Posts

Showing posts from February, 2023

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
'তাহলে নিখুঁত খুন ঘটতে পারে না বলেই তোমার মনে হয়?' জিজ্ঞাসা করল প্রণবেশ। 'উহু। ঘটতেই পারে। কিন্তু সেটাকে নিখুঁত প্রমাণ করা সম্ভব নয় এটুকু দাবি।' সশব্দে নস্যি টেনে শুদ্ধসত্ত্ব উত্তর দিল। তারপর লম্বা শরীরটা টানটান এলিয়ে দিল ইজিচেয়ারের ওপর। 'কেন?' ‘দ্যাখো, পৃথিবীর সবথেকে বুদ্ধিমান এবং নিখুঁত খুনি হিসেবে তুমি কাউকেই দাগিয়ে দিতে পারবে না। সহজ কারণ। যে নিখুঁত খুন করবে, সে চিহ্নিত হবে না। ধরাও পড়বে না। তাই দাগানো অসম্ভব।' 'ঠিকই। কিন্তু খুনির বেলায় যে তত্ত্ব খাটে, খুনের বেলায় খাটে না।' ‘খাটে, অন্যরকম ভাবে। যে খুনটা নিখুঁত হবে, তাকে তুমি খুন হিসেবে শনাক্ত করতে পারবে না। ভাববে আত্মহত্যা, বা অ্যাকসিডেন্ট। আর শনাক্ত করলে, সেটা নিখুঁত হবে না।' 'কেন হবে না? খুনি ধরা না পড়লেই হবে।” 'উফ্! আমরা এখানে হত্যার দর্শন নিয়ে আলোচনা করছি।' বিরক্ত স্বরে শুদ্ধসত্ত্ব বলল। ‘খুন হলো একটা শিল্প। আর গোয়েন্দা হলো সেই শিল্পের ক্রিটিক। সমালোচক যেমন শিল্পকর্মের ভেতর থেকে লুকানো নানা চিহ্ন খুঁজে খুঁজে ব্যাখ্যা করেন, গোয়েন্দাও একটা হত্যার মধ্যে লুকিয়ে থাকা বি

টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'সোনেরিয়া টাঁড় গাঁওটি আপনারা পাবেন তোপচাঁচি থেকে কত্ৰাসগড় যেতে রাস্তার বাঁদিকে। ঢেউখেলানো ঘাসের জাজিমওয়ালা এক দিলদুখানিয়া প্রান্তর পেরিয়ে এই গ্রাম। সেখানে সাঁওতালি কুল্লির অস্তিত্ব রাস্তা থেকে মালুম হওয়া বেশ তকলিফদায়ক। ঘাসের জাজিমওয়ালা ওই যে ঢেউখেলানো প্রান্তরটির কথা বললাম ওটি এই কুল্লিকে আড়াল করে রেখেছে। এখানে বাঁশের ঝাড় পাবেন মেলা। আর আছে মহুয়ার গাছ। এই সোনেরিয়া টাঁড়ে থাকেন শত্ৰুঘন ও বুধন সরেন। বুধন শত্রুঘনের ভাতিজা। পৌষের এক মধ্যাহ্নে বুধন এসে নেওতা দেন। শহরায় উৎসবে যেতে হবে। শহরায় শুরু হয়ে গেছে। ‘আপনকার সকলের নেওতা, অবইসস্য যাব্যেন'। শহরায় শুরু হয়ে গেছে, এ বার্তা শুধু মুখের কথায় যাঁরা জানেন, তাঁদের মতো হতভাগ্য এ-টাঁড় বহিয়ারের মিলিজুলি ভূখণ্ডে খুব বেশি নাকি নেই। এ-অধম সেই হাতগুনতি হতভাগ্যের দলে। কেন? না, তার লীলা কৈবল্যে শহরায়ের কোনো খবর নেই। সে একটা শহুরা ধুর বট্যে। সে নাই জানলহ্, শহরায় কা মতলব ঔর মহত্ত্ব ক্যা হৈ। শহরায় এখানে শুরু হয় মাঠে, ঘাটে, বাটে। শহরায়ের ছন্দ কখন যেন পৌঁছে যায় শ্বশুরালে বন্ধোয়া মজদুরের মতো আবদ্ধ কচি বউটার পায়ে। কেননা তখন স

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'শেষ মৃত পাখি' পড়ে লিখেছেন অরিজিৎ ব্যানার্জী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ........................................................................................ সাল ১৯৭৫ – দার্জিলিং-এ খুন হলেন তরুণ কবি অমিতাভ মিত্র। সন্দেহের তীর ছিল তাঁরই বন্ধু, রহস্যকাহিনী লেখক অরুণ চৌধুরীর দিকে। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রচুর অসঙ্গতি থাকার দরুণ অরুণবাবুর বিরুদ্ধে কিছু প্রমাণ করা গেল না, বেকসুর খালাস পেলেন তিনি। সাল ২০১৯ – সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক তনয়া ভট্টাচার্য একটা ধারাবাহিক লিখছেন, ভারতের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া ‘অমীমাংসিত’ খুনের কাহিনী নিয়ে। অমিতাভ হত্যারহস্য হবে তাঁর এই ধারাবাহিকের সর্বশেষ গল্প। সেইজন্য অনেক অনুরোধ-উপরোধ করে তনয়া শেষমেশ অরুণ চৌধুরীর সম্মতি আদায় করে এলেন দার্জিলিং-এ। অরুণবাবুর সাক্ষাৎকার নিয়ে চুয়াল্লিশ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই হত্যা, এবং তার পরের ঘটনাবলী নিয়ে, একটা জমজমাট গল্প লেখার উদ্দেশ্যে। তনয়া কি পারবেন সত্যিটা বের করতে, ঘটনার এত বছর পরে? উপরে উল্লিখিত দুটো অনুচ্ছেদে যতটুকু বললাম, , “শে

