সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম। মিহির সেনগুপ্ত

নাম মোকছেদ আলি। বলে ইণ্ডিয়াথে আলেন বুঝি? কনে যাবেন? সব শুনে বলে, সে তো মেলা দূর। রাস্তায় ভালো খাবার জাগা নাই। বলেন তো দিতি কই। পরামর্শটা খারাপ না, আবার বৃষ্টিও ছাই ধরছে না। রাজি হতে মোকছেদ তার কর্মচারীদের হাঁকডাক করে। নদীর পারের হোটেল। তায় এ আবার এ দেশ ইলিশকুমারীর বাপের বাড়ি, নদী থেকে উঠে সোজা কড়াইয়ে। দেশটা অবশ্য আমার আর আমার গিন্নিরও বাপের বাড়ি। তাই সামনে সাজিয়ে রাখা নানা জাতের মাছের মধ্যে ইলিশই নজর কাড়ে আগে। আহা! কী আকার, কী রূপ! বড় কাঁধ উঁচু পরাতের মধ্যে রাঙা টুকটুক ঝোলে সাঁতার কাটছেন রাজকন্যে। গিন্নির চোখে চোখ পড়তে সেখানে প্রথম প্রেমের আকুতি দেখি। ইলিশ ছাড়াও আছে আরও নানা জাতের মৎস্যকন্যারা। কিন্তু ইলিশ হলো প্রকৃতই রাজকন্যা। ওই ইলিশ যদি রূপসার প্যাডের ছাও না হয়, তবে আমি বাঙালবাচ্চা, ভাটিকুমার নই।
মোকছেদ ধরে ফেলে। সে এতক্ষণ বোধ করি আমাকে আর আমার পত্নীকে নজর করছিল। বলে, কী দেখতিছেন? উনি ওই ওখানদে উঠিছেন আর সোজা এখেনের রসুইঘরে আইসে সেধুয়েছেন, বাজার ঘুইরে আসেননি। বইসে পড়েন। আরে হেই সুমুন্দির পুতেরা--- বাবুগো মায়েগো খাওনের জাগা করতি পার না?

মোকছেদ বেশ চোটপাটের হোটেল মালিক। হোটেলের ঠাঁটবাট কিছু নেই। তবে বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। উপরে টালির চালা, পাশে দরমার বেড়া। লম্বা বেঞ্চি, একটা উঁচু একটা নীচু। নীচুটায় বসো, উপরটায় খাও। বেশ সাদা-সাপটা ব্যাপার। খেতে খেতে গল্প হয় মোকছেদের সঙ্গে। সেই বলে বেশি। আমরা খাওয়ায় এত ব্যস্ত যে, দু-একটা হুঁ হাঁ করা ছাড়া বেশি কথা বলার ফুরসৎ পাই না।

মোকছেদ জিজ্ঞেস করে, আপনারা কি আসলে এপারের না ওপারের? জানালাম, আমাদের এখন আর এপার ওপার বলে কিছু নেই। এখন শুধু ভেসে যাওয়াই সার। এ-রকম ভাসা ভাসা জবাব দেওয়ার কারণ হয়তো আছে, কিন্তু তা কি মোকছেদকে বলা উচিত হলো? সে আমাদের খিদের সময় মুখে অন্ন দিল। কিন্তু সে জবর ধরতাই দেয় কথাটির। বলে, কী কলেন, কী কলেন? ভাসাই সার। এপার ওপার নাই। আহা! মুইও তো এরহমডা ভাবি। বড় নিয্যস সত্য কতা ভাইজান। মোর গো আর এপার ওপার কী? ভাসাই সার।

সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম
মিহির সেনগুপ্ত

প্রচ্ছদ : তিস্তান 
মুদ্রিত মূল্য : ৪৮০ টাকা 
#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।