ঝিঙাফুলের কলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

'শাহনওয়াজ গাড়িসহ এসে গিয়েছিল। বলল, “আর দেরি নয়। এবার যেতে হবে।' শাহনওয়াজের সারথ্যে সোনেরিয়া টাঁড়ের উদ্দেশে রওনা হলাম।

সময়টা বর্ষা শেষ এবং শরতের শুরু। স্থানটা ছোটোনাগপুর মালভূমির একটা আঁচল বিশেষ। যাঁরা অভিজ্ঞ, জানেন, মালভূমির বর্ষা এবং শরৎ— এই দুটো ঋতুই কতটা নয়ন তথা মন ভোলানো। কিন্তু সেই শোভা উপভোগ করতে পারে কিছু বহিরাগতরা। সেই উপভোগের রকমারি গল্প ধরা আছে সেকালের তথাকথিত প্রবাসী বাঙালি লেখক-সাহিত্যিকদের গল্প-উপন্যাসে অথবা কলকাতায় জাপানি বোমাতঙ্কী ড্যাঞ্চিবাবুদের স্মৃতি-আলেখ্যে। এ স্থানের লোকসাহিত্যে বা সাংস্কৃতিক চর্চায় তার উপস্থিতি প্রায় নেই। কারণ, এখানে বর্তমান অরণ্য-নিশূন্যতা, ঝাঁটি ঝাড়-জঙ্গল এবং কেলেকুষ্টি, হাড়-বেরোনো ডিংলা-পারা অধিকাংশ মানুষই আবহমানকাল আছে দারিদ্র্যসীমার সীমান্তে। কদাচিৎ অস্তিত্বে থাকা দু-চারটা আকাশস্পর্শী মহিরুহের শীর্ষ শোভা চোখ তুলে, মন খুলে দেখার সুযোগ তাদের কদাপি হয় না। পরেশনাথ পাহাড়ের সুউচ্চ অরণ্যবেষ্টনীতে ঠিক বৃষ্টি আরম্ভ হওয়ার আগের মুহূর্তে যখন পুষ্কর বা দক্ষিণাবর্ত মেঘগুলো পেঁজা তুলোর মতো ঝুলে দোল খায় বা তাদের মেঘিনীদের সঙ্গে রঙ্গকেলি করে, সেই দৃশ্য উপভোগ করার মতো অবসর এখানকার ভূমিপুতদের থাকে না।

এখন সোনেরিয়া টাঁড়ের দিকে যাবার এই মনোরম পথে আমরা সেই অনুভবে সমৃদ্ধ হচ্ছি। কারণ আমাদের পেটে মোটামুটি নিশ্চিন্ত অন্ন আছে, হুড়ারদের নেই। বাঁশরিরও মনে হয় এখনও ব্যক্তিগতভাবে সেই ভাবনায় প্রবেশের বাস্তব সমস্যা ঘটেনি। সে চার্চের সাপোর্ট নিয়ে আছে হস্টেলে। ছুটিতে কখনো-সখনো বাড়িতে আসে। সদ্য যুবতী মেয়ে। বয়সের রংটা নিশ্চয় আছে মনে, স্বাভাবিকক্রমেই। বাঁশরির বৃত্তান্ত জানার কৌতূহলটা কাটাতে পারছি না। কিন্তু সেটা জানার ভদ্র উপায় কী, তা ঠাহর করতে পারছি না। শাহনওয়াজকে জিজ্ঞেস করলে সে রগড় করবে। দেখা যাক।' 


ঝিঙাফুলের কলি
মিহির সেনগুপ্ত

প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী

মুদ্রিত মূল্য : ৪৫০ টাকা

#সুপ্রকাশ 

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।