অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

চায়ের দোকানে বসেই নাকি দেখে ফেলা যায় একটা গোটা সমাজ, এরকম একটা লাইন কি কেউ লিখে গিয়েছিলেন আগে? লিখে না থাকলেও, সত্যিই যে চায়ের দোকানে বসে একটা গোটা সমাজ ব্যবস্থার মোটামুটি একটা ছবি এঁকে ফেলা যায় চোখের সামনে, সেটা বুঝতে পারি বেশ। ভগবানদার দোকানের তুলনায় শেখরদার চায়ের দোকানে ভিড়টা একটু বেশিই। তার কারণ, দোকানটা একদমই লৌলাড়া কলেজ বা ছেলেমেয়েদের স্কুল আর হোস্টেল সংলগ্ন। ছুটির দিন ছাড়া প্রায়ই চায়ের দোকানের সামনে লেগে থাকে ছেলেমেয়েদের ভিড়।

গ্রামের পাশে পাশে উঁচু-নিচু টিলা। খুব ইচ্ছা হয়, একদিন একটা টিলার উপর বসে একটা সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখব একা একা। কিন্তু কাজের চাপ বাড়ছে দিনের-পর-দিন। সময় বের করাই হয় না প্রায়। হাজারটা ফাইল। ডকুমেন্টেশান। সরকারি নথি। ইমেল। প্রোজেক্ট বাজেটের চাপ। সেইসঙ্গে মাথাব্যথার রোগটাও যেন জাঁকিয়ে বসছে পাল্লা দিয়ে। রোজ ওষুধ খেতে হয় এক গাদা। স্টুডিয়ো থেকে কেউ কেউ যখন ঘরে আসে, তখন টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখা ওষুধের স্ট্রিপ দেখে তারা বলেও ফেলে, “ওষুধ খেয়েই তো পেট ভরে যায়, তাই তোমায় খেতে হয় না কিছু আর!” কাজের পোস্ট বা ডেজিগনেশন-টেজিগনেশন গুলি মেরে, কাজের বাইরে সবাই বন্ধু হয়ে ওঠে খুব। আজীবন বন্ধু খুঁজে বেড়ানো আমি এখানে এসে বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন মনের একগাদা বন্ধু পেয়ে বর্তে যাই যেন। পুঁথিগত বিদ্যা বাদ দিলে, আরও নানান বিষয়ে যাদের জ্ঞান আমার থেকে অনেক, অনেকটাই বেশি।

নইলে হঠাৎ করে তেড়ে বৃষ্টি এলে যে পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনার জলে মাটির রাস্তা ভেসে গিয়ে সমস্যা হতে পারে আর তার জন্য তাড়াতাড়ি ফেরার পথ ধরা দরকার, সেটা আমার বইপড়া বিদ্যে আদৌ কি জানতো? এদিকে মাটি আলগা হয়ে রাস্তার ধার থেকে মাঠের উপর শুয়ে পড়েছে ইলেক্ট্রিকের খুঁটি। সারা রাস্তা জুড়ে ইলেক্ট্রিক তার এবং সেটা পেরিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অগত্যা কখন বিদ্যুৎ আপিসের লোকেরা এসে কাজকর্ম শুরু করবে, সেদিকে চেয়ে থাকা হাপিত্যেশ করে। শুধুমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থাই যে একটা অঞ্চলের মানুষের কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সেটা এখানে না এলে বোধগম্য হত না সেভাবে কখনোই। শুধু যাতায়াতের জন্যই এই পরিমাণ স্ট্রাগল যে স্বাধীনতার এত বছর পরেও একটা সভ্য দেশের মানুষকে এখনও করতে হয়, সেটা দেখে একদিকে যেমন রাগ হয়, তেমনই আশ্চর্য হতে হয় এখানকার মানুষদের অবলীলায় সেইসব সমস্যায় নির্বিকার থেকে প্রতিদিন যাপনের মানসিকতা দেখেও।

…...........................................

অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।