুপতির মন্দিরে কলিযুগের এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ওই মন্দির থেকে এক সর্প বেরিয়ে অনেক অপেক্ষা করে এক ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করলো।' তারপর ওই মন্দিরের পূজারীকে সর্পরূপী ব্রাহ্মণ বলে যে, আমার নামে ১০০০ কাগজ ছেপে বিলি করার ১৪ দিনের মধ্যে তাঁর মানসিক চিন্তা দূর হবে, নানারকম মঙ্গল হবে, আর ১৪ দিনের মধ্যে না করলে অমঙ্গল হবে। সর্পরূপী ব্রাহ্মণ এই কথা বলে ওখান থেকে ৩৬ পা পিছিয়ে অন্তর্ধান করলেন। হ্যাঁ, অন্তর্ধান করার জন্য ৩৬ পা-ই প্রয়োজন হয়েছে ১৯৭৮-এর হ্যাণ্ডবিলে, ৮৪-তে, ৯৫-তে, ৯৮-তে। বিভিন্ন সময়ে পাওয়া এই হ্যাণ্ডবিলগুলিতে ভাষার তেমন পরিবর্তন নেই। আর একটি এই গোত্রের হ্যাণ্ডবিল হলো, মুঙ্গের জেলাতে সন্তোষী মাতার দর্শন। সন্তোষী মাতার মন্দিরে এক মহিলা পূজা করিতেছিলেন। সন্তোষী মাতা তাঁকে দর্শন দেন এবং ওই মহিলাকে বলেন আমি কলিযুগে মেয়েছেলের রূপ ধারণ

বাঙালির রান্না: আত্মীকরণের বৃত্তান্ত। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  খ্যাতনামা দন্ত চিকিৎসক বারীন রায় নিরানব্বইয়ের মার্চ মাসে নেমতন্ন করে বেশ কয়েকজনকে দুপুরে খাইয়েছিলেন। যাকে বলে লাঞ্চে ডাকা। তিনি একটা মেনুকার্ড করেছিলেন। এইরকম-- তাজা রুই তেলে ভাজা গাছ পাঁঠা আরও তাজা ধোকা যদি খেতে চাও দইমাছ? পাবে তাও ভেব নাকো খাবে কাল পাবদার আছে ঝাল দশরথের দুর্দশা কুক্কুট পাবে কষা লাউচিংড়ি, লাউডগা পোস্ত কুমড়ো ফুল চোস্ত আরও আছে বাসমতী চাল অড়হর ডাল চাটনিতে পাবে আম কুলপিতে পাকা আম পান খেয়ে এসো তবে ফের কবে দেখা হবে 📕 কুচবিহারের রাজকন্যা সুকৃতি দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা স্বর্ণকুমারী দেবীর একমাত্র পুত্র জ্যোৎস্নাময় ঘোষালের। ১৮৯৯ সালে। সেই বিয়ের ভোজের মেনু ছিল এরকম। রাধাবল্লভী, লুচি, মোহন-লুচি, খাস্তাকচুরি, মটরশুঁটির কচুরি, সিঙ্গাড়া, নিমকি, জিরের ডাল চাকতি, ছোকা, ডাল, আলু পটলের দম, পটলের দোলমা, মাছের কাটলেট, চিংড়ির মালাইকারি, তপসে ভাজা, মাছের কচুরি, মাছের মুগমনোহর, দই-রুই, পোলাও, খাসির মাংসের কোর্মা, শাক-মাংস, মাংসের রসগোল্লা, কোফতাপলান্ন, গুলেল কাবাব, কমলা-মাংস, দইবড়া, পাঁপড়, পাঁচ রকমের চাটনি, নানা রকমের মোরব্বা ইত্যাদি। এব

