চলার পথের চলনদার।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।
তপনদা বরিশালকে কোনোদিন ভোলেননি। তার ‘বাঙালনামা’ লিখতে গিয়ে লেখাটা দুনিয়ানামা বা বিশ্বনামা হয়ে গিয়েছিল। কারণ, গোটা পৃথিবীই একসময় তাঁর কাছে বরিশাল হয়ে উঠেছিল। ২০০০ সালে কলকাতা এসে একদিন ফোনে বললেন, ‘তোমাদের হাসিদির এত দিনেও শ্বশুরবাড়ির ভিটে দেখা হয়ে ওঠেনি। কোনো ব্যবস্থা করতে পারো?’ বললাম, আমি তো প্রতিবছরই একবার দুবার যাই। এবার চলুন না ফেব্রুয়ারি মাসে যাই বরিশালে। আমি সঙ্গে থাকলে আপনাদের অসুবিধে হবে না আশা করি।’ ‘তাই ভাবছিলাম। তবে ভিসা টিসার ব্যবস্থা তোমাকেই করতে হবে। আমাদের কিন্তু আবার ব্রিটিশ পাসপোর্ট।’ বললাম, ‘দালাল ধরে করিয়ে নেব। তবে খরচ একটু বেশি।’
ঠিক হলো, আমি কয়েকদিন আগেই তাঁদের একদার “নিজ মৌজা” কীর্তিপাশা যাব। কাছেই আমার কুটুম্ববাড়ি। সেখানে উঠে তপনদার পৈতৃক প্রাসাদ দর্শন করানোর ব্যবস্থা করব। প্রাসাদের সামনের অংশের দোতলার হলঘরে এখন একটা মেয়েদের ইশকুল। নিচের অংশে ইশকুলের অফিস, শিক্ষকদের বসার ঘর, এইসব। এছাড়া বাড়ির সামনের দিকে তপনদার ঠাকুরদার পিতৃনামে প্রতিষ্ঠিত প্রসন্নকুমার উচ্চ বিদ্যালয়। ইশকুলের সামনে প্রকাণ্ড ফুটবল মাঠ এবং একদিকে একটি বেশ বড় দিঘি। মাস্টারমশাই এবং ইশকুল কর্তৃপক্ষের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই মাঠে এবং প্রাসাদের হলঘরে দুটি আলাদা সভার বন্দোবস্ত করা হলো। মধ্যাহ্নভোজন আমার শ্বশুরালয়ে। তপনদার বাবার নাম কৌলিকভাবে অমিয় সেন। ডাকনাম স্থানীয় পরম্পরায় চাঁদবাবু। রায়চৌধুরী উপাধি নাকি নবাবি আমলের। কেউ ব্যবহার করেন, কেউ করেন না। তাঁদের জমিদারির দুটি ভাগ— বড়ো হিস্যা এবং ছোটো হিস্যা। একদা একত্রিতই ছিল। পরবর্তীকালে বিভক্ত। প্রাসাদের মাঝখানের দেয়ালটা তপনদার ভাষায় বর্ণনায় ‘বার্লিন ওয়াল’। দুটো অংশই এখন বেশিরভাগ খণ্ডহর বা ধ্বংসস্তূপ। শুধু বড় হিস্যার সামনের অংশটি অট্টালিকা প্রাসাদত্বের অহংকার এখনও ঘোষণা করে চলেছে। এ প্রসঙ্গে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই বর্ণনীয় থাকলেও নিষ্প্রয়োজনে রচনা প্রলম্বিত করছি না। তপনদার কাছে লেখা সেই সুদীর্ঘ পত্র নিবন্ধটি যেটি তাঁর রোমন্থন-এর দ্বিতীয় সংস্করণেও অঙ্গীভূত হয়েছে, সেখানে পাওয়া যাবে। নামকরণ করা হয়েছিল ‘আহ্লাদে ফাউকানো অথবা ভাটিপুত্রর পত্র বাখোয়াজি’।
তপনদা আমাকে বলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যারিস্টার কামরুল হাসান সাহেবকে ঢাকায় যোগাযোগ করে জলপথে বরিশাল আসার ব্যবস্থা করে রাখতে। তিনি এয়ারে হাসিদি সহ ঢাকা গিয়ে তাঁর অতিথি হবেন। পরের দিন বরিশালে আমি তাঁদের রিসিভ করে গাড়িতে কীর্তিপাশা নিয়ে আসব। ফোন মারফত কামরুল হাসানকে যোগাযোগ করতে তিনি জানালেন, জলপথে ভালো ব্যবস্থা করা যায়নি। তপনদারা ঢাকা-বরিশাল প্লেনে আসবেন।
আমি আমার কুটুম্বদের নিয়ে ঝালকাঠি শহরে তাঁদের নৈশবাসের ব্যবস্থা করে তাঁদের আসার আগের দিন ঝালকাঠিতেই রাত কাটালাম। পরদিন ভোরে গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম বরিশাল এয়ার স্টেশনে। তাঁরা এলেন। পথে বললেন, ‘কালকে ঢাকা ফেরার ব্যবস্থাটা কী করবে?’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার ইচ্ছে কী?’