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' শেষ মৃত পাখি ' পড়ে লিখেছেন সায়ন সরকার। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ....................................................... শেষ মৃত পাখি সুপ্রকাশ মুদ্রিত মূল্য ₹৫২০ শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য পঁয়তাল্লিশ বছর আগে দার্জিলিঙের এক সম্ভাবনাময় কবি, অমিতাভ মিত্র খুন হয়েছিলেন। অভিযোগের তীর ছিল তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু রহস্য-ঔপন্যাসিক অরুণ চৌধুরীর দিকে। কিন্তু নানা পরস্পর বিরোধী প্রমাণে সে অভিযোগ দাঁড়ায়নি। তনয়া একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক। অমীমাংসিত খুনের কাহিনী নিয়ে ধারাবাহিক লিখছেন পত্রিকায়। অমিতাভ মিত্রের হত্যা-রহস্য নিয়ে লেখার জন্য দার্জিলিঙে এলেন তনয়া। তারপর? তনয়া কি খুঁজে পেলেন এই হত্যারহস্যের সমাধান? জাপানের হনকাকু ঘরানার থ্রিলার নিয়ে আলোচনা করতে করতে এই উপন্যাসের একটি চরিত্র আরেক চরিত্রকে কথাচ্ছলে বলেন ".... সাহিত্য না থাকলে শুধু শুকনো মগজের খেলা কতক্ষণ ভালো লাগে মানুষের??" আর ঠিক এই জায়গাতেই"শেষ পাখি মৃত" অন্য সমস্ত থ্রিলার থেকে সম্পূর্ণরূপে আলাদা। ব্যোমকেশের পর বাংল

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যর উপন্যাস ' শেষ মৃত পাখি ' পড়ে লিখেছেন অরিন্দম ঘোষ। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................................................... স্পর্শের মতো আয়ু চলে যায়, কখনো বা দ্রুত, কখনো বিলম্বিতে। প্রতীক্ষা ছিল, এখন আমার সারা ঘরে শ্বেত আলো স্পন্দনশেষে স্থির ও কম্পমান রহস্য আনে, সে কি রাত্রির শেষ মৃত পাখি, যার স্মৃতি আঁচড়াল মৃত্যুর ঘন ছায়ায় দেবযান ভয়ের মতন মৃদুসঞ্চারী স্বপ্নের পিছু নিতে? স্বপ্নের মতো আয়ু চলে যায়, কখনো বা দ্রুত, কখনো বিলম্বিতে।               -- পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল শাক্যজিৎ বাবুর লেখা আর কোন বই আমি এর আগে পড়িনি, কিন্তু এই কাহিনীর বিষয়বস্তু ও কভারের ছবিটি দেখে বড় লোভ হল। বইটি কিনেও রেখে দিয়েছিলাম দার্জিলিং থেকে ফিরে তারপর পড়বো বলে, যাতে দার্জিলিং শহরের উপর লেখা উপন্যাসের আমেজ আরেকটু বেশিই উপভোগ করতে পারি।  কিন্তু পড়তে পড়তে উপন্যাসটির গভীরতা বুঝতে পারলাম- প্রচ্ছদে লেখা " একটি রহস্য উপন্যাস " ছাপিয়ে এই বই এক অনন্য সাহিত্যকীর্তি হয়ে উঠেছে। এযাবৎকালের পড়া কোনও উপন্যাসের ধ

শেষ মৃত পাখি।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' শেষ মৃত পাখি ' পড়ে লিখেছেন ঈপ্সিতা গুপ্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ........................................... শব্দছক খেলতে বসেছেন নিশ্চয়ই কখনও না কখনও। ধরুন একটা শব্দ খুঁজে পেলেন। সেটার সাথে জুড়ে থাকা শব্দ, তার সাথে জুড়ে থাকা শব্দ... পরপর সুন্দর করে মিলে যাচ্ছে। মন খুশি। ছকটার সমাধান সেরে ফেলছেন, এই আনন্দে। কিন্তু শেষ শব্দ, যেটা পেয়ে গেলেই ছক সম্পূর্ণ হবে, সেখানে এসে আটকে গেলেন। অনেক চেষ্টা করেও শব্দ খুঁজে পেলেন না। বুঝলেন, প্রথম খুঁজে পাওয়া শব্দ থেকে শুরু করে সবটাই ভুল করেছেন। সবটাই বাতিল। আবার করে শুরু করতে হবে। কেমন লাগবে বলুন তো! বর্ষার দার্জিলিং। কুয়াশায় মোড়া, অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে ঝিমিয়ে পড়া দার্জিলিং। যে শহর বিশেষ বিশেষ সময়ে মানুষের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে, বর্ষায় সেই যেন মুখ গুঁজে থাকে শরীরের মাঝে। বিষন্নতা তখন তার সঙ্গী। এই দার্জিলিঙে পা পড়ল প্রবাসী বাঙালি মেয়েটির। পেশায় সাংবাদিক হলেও তার কাজ অন্যরকম। সারা দেশের অমীমাংসিত বিভিন্ন ঘটনার তল খুঁজে বের করতে চায় সে। তারপর তা

