চলার পথের চলনদার।। মিহির সেনগুপ্ত।। সুপ্রকাশ।।
পরবর্তী ঘটনার গতি অত্যন্ত দ্রুত। চিকিৎসা চলছে। স্থবির জানিয়ে দিয়েছেন পা কাটতে হবে। তুতুল যে কীভাবে খরচ চালাচ্ছে জানি না। জিজ্ঞেস করা সঙ্গত হয় না। পার্থশঙ্করকে ‘খোয়াবনামা’র ভারতীয় মুদ্রণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অগ্রিম রয়ালটি বাবদ সে যাতে কিছু দেয় এই মর্মে তরুণ পাইন এবং আমি তাকে অনুরোধ করি। সে সেটা করেও।
এই সময়কার অনুপুঙ্খ বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে কষ্টকর। তাছাড়া এসময়ের তাবৎ কথা সংশ্লিষ্ট জনেরা সবাই জানেন। ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করা হলো, সম্পূর্ণ পাটা কেটে বাদ দেওয়া হলো ২০/৩/৯৬ তারিখে।
ফেব্রুয়ারি মাসেই মাওলা ব্রাদার্স ‘খোয়াবনামা’ বের করেছিল। সম্ভবত মার্চে পা কাটার আগেই বই এসে এখানে তার হাতে পৌঁছোয়। সম্ভবত বলছি একারণে, প্রথম লটের বই এসে এখানে তার হাতে যখন দেখেছি তখন সে পার্কসার্কাস ট্রাম ডিপোর কাছের বাসায়। বাসাটা ছিল নাজেস আফরোজের মেসোমশাইয়ের বাসা। নাজেসই ব্যবস্থাটা করেছিল। পা কাটার পর সপ্তাহ খানেকের মত যোধপুর পার্কের একটা নার্সিংহোমে ছিল। নাজেস ছিল একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক।
পরে ‘কেমো’ নেবার জন্য মাঝে মাঝে সেখানে যেতে হত। প্রথম লটের বই থেকেই সে আমাকে এক কপি উপহার দিয়েছিল। সেটা পার্কসার্কাসের বাসায় বসে। সেদিন অনিল আচার্য ছিল সেখানে। সে যাবে বিথারীগ্রামে অসুস্থ মাকে দেখতে। বলল, এটা আমি আজ নিয়ে যাই, রাস্তায় পড়তে পড়তে যাব। ফিরে এসে দেব। মনে একটু রাগ যে হয়নি বলব না। তবে অনিল আমার ও অভিজিতের বন্ধু বিধায় ঢোঁক গিলে নিলাম। অনিল চলে যাবার পর ইলিয়াস বলল, তোমায় আর কয়েকটা দিন সবুর করতে হবে। আর কিছু বই পাঠাতে বলেছি, এসে যাবে। সুতরাং পরের লটের বই থেকেই সে আমার স্ত্রী ও আমাকে একটি কপি উপহার দেয়। তারিখটা ছিল ৫/৪/৯৬ অর্থাৎ পা কাটার পর।
তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছিল ২০/৩/৯৬ তারিখে পা কাটা হবে। এই সময় একদিন রাতে তপন রায়চৌধুরী, তিনি তখন কলকাতায়, আমাকে টেলিফোন করলেন— মিহির, বাংলাদেশ থেকে ড. আনিসুজ্জামান এসেছেন। তোমার কথা ওঁকে বলেছি। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে উনি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান। কাল চারটের মধ্যে পিয়ারলেস ইন-এ তাঁর সঙ্গে দেখা কোরো। তোমার প্রকাশিত সব কটি বই তাঁকে অবশ্যই দিও। ওঁর ফ্লাইট কিন্তু সন্ধে ছটায়।
