দীনেন্দ্রকুমার রায় লিখিত ‘সেকালের সমাজচিত্র’ (সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা) পড়ে লিখেছেন মানস শেঠ
সুপ্রকাশ প্রকাশিত দীনেন্দ্রকুমার রায় লিখিত ‘সেকালের সমাজচিত্র’ (সম্পাদনাঃ শতঞ্জীব রাহা) পড়ে লিখেছেন মানস শেঠ।
........................................................
গদ্য বোধহয় এমনটা হওয়া উচিত,যেটা ভারাক্রান্ত নিজে না হয়ে মনকে করে তুলবে ভারাক্রান্ত।চোখকে নিয়ে সে পাড়ি জমাবে সেই ফেলে আসা পথের রাঙা ধুলো মাখানো পথে।বেশ কিছুমাস আগে "সেকালের সমাজচিত্র"বইটি পড়লেও নিজের অনুভূতি আর ভাগ করে দেবার ও নেবার সুযোগ হয়নি।
দীনেন্দ্রকুমার রায় শুধু সাহিত্যিক এই বন্ধনীতে না রেখে,তাকে যদি কথাচিত্রকর বলি তাহলে বোধহয় যোগ্য মর্যাদা পাবে।সমাজচিত্র কথাটা যতখানি সহজ,ততখানি বোধহয় প্রবেশে সহজ নয়।যা দেখি,তাই কি লিখে দেওয়া যায়!না বোধহয়।সে যাই হোক,তর্কের কথা ছেড়ে যদি এই বইটির অধ্যায়ে চোখ রাখি তাহলে বেশ কিছু টুকরো টুকরো চিত্র ফ্রেমে বাঁধানো যাবে।
'প্রজাপতির নির্বন্ধ'তে হরিমোহন মজুমদারের হাস্যরস।'নব বৈশাখের একদিন'এ 'মেছুড়ে মাস্টার'এর কান্ডকারখানা বেশ মজার।বিভিন্ন শিরোনামগুলো বেশ মজার,'পল্লীগ্রামের রথতলায়','গ্রাম্যদলাদলি'তে প্রকাশ হয়ে যায় গ্রামের মানুষদের ভেতরে থাকা অদ্ভুত কিছু রসিক দৃষ্টিভঙ্গি।শুধু তাই নয়, কৃষ্ণচন্দ্রপুরের সমৃদ্ধ গ্রামে 'শ্রীপঞ্চমীর পল্লী'কেমন হয় এবং তার যে প্রতি পরতে পরতে বর্ণনার মাধুর্যতা সেটি আমাকে মুগ্ধ করে।এই প্রসঙ্গেই আসে হাড়ি সম্প্রদায়ের কথা;'বলরামের দোল'অংশে হাড়ি সম্প্রদায়ের একটা ইতিহাস সমান্তরালে হাঁটে।'পিটুনি মাস্টার'অংশটির মধ্যে শিক্ষকতার এমন এক অংশ যা মেদুরতায় আচ্ছন্ন করে।
ওই যে বললাম,সমাজচিত্র,সবকালেই একটা করে সমাজচিত্র লুকিয়ে থাকে।অনেক গলিঘুঁজিতে লুকিয়ে থাকে কিছু কোলাজ যা হৃদয়কে পৌঁছে দেয় মায়াখনিজের কাছাকাছি।দীনেন্দ্রকুমারের বলিষ্ঠ কলম নিয়ে আমার বলার সাহস নেই,একটা নস্টালজিয়া ও অজানা ইতিহাস সুন্দর গদ্যের মোড়কে এসে দাঁড়িয়েছে আমার কাছে।এর সঙ্গে শুধুই রসিকতার গদ্য আছে,এমন কিন্তু নয়।পড়তে পড়তে একাকীত্বও যেন গ্রাস করেছে,তাই তিনি লিখতে পারেন,-
"আমি নিঃশব্দে একাকী গ্রামের দিকে অগ্রসর হইলাম।আজও এইভাবে এই দীর্ঘ জীবনের পথে একাকী অগ্রসর হইয়াছি।আমার চতুর্দিকে এক নূতন জগৎ প্রসারিত, তাহার সুখ-দুঃখ,হর্ষ-কল্লোলের সহিত আমার পরিচয় নাই।আমার আত্মীয়,বন্ধু,সমবয়স্ক সঙ্গীরা প্রায় সকলেই একে একে চলিয়া গিয়াছে।তাই মনে হইতেছে, আমি নিতান্ত অসহায়,একাকী; আজ এই জীবন-সন্ধ্যায় একাকী পথের ধারে নিষ্প্রভ নেত্রের ক্ষীণ দৃষ্টি চতুর্দিকে প্রসারিত করিয়া ভাবিতেছি,কবে-আর কতদিন পরে আমার এই দীর্ঘযাত্রার অবসান হইবে।"
এই অতিমারী পেরিয়েও আমরাও ভাবি কবে এই দুঃসময়ের অবসান হইবে।
Comments
Post a Comment