বাঙালির শিকার স্মৃতি।। সম্পাদনা : গৌরব বিশ্বাস।।

Image
'জঙ্গল নিস্তব্ধ। একটি পাখীর ডাকও শোনা যায় না। বসে বসে পায়ে ঝিনঝিনি ধরে গিয়েছিল। একটু নড়ে বসতে হোল। পাতার আড়ালেই ছিলাম, বাইরে থেকে আমাকে দেখতে হলে খানিকক্ষণ খুঁজতে হয়, কিন্তু আমার সামান্য নড়ায় গাছের তলায় কুটো ভাঙ্গার শব্দ শুনলাম। যেভাবে বসার ভঙ্গীতে আরাম কায়েমি হয়েছিল তাতে পিছন ফেরা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবু ফিরতে হোল। ফিরে যা দেখলাম তাতে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হোল। সেই প্রকাণ্ড বাঘ ঠিক আমার গাছের তলায় এসে দাঁড়িয়েছে। কি ভাবে কাঁটা বন পাশ কাটিয়ে নিঃশব্দে এখানে উপস্থিত হোল। অনুমান করা শক্ত। বন্দুক ঘুরিয়ে বাঘের দিকে নেবার উপায় নেই, আরামের প্রণালী মস্ত বড় বাধা হয়ে আছে— আমার চার পাশে ডাল আর পাতা। ইতিমধ্যে বাঘ নিচের ডালে সামনের পা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার পা থেকে বাঘের থাবা মাত্র কয়েক ইঞ্চি তলায়। বাঁচার কোন রূপ উপায় না থাকায় সামনের দিকে বন্দুকের নল রেখেই বাঁট বগলে তুলে নিলাম, তারপরে ঘোড়া টিপে দিলাম। বিকট আওয়াজ করে গুলি বেরিয়ে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গে বাঘ আমার সামনে লাফিয়ে পড়ল। স্ন্যাপ শটে রিফল্-এ বহুদিন হাত পাকিয়েছিলাম। বাঘকে সামনে পেয়ে আর একবার গুলি চালালাম। সাম

ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'বাঁশরির অ্যাংলো-খারোয়ার অসামান্য রূপে যে আমি মুগ্ধ ছিলাম সেকথা আমি গোপন করিনি। যে-কোনো পুরুষের মতোই তার অসহ্যতার কথা আমি অকপটে বলছি। প্রায় বৎসরাধিককাল তার সঙ্গে মেলামেশা করেও যে আমি কীভাবে তার দৈহিক আকর্ষণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম, সেকথা আজকের এই শেষ বয়সে এসেও অবাক হয়েই ভাবি। তবে এর পিছনে যে শুধু আমার সংযমী কৃতিত্ব তা আদৌ ভাবার কারণ নেই। আমি ছিলাম একজন বিবাহিত পুরুষ। সে তখনও কুমারী। সেই বয়সটা আমাদের দু-জনকেই বিধ্বস্ত করতে পারত। কিন্তু আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হলেও পরস্পরকে রক্ষা করেছিলাম অমিত প্রচেষ্টায়। এটা কারুর একক কৃতিত্ব ছিল না। অথবা আমরা কেউ কি জানি এই শরীর বিষয়ক কৃচ্ছ্রতা কোনো কৃতিত্ব না সাহসেব অভাব? উভয়ে উভয়ের প্রতি যে আসক্ত, তা কারুর কাছেই গোপন নেই। এ নিয়ে কোনো মিথ্যেচারও নেই। এমনকী আমার স্ত্রীও আমাদের পারস্পরিক মানসিক সম্পৃক্তি বিষয়ে অনবহিত তখন ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে যদি কোনো রোম্যান্টিক গল্প উপন্যাস ফেঁদে বসতাম, সত্যমিথ্যে মিলিয়ে দিব্যি একটি হয় রগরগে, অথবা প্লেটনিক প্রেমের কাহিনি বিন্যাস করা যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লিখতে বসেছি স্ম

ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'ঝুমুর গানের সঙ্গে সাঁওতালি বা অন্য কোনো কোলীয় গোষ্ঠীর লোকায়ত সংগীতের বিশেষ কোনো যোগ নেই। ‘ঝুমুর মূলত দ্রাবিড় ভাষাভাষী গোষ্ঠীর প্রেমসংগীত, নৃত্য এই সংগীতের অনুষঙ্গ' কোনো কোনো গবেষকের এই অনুসিদ্ধান্তটি যে তাৎপর্যপূর্ণ তা ব্যক্তিগত ভাবে আমার অভিজ্ঞতায় আমি জেনেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঝুমুরকে নৃত্যের অনুষঙ্গ হিসাবেই পেয়েছি। মুন্ডারি 'পারহা প্রধানেরা' যখন জোরজবরদস্তি রাজা বা জমিদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন, তখন বহিরাগত হিন্দু ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের নিকট থেকে ক্ষত্রিয়জাতির অন্তর্ভুক্তি আদায় করে নিতেন। ঝাড়খন্ডি আদিবাসী এবং কুর্মি সমাজে এরূপ উচ্চকোটির জাতিত্ব ক্রয় করার প্রভাব নিম্নকোটিতেও ক্রমে বিস্তার লাভ করে। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে চৈতন্যদেবের পুরী যাত্রার সময় সেখানকার উচ্চকোটি এবং নিম্নকোটির উপর তাঁর প্রভাব বিস্তৃতি পেয়েছিল। ফলে ঝাড়খন্ডের রাজা-জমিদারেরা রাধাকৃষ্ণের প্রেম এবং বৈষ্ণব কবিদের কীর্তন-পদাবলির দ্বারা আকৃষ্ট হয় এবং এই অঞ্চলে কীর্তনের সুরের একটা সংমিশ্রণ ঝুমুর ইত্যাদি লোকসংগীতের উপর পড়ে। সম্ভবত এই সময় থেকেই আঞ্চলিক প্রচলিত প্রেম-স

ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'বাঁশরি গান শুরু করার আগে কিছু প্রাসঙ্গিক বক্তব্য নিবেদন করে এবং তা পরিষ্কার মানবাংলাতেই। অত্যন্ত বিনম্রতার সঙ্গে সে বলে 'পারিবারিক পরম্পরায় আমি ধর্মমতে ইসাই। কিন্তু সেটাই আমার একমাত্র বা প্রধান পরিচয় নয়। আমার সাংস্কৃতিক পরিচয়ে আমি ঝাড়খন্ডি। রক্ত, ভাষা এবং গোষ্ঠীগতভাবে আমি মুন্ডারি গোষ্ঠীর মানুষ। সম্ভবত সে কারণেই পৃথাদিদি আমাকে শুরুটা মুন্ডারি ভাষার একটি গান দিয়ে করতে বলেছেন। অবশ্যই তা আমি করব। তবে যে এলাকাটিতে আজকে আমাদের আসর, সেখানে মুন্ডারি ভাষাভাষী স্ত্রী-পুরুষ খুব কমই উপস্থিত বলে আমার বিশ্বাস। এখানে বেশির ভাগ ঝাড়খন্ডবাসীই কুর্মি-মাহাত। আদিবাসী মুন্ডা, কোল, সাঁওতাল এবং অন্যান্য ছোটোবড়ো গোষ্ঠীর মানুষেরা সামান্য রকমফেরে কোলীয় বা মুন্ডারি ভাষাই শিশুদের মধ্যে ব্যবহার করেন। মাহাতরা যদিও আদিবাসীদের অতি ঘনিষ্ঠ এবং সাঁগা ভাই, তথাপি তাদের সমাজ এখন ভাষাগতভাবে সম্পূর্ণ পৃথকভাবেই বিকশিত। এটা ইতিহাসের স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটেছে। মনে হয়, আমাদের জাতি বা গোষ্ঠীগুলির যদি সম্মিলিতভাবে ভাষাকেন্দ্রিক একটি জাতি হিসেবে বিকাশ আমরা চাই, তবে একমাত্র কুর্মালি ভাষাটিই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'শাহনওয়াজ গাড়িসহ এসে গিয়েছিল। বলল, “আর দেরি নয়। এবার যেতে হবে।' শাহনওয়াজের সারথ্যে সোনেরিয়া টাঁড়ের উদ্দেশে রওনা হলাম। সময়টা বর্ষা শেষ এবং শরতের শুরু। স্থানটা ছোটোনাগপুর মালভূমির একটা আঁচল বিশেষ। যাঁরা অভিজ্ঞ, জানেন, মালভূমির বর্ষা এবং শরৎ— এই দুটো ঋতুই কতটা নয়ন তথা মন ভোলানো। কিন্তু সেই শোভা উপভোগ করতে পারে কিছু বহিরাগতরা। সেই উপভোগের রকমারি গল্প ধরা আছে সেকালের তথাকথিত প্রবাসী বাঙালি লেখক-সাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাসে অথবা কলকাতায় জাপানি বোমাতঙ্কী ড্যাঞ্চিবাবুদের স্মৃতি-আলেখ্যে। এ স্থানের লোকসাহিত্যে বা সাংস্কৃতিক চর্চায় তার উপস্থিতি প্রায় নেই। কারণ, এখানে বর্তমান অরণ্য-নিশূন্যতা, ঝাঁটি ঝাড়-জঙ্গল এবং কেলেকুষ্টি, হাড়-বেরোনো ডিংলা-পারা অধিকাংশ মানুষই আবহমানকাল আছে দারিদ্র্যসীমার সীমান্তে। কদাচিৎ অস্তিত্বে থাকা দু-চারটা আকাশস্পর্শী মহিরুহের শীর্ষ শোভা চোখ তুলে, মন খুলে দেখার সুযোগ তাদের কদাপি হয় না। পরেশনাথ পাহাড়ের সুউচ্চ অরণ্যবেষ্টনীতে ঠিক বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ার আগের মুহূর্তে যখন পুষ্কর বা দক্ষিণাবর্ত মেঘগুলো পেঁজা তুলোর মতো ঝুলে দোল খায় বা তাদের মেঘিনীদের সঙ্গে রঙ্গক

ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'কৈকেয়ী এরপর পাতা নাচের ছুট্‌কো কিছু গান করে। পাতা নাচ আর পাঁতা নাচ দুটো আলাদা ব্যাপার। পাঁতা নাচ আদিম মানুষের বৃষ্টি প্রার্থনা এবং শস্যোৎপাদন ক্রিয়ার ঐন্দ্রজালিক, বিশেষত যৌন ক্রিয়া অনুকৃতির অনুষ্ঠান। ধরিত্রীর উর্বরতা কামনাও এই অনুষ্ঠানের অন্যতম অঙ্গ। পাতা নাচ শুধু করম নাচের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ বিষয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতণ্ডা আছে, তা থাকুক, কৈকেয়ী গাইছে,- “আমার বঁধু হাল বাহে কিয়া লাটার আড়ে ডাহিনে বায়ে লাল গরু দেখে হিয়া ফাটে ননদী লো আমি যাব নিজেই বাইসাম্ দিতে।' (বাইসাম বাসি আমানি পান্তা ভাত ) এবং “আমার বঁধু হাল বাহে কেঁদ কানালীর ধারে গরা গায়ে খরা লাগে বড় দয়া লাগে। মুখের ঘাম ছুঁয়ে পড়ে দেখে নয়ন ঝুড়ে ননদী লো হামি যাব নিজেই বাইসাম্ দিতে।' ঝাড়খন্ডি কিষাণ ভোর ভোর লাঙল কাঁধে মাঠে যায়। কেয়া ঝোপের ধারে সে লাঙল চষে। ক্রমে বেলা বাড়ে, প্রখর হয় রোদ্দুর। কিষান বউয়ের মনও ততই স্বামীর জন্য চঞ্চল হয়। ননদকে বলে, স্বামীর বাইসাম সে নিজেই নিয়ে যাবে। এ ভাষা আমাদের প্রতিবেশীর মুখের বুলি। বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাইসামের দেরি দেখে তো স্বামী নিশ্চয় রাগে ফুঁস

ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

Image
'বাইরে প্রবল বৃষ্টি চলছে। ইস্কুলবাড়ির সামনে একটি সুবিস্তীর্ণ খেলার মাঠ। স্থানটির নাম পাঠান- টোলি। মোগল আমলে নাকি পাঠান-পল্টনের ছাউনি ছিল জায়গাটা। তোপচাঁচি, বাসপুরা, তাঁতরি, করমাচাড়, মানটাড় এইসব গাঁও-বসতিগুলো পোক্ত হলে এখানে দুর্গাবাবুদের এই ইস্কুলটির পত্তন হয়। ইস্কুল এলাকার আশেপাশে দু-একটি ঝোপড়ি আছে। তারা সব রুইদাস জাতের লোক। ইস্কুলের অবস্থান দক্ষিণ-মুখী। পুব দিকের একটি ঝোপড়ি বা টালির ছাউনিওলা কুটিরের চালে ভারি সুন্দর হলুদ রঙের ফুল ফুটে রয়েছে। দুর্গাবাবুকে বলেছিলাম আজ ঝিঙাফুল্যা নাচগান বিষয়ে কথা হবে। দুর্গাবাবু মোটা বাঙালিদের নিয়ে একটা বড়ো আলোচনার সূত্রপাত করার মুখে সেটাকে থামা দিতে হলো। কারণ, আমার মনের মধ্যে একটা নতুন সাংস্কৃতিক সমাচার শোনার আগ্রহ বড়ো উতলাভাব সৃষ্টি করেছিল। দুর্গাবাবুর আলোচনাটিও অবশ্য নতুন তথা অজানা সংবাদ পরিবেশনের দিকে এগচ্ছিল, কিন্তু অতবড়ো পরিধির আলোচনার মধ্যে যেতে মন চাইছিল না। ভাবছিলাম, আগে প্রাথমিক কিছু উচ্ছ্বাসের নির্মাণ হোক, তাত্ত্বিক ব্যাপারটা পরে হবে। চা খেতে খেতে দুর্গাবাবু পুবদিকের সেই হলদে ফুলে ছাওয়া চালার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দেখুন এই বা

কীর্তনীয়া।। সমরেন্দ্র মণ্ডল।।

Image
'রাত কত ঠাহর হয় না। এখন দেওয়াল ঘড়িতে আর ঘণ্টা বাজে না। ঘণ্টা খাটের তলায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। ধুলোও জমে গেছে হয়তো। দেওয়ালে ঘড়িটা শুধু টিকটিক করে। ঘুম আসছে না রাফায়েলের। এমনিতেই ঘুমোতে কষ্ট হয়। বারান্দায় রঙের কৌটো থেকে গন্ধ ভুরভুর করে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে। উঠোনে বারান্দার দেওয়াল ঘেঁষে দুটো সাইনবোর্ড দাঁড় করানো আছে। আজকেই শেষ করেছে। আগেও এমন রঙের গন্ধ আসতো। তবে একটু কম। বড়ো উঠোন ছিল তখন, একধারে কৌটোগুলো রেখে পলিথিন চাপা দিয়ে রাখত। এখন আর উপায় নেই। যাদবের ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সে নিজেই হাঁড়ি পৃথক করে দিয়েছিল। তারপর যাদব একদিন লোকজন ডেকে, আমিন দিয়ে মাপ করে সীমানা ভাগ করে নিল, বেশিটাই নিল। একটা বড়ো ঘর, রান্নাঘর, বাথরুম, স্নানঘর সব যাদব নিয়ে নিল। রাফায়েলের ভাগে শুধু একটা ঘর আর উঠোনের এক টুকরো। সাব্যস্ত হলো যদ্দিন না রাফায়েল নিজের কলঘরের ব্যবস্থা করছে, তদ্দিন যাদবেরটাই ব্যবহার করবে। অবশ্য রাফায়েল বেশি দেরি করেনি। দিন পনেরোর মধ্যেই উঠোনের শেষ মাথায় কলঘর তৈরি করে নিয়েছিল। তারপরেই যাদব পাঁচিল তুলে দিল। অ্যাদ্দিন তা-ও বা মুখ দেখতে পেত ভাইয়ের, রেবেকার; এবার থেকে তাও বন্ধ। রাত

