অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

বারবার আশ্চর্য হই। একটা ছোট্ট অঞ্চলেই এত রকম লোককথা, উপকথা বা মিথ ছড়িয়ে আছে বাতাসে, এই পুরো মানভূম অঞ্চলটাতে তাহলে কত কত গল্প থাকতে পারে এরকম! অঞ্জনদা বলে, এই মন্দির চত্বরে নাকি বড় কয়েকটা সাপ ঘোরাফেরা করে। শুনেই লাফিয়ে উঠে পড়ি। এই একটা জিনিসে মারাত্মক ভয়! অঞ্জনদা অভয় দেয়, ভয় পাওয়ার কিছু নেই; ওরাই নাকি পাহারা দেয় এই আশ্রম। তবুও! অন্য কিছুতে ভয় না থাকলেও, বিশেষ এই একটা জিনিসে ঝুঁকি নিতে পারি না। উঠেই যখন পড়েছি একবার, বসা হয় না আর। তিনজনে বেরিয়ে আসি নিঝুম আশ্রম পিছনে ফেলে।

সন্ধে নামছে বাঁশপাতা হাওয়ায়। দূরে শাঁখ বেজে ওঠে গ্রামের গৃহস্থবাড়িতে কোনও। কেন কী জানি, আনমনেই কপালে উঠে আসে হাত। জংলা রাস্তায় শুকনো পাতার উপর দিয়ে চলার পথ। অঞ্জনদার হাতে টর্চ। জ্বালার প্রয়োজন হয় না যদিও। সারাটা দিনের পর, বেশ লাগে এই আধো-অন্ধকার। আলোহীন ছায়াহীন গল্পেরা আসে আর সরে যায় মাথার মধ্যে। ভাবি, এই পুরো হেঁটে চলাটা যদি খুব হাল্কা প্যানে ধরা যায়… ওয়াইড লং শট… তিনটে ছায়া ফেড আউট হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ...

দূর দূর করে তাড়াতে যাব এসব ভাবনা, আবার শাঁখ বেজে ওঠে কোথাও। আবারও হাত উঠে আসে কপালে। অজান্তেই। আর শালপাতা মোড়ানো রাস্তাও যেন অসীম হয়ে ওঠে তখনই। অসীম হয়ে ওঠে অস্তিত্ব এবং অনস্তিত্বের মাঝের দোলাচল।

মনে হয়, ঈশ্বর আছেন কিনা জানি না। যদি থাকেন, তিনি যেন মায়াবী আলোয় আজ এই আচমকা কপাল ছোঁয়া হাতের সামান্য স্বীকৃতিটুকু স্বীকার করে নেন। স্বীকার করে নেন গ্রাম সড়ক যোজনার নতুন পথের মতো এঁকেবেঁকে যাওয়া, নিতান্ত এই ছাপোষা গল্প কিছু আমাদের।
…………………………………………….
অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

রাস্তার শুরু।। জয়া মিত্র।। সুপ্রকাশ।।