ধর্মায়ুধ। অভিজিৎ সেন

Image
পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয় দশক। জৌনপুরের সুলতান ইব্রাহিম শর্কি আক্রমণ করেছেন গৌড়। গৌড়ের সিংহাসনে রাজা গণেশদেব। এই আক্রমণ থেকে নিজেকে এবং রাজ্যকে বাঁচানোর জন্য ইব্রাহিম শর্কির সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হলেন রাজা গণেশদেব।সন্ধির শর্তানুযায়ী রাজা গণেশদেব নিজে সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে তরুণ যুবরাজকে ধর্মান্তরিত করে সিংহাসনে বসালেন।কিন্তু তারপর? সিংহাসনকে কেন্দ্র করে শুরু হলো কি নতুন জটিলতা? এই প্রেক্ষাপটেই কথাসাহিত্যিক অভিজিৎ সেনের নাটকীয় উপন্যাস 'ধর্মায়ুধ'।   ধর্মায়ুধ অভিজিৎ সেন #সুপ্রকাশ প্রচ্ছদঃ সৌজন্য চক্রবর্তী অনলাইন অর্ডার লিঙ্ক:   https://thinkerslane.com/?product=dharmayudh বাংলাদেশে বইটি পেতে সুপ্রকাশের নাম করে নোকতা(বুবুক), তক্ষশিলা বা বাতিঘরে অর্ডার দিতে পারেন।

বঙ্গনারীর মুখের ভাষা। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  মেয়েদের ভাষা ছেলেদের তুলনায় সংরক্ষণশীল। প্রাচীনতাকে বহন করে। আবার যে সব শব্দ আমদানি হয়, মেয়েদের মুখে সেগুলো দেরি করে আসে। 'কেলো', 'কিচাইন', 'থোবরা', 'বিলা'-- এসব শব্দ মেয়েদের কথায় অনেক পরে ঢুকেছে। কিন্তু সেই সুর করেই বলবে, 'জানিস তো, কাল কী একটা কেলো হয়েছে। আমি আর সুবীর ট্যাক্সি থেকে নাবলাম, সামনেই দেখি জয়ন্ত। কেস খেয়ে গেলাম রে...'। কোনো ছেলে এই রিপোর্টিংটা একটু অন্যরকমভাবে করতো। 'জানিস  তো, রে...' এইসব শব্দ প্রযুক্ত হতো না। মেয়েরা এখনও যতই স্মার্ট হোক, 'বে' শব্দটা চলে না। 'শোন বে', 'চল বে'.. ইত্যাদি ছেলেদের মুখে শোনা যায়। তবে মেয়েদের মুখে শালা, বাঞ্চোত এখন শোনা যায়। কিন্তু একটা ছেলে যেমন বলে 'এক ঘুষিতে থোবরা ঢিলা করে দেব', তেমন মেয়েরা বলে না। জিনস পরুক, বয়কাট চুল করুক, ভেতরে ভেতরে একটু লুলুপুলু ভাব রেখে দিয়েছে। সেটাই কিন্তু ইউ এস পি। শব্দের ঝোঁক-এর মধ্যেও ছেলে আর মেয়েদের পার্থক্য দেখা যায়। কোনো পরিণত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যদি বলেন, 'আজ প্রচণ্ড গুমোট, একদম-- ভাল্লাগছে না', তিনি &