অবিকল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।। শতঞ্জীব রাহা।।

Image
আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা, সাহিত্যক্ষেত্রে স্বপ্রতিষ্ঠ মহিমায় উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ— এগুলি একজন তরুণ লেখকের ক্ষেত্রে বাইরের স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই এসবের চিহ্নিতকরণ মানিকের পক্ষে সহজ ছিল। কিন্তু সময়ের চিহ্নসমূহ বস্তু পাথরে স্পর্শগম্য নয় বলে তাকে চিহ্নিত করা সহজ ছিল না—তা ছিল আসলে মানিকের অতিমাত্রায় জিজ্ঞাসু ও সোৎসুক অস্তিত্বের সঙ্গে অনবচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত। সে এমন এক সময় — (মানিকের জন্মকাল থেকেই যে সময়ের সূচনা আর তাঁর গোটা সাহিত্যজীবন জুড়ে যার ব্যাপ্তি। অন্ততপক্ষে সাহিত্যে মানিকের আবির্ভাব-লগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৯৩৫-৩৬ সাল ও তারপর) যে সময়ের বৈশ্বিক-জীবন 'রক্তপ্লাবনে পঙ্কিল পথে বিদ্বেষে বিচ্ছেদে আচ্ছন্ন।'  এই 'কালটি বিশ্ব-সংকটেরও একটি তমিস্রা ঘন পর্ব। এক মানিক জানিয়েছেন যে, জীবনকে তিনি ‘যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছিলেন 'অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেবার তাগিদে তিনি লেখেন। পুনশ্চ তাঁর দাবি ছিল : 'আমি যা জেনেছি এ জগতে কেউ তা জানে না।' (কেন লিখি) সময়ের, জীবনের যে ঘাতকতার শিকার মানিক হয়েছিলেন তার কথা আমরা সকলেই জানি, তাকে আমরা শুধু সূত্রায়িত করত

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস 'অনন্যবর্তী' পড়ে লিখেছেন গৌরব বিশ্বাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  .................................................. দুলর্ভ সূত্রধরের এ উপন্যাস পড়ার প্রথম সৌভাগ্য হয় গতবছর শারদ নির্মুখোশে। সেবছর শারদ নির্মুখোশের মূল থিম ছিল বাঙালির নব্বই দশক। কিন্তু এ উপন্যাসকে নির্দিষ্ট কোনো কালের সীমাগন্ডিতে বাঁধা চলে না। হতে পারে, এ উপন্যাস যে সময়কালের কথা বলে, সেটা সাতের দশক। কিন্তু যে গুটিকয়েক মানুষ জনের সাথে পরিচয় করায়, তেমন মতাদর্শ নিষ্ঠ মানুষজন সবকালেই বড় দুলর্ভ। এ উপন্যাস এ কিশোরের অভিমানী কৈশোরের যৌবনে পদার্পনের আখ্যান। তাঁর দৃষ্টিতে সমাজকে দেখা, মতাদর্শের আগুনের প্রথম পাঠ এবং চারিপাশের মানুষজনের মধ্যে নিজেকে খুঁজতে চাওয়ার প্রচেষ্টাও বটে।  নিজের 'আইডেন্টি' খুঁজতে গিয়েই কিশোর শোভন আবিষ্কার করেছিল, তার পরিবারে তার অবস্থান কতকটা জ্যামিতি বাক্সের দু-কাঁটার কম্পাসটার মতো। তাকে নিয়ে কারও বিশেষ হেল-দোল নেই। এর জন্য সে অভিমানী কিন্তু এতে সে অভ্যস্তও। বরং, তার গুরুত্ব তার বন্ধু-বান্ধবদের দলের মধ্যে এবং অবশ্যই ট

অলৌকিক বাগান।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' অলৌকিক বাগান ' পড়ে লিখেছেন সুদেষ্ণা পিউ মন্ডল। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................................... পাঠ-অনুভূতি 📜অলৌকিক বাগান ✒️শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য সুপ্রকাশ প্রকাশনা    মুদ্রিত মূল্য -২০০টাকা মায়া অতি বিষমবস্তু । আর এই জগৎ মায়াময় । মায়ার বন্ধন থেকে মুক্ত হতে আমরা পারি কই! জাগতিক পৃথিবীর অসাড়তা, অনিত্যতা আমরা বুঝি বইকি... তবুও প্রপঞ্চময় জাগতিক মায়া থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি না, বোধহয় চাইও না... কারণ, এই মায়ার বন্ধনগুলো আমাদের জাগতিক শোক-দুঃখগুলোকে কিছুটা হলেও আড়াল করে, তাই আমরা জন্মানোর পর হয়তো অনন্ত মুক্তি কামনাও করি না । যেমন করেন নি, আমাদের নিত্যময়ী সামন্ত, নাকি করেছিলেন , কিন্তু পারেন নি!...অশীতিপর বৃদ্ধার নিঃসঙ্গ জীবনের একমাত্র মায়ার বন্ধনটি ছিলো তার বাটী সংলগ্ন 'অলৌকিক বাগান' টি, যা তিনি তাঁর পূর্ব-পুরুষের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন । এই বাগানে তিনি প্রত্যক্ষ করতেন তাঁর পূর্ব-পুরুষদের । কিন্তু তা কি সত্য, নাকি আজীবন নিঃসঙ্গ নিত্যময়ীর মানসিক ভ্রম!!.

