শৈব্যা কথন। জয়া মিত্র।

"রাত্রির শেষ যাম অতিক্রান্ত হল প্রায়। অন্ধকার তরল হয়েছে। আকাশ ক্রমশ অতি বৃহৎ মৎস্যের উদরের মতো রক্তাভ পাণ্ডুর হয়ে আসে। বহু বৎসর এই সন্ধিপ্রকাশকালে অব্জাজননীর ঊষাবন্দনায় প্রাসাদশীর্ষ নন্দিত হয়েছে।

যত রাত্রিশেষ অতিক্রান্ত হয়েছে, আরও যত রাত্রিশেষ উদিত হবে তাদেরই অন্তরীক্ষ পথে চিরন্তনীদের প্রথমা এই ঊষা আসছেন। বিকশিত হতে হতে জীবজগৎকে তিনি আগ্রত করছেন বোধে। মৃত যে, আহ্বান করছেন তাকেও। অন্ধকার মোচন করে জ্যোর্তিময়ী এই আকাশদুহিতা উঠে আসছেন আজ। আগামী সমস্ত দিনই অজরা অমৃতা, ইনি নিজেকে চালিত করে নিয়ে যাবেন।

সে কণ্ঠ স্তব্ধ হয়েছে তাও বহু বৎসর হল আজ। আবার আমার অন্তঃস্থল মন্থিত করে আদি তেজের প্রতি, আলোকের প্রতি সেই বন্দনা জেগে ওঠে। এক নারীর হৃদয় থেকে বেদনাধারায় তাঁরই উত্তরকন্যা অন্য নারীর হৃদয় প্লাবিত হয় আলোর স্তরে, যে আলো অন্ধকার থেকে মুক্তি। মনে হয় এত দীর্ঘকাল এই তীব্র দাহে দগ্ধ হয়ে আলো দিয়ে চলেছেন, তবে কি নারী নন সূর্য ? কে বলেছে তাঁকে পুরুষরূপ ?

আমার একটি দিনের শুরু হচ্ছে রাজপুরীতে। বিধিনিয়মে।

আমার অন্য দিনের শুরু হচ্ছে রান্ধুনীর পল্লীতে, গোপালকের কুটিরে— পরিশ্রমে, স্নেহে, উষ্ণতায়।
 
বেদনার তীক্ষ্ণ বজ্রপাতে সর্বমিথ্যাবন্ধন ছিন্ন করে দেওয়া হে জীবন, বদ্ধতার, শোষণের মিথ্যাময় আরও একটি দিন শুরু করার আগে শৈব্যা তোমাকে প্রণতি জানায়।"


শৈব্যা কথন
জয়া মিত্র

প্রচ্ছদ: মেখলা ভট্টাচার্য
মুদ্রিত মূল্য: ১৬০ টাকা
#সুপ্রকাশ


Comments

Popular posts from this blog

এক যে ছিল গ্রাম।। অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামী।। সুপ্রকাশ।।

চেতনার পথ জুড়ে শুয়ে আছে।। অনির্বাণ সিসিফাস ভট্টাচার্য।। সুপ্রকাশ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

প্রতিযাত্রা।। দুর্লভ সূত্রধর।। সুপ্রকাশ।।