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল। কল্লোল লাহিড়ী

Image
  বাবা আসতে চাননি কলকাতা ছেড়ে। তাঁর কাছে তখন নতুন দুটো ভূখণ্ড-- ভারতবর্ষ আর পাকিস্তান। বাবা থেকে যেতে চেয়েছিলেন ভারতবর্ষে আর দাদু চেয়েছিলেন যে গ্রামের মাটিতে তাঁর বাবা, মা, পূর্বজরা পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে আছেন, যে নদীর জলে ডুব দিলে জীবনে শান্তি পাওয়া যায়, সেই কলাপোতায়। তখনও হয়তো তিনি মনে মনে বিশ্বাস করতেন, এটা মানুষের সাময়িক ভ্রম। দেশনেতাদের অলীক কল্পনা। "দেশ কখনও ভাগ করা যায় নাকি এটা কি তোমার লাউটা, মুলোটা, কাটলেই ভাগ হয়ে গেল ?" সামনের বর্ষার দিকে তাকিয়ে থাকতেন তিনি। "বৃষ্টির জলে ধুয়ে যাবে দুই দেশের সীমানা। তখন দেখো আবার আমি কেমন করে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে করে স্টেশনে নামি। বাড়ির দোরে এসে ডাক দিই... কোথায় ব্রজের মা...? হাতের ব্যাগখানা ধরো দেখি। তোমার জন্য বড় বাজারের মশলা আর ভীম নাগের সন্দেশ আছে।" বর্ষার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দাদুর চোখে ছানি পড়েছিল। কিন্তু দুটো দেশ জোড়া লাগেনি। ইন্দুবালা ভাতের হোটেল কল্লোল লাহিড়ী প্রচ্ছদ ও অলংকরণঃ মেখলা ভট্টাচার্য # সুপ্রকাশ Online:  https://thinkerslane.com/?product=indubala-bhater-hotel

সীমান্ত। পঞ্চাশটি গল্প। অভিজিৎ সেন

Image
  বাসের ভিড় কমতে ভাদ্রমাসের গুমোটটাও কম লাগলো বিভূতির। অল্প কয়েকজন লোক আছে বাসে, এমনকি কতগুলো বসার আসন খালিই পড়ে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মধ্যবয়সী এক দম্পতি গাড়ির মেঝেতে বসে আছে একপাশে। ভূপতি বলে, 'সিটে উঠে বসুন, জায়গা তো আছে।' তারা ওঠে না।' কনডাক্টর এসে তাদের সামনের আসনটায় বসে। বলে, 'মিঁয়া বিবি দোনো জনায়ই বিনি পয়সায় যাবা ? ক্যান ? আমি তা হবার দিমো ক্যান ? পয়সা বার কর।' লোকটি একটু করুণ হাসি হাসার চেষ্টা করে বলে, 'থাকলে দিই না ? পয়সা নাই।' 'পয়সা নাই, গাড়িৎ ওঠার শখ ক্যান ? পয়সা নাই, হাঁইটে যাও।' 'শখ নয় বাবু, দরকারে আসিছিলাম। এত দূর রাস্তা--' 'দেখি বিবির বোঁচকা খোল, পয়সা আছে কি না দেখমো।' নোংরা এবং ছেঁড়া ঘোমটার আড়ালে স্ত্রীলোকটির মুখ দেখা যায় না। কনটাক্টার টান দিয়ে বোঁচকা নেয় এবং খুলে ফেলে, ছড়ায়।বস্তুত তার হাবেভাবে এটা পরিষ্কার যে, সে পয়সার জন্য যতটা না উৎসাহী তার থেকে অনেক বেশি উৎসাহী রগড় করতে বা অন্য মানসিকতায়। 'যাবা কুনঠি ? ওপারে ?' লোকটি মাথা নাড়ায়। 'পাশফোট আছে ?' লোকটি করুণ দৃষ্টিতে ওপরের দিকে তাক