অলৌকিক বাগান।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যের উপন্যাস ' অলৌকিক বাগান ' পড়ে লিখেছেন শ্রীপর্ণা মিত্র। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।  ............................................... 📕অলৌকিক বাগান 🖋️শাক্যজিৎ ভট্টাচাৰ্য 💰 মূল্য - ২০০ টাকা  এই উপন্যাসের পটভূমি  যাদের নিয়ে রচিত তিনি নিত্যময়ী এবং তাঁর পিতৃপুরুষ প্রদত্ত বাগান।এই বাগানের সঙ্গে নিত্যময়ীর আত্মার সম্পর্ক, তাঁর রক্তে রক্তে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইছে বাগানের প্রতি ভালোবাসা শুধু বাগানের গাছ গাছালির সঙ্গে নয়, বাগানে বসবাসরত শেয়াল, হনুমান, সাপ, ব্যাঙ সকলের সঙ্গেই নিত্যময়ী মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ। নিত্যময়ী অনুভব  করতে থাকেন এই সব জীবের মধ্যেই ছায়া হয়ে বসে থাকেন তাঁর পিতৃপক্ষ এবং এই এক নস্টালজিয়ার আবর্তে সর্বদা ঘুরতে থাকেন তিনি,এবং তিনি এও মনে করেন যে এই পূর্বপুরুষেরাই নিয়ত পাহারা দেন অনূঢ়া নিত্যময়ীকে। নিত্যময়ীর জীবনে, জীবনের অনেক স্বাদ অপূর্ণ রয়ে গেছে, সেই অপূর্ণতা সে কখনো ভাড়াটে নব দম্পতি 'শিখা - ইন্দ্র' এর জীবনের রসস্বাদন দেখে তাদের দাম্পত্য জীবনকে অনুভব করে নিজের তেষ্টা মেটানোর চেষ্টা করেন আবার কখনো বা

অলৌকিক বাগান।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
".....গত চল্লিশ বছর ধরে নিত্যময়ী এখানে তাঁর পূর্বপুরুষের আশ্রয় পেয়ে এসেছেন। ঘনরাম সামন্ত একটি গোসাপের রূপ নিয়ে যখন এসেছেন, নিত্যময়ী তাঁর চোখ দেখে চিনতে পেরেছেন আর একটি প্রণাম তখন গড়িয়ে গিয়েছে তাঁর বিষয়ী কৃতাঞ্জলির থেকে। নিধিরামকে বুঝে নিয়েছেন বেজি শরীরের আঁশগন্ধে। মা, স্বর্গীয়া ভুবনমোহিনীকে দেখেননি কি? নিত্যময়ী জানেন, অন্তঃপুরচারিণীরা ওভাবে সামনে আসেন না। তাঁরা আমের বউলের মধ্যে সারা দুপুর লুকিয়ে থাকেন, শালিখের চোখের মণির ভেতর ঢুকে গিয়ে শীতঘুম দেন, অথবা বর্ষার বিকেলে কেউটের আঁশে সেঁধিয়ে কাকচক্ষু জলের মধ্যে জল হয়ে গিয়ে পদ্মপুকুরে ভেসে বেড়ান অলস। আজ এই অন্ধকার বাগানে ঘুরতে ঘুরতে শিখার মনে হলো, নিত্যময়ী সেই ধারাপাতের এক অখণ্ড। শৈশব থেকে হার্টের রোগ থাকার কারণে কখনো বিয়ে হয়নি নিত্যময়ীর। তার উপর কুরূপা ছিলেন, বসন্তরোগের চিহ্ন হিসেবে মুখমণ্ডলের কিছু গভীর ক্ষত, এবড়োখেবড়ো দাঁত, কুতকুতে চোখ নিয়ে তিনি একটি বজ্রাহত শিরিষগাছ, যার পরিমণ্ডলে অপর কোনো যোগ্যতর বৃক্ষ বাড়তে পারেনি। তাঁর সঞ্চয়ের মধ্যে একমাত্র ছিল বাপ-মায়ের আদর, যেটুকু মৃত, তবু যেন হাড়গুঁড়ো আর খোল ভেজানো

