অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

বাইরে বেরোতেই সে এক আশ্চর্য দৃশ্য! ঠান্ডা বেশ। অন্ধকারও। কিন্তু তার মধ্যেই পিলপিল করছে লোক রাস্তায়। দূরের দূরের গ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসছে লোকজন। যাওয়ার পথে দেখি মুসলিম ওসির হাতে তৈরি চরণপাহাড়ি কালীমন্দিরে থিকথিকে ভিড়। রাস্তায় মাঝে মাঝেই হ্যালোজেনের বাতি। তার মাঝের রাস্তায় আন্ধার! সেইসব আঁধার রহস্যময় করে আরও ঝকমকে জামাকাপড় পরে খিলখিল করতে করতে চলেছে বয়সে একটু বড় মেয়েদের দল।

বুধপুরের মোড়ে পৌঁছোতেই ভিড় বেড়ে যায় আচমকা অনেকটাই। সবাই চলেছে নদীর দিকে। নদীর পাড়ের বালিতে নানা রকম জিনিসের পসরা। ছোটখাট মেলা বসে গেছে যেন। পাথুরে নদীর বুকে কাতারে কাতারে লোক। দেশি নেশার গন্ধ। টলোমলো করে এগিয়ে আসছে অন্যের কাঁধে ভর দিয়ে কেউ কেউ। নদীর বুকে বিশাল একটা মূর্তি দাঁড় করানো। তা রাবণ পোড়াই দেখতে যখন এসেছি, তখন ওইটা রাবণই, মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়? মজাই লাগে বেশ। এখানে যদিও রাবণের মাথা দশটাই রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক হবে কী? ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা শোরগোল। দেখি হাতে একটা তীরের মাথায় আগুন নিয়ে ছুঁড়ে মারে কেউ রাবণের দিকে। তারপর কেউ কখনও নিচ থেকে রংমশাল ছুড়ছে। কেউ বা আবার অন্য কোনও ভাবে আগুন দিচ্ছে রাবনের গায়ে। আর সেই রাগেই মনে হয় রাবণের শরীরে বাঁধা একেকটা আতসবাজি ছিটকে ছিটকে যাচ্ছে এদিক-ওদিক! আর বারুদ তো বেপরোয়া বরাবরই...

রাবণের শরীরের আগুন লেগে একেকবার ফটফট শব্দ আসা শুরু হয়, আর আনন্দে হইহই করে ওঠে সবাই। কোথাও আবার বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়েছে মায়ের কোলেই। কাঁসাইয়ের বালিতে একটা কাঁথা পেতে সেখানেই শুইয়ে দিয়েছে শিশুকে তার মা। প্রকৃতির কোলে ঘুমিয়েও থাকে তারা। ঘুম ভাঙে না এত শোরগোলেও! এইসব ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ালেই একটা দেশের কথা মনে হয়। যে দেশটাকে হয়তো চেনা হয়নি কখনও সেইভাবে। অন্যরকম ভাবে তাই চিনতে থাকি দেশ। চিনতে থাকি দেশের মানুষ। উৎসবকে চিনতে শিখি।
….........................................

অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।