বাঙালি মধ্যবিত্তের ধর্মটর্ম। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  হিন্দুত্ব বলতে কী বুঝি ঠিক করে বলতে পারব না। এখনকার হিন্দুরা বৈদান্তিক নয়, মায়াবাদী নয়, দ্বৈত্ব অথবা অদ্বৈত্ববাদী কোনোটাই নয়, নাস্তিকও নয়, আবার খুব ধর্মভীরুও নয়। হিন্দুদের লিখিত কোনো ধর্মগ্রন্থ নেই। একসঙ্গে লেখা আচার-পদ্ধতি নেই। কী কী করণীয় এবং করণীয় নয়, এই নিয়ে স্মৃতিশাস্ত্র লেখা হয়েছে। কিন্তু নানা স্মৃতিকার নানারকম বিধান দিয়েছেন। মনু একরকম, বৃহস্পতি একরকম, আবার আমাদের জীমূতবাহন অন্যরকম। বাংলার রঘুনন্দন তো ব্রাহ্মণদের মৎস্যভোজনও অনুমোদিত করে দিয়েছেন। না করে উপায় ছিল না। দেশ জুড়ে এত জল, এত মাছ, মিথিলা এবং কনৌজ থেকে আমদানি করা নিরামিশাষী বামুনেরা লোভ সামলাতে না পেরে গোপনে মাছ খাচ্ছিল। ব্যাপারটা আর গোপন রইলো না। শেষকালে মৎস্যভোজনও অবিধেয় নয়, এরকম একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে হলো। কারা কারা শূদ্র শ্রেণীতে পড়বে, সেটাও বাংলায় আলাদা। কার ক-দিন অশৌচ, সেইসব বিধানও পালটেছে। সুবর্ণ বণিকদের রাতারাতি শূদ্র করে দেওয়া হলো। কুলীনপ্রথা তৈরী হলো-- এসব বাংলার নিজস্ব ব্যাপার। বাংলার ব্রাহ্মণরা এসেছে অনেক পরে। বাংলার আগে কৌম রাষ্ট্র ছিল। সুহ্ম, পৌণ্ড্র, সমতট, রাঢ়--এইসব নাম ছিল। পাল রাজাদের আ

পূরব দিগন্ত পানে অন্তিম পূরবী। শতঞ্জীব রাহা

Image
  'ডাকঘর' নাটকটিকে মৃত্যুলীন ধূসরতার লিরিকতর লিরিক হিসেবে দেখার একটা সাধারণ প্রবণতা আছে। প্রমথনাথ বিশী 'ডাকঘর' রচনাকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথের অন্তরে জেগে ওঠা মৃত্যুবোধের সূত্রে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, নাটকটি তাঁর নিজেরই মৃত্যুকল্পনা অবলম্বনেই লেখা। প্রমথনাথ নিজ বক্তব্যের স্বপক্ষে রবীন্দ্র-সাক্ষ্য ব্যবহারও করেছিলেন। রবীন্দ্ররচনার মর্জিমহলে প্রবেশ ও পদসঞ্চারের জন্য রবীন্দ্র-সাক্ষ্যের ব্যবহার বহুক্ষেত্রেই যে ঝুঁকিসাপেক্ষ তা প্রমথনাথ নিজেও জানতেন বলেই রাজ-কবিরাজের আগমনে অমলের ঘ ুমিয়ে পড়াটাকে শেষপর্যন্ত কিছুতেই তাঁর মৃত্যু বলে মনে হয় না--- অমলের এই ঘুমকে 'প্রতীক-নিদ্রা' বলে মনে হয় তাঁর। কেউ কেউ এটাকে খ্রিস্টীয় রেজারেকশান জাতীয় কিছু বলে মনে করেছেন-- প্রমথনাথ এটাও উল্লেখ করেন। এই নাটকের প্রধান বিষয় মৃত্যু নয়--চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত জীবন, এবং সেই জীবন সম্বন্ধে অমলের অনাবিল প্রতীক্ষা। সুধা বলেছিলঃ "বোলো যে, সুধা তোমায় ভোলেনি।"--এই তো ডাকঘর নাটকের ধ্রুবপদ। রাজার আগমন-সংবাদের আশ্বাসে অমলের দু চোখ জুড়ে যে প্রশান্তির ঘুম নেমে আসে, তা মৃত্যু তো নয়ই, 'প্

