অনন্যবর্তী। দুর্লভ সূত্রধর

দশ মিনিটের মধ্যে আমরা কুন্তীর ঘাটে।

ধু-ধু দুপুর। খেয়াঘাটে একজনও যাত্রী নেই। আবার যাত্রী হবে বেলা তিনটে থেকে। তখন ওপার থেকে দুধ বেচতে আসা ঘোষমশাইরা দুধের খালি ড্রাম, ক্যান, টিন, বালতি নিয়ে ঘাটে আসে। দুধের মধ্যে সকালে ভাসানো খড় আর নদীর ঘাটের মাটি দিয়ে পাত্রগুলো মেজে নদীর জলে ধুয়ে তেল ভাব ছাড়িয়ে, তারপর কোনো গৃহস্থ বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা সরষের তেল মেখে নদীতে ডুব দিয়ে সাইকেল সুদ্ধু খালি পাত্রসহ ওপারে ফিরে যাবে। কেউ কেউ ওপারের খেজুরতলায় গিয়ে 'তালের অস' খেয়ে 'নিতি নিতি যাও গো আধে.....' গাইতে গাইতে অলস-মন্থরভাবে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরবে। খেয়া নৌকাটা ঘাটের একপাশে বাঁধা। কেউ কোথাও নেই। কুন্তী ছোটো নদী। ওপারে তিন মাইলের মধ্যে বসতি নেই। তিন মাইল দূরে গোয়ালাদের গ্রাম, ঈশ্বরচন্দ্রপুর। নদীর ধার থেকে ঈশ্বরচন্দ্রপুরের আগে পর্যন্ত মায়ের আঁচলের মতো বিছানো ফসলের খেত। এপার থেকেই ছোলা, বেগুন, টম্যাটোর খেত নজরে আসছে।

সাইকেলগুলো রাইকুমার দাদার টোঙের বাঁশে হেলান দিয়ে রেখে তনয় নীচের ঠোঁট দুটো টেনে ধরে শিস দিতেই খেয়া মাঝির টোঙটা থেকে মাঝি রাইকুমার দাদার চোদ্দ বছরের ছেলে কাল্লু বেরিয়ে এল। ঢাল বেয়ে বেয়ে দ্রুত নেমে এসে মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থাকা আমাদের কাছে এসে পৌঁছে, আরও দ্রুত সে জলের কাছাকাছি যায় তারপর নৌকায় রশিটা লগি থেকে ছাড়িয়ে নৌকায় চড়ে বসে।

নৌকার মাচানের ওপর শুইয়ে রাখা লগিটা হাতে করে ময়লা হাফপ্যান্ট পরা ছেলেটা নৌকার মাথায় গিয়ে দাঁড়ায়। লগিটা নামিয়ে দেয় জলে। পাড়ের কাছে অগভীর জলে লগিটা মাটি পায়।

আমরা অতি দ্রুত উঠে বসি নৌকোর পেটে—আমি, তনয়, শিশু, মনোজ, তপেশ, তরণী।

লগির ঠেলায় আদিক্যালের পুরোনো খেয়া নৌকো জলে ভাসে। তনয় গিয়ে হাল ধরে বসে।

কুন্তীর জল খুব স্বচ্ছ, পরিষ্কার। জলের ওপরে ছাতার মতো ছেয়ে থাকা আকাশটার থেকেও। আকাশের বিম্বনও জলের স্বচ্ছতাকে আড়াল করতে পারে না। জলের তলার উদ্ভিদ, শ্যাওলা স্পষ্ট দেখা যায়, কোথাও কোথাও চিকচিকে বালি।

এতক্ষণে আমরা আমাদের কথার মধ্যে ফিরি।

আমরা সবাই পাশ করেছি। শিবু, মনোজ ভালোভাবে, তপেশ কানের কাছ দিয়ে, তরণী বিবেচনায় —অন কনসিডারেশন।

তবু সবাই পাশ। তার মধ্যে আবার আমি আর তনয় স্ট্যাণ্ড করেছি। আনন্দে কম কম কথা বলছি আমরা।



অনন্যবর্তী
দুর্লভ সূত্রধর 

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: সৌজন্য চক্রবর্তী
মুদ্রিত মূল্য: ৩২০ টাকা 

#সুপ্রকাশ 

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।