অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।
রাস্তাঘাটে বেজায় ভিড়। এখানে সবার গন্তব্যই কাঁসাই নদী। মেয়েদের হাতে রংবেরঙের চৌডল। সঙ্গে একেক দলের একেক রকম গান। পাহাড়ি পথে, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পায়ে চলা সরু পথে কিংবা পাথরের মাথায় পা ফেলে চলার সময়ও গান থামছে না তাদের। এই সব গানের পিছনে পিছনেই আমরাও পৌঁছে যাই কাঁসাইয়ের ধার। যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। মুখে মুখে ঝুমুরের গান। আর উদ্দাম নাচ সেই লোকগানের সঙ্গে সঙ্গে। অথচ ঈশ্বরের মূর্তি নেই কোনও। কোনও প্যান্ডেল নেই, কাঠামো নেই। চূড়ান্ত বাহুল্য বর্জিত, অথচ শরীর-মনে উদযাপন করে নেওয়া একটা উৎসব। পথ চলতে চলতে কিংবা অবিরাম নাচের ক্লান্তি পেয়ে বসলে কখনও, তারা বসে পড়ছে বালির উপর। সেই বালির উপর বসেই চলছে একে-অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া-দাওয়া।
পিঠে এই উৎসবের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন ধানের চাল থেকে তৈরি হওয়া নানারকম পিঠে একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছে এই সমস্ত মানুষ। তার সাক্ষী থেকে যাচ্ছে একটা নদীর উপত্যকা। নদীর ভাল নাম, কংসাবতী। ‘গড়গড়্যা’ বা ‘আসকা’ পিঠের আস্কারা এড়িয়ে চলে এইদিন, এত সাধ্যি কার!
পা ধরে এলে, বসে পড়ি খানিক আমিও। বসে পড়লে উঠতে ইচ্ছে করে না হঠাৎ। দেখে যাই চৌডল নিয়ে মেলার মধ্যে নিজেদের মতো ঘুরে বেড়ানো মেয়েদের। কিছু কিছু জায়গায় আবার নদীর চরে বালির উপর দল বেঁধে কোনও কোনও মেয়েদের দল। দল বেধে একসঙ্গে ঝুমুর গাইছে সেই নানাবয়সী মেয়েরা। সেই গানের ভাষা আবার কখনও কখনও ভীষণই অশ্লীল এবং আদিরসাত্মক। তার ফাঁকেই আড়চোখে দেখে যায় কেউ পায়ে পায়ে আঁকিবুঁকি কাটা কারোর। বালির উপর জমতে থাকে সম্মতির আলপনা। পাথুরে নদী থেকে স্নান করে উঠে মুখের সামনে আয়না ধরে সদ্য বিবাহিতা যুবতী। অচেনা ঈশ্বরের কাছে বলতে ইচ্ছা হয় মনে মনে, সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হোক তার।
…................................
Comments
Post a Comment