আমার রবীন্দ্রনাথ, আমাদের। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  বাগবাজারের খালধারে ছিল আমাদের বাসাবাড়ি। আমরা পাঁচ ঘর ভাড়াটে ছিলাম। একতলায় ছিল একটিমাত্র কলঘর। সিঁড়ির কোনায় ঘুঁটের ঝুড়ি রাখা দিয়ে শিখার মা-র সঙ্গে নিয়ে আমার মায়ের ঝগড়া হতো মনে পড়ে। একদিন আমার বোন 'আমার সোনার হরিণ চাই' গান গাইছিল। ও যেমন পারত আর কী ! আর শিখা চেঁচামেচি শুরু করে দিল। 'লজ্জা করে না, আমাদের গান গাইছিস, আমাদের গান একদম গাইবি না।' শিখার বাবা ছিলেন গানের মাস্টার। শাড়ি-পরা বড় বড় মেয়েরা সব গান শিখতে আসত। আমার মায়ের একটা জার্মান রিডের হারমোনিয়াম ছিল। বাবা টিউশানি সেরে যেদিন ফিরতে দেরি করতেন, মা হারমোনিয়াম নিয়ে বসতেন। একদিন মা 'আমার সোনার হরিণ চাই' গাইছিলেন। আমি আঙুলটা ঠোঁটের সামনে ধরে বলেছিলাম, 'চুপ, চুপ, এটা গেও না এটা গেও না, এটা শিখাদের'। মা দ্রুত ঘাড় কাত করে বলেছিলেন, 'ইঃ, আহ্লাদ ! ওদের গান ? রবীন্দ্রনাথের গান। রবীন্দ্রনাথ সবার।' তখন শুক্রবার শুক্রবার রেডিও-নাটক শোনার চল ছিল। একদিন স্কুলে গিয়ে শুনলাম 'ডাকঘর' হবে। আমাদের রেডিও ছিল না, শিখাদের ছিল। শিখাদের ঘরে এ-বাড়ি ও-বাড়ি থেকে বউ-ঝিরা কোলে করে শুক্রবার আটটা বাজতে পাঁচ

বাঙালির অশ্লীলতাবোধ। আলাপ বিলাপ। স্বপ্নময় চক্রবর্তী

Image
  বাঙালি বা ভারতীয় পুরুষের চোখে 'পা' মোটেই 'সেক্সি' নয়। 'হাত-টাত'-ও নয়। গত শতাব্দীর খ্রিস্টানদের চােখে উন্মুক্ত 'হাত' বা 'পা' অশালীন ছিল। ইসলাম ধর্মের চোখে নারীদেহের সবই ঢাকা রাখা উচিত। ক্যানিং অঞ্চলে 'উরষ' উৎসবে একজন ইমাম বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। আমার বেশ মনে আছে, আমি রিপ্লে দেবার চেষ্টা করছি-- "মেয়েছেলেদের জন্যি আল্লাহ পরদার বিধান দেছেন। অনেক ভেবেচিন্তে এই বিধান। যদি বল, ক্যানো ? তাহলে বলি, তোমরা ক্যাঁটাল দেখিছ তো, ক্যাঁটাল ? বাইরে কাঁটা লাগানো ছাল। ছালটা খুলি ফেল্লিই রসে ভর া টসটসে ক্যাঁটালে কোয়া। য্যতখন ছালটা লাগানো থাকে, মাচি আসে না। ঝ্যাক্ষুনি ছালটা খুলি ফেললে, ত্যাক্ষুনি মাছি এসি ভিড় করতে থাকে। ক্যাঁটালের মধুর লোভে। পরদা হলো গে সেই ক্যাঁটা বসানো ক্যাঁটালের ছাল। মেয়েছেলের শরীর হলো ক্যাঁটালের কোয়া।" হিন্দু মহিলাদের অবশ্য বোরখার পরিবর্তে ঘোমটার বিধান, অথচ বিয়ের সময় মেয়ে দেখতে গেলে পুরুষের সামনেই মেয়েদের শাড়ি ওঠাতে হতো হাঁটুর ওপর। পায়ের গোছ দেখা হতো। পিছন ফিরতে হতো। নিশ্চয়ই নিতম্বের গড়ন দেখা হতো। অর্থাৎ একটা ভে