আনিসুজ্জামান তাকে বোঝাতে গিয়েছিলেন কেন আনন্দ পুরস্কারের টাকাটা তার নেওয়া জরুরি। তপনদাই আমাকে জানিয়েছিলেন যে ‘তোমাদের বন্ধু ইলিয়াস এবার আনন্দ পুরস্কার পাচ্ছেন।’ বস্তুত আনিসুজ্জামান জানতেন যে ইলিয়াস এই পুরস্কার গ্রহণ করতে রাজি হবে না। একারণে বোঝাতে গিয়েছিলেন। আমি নির্ধারিত সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করলে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব আদর করলেন। বললেন, আমি গিয়েছিলাম তোমাদের বন্ধুকে বোঝাতে। ও গোঁ ধরে বসে আছে, আনন্দবাজারের পুরস্কার ও নেবে না। কিন্তু অপারেশানের খরচটা বুঝছ তো? তপনদা বললেন, তোমাকে আর তরুণকে এ-ব্যাপারে লাগাতে। তরুণের সঙ্গে দেখা হল না। আমাকে আজই ফিরতে হবে। তোমরা যে করে হোক ওকে রাজি করাও। ডোন্ট ওয়ারি মাই বয়। হি অ্যান্ড আই ক্যান ভেরি ওয়েল বিয়ার উইথ দ্য ডিজিজ। তুমি আর তরুণ ওকে বাধ্য কর। টাকাটা এই মুহূর্তে একটা ব্যাপার। আমি আর তরুণ সেটা করার চেষ্টায় তার কাছে বেশ কিছু ‘খামার’ উপহার পেয়েছিলাম। বোদামবদাম লাথি যে খাইনি, তা আমাদের বাপের ভাগ্য। ও আমাদের সঙ্গে প্রায় কথা বন্ধ করে দিয়েছিল। তরুণ, বৈশাখী আর আমি প্রায় নাছোড়ের মত লেগেছিলাম। তুতুলের তো বোধহয় সাহসেই কুলোয়নি, এ বিষয়ে তাকে কিছু বলা। বন্ধুস্থানীয়রা সবাই, স্বয়ং নিখিল সরকার এবং সর্বশেষ ডাক্তার স্থবির দাশগুপ্ত পর্যন্ত বুঝিয়ে যাচ্ছেন। তার এক কথা, আনন্দবাজারের পুরস্কার সে নিতে পারবে না। দাঙ্গার ব্যাপারে আনন্দবাজারের ভূমিকা ন্যক্কারজনক ছিল। তাছাড়া ‘খোয়াবনামা’য় সে সরাসরি তাদের সমালোচনা কি করেনি? দেশে গিয়ে সে মুখ দেখাবে কী করে? শেষ পর্যন্ত আমাদের সমবেত প্রচেষ্টা জয়ী হয় এবং ইলিয়াসকে আমরা বাধ্য করি প্রয়োজনের কাছে মাথা নত করতে।
বন্ধুদের কাছে, বাংলাদেশে শুনেছি, ‘ফিলিপস’সহ সমজাতীয় অনেক ‘দামি পুরস্কারকে’ সে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু সেসব ছিল সবল দুখানা পায়ের উপর দাঁড়ানো ইলিয়াসের আপসহীনতার লড়াই। এই সমাজে বাঁচতে গেলে আপস কোথাও না কোথাও করতে তো হয়ই। কিন্তু যে আপস না করলেও চলে, তা সে কখনো করেনি। কিন্তু আনন্দ পুরস্কারের সময়ের পরিবেশটা ভিন্ন। নার্সিংহোমের মোটা অঙ্কের বিল, ওষুধের বিল, আনুষঙ্গিক হাজারো খরচের ধাক্কা এবং তদুপরি শুভানুধ্যায়ীদের নিরন্তর অনুরোধ উপরোধ আর হয়ত, হয়ত কেন— নিশ্চয়ই, তুতুলের অসহায় মুখচ্ছবি অদম্য ইলিয়াসকে দমিয়ে দেয়।
একসময় পা’টা কাটা হয় এবং আমরা ইচ্ছা করলাম যেন আরোগ্য হয়।
এই সময়টাতে ও নার্সিংহোমে। ওর ভাইয়েরা, ছেলে পার্থ সবাই কলকাতায়। এক পায়ের পদাতিক তখন সে। অন্য পাটা কেটে ফেলা হলেও তার ভৌতিক ব্যথা আছে। ‘আছে’ পায়ের চাইতেও ‘নেই পায়ের’ উপস্থিতি যেন বেশি বাস্তব। একদিন দুপুরে গেছি। বলল, মিন্টুটা কাল সারারাত এই পাটার খুব পরিচর্যা করেছে। ওরা বোধহয়, এদিকওদিক একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। তুমি একটু টেনে দাও না খানিকক্ষণ। বলে, কীভাবে টেনে দিলে ওর আরাম হবে সেটা দেখিয়ে দিল। কথাটা তুতুল এবং মিন্টু আমাকে বলেছিল। আমিও সেরকমই করলাম। খানিকক্ষণ করার পর বলল, এখন খানিক আরাম পাচ্ছি। বোসো কথা বলি। এবার বল তো, তোমার ঐ হাড়চণ্ডালী দাদাটির সঙ্গে আমার আদৌ দেখা হবে কি-না। শালা কিছুতেই মোলাকাত হল না। শালা ভেবেছে কী?