‘বহুকালের শখ, সেই ছোটোবেলার “ইস্টিমার”, ওই যে ফ্লেমিংগো কোম্পানি টোম্পানির জাহাজ টাহাজ তার একটায় আর একবার অন্তত ভ্রমণ করা।’ হায়রে বাঙালের নস্টালজিয়া! হায়রে হারানো ফুরোনো দিনকে ফিরে দেখার বা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা!! তা তো দেখছি কাউকেই ছাড়ে না! তবু ভাগ্য ভালো যে তপনদা জ্যোতিঠাকুরের মিনিমাত্রা ইস্টিমারে চাপার বায়না ধরেননি। বললাম, ‘স্টিমার সার্ভিসের চল এখন খুব একটা নেই। একটা স্টিমার অনিয়মিতভাবে চলে। তবে সেটা ফ্লেমিঙ্গের নয়। ব্যবস্থা একটা করেছি। কাল সন্ধেয়। কিন্তু আমি সঙ্গে থাকব না। গ্রামে আর কয়েকটা দিন কাটিয়ে বাসে ফিরব।’
‘কীভাবে ঠিক করলে?’
‘পুষ্প, মানে আমার এক বন্ধুর বোন বরিশালে থাকে। ওর বর খুব বড় উকিল এখানে। ওই পুষ্পর ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়েছি। কোনো অসুবিধে হবে না। সে একেবারে ‘থাকিবার, খাইবার, শুইবার সুবন্দোবস্ত, সুন্দরী স্ত্রীর সহিত একত্র বন্দোবস্ত।’ তবে শর্ত আছে। কাল, আমাদের সবার পুষ্পর বাসায় মধ্যাহ্নভোজ খেতে হবে। তবে আমার অভিজ্ঞতা, ব্যাপারটা ভয়াবহ। ওর বর যেমন খায়, তেমন খাওয়ায়। ‘সামান্য দশ পদ মাছ’ ছাড়া তার আয়োজন মোটামুটিও হয় না।’ তপনদা বললেন, ‘খাইছে।’ সুদীর্ঘ পরবাসেও বিশুদ্ধ ‘চান্দ্রদ্বীপি’ তাঁর সঙ্গ ছাড়েনি। পথঘাট তাঁর স্মৃতির ছবির অনুসারী ছিল না। তা থাকার কথাও এত দিনের পর থাকে না। বছর পঞ্চাশেক আগে নাকি একবার এসেছিলেন। তবে কীর্তিপাশার বাড়িতে যাননি। বরিশাল স্টিমার ঘাটের কাছে ‘নাবালক লজ’টা তখনও দেখতে পেয়েছিলেন। কাল ফেরার পথে দুটো জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে। নাবালক লজ এবং জিলা ইশকুলটা, তপনদার প্রপিতামহের শিশু বয়সে এক প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে তাঁর (অর্থাৎ প্রপিতামহের) পিতা রাজকুমার বিষপ্রয়োগে নিহত হন। তাঁর স্ত্রী ‘সতী’ হয়েছিলেন। পরিবারে তখন মাৎস্যন্যায়ী অনাচার। তৎকালীন ব্রিটিশ জেলা শাসক নাবালক প্রসন্নকুমারের দায়দায়িত্ব এবং বিষয় সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ স্বহস্তে গ্রহণ করে তাঁকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। জমিদারি এস্টেটটি তদবধি ‘নাবালক বাবুর এস্টেট’ এবং তাঁর বড় হয়ে ওঠার পরের বরিশালস্থ বাসস্থানটির নাম হয় ‘নাবালক বাবুর লজ’।
