অনন্যবর্তী।। দুর্লভ সূত্রধর।।
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দুর্লভ সূত্রধরের উপন্যাস ' অনন্যবর্তী ' পড়ে লিখেছেন সুমনা চৌধুরী। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।
.............................................
লকডাউন পিরিয়ডে মিহির সেনগুপ্তের 'সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম' বাদেও, আরেকটি অসামান্য স্মৃতিগদ্য পড়েছিলাম, 'আহাম্মকের খুদকুড়ো'। দুর্লভ সূত্রধরের লেখা। সমকালীন লেখক-লেখিকাদের ভীড়ে দুর্লভ সূত্রধরকে তখনই অবশ্যপাঠ্য হিসেবে আলাদা করে রেখেছিলাম। তাতে যে বিন্দুমাত্র কোনো ভুল ছিলো না তার প্রমাণ তাঁর পরবর্তী উপন্যাস 'অনন্যবর্তী'। সাম্প্রতিককালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের তালিকায় প্রথম সারির দিকে নির্দ্বিধায় যাকে রাখা যায়। কেন রাখা যায় অথবা দুর্লভ সূত্রধর বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কেন অবশ্যপাঠ্য—তারই খানিকটা আলোচনা-পর্যালোচনা পরবর্তী অংশে থাকবে। অনন্যবর্তী উপন্যাসের প্রেক্ষিতেই।
"ঘরেও নহে, পারেও নহে
যে জন আছে মাঝখানে,...'
সেই তাঁদের
প্রতিদিনের বেদনাকে
সেই তাঁদের
জেগে-ওঠা ভোরগুলোকে"
—উপন্যাসটির উৎসর্গপত্রে লেখা। এই কয়েকটি লাইনের মর্মবস্তু উপলব্ধির প্রয়াস করতে করতেই পাতা উল্টানো বইটির। শোভন, তনয়, তরণী, তপেশ, মনোজ, টুকু, কাজু, শিবু—একদল ছেলে-মেয়ে। যাদের জীবনে কোনো ম্যাজিক নেই। কিন্তু তাদের যাপন, বেড়ে ওঠা, জীবনবোধ, হতাশা-আশা, জীবনের নানা ভাঙচুর পেরোতে পেরোতে মাথা তুলে মতাদর্শনিষ্ঠ চলমানতার ম্যাজিক-ই গোটা উপন্যাসটির মূল উপজীব্য। সে গল্পের পাশাপাশি সমান্তরাল ভাবে বয়ে গেছে আরেক গল্পও। শচীপ্রসাদ, সতীশচন্দ্র, ফণিভূষণ, নীরদ—জীবনের পড়ন্ত আলোর দিকে যেতে যেতেও, মধ্যবিত্ত যাপনের বিপন্নতা, সংসারের স্বার্থ-পরার্থের নানা বোঝাপড়া পেরিয়ে এসেও, যাঁদের জীবন থেকে স্বপ্ন দেখার অমল চোখটি হারিয়ে যায়নি। বিযুক্তির স্বেদ আর বেদনার অনুভব তাঁদের বেঁধে দিয়েছে একে অন্যের সাথে। শুধু কী তাঁদের? চাষী আখে, জাহান চাচা, আনোয়ার চাচি, ঊষা-মা, স্বর্ণঠাকুর—কত যে মানুষ! বিচিত্র এক মায়াবী আলোয় বাঁধা হয়ে আছে সবাই। উপন্যাসটির শেষের দিকে আসতে আসতে আমরা দেখতে পাবো শচীপ্রসাদদের সেই স্বপ্নের-ই উড়ান। এক যৌথ কমিউন। শটিডাঙা। কিন্তু সেসব তো আরোও পরে। তারও আগে বয়ে চলা কুন্তী নদী ধরে রেখেছে আরো কত দৃশ্য..! আরোও কত যে আখ্যান!
অবনদার নাইট স্কুল, কৃষ্ণাদি, পিপু, কুসুমিতা, তরুবালা—এরাও তো রয়েছেন। রয়েছে আনন্দ দাদা আর আনন্দীদিদি—মফস্বলের কুৎসাপ্রিয় মানুষদের কৌতুহল ভেসে বেড়ায় যাদের ঘিরে, তারাই এই ছেলে-মেয়ের দলটির তাপিত জীবনে একটুকরো স্নেহ এঁকে দেন। আনন্দদাদা বলতে পারেন—'যখন তখন, যেখানে সেখানে মাথা নীচু করবে না বাবারা। আমি সামান্যি মানুষ। আমি কে, কেমন মানুষ, তোমাদের পেন্নামের যুগ্যি কী-না, তা না জেনে মাথা নীচু করবে কেনে?'