সদ্য বইমেলার পর অভিজিৎ বালুরঘাটে ফিরে গেছে। ওর জীবন অবিশ্বাস্য রকমের সংকটপূর্ণ। দুটি মেয়ে। বড়টি প্রায় জন্মাবধি রুগ্না। এপিলেপসি এবং আরোগ্যের কোনো আশা নেই, এমনকি মোটামুটি কাজ চালাবার মত সুস্থতায়ও থাকে না কখনও। স্ত্রীও নানা রোগে পর্যুদস্ত। চাকরির জন্য আত্মজনদের কাছ থেকে বাধ্য হয়ে দূরে থাকতে হয়। এসব নিয়েই তার সাহিত্যকর্ম, সংসার নির্বাহ। নিজেও নানান রোগের ভাণ্ড। ফলে, বারবার ফোন করেও ওকে আনতে পারছি না। এর মধ্যে ইলিয়াসের পা কাটা হয়ে গেছে। নার্সিংহোম থেকে ও পার্কসার্কাসের বাসায় এসে গেছে। মাঝে মাঝে কেমো চলছে। এরই মধ্যে একদিন সে যেন খুব হতাশ হয়ে আমাকে বলল, কতলোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে, তপন রায়চৌধুরী, প্রণবরঞ্জন রায়, সুনীল সেনশর্মা, সমীর দাশগুপ্ত, আরও কত। কিন্তু অভিজিতের সঙ্গে কি এ জীবনে দেখা হবে না? ওর উপর অতবড় একটা প্রবন্ধ লিখলাম। ‘কোরক’ পত্রিকায় ও ‘অভিজিৎ সেনের হাড়তরঙ্গ’ নামে একটা চমৎকার প্রবন্ধ লিখেছিল। সেদিন আবার অভিজিৎকে ফোন করে বললাম, এই ব্যাপার, আসতেই হবে। ও জানাল, আসছি।
অভিজিৎ এলো তার পরদিনই। তারিখটা বোধহয় ১৫ই এপ্রিল। প্রায় ২৫/২৬ দিন হয়ে গেছে ইলিয়াসের পা কাটা হয়েছে। বার দুয়েক কেমো নেওয়া হয়েছে। তৃতীয়টা হলে ঢাকায় ফিরবে এরকম আশা। দুপুরের একটু পর পর ঠিক বিকেল নয়, অভিজিৎকে নিয়ে ওর পার্কসার্কাসের অবস্থানে গেলাম। অভিজিতের বিষয়ে ওর অনুভবের ব্যাপারটা আমি জানতাম। এই প্রথম সাক্ষাৎ দুজনের। অভিজিৎকে বললাম, দুম করে খবর দেওয়াটা বা সামনে গিয়ে হাজির হওয়াটা ঠিক হবে না। তুই দাঁড়া বাইরে, আমি শান্তভাবে খবরটা দিই আগে। তুতুলও ব্যাপারটা জানত। আমি যেতে দেখলাম ভালো মেজাজে আছে। বোধহয় শরীরটা খানিক সুস্থ ছিল সেদিন। যথারীতি হাস্যবদন এবং প্রশ্ন —মিহির, হোয়ার ইজ ইয়োর ইভনিং? বললাম, ইভনিং নয়, আজ কাকে নিয়ে এসেছি দেখ। তোমার চণ্ডালকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। তুমি একদম উত্তেজিত হবে না। যেমন ঠেসান দিয়ে আছ, তেমনি থাকবে। অভিজিৎ এসে ওর খাটের উপরই বসল। দুজনে দুজনের হাত ধরাধরি করে মুখোমুখি। আমার কাজ শেষ। এবার ওরা যা করে করুক। সমবয়স্ক দুজন গভীর মানুষ, মুগ্ধ চোখে, একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে কোনো শব্দ নেই। কেউ কাউকে কুশলবার্তা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করতে পারছে না। ঐ সময়টুকুকে আমার অনন্ত মুহূর্ত বলে মনে হচ্ছিল। আমি লেখক সাহিত্যিক নই, আমার অনুভূতি, বোধ, বিচার সবকিছুই খুব মোটা দাগের আর দশজন সাধারণের মত। তথাপি ওদের তৎকালিক নিঃশব্দ আনন্দের নিস্তরঙ্গ স্রোত যেন আমাকেও স্পর্শ করছিল। তা এত স্নিগ্ধ এবং ক্লান্তিহর যে মানুষ জীবনে খুব বেশিবার তাতে অবগাহন করতে পারে না এবং অসম্ভব জেনেও কিছু কিছু অনুভবকে শাশ্বত করে রাখতে চায়।