বরিশাল-ঝালকাঠি রোড ধরে যাবার সময় তপনদা সেদিন এইসব গল্প শোনাচ্ছিলেন। অবশ্য এসব গল্প তার বটঠাকুরদা রোহিণী কুমারের ‘বাক্কা’ গ্রন্থে আমি আগেই পড়েছিলাম। গল্পের মধ্যে, মাঝে মাঝে তিনি এবং আমি ‘ফুট’ কেটে চলেছিলাম। হাসিদি হাসছিলেন। মজা করে বলেছিলাম, ‘হাসিদি, আপনি ওই পরিবারে আসার পরেই কি তপনদারা সাবালক হলেন?’ হাসিদি বললেন, ‘কি জানি? পুরোটা বোধ হয় এখনও হননি। দেখো না, কথাবার্তার শ্রী। যেমন কথায়, তেমন লেখায়।’ তপনদা বললেন, ‘অনেক পুরুষের অভ্যেস তো, তা ছাড়া এস্টেটের অন্ন কিছুটা হলেও তো খেয়েছি, এস্টেটটা গেছে, কিন্তু নাবালকত্বটা রয়েই গেছে। ওটা সামন্ত-আভিজাত্য। তুমি ঠিক বুঝবে না।’ হাসিদি বলেছিলেন, ‘ভাগ্যিস্! বুঝলে তোমারই মুশকিল হতো।’
গাড়ি আস্তে চলছিল। মাঝে মাঝে দাঁড় করিয়ে তপনদা হাসিদিকে নদী, পথঘাটের বিশেষ বিশেষ জায়গার স্মৃতি-ইতিহাস বলছিলেন। কোনটা কালিজিরা নদী, সেটাই প্রাচীন সুগন্ধার অবশেষ কি না, বর্তমান ঝালকাঠি নদীটাই শেষতক সুগন্ধার স্মৃতিবাহী নদী কি না— এইসব। ইশকুল জীবনে, নাবালক লজ থেকে বাড়ি যেতেন সাইকেলে। সঙ্গে থাকতেন একজন ইংরেজ সাহেব— পারিবারিকভাবে পরিচিত, কী যেন নাম— ভুলে গেছি। বরিশালি ভাষায় দক্ষতা ছিল। তপনদা বললেন, ‘এইসব জায়গায় হঠাৎ সাইকেল থামিয়ে নেমে পড়ে সাহেব একপাক নেচে, গেয়ে নিত- ‘আইজ ঠাকুমার রান্ধন খামু।’ ঠাকুমা নাকি রন্ধনে দ্রৌপদী, তপনদা বলেছিলেন। হাসিদি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বাকিটা?’ হাসিদি ঠাকুমার পতির সংখ্যাটা দ্রৌপদী প্রসঙ্গে ইঙ্গিত করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, ‘পরিবারে কিন্তু প্রসন্নবাবুর মা এবং ঠাকুমা দুজন ‘সতী’ হয়েছিলেন, সামলে কথা বলবেন। গেলে, দু-দুখানা সতীস্থান দেখতে পাবেন।’
আমাদের রাস্তা গিয়ে তার অ্যাসফল্টত্ব হারাল কীর্তিপাশা বাজারের বিপরীত পারে এক ব্রিজের গোড়ায়। ব্রিজটা কংক্রিটের না হলেও তার ওপর দিয়ে গাড়ি যাবে। ওপার থেকে বাজারের শুরু। তার মাঝখান দিয়েই রাস্তা। কিন্তু এখন সংকীর্ণ। গাড়ি আস্তে আস্তে চলল। এই বাজার, রাস্তা এবং এলাকা তপনদাদের ‘নিজমৌজা’, একেবারে নিজস্ব ভূমি। কম করে আশপাশ দশগ্রামের মানুষ হাজারে হাজারে ভিড় করে রাস্তা প্রায় অবরুদ্ধ করে ফেলেছে। হাসিদির হাঁটুতে আর্থারাইটিস। হেঁটে যেতে পারবেন না। পুষ্পকে বললাম, ‘তুই হাসিদির দায়িত্বে থাক। আমি তপনদাকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি’। সঙ্গে অবশ্য ঝালকাঠি থেকে আমার বড় শ্যালিকাও ছিলেন। ওঁরা গাড়িতেই ইশকুলের মাঠ অবধি যাবেন। তপনদা বললেন, ‘এ বেশ হলো। পথি নারী আবর্জনা।’ অবশ্য নারীরা কথাটা শোনেননি। তাহলে আবর্জিতা বোধে বিবর্জিতা টের পাইয়ে দিতেন। বললাম, ‘পুষ্প কিন্তু বরিশালের মহিলা সমিতির নেত্রী।’ তপনদা বললেন, ‘বাবারে!’
