অভিমানভূম।। (পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)।। শুভদীপ চক্রবর্ত্তী।। সুপ্রকাশ।।

কোন মেঘ কখন যে ডানা পাঠায়, তার খোঁজ করতে করতেই এরমধ্যে হঠাৎ রাতের দিকে মঞ্জুরের ফোন। দশটা পেরিয়ে গেছে। ওই সময় এখানকার কারোর থেকে ফোন পাওয়া একটু আশ্চর্যই বটে! ফোন ধরতেই চিরাচরিত মঞ্জুর, “কী হে, রাতে আসবে নাকি?”

দামোদরপুরে বিশাল ছো-লাচ পালা আজ! সারা রাতভর। অবশেষে পাওয়া যায় কাঙ্খিত সেই ডানা। মঞ্জুরের বাইকে খানিকক্ষণের উড়ান শেষে, যেখানে পৌঁছানো হয় শেষমেষ, সে দৃশ্যটা অভূতপূর্ব। একটা বিশাল মন্ডপ, কিন্তু দর্শকদের সঙ্গে শিল্পীদের উচ্চতার পার্থক্য নেই কোনও। স্টেজ বলতে ধুলোময় জমিটাই। সেইটাই দর্শকাসনও বটে।

ধুলোময় জমির স্টেজের একদিকে অর্কেস্ট্রা দল। ধামসা, মাদল, বাঁশি আর আরও অনেক রকম বাজনাপত্র নিয়ে পালা জমাতে প্রস্তুত তারা। শুরুর আগে একটু বিড়ির মৌতাতে জাল দিয়ে ঘন করে নেওয়া ধুনকি মেজাজ। পালায় গান গাইবেন যে গায়ক, গলার সাম্মানিক উত্তরীয় গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত তিনি বেজায়। নাচের শিল্পীদের জন্য বাকি গোটা ময়দানটাই। আশেপাশের গ্রাম থেকে মানুষ ভেঙে পড়েছে পালা দেখতে। কিংবা অনেকে দেখছেও না। এদিক-সেদিক ঘুরছে, নেশা করছে একটু দূরের অন্ধকারে। বিবাহিত মহিলাদের কোলের উপর ঘুমিয়ে পড়েছে ছোট শিশু। মনে হচ্ছে এই পালা বা গান-বাজনার শব্দ যেন এতটাই রক্তে মিশে আছে তাদের,  আওয়াজের ভীষণ তীব্রতাতেও তাই ঘুম ভাঙছে না এমনকি শিশুদেরও কিছুতেই। শূন্যে পাক খেয়ে যখনই জমি ছুঁয়ে নিচ্ছেন কার্তিকেয়, তখন তার পা থেকে ধুলো উড়ে এসে লাগছে সেই শিশুর মুখে। তার তরুণী মা আঁচল দিয়ে মুছে দিচ্ছে ঘুমন্ত শিশুর কপাল। এসব দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ক্যামেরার আঠেরো-পঞ্চান্ন বালখিল্য লেন্সও কখন যেন ধুলোর আদর মেখে ঝাপসা করে দিচ্ছে ছবি।

পরপর দুটো পালা দেখে ভোর চারটে নাগাদ মঞ্জুরের সঙ্গে হাঁটতে থাকি আশেপাশে। রাস্তার পাশে ঝোপের ধারে নেশা করে ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলেরা। সুখী সুখী মানুষের শরীর ডিঙিয়ে আসতেই হঠাৎ দেখি, পাশের ছোট মাঠে দাঁড় করিয়ে রাখা একটা ট্রাক। ট্রাকের ভিতর বিশাল বিশাল ছৌ নাচের মুখোশ। কাছে গিয়ে ভাল করে মুখোশগুলো দেখে ভাবি, এই বিশাল আর ভারী জিনিসটা মাথায় নিয়ে ওরকম ভাবে লাফ-ঝাঁপ অথবা শূন্যে ভোল্ট খেয়ে ল্যান্ড করা ঠিক কতদিনের অভ্যাসে সম্ভব?

…...........................................

অভিমানভূম
(পুরুলিয়ার ধুলো মাটি নদী আর মানুষদের গল্প-কথা-মিথ)
শুভদীপ চক্রবর্ত্তী

প্রচ্ছদ : সন্দীপ রায়
অলংকরণ : সুলিপ্ত মণ্ডল

মুদ্রিত মূল্য : ৩৫০ টাকা

সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।

লেটারপ্রেসের কম্পোজিটর : এক বিষাদান্ত পরম্পরা।। অনন্ত জানা।। সুপ্রকাশ।।

রাস্তার শুরু।। জয়া মিত্র।। সুপ্রকাশ।।