অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

তারাই তোমার পিছুটান। তারাই তোমার পালানোর কারণ! তবু কোথাও গেঁথে যাওয়ার পর, সহজ কি পালানো সেখান থেকে আদৌ? অথচ এই লড়াই নিজের সঙ্গে নিজের। হার নিশ্চিত জেনেও, আদতে শেষ নেই কোনও লাগাতার ক্লান্তির এই। লক্ষ্য তবু, অবিরাম রক্তক্ষরণ নিয়েও দৌড়ে ঢুকে যাওয়া একটা জঙ্গলে। পিঠে গেঁথে যাওয়া তীর নিয়েও যে জঙ্গলের ভিতর ঢুকে গেলেই, সারিয়ে তুলবেন বনদেবী! জখম যতই গভীর হোক না কেন, হইহই করে ছুটবে আবার প্রাণ! পারডি লেকের ধারে বসে বুড়ো সনাতন মুর্মু শোনান অবিশ্বাস্য এই গল্প। শোনান শিকার পরবের দিন কত কত শিকারের নতুন করে জীবন খুঁজে পাওয়ার কাহিনী এইভাবে।

তবু শহর বদলে গেলে, মনখারাপ সঙ্গী হয় শুধু। মাঝ আকাশে চোখ বুজলেও, সেই গেঁয়ো মেঠো ধুলো ভেসে আসে, যেখানে ভালবাসা ফেলে আসি ভুলে। যেখানে আমার ফেরা হয় না আর। সেও কি আমায় ডাকে সেইভাবে?

অগত্যা সেই রাত জাগা সব কাজের ভিড়ে, কখন যেন হেসে ওঠে আয়না। সেই একই প্রশ্ন। এক, এক, এক! কী এমন মন তোমার? কী এমন কাজ, যা তোমায় সত্যিই মনখারাপের সময়ও দেয় না?

কে যে কী দেয়! আমরাই বা ফিরিয়ে দিই কি কিছুই? পারি কি দিতে? অবিচল এক সত্যি-মিথ্যের ঘেরাটোপে পড়ে গেলেই তাই, ওই রাঙা মাটির বুকে ফুটে থাকা বা ঝরে যাওয়া পলাশের মতো সত্যি মনে হয় না কোনোকিছুকেই আর। তার মতো সত্যি হয়ও না কিছুই, কোনোদিন!

অনেক দূরে সরে সরে গেলেও তাই, চোখ বুজলে ফিরে আসে শুধু ঘর-দোর-বারান্দা-শহর ছাড়িয়ে একটা ফাঁকা মাঠ, আর তার চারপাশে ফুটে থাকা, ছড়িয়ে থাকা পলাশ। গুঁড়ো গুঁড়ো স্মৃতির ছবিরা কেমন হাত টেনে ধরে। হাত টেনে ধরে নির্জনতাও। যতটা নির্জন না হলে চারপাশ, কথা বলা যায় না নিজের সঙ্গে তেমন ভাবে। শব্দের বাহুল্য না কমলে, দরজা খোলে না ইন্দ্রিয়।

নইলে শহরের ফুটপাথে কখনও-কদাচিৎ একটু লালের ছোঁয়া দেখে যে চোখ বড় হয়েছে এতদিন, মোবাইল বের করে জুম করেছে ক্যামেরা, ফেসবুকে আপলোডিয়ে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে জোগাড় করেছে লাইক— সেই চোখ হঠাৎ তাকিয়ে দেখছে এত এত লাল চারিদিকে! গোটা একটা জঙ্গলের নাম নাকি, পলাশ! মানভূমের ভূমিপুত্রেরা শহুরে চোখের আদেখলাপনা দেখে হাসছে মিটিমিটি। “সাইকেল নিয়ে মাঠের থেকে নেমে ওই পাশের গেরামটায় চলি যাও, ওখানে আরও বেশি পলাশ।”

…..................................................

অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।