কিন্তু হাঁটার উপায় নেই। কীর্তিপাশা এখনও হিন্দুপ্রধান গ্রাম। উত্তরের বিস্তীর্ণ বিল অঞ্চলের গ্রামগুলো নমঃশূদ্র সমাজ অধ্যুষিত। অন্যান্য গ্রাম সবই মুসলমানপ্রধান। বাজারসংলগ্ন বসতির অধিকাংশ— সবই মুসলমান প্রধান। বাজারসংলগ্ন বসতির অধিকাংশ মানুষ কর্মকার সমাজের। এঁরা শিক্ষা সংস্কৃতিতে খুবই উন্নত, যদিও এখন আর আগের ব্যাপকতা নেই। তথাকথিত শিক্ষিত হিন্দু উচ্চবর্ণীয় ভদ্দরলোক প্রায় নেই এবং ভাগ্যিস্! মানুষগুলো সব বয়স ধর্ম নির্বিশেষে রাস্তায় পড়ে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করছে তাদের একদার রাজপুত্রকে। তপনদার দুচোখে অঝোর ধারা। মানুষটিকে কোনো দিন আদৌ আবেগপ্রবণ দেখিনি। একজন একজন করে বুকে জড়িয়ে ধরে এখন কাঁদছেন। এই কান্নার অর্থ বা মাহাত্ম্য সবাই বুঝবেন না। এটা তিনি নিশ্চয় বোঝেন নিজে, কারণ তিনি ‘রোমন্থনের কবি’, আর বুঝি আমি, কারণ ওই সময়টায় আমি ‘বিষাদবৃক্ষ’ রচনার দুর্মর প্রহরগুলো কাটাচ্ছিলাম। এটা ২০০০ সাল, ২০০৩ এ ‘বিষাদবৃক্ষ’ তার পুস্তকশরীর পাবে। আমি বিষাদবৃক্ষের কবি হব।
হঠাৎ একজন কাঁচা-পাকা দাড়িওলা প্রৌঢ়কে দেখে তপনদা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আরে ভুডি, তুমি তো দেখি এক রকমই আছ।’ বুঝলাম, তপনদার ভুল হয়েছে। ‘ভুডি’ অর্থাৎ ভুডি গাজিকে আমিও চিনতাম। তিনি সেই সময়ের প্রায় পঁয়তিরিশ-চল্লিশ বছর আগে মারা গেছেন এবং বৃদ্ধ বয়সেই। যাকে তপনদা ভুডি বলে জড়িয়ে ধরেছেন, সে ওই ভুডি গাজিরই কনিষ্ঠপুত্র, সিদ্দিক গাজি। ও আমার চাইতে বয়সে কিছু বড় হলেও, আমাদের সঙ্গে ইশকুলে পড়ত। কথাটা একটু ফাঁকায় এসে তপনদাকে বলতে, বললেন, ‘তাই তো, কিন্তু ও যে একদম ওর বাপের চেহারা-অবিকল।’ বললাম, ‘সবায়’ নিরুত্তিয়াতে বলুন, ‘একদম’ নয়— ‘একছের’, এখানে আমি কইলকাইয়া কথা কই না।’
সেবারে, বহুকাল বাদে, কীর্তিপাশার বড় হিস্যার প্রাসাদের সামনে একটা বড় রকমের খুশির উৎসব যেন ভেঙে পড়েছিল। ওই রকম গ্রামে এত জনসমাগম রাজনৈতিক সভা সমাবেশেও হয় না। ইশকুলের সামনের মাঠে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল প্রকাণ্ড। রাস্তায় পর পর অন্তত তিনটি তোরণ সজ্জিত করা হয়েছিল। ইশকুলের ছেলেমেয়েরা, শিক্ষকেরা একের পর এক এসে প্রণাম করছিল বর্গবর্ণ নির্বিশেষে। একটি কিশোরী গান গেয়ে বরণ করল, ‘ঝরাফুলদলে কে অতিথি, এলে সাঁঝের বেলায় কানন বীথি।’
তপনদা বক্তৃতায় বললেন, ‘আমার অনুজপ্রতিম মিহিরের কল্যাণে এই তীর্থ দর্শন আমাদের সম্ভব হয়েছে। আপনাদের সকলকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং প্রণাম। মিহিরকে আশীর্বাদ।’ আমার নামটার অহেতুক উল্লেখে আমি গৌরবান্বিত বোধ করেছিলাম। অস্বস্তিও।
