অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।
পুরুলিয়া-কলকাতা আর কলকাতা-পুরুলিয়া যাতায়াতের মধ্যে এই তীব্র গরমের দিনগুলো কেমন হলুদ রঙের মায়ার মতো ভিড় করে আসে বিকেলের জানালার কাছে। পুরুলিয়া যাওয়ার জন্য সকালের ‘রূপসী বাংলা’ আর বিকেলের ‘পুরুলিয়া এক্সপ্রেস’ বিলকুল না-পসন্দ। রাতের চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ছাড়া বরং মায়াবী ভীষণ দুপুরের রাঁচি-হাওড়া ইন্টারসিটিটা। ঝাড়গ্রাম থেকে টাটানগর হয়ে বরাভূম পেরিয়ে ঢোকে সেটা পুরুলিয়ায়। ছোটার পথে পার হয় বিশাল ছোটনাগপুর মালভূমি রেঞ্জ। দুপুরের রোদটা পড়ে এলেই, বাইরের গনগনে গরম হাওয়ার তেজটাও পড়ে আসে কেমন। তার সঙ্গেই গা ধুয়ে পাড়া বেড়াতে বের হওয়া মেয়েদের মতো জেগে ওঠে অদ্ভুত সুন্দর নামের একেকটা স্টেশন। নামের থেকেও বেশি সুন্দর হয়তো গাছপালা ঘেরা তার নির্জনতা। স্নিগ্ধতাও ছিমছাম ভীষণ। লাল-সাদা দেয়াল। গাছের পাতায় ভরে আছে স্টেশনের লালচে বেঞ্চিগুলোও। প্ল্যাটফর্ম জুড়ে শালপাতা, অশথপাতা। সেই খয়েরি-সবুজ পাতাদের ব্যাকড্রপে আবছা ধূসর একটা পাহাড়। পাহাড়ের পিছন দিয়ে অন্ধকার নেমে এলে ঝুপুস, ট্রেন থেকেও নামার সময় হয়ে আসে। এবং স্টেশনে বাহন নিয়ে হাজির মলয়দা। লাস্ট বাস তো বিকেল চারটে বাজলেই পগারপার! এত সন্ধেয় ভরসা অগত্যা তিনিই। দেখতে পেয়ে চায়ের ভাঁড় ফেলে দূর থেকে একগাল হাসি। “দমে গরমটা পড়্যেছে হে!”
গরমের দুপুরগুলোতে শনশন করে হাওয়া বয় একটা। গাছের সুখা পাতায় ঘষা লেগে শব্দ ওঠে খসখস। দুপুরে খেতে যাওয়ার সময় চোখ মুখ ঢেকে নিতে হয় কোনও একটা কাপড় দিয়ে। ভেজা হলে ভাল হয় আরও। খাওয়ার পরে গাছের ছায়া খুঁজি ধোঁয়া টানার প্রয়োজনে। প্রকাশ্যে সিগারেট খেতে দেখলে মহা মুশকিল!
অদ্ভুতভাবে, যতই গরম হোক না কেন, গাছের নিচে বা অন্য কোনও ছায়াঘেরা জায়গাতে গিয়ে দাঁড়ালেই উত্তাপের ধার যেন অনেকটাই কম। বিকেলের রোদ পড়ে গেলে আবার পরিবেশ বদলে যায় একশো আশি ডিগ্রি। হাওয়ার প্রলেপে ধুয়ে যায় খানিক আগের দহন। সূর্যের আঁচ কমে গেলে, কলেজ হোস্টেলের মেয়েরা হাঁটতে বের হয় এদিক-ওদিক। হাট থেকে ফেরার পথে কারোর সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায়, সাইকেল থামিয়ে মাথার গামছা খুলতে খুলতে চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ায় কেউ কেউ— “আডি জঁহার...”
….............................................
Comments
Post a Comment