ধর্মায়ুধ।। অভিজিৎ সেন।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত অভিজিৎ সেনের উপন্যাস 'ধর্মায়ুধ' পড়ে লিখেছেন ভূমি সেনগুপ্ত। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। .................................................................................................... যুগে যুগে পৃথিবীতে কত শাসকের যাওয়া - আসার পালা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। বাংলা তার ব্যতিক্রম নয়। রক্তক্ষয়ী না হলেও প্রিয়জনের সঙ্গে তখত নিয়ে সংঘাত পৌঁছেছে যুদ্ধে। এ ঘটনা অতি পরিচিত।  বাংলায় তখন ইলিয়াসশাহী রাজবংশের শাসনকাল। সিকান্দার শাহ বৃদ্ধ হয়েছেন। তাঁর পর তখতে বসবার কথা তাঁর সুযোগ্য সন্তান গিয়াসুদ্দিনের। কিন্তু যোগ্য সন্তানের যোগ্যতা বারংবার প্রমাণিত হলেও মধুলোভী মৌমাছির মতো সিংহাসনের আশেপাশে ভিড় জমে অযোগ্য সন্তানের। অযোগ্য সন্তানের মায়ের মনোস্থিতি বোঝাতে লেখক রূপকথায় বর্ণিত রাক্ষসীর রাগের উদাহরণ দিয়েছেন। ফলে বিষয়টি হয়ে উঠেছে মনোগ্রাহী।  রাজার পাশাপাশি অভ্যুত্থান ঘটে বহু আমিরের। তাঁদের মধ্যেই একজন রাজা গণেশদেব। যাকে কানস বলেও সম্বোধন করা হয়েছে। উপস্থিত বুদ্ধিবলে যিনি নিজের প্রথম সন্তান যদুসেন বা যদুপতিকে ধর্মান্তর পূর্বক গভীর সংকটের হাত থেকে মুক্তি

অলৌকিক বাগান।। শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য।।

Image
"তিনবার করে নিত্যময়ী জল দিলেন এ পৃথিবীকে। তিনবার জগৎ নিম-শূন্যতা থেকে ত্বরিতে মুখ ফেরাল, দিল ভ্রমরের চঞ্চল, আর তিনবার নিত্যময়ী মনে মনে বললেন, “আমার দেহ নাই তবু তোমাদের স্বেদ দিলুম, আমার মন নাই তবু তোমাদের গান দিলুম, আমার কল্পনা নাই তবু তোমাদের আকাশ দিলুম। তোমরা তৃপ্ত হও।— ভূত প্রেত দেব অসুর চেতনা ও আরম্ভ, সবাই এ কোষবদ্ধ জল পান করো।” ‘নাও, কাজ শেষ হলো পিসি।' দুর্বল গলায় গণেশ বলল। নিত্যময়ী স্বপ্নোত্থিতর মতো মুখ ফেরালেন। তারপর বললেন, ‘বাবা গণেশ, আর একটাই কাজ যে বাকি থেকে গেল। ওটাও করিয়ে দিবি গো?” “আবার কী?” ‘আমার নিজের তৰ্পণ।’ ‘মানে?’ বিস্ময়ে অভিভূত গণেশের কণ্ঠে বিভ্রান্তি, যেন শ্রান্তি তার শেষ উপজীব্য নয়, যাকে পেরিয়ে আবিষ্কার শেষ হয় না। ‘আমার তো আর কেউ নাই বাবা! আমি চলে গেলে কে জল দেবে বল! তাই নিজের তর্পণটা নিজেই করে যাব। ওই জন্যেই তো আজ আসা।’ ‘এমন আবার হয় নাকি?” “কেন হয় নে? লক্ষ্মী বাবাটি, আমার তর্পণটুকু করে যেতে দে। শুনেছি, সন্নিসীরা নাকি নিজের শ্রাদ্ধ করে গৃহত্যাগ করত। আমি পাপীতাপী মানুষ গো, অত কিছু পারব নে। শুধু মরার পরেও যেন জলটুকু পেয়ে যাই, নাহয় নিজের হাতেই হল

অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।।

Image
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস ' অনন্যবর্তী ' পড়ে লিখেছেন সুমনা চৌধুরী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। ............................................. লকডাউন পিরিয়ডে মিহির সেনগুপ্তের 'সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম' বাদেও,  আরেকটি অসামান্য স্মৃতিগদ্য পড়েছিলাম, 'আহাম্মকের খুদকুড়ো'। দুর্লভ সূত্রধরের লেখা। সমকালীন লেখক-লেখিকাদের ভীড়ে দুর্লভ সূত্রধরকে তখনই অবশ্যপাঠ্য হিসেবে আলাদা করে রেখেছিলাম। তাতে যে বিন্দুমাত্র কোনো ভুল ছিলো না তার প্রমাণ তাঁর পরবর্তী উপন্যাস 'অনন্যবর্তী'। সাম্প্রতিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের তালিকায় প্রথম সারির দিকে নির্দ্বিধায় যাকে রাখা যায়। কেন রাখা যায় অথবা দুর্লভ সূত্রধর বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কেন অবশ্যপাঠ্য—তারই খানিকটা আলোচনা-পর্যালোচনা পরবর্তী অংশে থাকবে। অনন্যবর্তী উপন্যাসের প্রেক্ষিতেই।  "ঘরেও নহে, পারেও নহে যে জন আছে মাঝখানে,...' সেই তাঁদের  প্রতিদিনের বেদনাকে সেই তাঁদের  জেগে-ওঠা ভোরগুলোকে" —উপন্যাসটির উৎসর্গপত্রে লেখা। এই কয়েকটি  লাইনের মর্মবস্তু উপলব্ধির প্রয়াস করতে করতেই  পাতা উল্টা