তপনদাকে ইশকুলের শিক্ষকেরা এবং পরিচালকমণ্ডলী, অফিস ঘরে আপ্যায়ন করলেন। এই ইশকুল বাড়ি তাঁর পূর্বজদের কৃত নয়। ১৯৬১ সালের ঝড়ে সেই টিনের চালা, কাঠের খুঁটির তিনটি ইশকুলসহ ধূলিসাৎ হবার অনেক দিন পরে, সরকারের বদান্যতায় এই বিল্ডিং তৈরি। সুন্দর ছিমছাম বাড়ি। হাসিদি এবং তপনদা খুবই আপ্লুত বোধ করছিলেন স্মৃতিবিজড়িত এই বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা দেখে। ইশকুলের সেক্রেটারি ভদ্রলোক, নাম রুস্তম মোল্লা, বয়সে যুবক, বললেন, ‘এই ইশকুলের জমি, জায়গা সবই এখনও আপনাদের সম্পত্তি। বাড়িটাতে তো পরবর্তীকালে ‘বালিকা বিদ্যালয়’ স্থাপিত হয়েছে। বাড়ি এবং সংলগ্ন সম্পত্তি এই দুইটা ইশকুলের সম্পদ-এখনও। আমরা মুসলমানেরা ওই বাড়ির একখানা ইঁটও বেহাত হতে দিইনি। কিছু স্থানীয় হিন্দু স্বার্থান্বেষী কিছু অনৈতিক কাজ করেছে। তবে তার জন্য আমরা হিন্দু-মুসলমান, শুভবুদ্ধির মানুষেরা তাদের জেল জরিমানাও করিয়েছি।’ তপনদারা ভীষণ তৃপ্তিবোধ করেছিলেন। আনন্দে তপনদার চোখ অশ্রুসজল হয়েছিল।
এই সবের পর, প্রাসাদের দরবার হল, যেটি এখনও অভগ্ন, সেখানে যেতে হলো। এটি সেই বালিকা বিদ্যালয়। নাম নবীনচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়। আমার মাস্টারমশাই অশ্বিনী কুমারের মৃত্যুর পর, তাঁর সম্পত্তির আয়, তাঁর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী একাজেই ব্যয়িত হয়ে আসছে। ইশকুলের নামটি নিয়ে তপনদা আমার কাছে জিজ্ঞাসু হলেন। নবীনচন্দ্র অশ্বিনীবাবুর বাবার নাম।
রুস্তম এবং আমি তপনদাকে বললাম, ‘মাস্টারমশাইয়ের ইচ্ছে ছিল তাঁর বাড়িতে নবীনচন্দ্রের নামে মেয়েদের একটি হোস্টেল হোক। কিন্তু তখন বাংলাদেশ সদ্য স্বাধীন। সর্বত্র বিশৃঙ্খলা। মাস্টারমশাইয়ের গ্রামে জনবসতি, প্রায় নেই তখন। সেই সময় সমাজকর্তারা তাঁর সম্পত্তির জন্য একটি ট্রাস্ট বানিয়ে, বড় হিস্যার বাড়িতে একটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ স্থাপন করেছিলেন। বেশ কিছুকাল ইশকুলের এক্সটেনশান হিসাবে সেটি চলেওছিল। কিন্তু স্থানীয় কূটকচালি রাজনীতিতে ব্যাপারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই বালিকা বিদ্যালয়ের উদ্ভব। বিষয়টি জটিল ছিল এবং এখনও দুটি ইশকুলের মধ্যে গ্রাম্য কোঁদল এ নিয়ে আছে।
তপনদা পরে আমাকে বললেন, ‘আমাদের পিতৃপুরুষের ভিটেতে অন্য লোকের পিতৃনামে ইশকুল দেখে, প্রথমে মনটা একটু যে সংকীর্ণতায় আচ্ছন্ন হয়নি এমন নয়। পরে ভাবলাম, সবটাই তো সদুদ্দেশ্যে। তা ছাড়া, তোমার সেই চিঠিতে অশ্বিনীবাবুর যে পরিচয় জেনেছি, তাতে আর ক্ষোভ থাকার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না। জমিদারি বিষয়টা পাপের পাঁকেই জন্মেছে। এ তো তার পুণ্যের ব্যবহার। সুতরাং, ভালোই হয়েছে বলব।’
সময় শেষ হয়ে আসছিল। তপনদা বালিকা বিদ্যালয়ের মিটিংটাতেও যোগ দেবেন। হাসিদি আমাকে বললেন, ‘তুমি আমাকে সবটা ঘুরিয়ে দেখাও। ছবিও নেব। শুধু বাড়ির অন্দরমহলের দেখাটা তোমার তপনদার সঙ্গে করব। ততক্ষণে ওর কাজ শেষ হোক।’
বিস্তীর্ণ জমিদারবাড়ির দুই হিস্যার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত দেখানো অনেকটা সময় এবং পরিশ্রমসাপেক্ষ। তার ওপর হাসিদি আর্থারাইটিসের বনেদি রোগী। তাহলেও শ্বশুরবাড়ি প্রথম দেখাটা উৎসাহের জন্য ভালোভাবেই হলো। সেই দেখার বিবরণ এবং আলাপ-আলোচনা নিয়ে পৃথক একটি লেখা প্রয়োজন। একসঙ্গে অতটা লেখার পরিসর এখানে নেই।