তারপর ওরা দুজনে কথা বলতে শুরু করলে আমার মনে হলো যেন নিস্তরঙ্গ স্রোতে ঢেউ উঠল এবং বুঝলাম আরও বহুদিন আগেই ওদের সাক্ষাৎ হওয়া জরুরি ছিল। অন্তত আমার সঙ্গে প্রায় এক দশকের আলাপ না হয়েও যদি অভিজিৎ সেই ১৯৯১-এও ওর সঙ্গে সামনাসামনি হতে পারত, তবে সাংস্কৃতিক বিশ্বের ফুল ফল ফসলের রঙ আরো অনেক বর্ণাঢ্য হতো। কিন্তু এখন যে আর সময় নেই, এরকম একটা আশঙ্কা তো মনের মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিলই যদিও বিশ্বাসে ছিল না।
সেদিনকার ওদের দীর্ঘ আলোচনার কোনো বিবরণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আর তা আমার সাধ্যায়ত্তও নয়। শুধু একটি বিষয় নিয়ে দু’কথা বলব, যেমনটি মনে আছে। ইলিয়াসের বাসনা ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ব্যাপক উপন্যাস রচনা করার। এ নিয়ে ঢাকায় তার সঙ্গে যে আমার কথা হয়েছিল, তা আগেই বলেছি। এদিনের আলোচনায়ও সেই প্রসঙ্গ উঠলে, অভিজিৎ বলেছিল, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার আবেগ কিন্তু খুব আর্দ্র নয়, কেননা ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দুইই আমি খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। কাছ থেকে এবং একটা সময় পর্যন্ত বেশ নিরাপদে। আসলে মাওয়ের বিপ্লব এবং সূচিশিল্প বা ভোজ সভা বিষয়ক উক্তিটি আমি জানতাম, মানতামও কিন্তু লেখক হবার কারণে বহু জিনিস দেখে এড়িয়ে যেতেও পারি না। প্রসঙ্গত অভিজিতের এই অভিজ্ঞতার অংশীদার আমিও ছিলাম, কারণ সেই সময় দীর্ঘদিন আমি ওর সঙ্গে পশ্চিম দিনাজপুরের এক জেলা শহরে ছিলাম। অভিজিৎ কিছু বাড়িয়ে বলেনি। তখন অনেক কিছুই আমাদের নজর এড়িয়ে যায়নি। ফলে, আমাদের দুজনের কেউই ব্যাপক বাঙালির উচ্ছ্বাসের শরিক আন্তরিকভাবে হতে পারিনি। কিন্তু সে প্রসঙ্গ অন্য এবং দীর্ঘ। তবে অভিজিতের কথায় ইলিয়াস বলেছিল, হ্যাঁ অনেক কিছুই লেখা হয়নি এবং অনেক কিছু লেখাও বোধহয় যায় না। প্রসঙ্গত সে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলল। যুদ্ধের প্রাক্কালে একটি কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে তার মায়ের বিরুদ্ধে একটি নালিশ নিয়ে আসে। সে ছিল স্বামী