নির্মুখোশ শারদ ১৪২৯

ঝাঁ চকচকে সপ্রতিভ চারচাকা গাড়ি নিয়ে আলাদা কোনও মুগ্ধতা লেখার নেই। অপ্রীতিও নেই অবশ্য। লেখাদের বাড়িতে গাড়ি ছিল না কোনও। তবে সেটা কোনও বলিষ্ঠ যুক্তি নয়। লেখাদের বাড়িতে প্রসাধন ব্যবহারেরও বাড়বাড়ন্ত ছিল না কোনও কালে তবু সেসব বিষয়ে সম্যক জ্ঞান সে আহরণ করে নিয়েছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। চারচাকা গাড়ি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার কোনওরকম তাগিদ সে মনের ভেতর থেকে পায়নি এতদিন। কিন্তু আজ চোখের সামনে সাত সাতটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে থমকে গেল। সাতটিই তাদের পারিবারিক। লাল, নীল, সাদা, কালো, সোনালি... একেবারে শেষেরটি গাঢ় সবুজ। লেখাকে জন্মদিনে উপহার দিয়েছে প্রত্যুষ। লেখা বারান্দা থেকে দেখল, সকালের সোনালি রোদে আরও ঝকঝকে হয়ে উঠেছে প্রত্যুষের উপহার। একবার তাকালে চোখ ফেরানো দুষ্কর।  মসৃণ ধাতব শরীরটাকে নরম রোদ দিয়ে ছুঁতে চাইছে সূর্য।  ছুঁয়েই পিছলে যাচ্ছে। 
লেখার বাবা কারখানায় যেতেন বাসে। ঘন নীল, ধুলোপড়া শরীরে  সাদা আয়তকার একটি রঙের ফালি। চওড়া ফিতের মতো। সেখানে গোটা গোটা ইংরেজি হরফে লেখা থাকত কোম্পানির নাম।  ছাতিম ফুলের গন্ধ মাখা বিকেল হোক বা শিশির ভেজা সকাল,  লেখার বাবাকে কোয়াটারের কাছাকাছি পৌঁছে দিত সেই মলিন, ঘড়ঘড়ে শব্দ তোলা বাস। মর্ণিং শিফট, নাইট শিফট আর বি শিফট। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কারখানায় যেতেন বাবা। ধোয়াকাচা, পরিপাটি পোশাক। পকেটে মায়ের হাতে এমব্রয়ডারি করা সাদা রুমাল, মানিব্যাগ আর প্লাস্টিকের ছোট্ট চিরুনি।  
 কোয়াটার, যাকে অনেক বড় অবধি সে নিজেদের বাড়ি ভাবত, ছিল পাড়ার একেবারে প্রথম আবাসটি। গেটের এপার থেকে বড় রাস্তার দিকে তাকালে মাঝে মাঝে সাদা অ্যাম্বাস্যাডর দেখা যেত দু একটা। সেই ছিল ওর চেনা গাড়ি। এছাড়া রমেনকাকুদের কোয়াটারের সামনে বাঁশের পোক্ত বেড়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকত যে সবুজ, চারচাকা যান, সে ছিল আরেক গাড়ি।  

যে জন আছে মাঝখানে
অন্বেষা রায়

আসছে নির্মুখোশ শারদ ১৪২৯

#সুপ্রকাশ

Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।