মরুনির্ঝর।। সূর্যনাথ ভট্টাচার্য।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।


সুপ্রকাশ প্রকাশিত সূর্যনাথ ভট্টাচার্যের উপন্যাস 'মরুনির্ঝর' পড়ে লিখেছেন সুদেষ্ণা রাহা। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।
..........................................................................
মরু নির্ঝর 
সূর্যনাথ ভট্টাচার্য 
প্রকাশক : সুপ্রকাশ 
প্রচ্ছদ : সৌজন্য চক্রবর্তী 
মূল্য ৩৫০/-

সূর্যনাথ ভট্টাচার্য'র প্রথম বই পড়েছিলুম  " মগ্নপাষাণ "। কে  রিভিউ করেছিল, কোন গ্রুপে,  সব ভুলে গেছি শুধু  বইয়ের খোঁজটি তুলে রাখা ছিল এবং সুযোগমতো আনিয়ে নিয়ে পড়ে ফেলাও হয়েছিল।

ধ্রুব চন্দ্রিমা, মগ্ন পাষাণ  এবং মরু নির্ঝর—লেখকের ঐতিহাসিক গল্পের ট্রিলজি।  মগ্ন পাষাণ পড়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলুম যে, আরেক বই প্রেমীর কাছে যখন মরু নির্ঝর দেখতে  পেলুম, তখন  অন্য সব বই সরিয়ে রেখে  মরুনির্ঝর পড়ে ফেলতে দুবার ভাবিনি। বলা বাহুল্য  এবারেও পাঠানুভূতি সুখকর ।

 বইয়ের  শুরুতেই লেখক বলে দিয়েছেন  
—এটি ইতিহাস নয়, ঐতিহাসিক  উপন্যাস; ইতিহাসের সময়  চরিত্র ও কিছু ঘটনাকে ভিত্তি করে এর নির্মাণ।  যদিও অনুপ্রাণিত  হয়েছেন সংস্কৃত মুদ্রারাক্ষস নাটকের  থেকে, কিন্তু এটি নাটকের বিনির্মান না হলেও, মূল নাটকের  ঘটনা বিন্যাসের সঙ্গে বিরোধের সম্ভাবনা নেই। ( ভুরু কোঁচকাবেন না প্লিজ। মহাকবি কালিদাসের "অভিজ্ঞানম শকুন্তলম"ও  মহাভারতের শকুন্তলা আখ্যানের এডাপটেশন।  তাছাড়া বর্তমান যুগের দিকপাল নাট্যকার বাদল সরকার বলে গেছেন, "একই গল্প বারবার বললে সে আর এক থাকে নে, পালটে পালটে যায়।" তাই চানক্য-চন্দ্রগুপ্ত আখ্যানও  মরু নির্ঝরে কিছুটা পালটেই গেছে।

নন্দবংশের ধ্বংস, চন্দ্রগুপ্ত  মৌর্যের উত্থান এবং সেই সঙ্গে ধননন্দের বিশ্বস্ত  মহামন্ত্রী  যিনি অমাত্য রাক্ষস নামে সুপরিচিত , তাঁকে চানক্যের  কূটনৈতিক  কৌশলে চন্দ্রগুপ্তের মহামন্ত্রী পদে যোগদান করানো এই উপন্যাসের মূল আধার। কিন্তু  শুধু  সেটুকুই সব  নয়। কাহিনীর মূল চরিত্র দুটি রাগ ও রাগিনী... যাদের  কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে বাকি সব চরিত্রগুলি। কালের স্রোতে যেভাবে নন্দ বংশ বিলুপ্ত  হল সেভাবেই এই রাগ-রাগিনী দুটিও হারিয়ে গেল। রাজনৈতিক  পালাবদলের সঙ্গে  সঙ্গে  রাজপরিবার এবং তার সঙ্গে  নিরাপরাধ সাধারণ  মানুষের  জীবনও   কিভাবে ছিন্নভিন্ন  হয়ে যায় তার সকরুণ  ছবি এঁকেছেন লেখক। রাজনীতির পাশে পাশে চলেছে প্রতিশোধ, ক্রুরতা, শঠতা, বন্ধুত্ব ও প্রেম। 

অত্যন্ত  সুললিত ভাষা,  তৎসম তদ্ভব শব্দের সুপ্রযুক্ত  ব্যবহার, (যদিও  জায়গায়  জায়গায় অত্যন্ত  কঠিন মনে  হয়েছে আমার), যুগের সঙ্গে  সামঞ্জস্য  রেখে পরিবেশ ও চরিত্র নির্মাণ বইটিকে অত্যন্ত  সুখপাঠ্য  করেছে। প্রথম দিকের  দু-একটি  জায়গায় আমার মনে  হয়েছে একই বক্তব্য  নানাভাবে  বলার জন্য গল্পের গতি বুঝি সামান্য হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু  মূল কাহিনীর যোগসূত্র কোথাও ছিন্ন হয় নি বলে পড়ার সময় ওইটুকু বাধাকে বাধা  বলে মনেই হয় নি। 

অধ্যায়ের নামকরণগুলি চমৎকার।  আরোহ থেকে শুরু করে অবরোহ পর্যন্ত  প্রতিটি  অধ্যায় সাজানো  সুরসপ্তকের নামে আর মাঝের  পর্বগুলি এক একটি  বাদ্যযন্ত্রের নামে।

ছাপা প্রুফ/এডিটিং কিছু বলার অপেক্ষা  রাখে না। সৌজন্য চক্রবর্তীর  প্রচ্ছদ বইয়ের সঙ্গে  মানানসই। যারা ঐতিহাসিক  গল্প পড়তে ভালবাসেন, তারা বইটি  (ট্রিলজিটি) পড়ে আনন্দ পাবেন বলেই আমার বিশ্বাস। দুটি  খন্ড আমার পড়া হয়েছে। এবার লক্ষ্য ধ্রুবচন্দ্রিমা। 

ধন্যবাদ লেখককে এত সুন্দর  কাহিনী  উপস্থাপনার জন্য।🙏

বাঙ্ময়ী 
১৬/৩/২০২৪



Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।