পরিত্যক্তা এবং যৌনতা বিষয়ে বাছবিচারহীন। যে কোনো লোককে দেহ দান করতে দ্বিধা ছিল না তার। একারণে ছেলের কাছে সে ঘৃণ্য। মুক্তি বাহিনীর লোকেরা তখন তাদের প্রভাবাধীন এলাকার বিচারক তথা শাস্তিদাতাও। ছেলেটি তার মায়ের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিল। বাহিনীটি খুব সংগঠিত ছিল না, কিন্তু সশস্ত্র তো বটেই। যে-দুজনের উপর স্ত্রীলোকটিকে খুন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সে হাত পা ধরেই হোক অথবা ছলাকলা করেই হোক, তাদের খানিকটা নরম করে ফেলেছিল, আর দুজনকেই দেহদান করেছিল। উত্তেজনা প্রশমনজনিত হতাশায় অথবা যে কোনো মানসিক বৈকল্যে এর পরেও তারা তাকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করে। ইলিয়াস প্রশ্ন করেছিল— এই গল্প কি আমি লিখতে পারি? আমার কি লেখা উচিত?
আমি ওদের কথাবার্তায় কোনো অংশগ্রহণ করছিলাম না বিশেষ। কারণ ওরা নিজেদের আলোচনায় বড়ই মগ্ন ছিল এবং বিষণ্ন। অভিজিৎ পরে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিল। তাতে তার প্রশ্ন ছিল, কেন এসব কথা লিখতে পারবেন না ইলিয়াস? মুক্তিযুদ্ধ তো নিপুণ কোনো কারুকাজ নয়, সেতো আমরা জানি। কিন্তু ইলিয়াস কী— তাও তো জানতে হবে। আমাদের অস্বস্তি অথবা আকাঙ্ক্ষা কি তাকে কোণঠাসা করছে?
আমার মনে হয়েছিল অন্য কথা, যা পরে আমি ইলিয়াসকে বলেছিলাম। তা হলো, সাহিত্যকে যদি আমরা ইতিহাসের নির্যাস বলে মনে করি, তাহলে সত্য প্রতিষ্ঠার দায় থাকেই এবং তা অবশ্যই নির্মোহে। আমার বিশ্বাস সে-নির্মোহ ইলিয়াসের ছিল। তাহলে তার ঐ অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প লিখতে ঔচিত্য অনৌচিত্যেরই এই দ্বিধার কারণ কী? মনে হয়, কারণ হচ্ছে অন্বেষণ, নিরন্তর অন্বেষণ। ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর পূর্ববর্তী রচনার সঙ্গে পরবর্তী রচনাবলির তারতম্য সেই অন্বেষণকে প্রায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়। তারই ক্রমে কখনো মনে হয়, ‘জানি পার আছে গো পার আছে’, মনে হয়, তাহলে পার আছে? কিন্তু তার পরেই—
—পার আছে সে কোন দেশে।
কী আছে শেষে—পথের?
এইসব টানাপোড়েনের মধ্যে শিল্পীর যাত্রা, তার অন্বেষণ। তাই ঔচিত্য অনৌচিত্যের এই দ্বিধা, দ্বন্দ্ব।
..........................................
চলার পথের চলনদার
মিহির সেনগুপ্ত
..........................................
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
মুদ্রিত মূল্য : ৪৯০ টাকা
সুপ্রকাশ প্রকাশিতব্য
Comments
Post a Comment