আর 'মেগে-খাওয়া অন্নই তাঁর কাছে ঈশ্বর' বলা আনন্দীদিদির সাথে কখন যেন রবীন্দ্রনাথের বোষ্টমী আনন্দীকে মিলিয়ে ফেলে ছেলে-মেয়ের দলটি। সে মোকামের ছায়াঘন প্রাঙ্গনে ফল, নাড়ু, বাদাম-তক্তির সাথে জমে উঠে তাদের কোনো কোনো বিকেলের সান্ধ্যআড্ডা। তরণীর ভেন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারে মাকে নিয়ে আলাদা করে দেওয়া তরণীর সংসারের 'বিকল্প ব্যবস্থা'র পরিকল্পনাস্থলও।
অবনদার নাইট স্কুলে মতাদর্শের জন্য ছেলে-মেয়ের দলটির শ্রমদান করার মাঝে এসে দাঁড়ায় অনুচ্চকিত রাজনীতি। শুধু নাইট স্কুলের প্রেক্ষিতেই নয়, গোটা উপন্যাসটি জুড়েই। এবং এখানেই সমকালীন সাহিত্যিকদের ভীড়ের বিপরীতে দাঁড়ানো দুর্লভ আক্ষরিক অর্থেই 'দুর্লভ' হয়ে উঠেন। একটা নুয়ে পড়া মূল্যবোধহীন সমাজে মতাদর্শনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিনির্মাণের সুরটি ভনিতাবিহীন স্পষ্টতায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
বাবা-ছেলের কথোপকথনের মাঝে উপন্যাসটিতে উঠে আসে মতাদর্শের প্রতি হুজুগেপনার বিপরীতে দায়বদ্ধতা এবং লক্ষ্যে স্থির থেকে চলমানতার পথ-নির্দেশ---
'মনে রেখো যে-কোনো আদর্শই শুনতে ভালো, কিন্তু তার প্রয়োগ-পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং কষ্টসাধ্য এক প্রক্রিয়া।'
ক্ষয়ে যাওয়া, পচে যাওয়া, হাতকচলানো মানসিকতার পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশে দাঁড়িয়ে দুর্লভ স্পষ্ট ভাষায় বলে যেতে পারেন—
'আমাদের মতাদর্শ আসলে কর্মের পথ-নির্দেশিকা।'
অবনদার মতাদর্শহীন কর্মকান্ডে, কৃষ্ণাদির প্রতি তার ব্যবহারে, বিক্ষুব্ধ ছেলে-মেয়ের দলটির বেশীরভাগ সদস্য যখন নাইট স্কুলে যাওয়া বন্ধ করতে চায়, তখন শোভনের মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয়—
'কারোর মুখ চেয়ে তো আর নাইট স্কুলে যাই না, যাই ঐ যে কী বলে—মতাদর্শের জন্য। কারোর জন্য তাই ছাড়বোও না।'
টুকু বাধা দিতে চাইলে শোভন আরোও বলে—
'আমি তনয়কে বোঝাবো, সে তুমি ভেবো না। দেখছো না, সবটা তো আর সলিল সমুদ্র নয়। চারদিকে এত যে জরুরী আইন, নানা ধরণের কানুন, রাষ্ট্রশক্তির দাপাদাপি, বিরোধীদের পাইকারি ধরপাকড়—তাতে কি মানুষের আন্দোলন থেমে গেছে। প্রতিদিনই তো কোথাও-না-কোথাও মিছিল-মিটিং-আন্দোলন-প্রতিবাদ হচ্ছে। সুতরাং কাছাকাছির ছোটোমাপের ঘটনা দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নিও না। কোনোকিছু নিয়ে ভেবেই নিজেকে কষ্ট দিও না।'
এসময়ের সবচেয়ে জরুরী রাজনৈতিক লাইনটিও এখানে নির্মাণ করে দিয়ে যান দুর্লভ।
গোটা উপন্যাসটিতে অন্যান্য মানবিক অনুভূতির সাথে এসেছে প্রেমও। সে প্রেম মানুষ-মানুষীর জৈবিক চাহিদা আর স্বার্থ-পরার্থের বোঝাপড়ার মাঝে আটকানো প্রেম নয়। বরং তার সুরটির মাঝে কখন যেন ডুমাটোলার দাদুর সেই উক্তিটিই পরম সত্য হয়ে ধরা দেয়—
'হমারা জীবন সির্ফ হমারা অকেলা নহি হ্যায়, সবারটা মিলিয়ে তবে আমাদের এক একটা জীবন। তোমার জমানো খুদকুড়োর মধ্যে দেখবে আছে কত লোকের জীবনের দিনরাত, কিতনে লোগো কা জীবিত রহনা। কতজনের কত কথার কত শব্দ, দিল কী বাত, কতজনের কত গান, বুদ্ধি কী কিতনা সুগন্ধ, বিচারো কা হীরা-জহরৎ। সোচো দাদুভাই, ইয়ে কেবল আপকি চিজেঁ নহি হ্যায়---বলতে গেলে তোমারই নয়।…'
তাই কুন্তীর পারে শোভন-টুকুর সবচেয়ে নিবিড় প্রেমের সংলাপটি হয়ে উঠে—
'কোনো কিছু নিয়েই কষ্ট পেও না, খুব পরিকল্পনা করে কিছু করার সুযোগ তো আমাদের মতো পরিবারের ছেলেমেয়েদের নেই টুকু। কিন্তু যা করব, তোমাকে সঙ্গে নিয়েই করবো।'
শোভনের দেওয়া প্রেমপত্রের ছত্রে ছত্রেও তাই উঠে আসে দিনবদলের স্বপ্ন। সবাই মিলে। সবটা মিলে। শোভন লিখে—
'.......তুমি তো জানো টুকু, আমি কী স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নে বাড়ি-গাড়ি নেই, আছে সকলের হাসি-আনন্দ গানে ভরা পৃথিবীর স্বপ্ন।
বদলানোর কাজটা কিন্তু সহজ নয়।
আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সেটা হবে না? নিশ্চয়ই হবে।'
চিঠির উত্তরে টুকুর গলায়ও সেই একই স্বপ্নভূবনের সুর—
'এইচ. এস.-এ বাজে রেজাল্ট যদি করো তাহলে এসব কাজে বাধা দেবো। সবাই মিলে চেষ্টা করব। কিন্তু সেটা করতে হবে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে। বাড়িতে, ঘরের মধ্যে, পাড়ায় সব অসমতার চটজলদি প্রতিকার হয়? আমরা নিশ্চয়ই সুখী সুন্দর পৃথিবীর জন্য কাজ করবো, একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, নিজেকে গড়ে তুলে, চারপাশটাকেও গড়ে তুলব আমরা।'
—আর শচীপ্রসাদ নিজের আত্মজাকে লেখা এক সদ্য-তরুণের চিঠিপত্র হাতে ধরে রাগ করবেন কী, স্বপ্নিল এক ঘোরের মধ্যে পড়ে যান। তিনি জানেন শোভনের স্বপ্ন এই সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনৈতিক স্বপ্নের জগত আর তার বহুধাবিস্তৃত প্রয়োগগত কর্মকান্ডের মাঝে অবিকৃতভাবে সফল হবে না। তবু দুটি সদ্য তরুণ-তরুণীর এই উচ্চাশাময় প্রেম বহুকাল পর তাকেও স্বপ্নাদিষ্ট করে দিয়ে যায়। প্রেমপত্র উদ্ধারের পর কুসুমিতার রাগেরও কোনো সঙ্গত কারণ তিনি খুঁজে পান না। কুন্তীর পারে বৈকালিক ভ্রমণে তাই তিনি কুসুমিতাকে বোঝান—
'জীবনে চলতে চলতেই নিজের ভালো-মন্দ বুঝবে টুকু। পরের ভালো বুঝতে বুঝতেই নিজের ভালো বোঝাটা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। আর যদি ভুলই করে, দুঃখ পাবে; দুঃখের মধ্য দিয়েই পথ করে নেবে জীবনের। কুসুমিতা, তোমার মেয়ে ভয়ানক বুদ্ধিমতি, স্বপ্ন-দেখা আলাভোলা ছেলে শোভনকে ও-ই চালিয়ে নিয়ে যাবে।'
দুই প্রজন্মের সমান্তরালভাবে বয়ে চলা গল্পের মাঝে কত যে চরিত্র, নিজের নিজের বোধ আর ভাষ্যে উপস্থিত হয়েছে। কৃষ্ণাদির বাড়িতে এক বিকেলে শোভন যাওয়ার পর, কৃষ্ণাদির বাবা নীরদ মেসোমশাই বাগানে কাজ করতে করতে শোভনের কথার উত্তরে যখন বলেন—