ভেতরের ঘরগুলো, তার প্রত্যেকটির প্রাক্তন ব্যবহারের কথা, তপনদারা বাড়ি এলে, কোন অংশের ঘরে থাকতেন, নেতাজি যেবার শেষ বরিশাল সফর করেছিলেন, কোন ঘরে ছিলেন, ঐতিহাসিক হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ই বা যখন আসতেন, কোন ঘরে থাকতেন, এই তাবৎ বৃত্তান্ত তপনদাই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন এবং শোনালেন।
এত বড় ব্যাপার মাত্র দুদিন এক রাত্তিরে হওয়া সম্ভব নয়। সময় এত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছিল। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছিল আমার কুটুম্ববাড়িতে। কুটুম্বেরা শাঁসাল গৃহস্থ। হাঁকে ডাকে, এখনও প্রবল দাপুটে। শাশুড়ি তখনও বেঁচে। সুতরাং অতিথি আপ্যায়ন সামান্য দশপদে। প্রাচীন পরম্পরাক্রমে শাশুড়ি ঠাকুরুণ, চাঁদবাবুর ছেলেকে অক্লেশে তথা স্বাভাবিকতায় তুমি সম্বোধনে কথাবার্তা, কুশলাদি বিনিময় করলেন। তিনি বয়সে তপনদার বড় না ছোট সেটা প্রশ্ন নয়। গ্রাম সুবাদে কাকিমা বটেন।
ফেব্রুয়ারি মাস। এই সময় বিল গাঁয়ে একরকম শসা জাতীয় ফল বা সবজি হয়। শসার চাইতে আকারে বৃহত্তর, পেল্লায় বলা যায়। নাম মর্মা। বস্তুটি কাঁচা এবং তরকারি হিসেবে ভোজ্য। অত্যন্ত সুস্বাদু। তাঁরা দুজনেই মধ্যাহ্ন আহারের আগে প্রচুর মর্মা খেলেন। তপনদা পরিচিত হলেও হাসিদি এই প্রথম জিনিসটির স্বাদ নিলেন এবং উচ্ছ্বসিত। খাওয়ার উপকরণে ছোট চিংড়ি দিয়ে মর্মার সবজি ছিল। সেটাই দেখলাম, অন্যান্য বিশেষত আমিষাহারকে পরাজিত করল। তপনদা বললেন, ‘হালার মর্মা আর খিরই কতদিন পর যে খাইলাম!’
রাতটা কাটানোর ব্যবস্থা কুটুমদের সহায়তায় হয়েছিল একদার বন্দর শহর এবং এখনকার জিলা সদর ঝালকাঠির শহরে। আমার ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম’ বইটির অন্যতর প্রধান চরিত্র রাজা নাসিরের সুগন্ধা তীরস্থ ফ্ল্যাট বাড়ির তিনতলায়। তপনদার আকাঙ্ক্ষা ছিল, আমাদের পুরান প্রসিদ্ধ নদী সুগন্ধাকে ভালোভাবে দেখার। তেতলার ব্যালকনিতে বসে সেদিন রাতে এবং পরের দিন ভোরে প্রাণভরে সুগন্ধাকে দেখা হয়েছিল। সুগন্ধা আমাদের বড় আদরের নদী। কিন্তু এখন আর তার সেদিন নেই। রাজা নাসির বা নসু এবং অন্যান্য উপস্থিত অনেকেই, তা কি গ্রামের বাড়িতে, কি গঞ্জের এই তিনতলায়, প্রায় সবাই আমার সিদ্ধিগঞ্জের মোকামের চরিত্র। তপনদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তিনি হাসিদিকে বললেন, ‘হাসি এদের দেখো। এরা মিহিরের ‘সিদ্ধিগঞ্জের মোকামের মানুষ’। বইয়ের মানুষ জ্যান্ত দেখতে পাওয়া ভাগ্যের কথা।’ হাসিদি কৌতূহল প্রকাশ করছিলেন, নাসির এবং তার ভাইদের নামের আগে ‘রাজা’ বিশেষণটির কারণ জানতে। নাসির বলল, ‘শুনেছি, আমরা নাকি রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর। পরবর্তীকালে ধর্মান্তরিত।’ তপনদা বললেন, ‘প্রতাপাদিত্যের বংশ নেই। ওরা সম্ভবত বসন্তরায়ের বংশের সঙ্গে সম্পর্কিত।’ হাসিদি তপনদা, নাসির, আমার এক শ্যালক কমল আর আমার একটা সমবেত ছবি নিলেন। পরে একটা প্রিন্ট আমাকে পাঠিয়েছিলেন।
নটা-সাড়ে নটায় বেরিয়ে দশটার মধ্যে বরিশাল। পুষ্প কালই সন্ধেয় তার বাসায় চলে গেছে। আজ তার গরিবখানায় মধ্যাহ্ন আহার। সন্ধেয় ব্যবস্থামতো এঁদের সবাইকে স্টিমারে ঢাকার উদ্দেশে পাঠিয়ে আমি গ্রামে ফিরব এবং আরও কয়েকটা দিন এখানে থাকব। তপনদা বললেন, ‘তিনটা জায়গা হয়ে পুষ্পর বাসায় যাব। জিলা ইশকুলে যাওয়া, নাবালক লজ দেখা এবং মিশন ইশকুলটায় যাওয়া।’ মিশন অর্থাৎ বরিশালের বিখ্যাত অক্সফোর্ড মিশন ইশকুলটি পুষ্পর বাড়ির পাশেই। বাকি দুটি জায়গা দেখতে যাওয়া হলো। প্রথমে জিলা ইশকুল। কিন্তু সেটি সেদিন বন্ধ। প্রিন্সিপাল ভদ্রমহিলার কোয়ার্টার ইশকুল সংলগ্ন। মহিলা তপনদার পরিচয় পেয়ে ফোন মারফত বিশিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং সংশ্লিষ্ট অনেককেই খবর দিলেন। অচিরে অফিস ঘরটি পরিপূর্ণ হলো এবং ব্যাপক আড্ডা, স্মৃতি-কণ্ডূয়ন চলতে থাকল। প্রচুর ফল, ডাবের জল, চা-কফি পর্যায়ক্রমে চলল।
জায়গাটি দুর্ভাগ্যক্রমে তার প্রাক্তন সৌন্দর্য ভ্রষ্ট হয়েছে। যদিও আমি অনেক পরে এই দেশ ছেড়েছি, কিন্তু তখনও যে সৌন্দর্য এই বেল-পার্ক স্থানটিতে ছিল, কালের প্রকোপে এবং শহরায়ণ-জনিত উন্মাদ উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রকোপে তা আজ আর নেই। সবচেয়ে করুণ অবস্থা সামনের বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা এবং তার পাড়ের ঝাউগাছগুলোর। একটা ঝাউগাছও আর নেই। রাস্তার বৃহদায়ন তাকে নিঃশেষে ধ্বংস করেছে। জেলা ইশকুল থেকে বেরিয়ে নাবালক লজের স্মৃতির জগতে ঢুকতে চাইছিলেন তপনদা। সঙ্গে গাড়িতে একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন। কিন্তু তিনি যেখানে গিয়ে পৌঁছোলেন, সেটা একটা সিনেমাহলের সামনের ঘিঞ্জি জায়গা। আশপাশে লোহালক্কড়, সিমেন্ট, বালির জঞ্জাল। একে-তাকে বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করে জানা গেল যে ওরকম একটা বাড়ি সেখানে ছিল বটে, কিন্তু সে তো বহু বছর হলো বিক্রি হয়ে গেছে। সে বাড়ি ভেঙে এখন সেখানে একটা বড় হাইরাইজ, ফ্ল্যাটবাড়ি উঠেছে। তপনদার হতাশা এবার আর বাধা মানল না। দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললেন তিনি। ফ্ল্যাটের মালিকের এক উত্তরাধিকারী, কীভাবে যেন খবর পেয়ে গাড়ির কাছে এসে তাঁর ওখানে খাবার জন্য আমন্ত্রণ করলেন। তাঁর দাদিমা নাকি ওপরতলার ঘর থেকে আমাদের ওখানে খোঁজাখুঁজি করতে দেখেছেন। যাওয়ার মানসিকতা বা সময় কোনোটাই ছিল না। সুতরাং ভগ্নহৃদয় তপনদাকে নিয়ে পুষ্পর বাসার দিকে রওনা হতে হলো। এর আগে কোনোদিন তপনদাকে হতাশ আবেগে ভেঙে পড়তে আমি অন্তত দেখিনি। এ যেন আধুনিকতার লোহালক্কড়ের প্রচণ্ড আঘাতে একটি বহুকাল পোষিত ছন্দময় কবিতার লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া। রাস্তায় তপনদা আর একটাও কথা বললেন না। চোখের জল অবিরল ধারায় পড়ছিল শুধু।
পুষ্পর বাসায় ফিরে দেখা গেল গোটা বরিশাল শহর সেখানে ভেঙে পড়েছে যেন। সাংবাদিক, শিক্ষক, অধ্যাপক, পত্রিকা-সম্পাদক, পুরোনো মানুষজন- সে এক কাণ্ড। পুষ্প এবং তার বর সেন্টু, তাদের দুজন পাচিকাসহ দু-দুটো রান্নাঘরে হিমশিম খাচ্ছে। উপস্থিতদের মধ্যে একটা বড় অংশই মধ্যাহ্ন আহারে অংশী। সেন্টুর সঙ্গে আমার আলাপ বেশিদিনের নয়। অত্যন্ত সুরসিক ভোজনপটু তথা অতিথিবৎসল মানুষ। উকিল বলল, ‘আলাপ পরিচয় আছিল না, ভালোই আছিল। সম্পর্কে গেরাম সুবাদে বড় সম্বন্ধি, কিছু কইতেও পারি না। তয় এবার আইয়া যা একখান বাঁশ দেলেন, হেয়ার ঘা শুগাইতে মলম লাগান লাগবে এক বচ্ছর।’ ওর কথার ধরনটা এমনই ছিল। দুঃখের বিষয় সেন্টু আজ আর নেই। বছর তিনেক আগে হঠাৎ একদিন ফোন পেলাম বরিশাল থেকে, সেদিনই ও হঠাৎ এক হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। বড় মধুর সম্পর্ক ছিল ওর-আমার। তপনদা, হাসিদিও খবরটিতে বড় শোক পেয়েছিলেন।
অনেক মানুষ, অনেক খবর, অনেক কুশলেচ্ছা বিনিময়, অনেক সাক্ষাৎকার, ছবি তোলা, অনেক প্রতিশ্রুতি এবং সবচাইতে অনেক ভয়ঙ্কর সেই বাঙাল আতিথেয়তার অদম্যতা, যা আদ্যন্ত ভোজনে অনীহা প্রকাশ করলে গলায় বাঁশ ঢুকিয়ে গেলাবার ব্যবস্থা করা বিধি।
দুপুরের খাওয়ার পর তপনদার গতদিন থেকে ধকলের কথা চিন্তা করে আমাকে একটু কঠোর হতে হলো সমবেত, উৎসাহী স্ব-জেলাবাসীদের প্রতি। এটা দুহাজার সাল। হিসেবমতো তপনদার বয়স চুয়াত্তর বছর। ডাক্তারেরা তাঁর হৃদয়বিষয়ক চেতাবনি দিতে আরম্ভ করেছেন। পিতৃভূমি দর্শনে পুণ্য এবং আহ্লাদ যতই চাপুক, কোনো অঘটন ঘটলে, কোনো সুমুন্দি দ্যাশের ভাই, এ শর্মাকে বাঁচাবে না। পুষ্পকে তাই বললাম, ‘তপনদাদের তো এবার একটু বিশ্রামের সুযোগ দিতে হয় রে।’ পুষ্পও তাই চাইছিল। কিন্তু এতগুলো মানুষকে তারই বাড়ি থেকে ভাগায় কীভাবে। এ ব্যাপারে সেন্টু এলেমদার। তাকে লাগানো হলো। সে বৈঠকখানায় গিয়ে সরাসরি তপনদাকে বলল, ‘দাদা, সাড়ে ছটা-সাতটায় তো আবার পুষ্পর মহিলা সমিতির লগে আপনার ইস্টিমার যাত্রা আছে। হারা রাইতের ধকল। কই বোলে যে এ্যাটটু গড়াইয়া লইলে অয় না? রাইতে কৈলোম মহিলা সমিতির নাচ, গান আরও কত কী যে চলবে ভাইব্যা আমার তো গায় জ্বর। ব্যাপারডা কিন্তু সোজা না।’
তপনদা বাঁচলেন, আমিও নিশ্চিন্ত। এখন তিনটে বাজে। একটি নাছোড় সাংবাদিক ছোকরাকে সময় দিলেন পাঁচটা, সাড়ে পাঁচটা। ছেলেটি দুঃসাহসিক সাংবাদিক। দিব্য ছেলে। সাড়ে পাঁচটায় তাকে সাক্ষাৎকার ফটোসেশন যতটা সম্ভব দিয়ে স্টিমার ঘাটে যাবেন।
আমাকে বললেন, ‘তুমি কিন্তু স্টিমারে আমরা না ওঠা পর্যন্ত থেকো।’ শেষ পর্যন্ত সবই হলো। কিন্তু কারোরই যেন তৃপ্তি নেই। আমারও না। পুষ্পর ব্যবস্থাপনায় স্টিমারের আকাঙ্ক্ষাটা পুরো হলো। সেটাও অসম্ভব রাজসিক ব্যবস্থাই ছিল। সাতটায় স্টিমার ছাড়ার ভোঁ পড়ল। বরিশাল একপ্রেসের একদার যাত্রীদের স্মৃতিতে ‘ইস্টি’মারের ভোঁ-টা বড় নস্টালজিক। এটা সেই তখনকার ফ্লেমিংগো কোম্পানির জাহাজ নয়। তবু তপনদা কেন যেন আরেকবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন। এই ভোঁ-এর গভীর বিচরণ ইতিহাস তপনদা জানেন।
...........................................
চলার পথের চলনদার
মিহির সেনগুপ্ত
...........................................
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
মুদ্রিত মূল্য : ৪৯০ টাকা
সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment