ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

'বাঁশরির অ্যাংলো-খারোয়ার অসামান্য রূপে যে আমি মুগ্ধ ছিলাম সেকথা আমি গোপন করিনি। যে-কোনো পুরুষের মতোই তার অসহ্যতার কথা আমি অকপটে বলছি। প্রায় বৎসরাধিককাল তার সঙ্গে মেলামেশা করেও যে আমি কীভাবে তার দৈহিক আকর্ষণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম, সেকথা আজকের এই শেষ বয়সে এসেও অবাক হয়েই ভাবি। তবে এর পিছনে যে শুধু আমার সংযমী কৃতিত্ব তা আদৌ ভাবার কারণ নেই। আমি ছিলাম একজন বিবাহিত পুরুষ। সে তখনও কুমারী। সেই বয়সটা আমাদের দু-জনকেই বিধ্বস্ত করতে পারত। কিন্তু আমরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হলেও পরস্পরকে রক্ষা করেছিলাম অমিত প্রচেষ্টায়। এটা কারুর একক কৃতিত্ব ছিল না।

অথবা আমরা কেউ কি জানি এই শরীর বিষয়ক কৃচ্ছ্রতা কোনো কৃতিত্ব না সাহসেব অভাব? উভয়ে উভয়ের প্রতি যে আসক্ত, তা কারুর কাছেই গোপন নেই। এ নিয়ে কোনো মিথ্যেচারও নেই। এমনকী আমার স্ত্রীও আমাদের পারস্পরিক মানসিক সম্পৃক্তি বিষয়ে অনবহিত তখন ছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে যদি কোনো রোম্যান্টিক গল্প উপন্যাস ফেঁদে বসতাম, সত্যমিথ্যে মিলিয়ে দিব্যি একটি হয় রগরগে, অথবা প্লেটনিক প্রেমের কাহিনি বিন্যাস করা যেত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লিখতে বসেছি স্মৃতিচারণমূলক একটি আলেখ্য এবং সেখানে মিথ্যাচারকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। বাঁশরি স্বয়ং অকপট স্বভাবের মেয়ে। মিথ্যেচার তার স্বভাবে নেই। সে যখন আমার এবং তার পারস্পরিক মুগ্ধতার বিষয় বুঝতে পেরেছিল, আমাকে বলেছিল, অন্য যার কাছে যা খুশি বল, কিছু আসে যায় না, বউদির কাছে আসল সত্যটা নির্ভেজাল বোলো। আমি আমার মতো করে স্ত্রীকে কথাটা জানিয়েছিলাম। তিনি বললেন, “বাঁশরিকে আমি বেশ জানি। জানি তোমাকেও। এক্স-মেরিটাল রিলেশানের মানসিক চাপ সামলাবার ক্ষমতা তোমার নেই। তবে মানসিক মুগ্ধতার কথা যদি বল সে রোগ তোমার একটু বেশিই আছে। বাঁশরিকে নিয়ে এই ক'জন হলো, সে খবর তাকে বলেছ?”

কথাটা মিথ্যে নয়।

আমার গৃহিণীটি এরকমই। যাত্রাদলের নায়কের ভঙ্গিতে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, বুঝিবে কি নারী, পুরুষের প্রেমের বেদনা। আসল ব্যাপারটা কখনো কখনো এমন মনে হয়, বাঁশরির সঙ্গে আমার ভাবের প্রগাঢ়তার সুত্র হচ্ছে, তার ঝাড়খন্ডি লোকায়ত গানের অসাধারণ উপস্থাপনা এবং পরিবেশনা। এমনও অনুভব হয় যে তার অনুপম দেহের আকর্ষণ থেকে তার নিবেদিত গানই যেন আমাকে নিয়ত সংযত রাখে। আমার ব্যাপারে তার নিজস্ব আত্মরক্ষার বীজমন্ত্রটি কী তা কখনো সরাসরি জিজ্ঞেস করিনি।' 

ঝিঙাফুলের কলি
মিহির সেনগুপ্ত

প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী
মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা

#সুপ্রকাশ 

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।