'সব ভালো কাজ-ই খাটনির কাজ, কিংবা এমনও বলতে পারো যে-কোনো কাজই ভালো করে করতে গেলে খাটনি আছে। ভালো করে, বড়ো আর সুন্দর গোলাপ ফোটাতে গেলে প্রতিদিন যত্ন করতে হবে, গোড়া পরিষ্কার করে দিতে হবে, জল দিতে হবে, ঠিক ঠিক সময়ে সার দিতে হবে, শুকনো ডালগুলো কাটিং করে দিতে হবে—আরও কত কী। ফুল ফোটাতে হলে যত্ন করতে হবে। কিন্তু দেখো, আগাছা অমনিই হয়, যত্ন লাগে না।'
প্রতিউত্তরে শোভন বলে উঠে—
"আমাদের বীরেনবাবু স্যারও বলেন, মানুষের যত্ন না করলে মানুষও আগাছারই মতো ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়।"
—আর এখানেই অলক্ষ্যে মোকছেদ যেন মিহিরের 'সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম' থেকে মূর্ত হয়ে উঠে আসে—'খালি একই চিজ আছে সংসারে, যা লইয়া হ্যার কারবার, তা অইলে মানুষ,—মানুষরতন, এ্যার বেশি রতন, ধন, দৌলত আর তো কিছু হ্যার পেরোজন নাই। এই সাত রাজার ধন এক মাণিক্য,—এ্যারে লইয়াই মোর লালন—লালন শাহ, পাঞ্জ—পাঞ্জশাহ, রাজা।"
মফস্বলীয় পটভূমিতে উঠে আসা এই উপন্যাসটির মূল নির্যাসটিও তাই। বাউল-ফকিরের ভাষায় বলতে গেলে—
'মানুষরতন, কর তারে যতন—যাহা তোমার প্রাণে যায়।'
উপন্যাসের শুরু শোভনের উড়োজাহাজের গায়ে সেঁটে আসা স্বপ্নে। সেই স্বপ্ন উড়োজাহাজে উড়তে উড়তে এসে শেষ হয় এক যৌথ কমিউনের স্বপ্নভূবনে।
গোটা উপন্যাসে আর যা মন কাড়ে, দুর্লভের ভাষার টান। নির্মেদ, টান টান, স্পষ্ট। ভনিতাহীন সৎ উচ্চারণ। ছোটো-বড়ো প্রতিটা চরিত্র সমান গুরুত্বে, যত্নে, দক্ষতায় ফুটিয়ে তোলা। মতাদর্শনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিনির্মাণ—নষ্ট রাজনৈতিক পরিমন্ডলে। আবহে। দুই প্রজন্মের আলাদা টানাপোড়েন—অথচ পাঠকের একবারও হোঁচট খাওয়ার পরিসর নেই। আরো যে বিষয়টি উল্লেখ না করলেই নয়, সেটা হলো গোটা উপন্যাসটিতে অথবা তাঁর আগেরও যে স্মৃতিগদ্য, আহাম্মকের খুদকুড়ো, সেখানেও লক্ষ্য করা যায়, গোটা লেখায় চমক-ঠমক দেওয়া লাইন অথবা ক্যাচি লাইন যাকে বলে-সেরকম প্রতিটা ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করার মতোন তেমন কিছু থাকে না। বরং শুরু থেকে শেষ গোটা আখ্যানটিই এক বহমান বাক্যধারায়, ঘটনা-পরিঘটনায় জড়িয়ে বয়ে চলে। একে অন্যের সাথে সংপৃক্ত হয়ে। বলতে হলে তাই গোটা আখ্যানটিই তুলে ধরতে হয়। দুর্লভ সূত্রধরের গদ্যের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অসামান্য দিক হলো, গোটা আখ্যানটি আপন গতিপ্রক্রিয়ায় বয়ে চলতে চলতে পাঠককেও যেন এক আত্মবীক্ষার পথে ঠেলে দেয়।
সমাজ-প্রতিবেশের নানা বিষমতা মেলাতে মেলাতে একসাথে বেঁচে থাকে একদল মানুষ। যাদের জীবনে কোনো ম্যাজিক নেই। অথচ তাদের যাপন-ই আসলে আস্ত এক ম্যাজিক। নষ্ট এক সময়ে। আর ঠিক এ জায়গায় এসেই অনন্যবর্তী পাঠকের কাছে অনন্যসাধারণ হয়ে উঠে।
অনন্যবর্তী
দুর্লভ সূত্রধর
প্রকাশক : সুপ্রকাশ
মুদ্রিত মূল্য : ৩২০ টাকা
Comments
Post a Comment