অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

এখানকার মূল নদী এই কাঁসাই হলেও, এর উৎপত্তি হয়েছে অনেক দূরে। সম্ভবত ঝালদায়। কিন্তু একদিন এলাকার ‘সোশ্যাল ম্যাপিং’ প্র্যাকটিস করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম আরও একটা নদী। শিলাই। কিন্তু যেদিকে দেখানো হচ্ছে, সেদিকে নদী তো দেখিনি আর কোনও! তাহলে? সোশ্যাল ম্যাপিং করা হচ্ছিল নিউজপেপার বা রেডিয়ো স্টেশনের বাকি সকলের সঙ্গেই। সোশ্যাল সেক্টরে যারা কাজ করেছেন তাদের সকলের কাছেই ‘সোশ্যাল ম্যাপিং’ খুবই পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ একটা শব্দ। একটা বড় কাগজে একটা নির্দিষ্ট এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো পয়েন্ট করতে করতে মোটামুটি ভাবে এলাকার খুঁটিনাটি মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়া, যে কোনও এলাকা ভিত্তিক পরিকল্পনা করতে যেটার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।

সেই ম্যাপিং করতে গিয়েই আচমকা চমকে যাওয়া আবার একটু। জানা গেল, পুরুলিয়াসহ বাঁকুড়া বা মেদিনীপুরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিলাই নদী, যার ভাল নাম শিলাবতী, সেই শিলাবতীর উৎস নাকি এই এলাকাতেই। একটা নদীর উৎস, তায় এত সুন্দর একটা নাম— দর্শনের অপেক্ষা কি সওয়া যায়?

কবে যাব এটা দেখতে?
পুরুলিয়া যাওয়া-আসার পথেই তো পড়ে। দেখোনি?
আমি থোড়ি জানতাম! কতদূর এখান থেকে?

সেদিন বিকালেই অঞ্জনদার বাইকে সওয়ার হয়ে বেরিয়ে পড়া গেল। মিনিট দশেকের পথ। উত্তেজনা যথেষ্ট। একটা নদী কোথা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে সেটা দেখবো, এরকম অভিজ্ঞতা তো হয়নি এর আগে কখনও!

কিন্তু উৎসস্থলে পৌঁছে হতাশই হলাম। জল কই? এ তো রুক্ষ এক পাথুরে গর্ত! ফোঁটা ফোঁটা জল যেটা পড়ছে, তার রং আবার কালো। কাদা কাদা প্রান্তর। কোথায় নদীর জন্ম মুহূর্তের সেই উচ্ছ্বলতা? ভুল ভাঙালো অঞ্জনদা। ওখানে বর্ষা ছাড়া সারা বছরই এই ভাবে ধারা স্নান হয়ে যায়। এরকম ফোঁটা ফোঁটা জল পড়তেই থাকে সারা বছর। আর ফল্গু ধারাটা বইতে থাকে ভিতরে ভিতরে। অর্থাৎ? অন্তসলিলা? ভাবি, স্থানীয় কলেজের ভূগোলের মাস্টারমশাইয়ের থেকে জানতে চাইবো একবার। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বইতে বইতে শিলাবতী পৌঁছে গেছে তারপর বাঁকুড়া হয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর। এবড়ো-খেবড়ো রাঢ়ভূমি পেরিয়ে শেষে স্থিতি পেয়েছে খনিক সমতলে এসে।

আবার বুঝতে পারি, প্রকৃতিই ঈশ্বর এই সব অঞ্চলগুলোতে। নদীর উৎস থেকে খানিক পিছিয়ে এসে রাস্তার ধারেই বিস্তৃত সবুজ মাঠে শিলাবতী মায়ের মন্দির। আড়ম্বর নেই। তবে ভক্তি আছে। এই মন্দিরে কিছু চাইলে নাকি সেই চাওয়া বিফলে যায় না। এই নদীর নামেই প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে মেলা বসে এখানেই। নাম, ‘শিলাই মেলা’। কৃষিজীবি মানুষগুলোর হপ্তাখানেকের জন্য আনন্দে মেতে থাকার মেলা। এখানেই উদযাপিত হয় বিখ্যাত ‘ছাতা পরব’ কিংবা ‘ভাদুর মেলা’ও। কাছের-দূরের মানুষের মিশেলে অদ্ভুত এক খোয়াবনামা মাতিয়ে রাখে এই প্রান্তর।
…………………………………………….
অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।