অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।
এবারের মতো পুরুলিয়ার কাজ মিটলেও, বাড়িতে ফেরা হবে না জন্মদিনের দিন। পালাবো তাই ওই মাটির বাড়ির লজেই। পরেরদিন মিটিং শেষ হয়ে গেলে, আকাশ বেরিয়ে যায় মানবাজারের দিকে, আর লজ থেকে পাঠানো লজঝড়ে একটা চারচাকা জন্মদিন-বালককে নিয়ে রওনা দেয়, যেখানে তিনদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা পারডি ড্যাম। সেখানে জঙ্গল ভীষণ। সেখানে লোককথার গুনগুন আর শিকার পরব নিয়ে হাজারটা আশ্চর্য খুব মিথ। সেখানে সারাদিন চুপচাপ খুব আর প্রাচীন বিশাল শিলাদের গায়ে রিনিঝিনি সময়ের।
পৌঁছাতে পৌঁছাতে কতবার যে দাঁড়ায় সে! ড্রাইভারকে বিরক্ত করে গাড়ি থেকে নেমে যায় ছাপোষা মফস্বলের ছেলেটা। চুপ করে দাঁড়িয়ে শোনে দু’পাশের জঙ্গলে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। এমন বৃত্তাকার ভাবে ঘুরে ঘুরে ডাকে পাখির দল? এসব আবোল-তাবোল ভাবনার তার ছিঁড়ে তাড়া দেয় ড্রাইভার এবার। আকাশ যেমন মেঘলা, আলো পড়ে আসবে খুব তাড়াতাড়ি। তাড়া দেয় বলেই, সন্ধের আগে গ্রামে পৌঁছে, লজে না ঢুকেই দৌড়ে চলে যায় সে ঝিলের ধারটায়। একটা ঢেউ খেলানো পাহাড়ের ছায়া পড়েছে ঝিলের নীল জলে। পাহাড়ের পিছনদিকের আকাশটাও নীলচে কালো কেমন। নিচে কালো তার ছায়া পড়েছে ঝিলের ওই জলেও। আর ঢেউ খেলানো পাহাড়টার দুটো চূড়ার ঠিক মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গাটা, সেখানে তিরতির করছে একটা সবুজ রঙের তারা। যেন, অভিমান ভেঙে যাওয়ার পর, প্রেমিকার কপালে কাচপোকা টিপ পরিয়ে দিয়েছে কেউ। আর আলো পড়ে গেলে, হাত ধরে তারপর তারা ফিরে আসছে পাহাড়ি চড়াই-উৎরাই ধরে। আর তাদের চলার সঙ্গে সঙ্গে প্রাচীন শিলার শরীর থেকে মন্ত্র উঠছে যেন, ‘যদিদং...’
এসব আলো দেখতে দেখতে পকেটের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেওয়ার আগে, সেই হাতটাই যেন ছুঁয়ে ফেলে তার আঙুল। সেই হাতকেও বুঝতে দেয় না সে কিছুতেই, মনে মনে সে আসলে গুনগুন করে চলেছে পুরো মনে না পড়া একটা গান— ‘আজ এই মেঘের শ্যামল মায়ায়, সেই বাণী মোর সুরে আনো...’
…………………………………………….
অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী
প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল
মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা
সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment