অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

ফ্রেম আউট হয়ে যাওয়ার সময় চলে আসে নিজেরও কখন যেন। তার আগেই বোধহয় তাই বসন্ত রাঙা হয়ে ওঠে এত ভীষণ! বরাবরের মতোই বিলিয়ে দেয় মানভূম তার সর্বস্ব এই একটা ঈশ্বরের মতো সুন্দর ঋতুতে। মিলিয়ে দেয় কত কত ভীষণ অদ্ভুত মানুষ! এবং ইউনিসেফের ডকুমেন্টারির কাজে কলকাতা থেকে আচমকাই এসে পড়ে কেউ। মেয়েদের নিয়ে ছবি হবে। ঝরে থাকা পলাশের উপর জেগে উঠবে হাতে হাত ধরে সাঁওতালি পাতা নাচ। এতদিন থাকার সুবাদেই বোধহয়, চেনা বিকেলে জুটে যায় গাইডের কাজ। চিনিয়ে দিই তাকে অচেনা আদিম ব্যাসল্ট, দূরের ছু-মন্তরে মিশে যাওয়া রাস্তা, পলাশের কুঁড়ি গাছে গাছে। “আপনি থাকতে থাকতেই ভরে যাবে পলাশে সব—”

পলাশ সাজতেই থাকে। শুধু আমি নিজেই আবার ছিটকে যাই কোথাও। তেলঙ্গানার ডেকান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি ছুঁয়ে আদিবাসী অধ্যুষিত মেডক জেলার ভিতরের দিকে পাহাড়ের গায়ে অচেনা কোনও রোদ্দুরে। সেখান থেকে ফিরে আসতে আসতে, পলাশ ঝরানো বৃষ্টি আবার খুব। হাঁচোড়পাঁচোড় করে ধরিয়ে দেওয়া কাউকে শহরে ফেরার ট্রেন। ফিরতে ফিরতে গাড়ির কাচে জল, আর ছোট্ট একটা টেক্সটের বেজে ওঠা মোবাইলে, “কলকাতা ফিরলে দেখা হবে?” দেখা হবে কিনা কে জানে! যন্ত্রণায় ফেটে আসা মাথা সামলে বেরিয়ে পড়া আবার দূরের কোনও গ্রামের ঠিকানার খোঁজে। সেখানে নতুন মানুষ আবার। যারা আবার শিখিয়েও দেয় আনমনেই কখনও কখনও বদলে দিতে চাওয়া একটা ভূগোলের আদিম স্বরলিপির সুর। যেমন বাঘমুন্ডি থেকে এগিয়ে গেলেই খানিক, বাঁশিটাঁড়। এবং, সেই রাস্তা বাঁক নেওয়ার মুখেই তাকে যেন থমকিয়ে দেয় পাখি পাহাড়ের ঢেউ। পাখি পাহাড়? নাকি, মুররাবুরু? গ্রামের ভিতর অচেনা পথের মধ্যে দাঁড়িয়ে আচমকাই আলাপ স্কুল ফেরত ছেলের সঙ্গে এক। “এখান দিয়ে বড় রাস্তায় যাওয়া যাবে রে?” তার মাথার চলন নেতিবাচক।

কই গেছে এই রাস্তা? 
হুই দিকে, হুই যে পাখি পাহাড়!
পাখি পাহাড়? এটাই নাম?

ততক্ষণে সামনের হরিমন্ডপে জড়ো হয়েছেন প্রবীণ ও মধ্যবয়স্ক কেউ। “পাখি পাহাড় কি আর নাম হয়? সে তো কলকাতার এক বাবু এসে আঁকাজোকা করলে পাহাড়ের গায়ে গায়ে, সেই থেকে এই নাম! আসল নাম তো মুররাবুরু। আমরা গাঁ-ঘরের লোকেরা বলতাম ন্যাড়াচূড়া।” তাদের সঙ্গে কথাতেই জানা যায় ‘মুররা’ শব্দের অর্থ ‘ন্যাড়া’, অর্থাৎ গাছপালা বিহীন। আর ‘বুরু’ শব্দের অর্থ ‘চূড়া’। সেখানে আবাসস্থল আদিবাসী দেবতাদের।
…............................
অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
  শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ


Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।