টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি।। মিহির সেনগুপ্ত।।

'সোনেরিয়া টাঁড় গাঁওটি আপনারা পাবেন তোপচাঁচি থেকে কত্ৰাসগড় যেতে রাস্তার বাঁদিকে। ঢেউখেলানো ঘাসের জাজিমওয়ালা এক দিলদুখানিয়া প্রান্তর পেরিয়ে এই গ্রাম। সেখানে সাঁওতালি কুল্লির অস্তিত্ব রাস্তা থেকে মালুম হওয়া বেশ তকলিফদায়ক। ঘাসের জাজিমওয়ালা ওই যে ঢেউখেলানো প্রান্তরটির কথা বললাম ওটি এই কুল্লিকে আড়াল করে রেখেছে। এখানে বাঁশের ঝাড় পাবেন মেলা। আর আছে মহুয়ার গাছ। এই সোনেরিয়া টাঁড়ে থাকেন শত্ৰুঘন ও বুধন সরেন। বুধন শত্রুঘনের ভাতিজা।

পৌষের এক মধ্যাহ্নে বুধন এসে নেওতা দেন। শহরায় উৎসবে যেতে হবে। শহরায় শুরু হয়ে গেছে। ‘আপনকার সকলের নেওতা, অবইসস্য যাব্যেন'।

শহরায় শুরু হয়ে গেছে, এ বার্তা শুধু মুখের কথায় যাঁরা জানেন, তাঁদের মতো হতভাগ্য এ-টাঁড় বহিয়ারের মিলিজুলি ভূখণ্ডে খুব বেশি নাকি নেই। এ-অধম সেই হাতগুনতি হতভাগ্যের দলে। কেন? না, তার লীলা কৈবল্যে শহরায়ের কোনো খবর নেই। সে একটা শহুরা ধুর বট্যে। সে নাই জানলহ্, শহরায় কা মতলব ঔর মহত্ত্ব ক্যা হৈ। শহরায় এখানে শুরু হয় মাঠে, ঘাটে, বাটে। শহরায়ের ছন্দ কখন যেন পৌঁছে যায় শ্বশুরালে বন্ধোয়া মজদুরের মতো আবদ্ধ কচি বউটার পায়ে। কেননা তখন সে শুনে ফেলেছে সেই গান এবং তার পা তাল দিতে শুরু করেছে সেই ছন্দে। শ্বশুরঘরের গাঁও-গেরস্থালিতেও তো ঋতুবদল হয়। তাই সে-ই বা জানবে না কেন, আর তার পা-ই বা ছন্দে তাল দেবে না কেন? তখন তো শহরায়ের ছন্দ আকাশে, বাতাসে, ঝোরা বা নদীর জলের গতিতে, পাতার খসে পড়ায়, এবং সর্বোপরি সদ্য কর্তিত ধানগাছের গোড়ালিতে। তখন তো গাই-বাছুর, বকরি-বলদ, শূকরা-শূকরি, সঁভে টের পায়্যেঁ যায় যে শহরায় পরবঠো আইস্যে গেল্য, হায় হায়! শ্বশুরালে যে নুনিটো বছরভর হাড়মাস গিলা করলহ তার তো তখন নাইহর যেত্যে মন উলঝন্ কইরবেই। তাই সে তখন গানা করবে। আনমনা দূর খোয়াইয়ের পানে চেয়ে 'উধাসা' লাগবে তার, কী? না ‘মাঈকে’ যাওয়ার সময় হল। অথচ বাপভাই কেউ আইসল্য নাই এখন্যও। কী সংকট! হায় হায় !' 

টাঁড় পাহাড়ের পদাবলি
মিহির সেনগুপ্ত

প্রচ্ছদ : শুভশ্রী দাস 

মুদ্রিত মূল্য : ২৫০ টাকা। 

#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।