রাস্তার শুরু। জয়া মিত্র
দুর্গাপুজোর একটু পরে, কালীপুজো হয়নি তখনও। শীত পড়ে গেছে। কয়েকদিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল সারাদিন, রাত্রিবেলাতেও। সে আর তিন্নি যে ঘরে ঘুমোয়, তার পায়ের দিকের দরজা খুললে রাত্রিবেলা কীরকম যে দেখাচ্ছিল! মাঝখানে সবকিছু আবছা, অন্ধকার আর দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা শাদামত...যেন জ্যোৎস্নাটাই জমে আছে। মা আর ওপরের টুকুপিসি মুকুপিসিরা সন্ধ্যেবেলা ওই দরজাটার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দেখছিল। সে নিজে তো কোন কথাও বলে নি। তার কেমন একটা লাগছিল, যেন এটা তাদের রোজ দেখতে পাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘাই নয়। কিছু বলতে পারছিল না, খালি গলার কাছে কীরকম একটা ব্যথা করছিল। মায়ের শোবার ঘরের খাটে মা আর বুবুল ঘুমোয়। মা কোনদিন গায়ের কাছাকাছি তাদের নিয়ে ঘুমোয় না। তারা দুইবোন পাশের ছোটঘরের খাটে শোয়। বাবা এলে বাবা ওখানে শোন তখন কয়েকদিন আবার তারা ঘুমোয় বসার ঘরের ছোট চৌকিতে। তাদের ওই শোবার ঘরটার জানলাটা খুব বড় আর পুরোটা কাচ দেওয়া বলে তার ভারি ভালো লাগে। শীতে কিংবা বর্ষাকালে যখন বেশি বেরোন যায় না, তখন ওইখানে বসে বাইরেটা দেখা যায়। ওখানে একটা খুব ভারী গদিওয়ালা চেয়ার আছে, সেটার একটা মোটে মোটকামত পা, বসে চেয়ারটা এদিকওদিক ঘোরানো যায়। সেটায় বসে বসেই সে বাইরে সবকিছু দেখে। সেই সবকিছুর মধ্যে কত রকমের জিনিস যে আছে! উল্টোদিকে ভুটানের পাহাড়, তার সামনে দুটো পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বেরিয়ে আসা বালাসন নদী। ঘরের ভেতর থেকে নদীটার গড়িয়ে পড়াটা দেখা যায় না অবশ্য, যেমন দেখা যায় না মন্টিভিয়ট রোডও। কিন্তু আকাশ, কতরকমের পাখি, দূরে পাহাড়ের গায়ে গাছপালা আর খুব ভালো করে দেখা যায় জানলার সামনে নিজেদের বাগানটা। শীতের সময় যখন মাটি একদম শক্ত, ডালিয়াটালিয়া কিচ্ছু নেই, গাছগুলো পর্যন্ত একেবারে শুকনো হয়ে ওই শক্ত মাটিতে ঢুকে পড়েছে, তখন বাগানে বেরিয়ে আসে খালি কতগুলো পাউডার ফুলের গাছ।
রাস্তার শুরু
জয়া মিত্র
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : মেখলা ভট্টাচার্য
#সুপ্রকাশ
Comments
Post a Comment