অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

রেডিয়ো স্টেশনের অনুষ্ঠান এখন যেমন চ্যানেল টিউন করলেই শোনা যায় মোবাইলের বা ট্রানজিস্টার রেডিয়োতে, পুরুলিয়ায় কমিউনিটি রেডিয়োর শুরুর দিকে একদমই সেরকম ছিল না ব্যাপারটা। বরং ‘অনএয়ার ব্রডকাস্টিং’ শুরু হয়েছিল বেশ খানিকটা পরেই, তার কারণ এটার জন্য নির্দিষ্ট কিছু টেকনোলজি এবং সরকারি অনুমতির প্রয়োজন হয়। দীর্ঘ টালবাহানার পর একসময় মিলল সেই সম্মতি। সোজা হয়ে দাঁড়ালো ত্রিশ ফুট লম্বা রেডিয়ো ট্রান্সমিটার টাওয়ার। রেডিয়ো স্টেশন থেকে সাত কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে শোনা যেতে লাগল গ্রামীন কমিউনিটি রেডিয়োর সমস্ত অনুষ্ঠান।

কিন্তু প্রযুক্তির ব্যবহারেও অশান্তির কমতি কিছু নেই। ঝড়ঝাপটায় ট্রান্সমিটারের মুখ ঘুরে যায় মাঝেমধ্যেই। তার ফলে কিছু কিছু গ্রামে অনুষ্ঠান শুনতে যে সমস্যা হচ্ছে, সে অভিযোগ ছিল কয়েকদিন ধরেই। তাছাড়াও সাত কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে সমস্ত গ্রামেই পরিষ্কার ব্রডকাস্টিং হচ্ছে কিনা, সেটাও ঘুরে দেখার প্রয়োজন ছিল একটু। প্রথম প্রথম কয়েকদিন আমি আর মঞ্জুর বেশ কয়েকটা গ্রামে ঘুরে বুঝলাম যে, নিজেদের পক্ষে এই পুরো কাজটা করে ওঠা মুশকিল। ফলে দায়িত্বটা ভাগ করে দেওয়া হল রেডিয়ো স্টেশনের বাকি সহকর্মী এবং তাদের নিজস্ব সোর্সের উপর। যদিও এই টেকনিক্যাল ব্যাপারটা পুরোপুরি হাতেও থাকে না কারোর। কোনও গ্রামের আগে যদি পাহাড় বা উঁচু টিলা মতো কিছু থাকে, তাহলে ফ্রিকোয়েন্সি অনেকটাই আটকে যায় সেখানে। ফলে তার পিছনের গ্রামগুলোতে স্বাভাবিক ভাবেই একটু সমস্যা হয় রেডিয়োর অনুষ্ঠান পরিষ্কার ভাবে পৌঁছাতে।

…..............

ডেভলপমেন্ট ইকোনমিক্সের একদম প্রাথমিক পাঠে উন্নয়নের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সেটা হতে হবে সার্বিক। অর্থাৎ, এমন একটা ক্ষেত্রও যদি থেকে যায় যেখানে উন্নয়নের আওতা থেকে বাদ পড়ে যাবে কিছু মানুষ বা সম্প্রদায়, তাহলে সেটাকে কখনোই সার্বিক উন্নয়নের অর্থনীতির আওতায় ফেলা যায় না। মনে হয়, এই সহজ-সাধারণ পাঠগুলোই মনে রাখতে পারলে, আজকের দিনে দাঁড়িয়েও আমাদের দেশকে শুধুই ‘উন্নয়নশীল’ তকমায় হয়তো আটকে থাকতে হত না। ঠিক যেমন শহুরে নিউজ পেপার বা টেলিভিশনে দেখা প্রাইম টাইম অনুষ্ঠানের রাজনীতিও যে আসলে কতটা ভ্রান্ত, সেটাও স্বল্প অভিজ্ঞতা নিয়েই সেখানকার পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছিল চোখে আঙুল দিয়ে।

….................

অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।