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও বাংলার কৃষক। শতঞ্জীব রাহা

Image
  'দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও বাংলার কৃষক' পড়ে পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখছেন অপরাজিতা মুখোপাধ্যায় .............................................................................. দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ঃ এক অনাবিষ্কৃত ভুবন "মনিবরা আমাকে ফের বদলি করলেন-- দেবই এবার চাকরি ছেড়ে। আমি কি একটা ফুটবল নাকি যে ওরা যখন যেখানে খুশি শুট করে পাঠাবেন ?" একটি চিঠির অংশ। এই অংশটি পড়েই বোঝা যাচ্ছে যে, এর আগেও বহু শুট হজম করতে হয়েছে লেখককে। পত্রলেখক দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও প্রাপক পুত্র দিলীপকুমার রায়। এর প্রেক্ষিতটি খুঁজতে আমাদের চলে যেতে হবে শতঞ্জীব রাহার 'দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও বাংলার কৃষক' বইটির কাছে। ভূমি-আইনের যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা হাজির করে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তগ্রস্ত বাংলার কৃষকদের পক্ষালম্বন করায় দ্বিজেন্দ্রলালের বিরোধ ঘটে ছোটোলাটের সঙ্গে। সেই বিরোধের ফলে বার বার বদলি করা হয়েছিল দ্বিজেন্দ্রলালকে তাঁর ছাব্বিশ-সাতাশ বছরের চাকরি জীবনে এবং সেটা আক্ষরিক অর্থেই এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। প্রত্যাশিত পদোন্নতিও হয়নি তাঁর। শুধু এইটুকু বললে যে বইটি সম্পর্কে সবটুকু বলা হয় না, তা বোঝা যাবে বইটির প্র

চক্ষুষ্মতী গান্ধারী। মিহির সেনগুপ্ত

Image
  আমার এখন পঞ্চদশ বৎসর বয়স। এতদিনে আমার বিবাহ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিয়ে দিলে তো আমায় পতিগৃহে অচিরে পাঠাতে হবে। সেই কন্যাবিচ্ছেদ তিনি এবং মাতা কীভাবে সহ্য করবেন? সে কারণেই, পিতা আমার বিয়ের ব্যাপারে বিলম্ব করছিলেন। ক্ষুদ্র গান্ধার রাজ্যের রাজা হলেও তিনি রাজা। সুতরাং তেজে, বীর্যে যতই অকিঞ্চিৎকর হোন না কেন, তাঁর বিদুষী, বুদ্ধিমতী কন্যার বিবাহ কোনো প্রখ্যাত কুলসম্পন্ন রাজকুলে হোক, এমন আকাঙ্ক্ষা গান্ধারাধিপতির ছিল। উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করে বাল্য থেকে আমাকে তিনি সমস্ত বিষয়ে পারদর্শী করে তোলার প্রযত্ন করেছিলেন। ঠিক এরকম একটা সময়ে হস্তিনাপুরের অন্ধ রাজপুত্রের পাত্রীরূপে ভীষ্ম ভাটদের মাধ্যমে আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব পিতাকে জানালেন। পিতা ক্ষুব্ধ চিত্তে যথোপযুক্ত সম্মান সহকারে বলেছিলেন, “কিন্তু আর্য, পাত্র যে অন্ধ !” ভীষ্ম বলেছিলেন, “রাজাদের দেখার জন্য কর্ণের প্রয়োজন হয় না। রাজা কর্ণেন পশ্যাতি। মহারাজ সুবল জানবেন আমি হস্তিনাপুর থেকে গান্ধারীকে নিয়ে যেতেই এসেছি। অতএব পাত্রের অন্ধত্বের কারণে তাকে প্রত্যাখ্যান করার স্পর্ধা না দেখালেই ভালো করবেন। কুলের বিষয়টা অবশ্য ভাববেন, এটা কুরুক