সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ। সম্পাদনা : শতঞ্জীব রাহা। গল্প — অসুখ।
এক বছর আগে বইটি পড়তে পড়তে একটি গল্পের অংশ উদ্ধৃত করেছিলেন পায়েল দত্ত।
............................................
‘স্বরাজ’ মানে কী, কে জানে! সৌদামিনীর বয়স তখন সবে বছর কুড়ি। মনটা সবুজ ফসলি মাঠের মতো বিস্তৃত। স্বরাজের মানে না বুঝলেও মনে হয়েছিল সেটা নিশ্চয় বড়ো সুন্দর কিছু একটা হয়তো, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে জোচ্ছনা ধোয়া চাষিবাড়ির এলুনি দেয়া তকতকে উঠোনের মতো। কিংবা শরতের মেঠো রাস্তায় পড়ে থাকা শিউলি ফুলের মতো পবিত্র। যে শিউলি দুলে বাগদি ভদ্দর শুদ্দুর সকলে একসাথে কুড়িয়ে, বোঁটা শুকিয়ে বাসন্তী রংয়ে কাপড় ছুপিয়ে পরে যেমন আনন্দ পায়— এমন নিশ্চয় কিছু একটা হবে।
তবে ভালো লেগেছিল সেই রাজপুত্তুরকে। মধুর মতো কানে লেগেছিল তার কথা। মনে পড়েছিল ঠাকমার কাছে শোনা রাজপুত্তুর মন্ত্রীপুত্তুর আর সেই কোটালপুত্তুরের গল্প। রাজপুত্তুর অত লোকের মধ্যে ভিক্ষে করেছিল। সবাই খুলে দিয়েছিল গা থেকে গয়না। সদুর সামনে যখন এসেছিল তখন কুড়ি বছরের সৌদামিনীর চোখ দুটো ভরে উঠেছিল জলে। মন হাহাকার করে উঠেছিল – না না, এ তুমার সাজে না গো – সাজে না। কিন্তু সদু সোনার গয়না কোথায় পাবে। কান্না ভিজে গলায় বলেছিল তাই কুড়ি বছরের সৌদামিনী— ‘আমার তো সোনা নাই বাবা, এটা ছাড়া আর কিছু নাই’— বলে পাছা হারটা খুলে ফেলে দিয়েছিল রাজপুত্তুরের হাতে ধরা কাপড়ের ওপর।
রাজপুত্তুর একফালি জোচ্ছনার মতো হেসে বলেছিল— ‘তুমি অনেক দিয়েছ মা। এতো শুধু হার নয়, এ তোমার সম্পূর্ণ হৃদয়।’
রাস্তায় আসতে আসতে সৌদামিনী জিজ্ঞেস করেছিল স্বামীকে— ‘হ্যাঁ গো, স্বরাজ কাকে বলে?’
ক্ষ্যাপাচাঁদের স্বরাজ সম্বন্ধে খুব একটা জানা না থাকলেও একটা ধারণা দেবার চেষ্টা করেছিল— ‘স্বরাজ মানে হলো গিয়ে স্বাধীনতা। এই ধর আমাদের ওপর কেউ হুকুমদারি করতে পারবে না। আমরা বুক দিয়ে খাটব। পেট পুরে খাব। বুক ফুলিয়ে বেড়াব।’
সদু জিজ্ঞেস করেছিল— ‘তুমার জমি হবে ?’
গভীর আত্মপ্রত্যয়ে জবাব দিয়েছিল ক্ষ্যাপাচাঁদ— ‘হবে না ? নিচ্চয়ই হবে।’
_________________________
▪️গল্প : অসুখ
▪️সমর ভট্টাচার্য রচনা সংগ্রহ
▪️সম্পাদনা : শতঞ্জীব রাহা
Comments
Post a Comment