সময় ভ্রমণ—দার্জিলিং : পাহাড় সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।


সুপ্রকাশ প্রকাশিত সৌমিত্র ঘোষের বই 'সময় ভ্রমণ (দার্জিলিং : পাহাড় সমতলের গল্পগাছা)' পড়ে লিখেছেন বাপ্পা পাল। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি। 
..........................................................................
পাঠ প্রতিক্রিয়া
সময় ভ্রমণ - দার্জিলিং : পাহাড় সমতলের গল্পগাছা—সৌমিত্র ঘোষ
প্রকাশক – সুপ্রকাশ 
পৃষ্ঠা সংখ্যা – ৩২৬ 
দাম – ৫৬০ টাকা

প্রথমেই বলে রাখি এই বইটির পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রদানে আমার পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া শক্ত। কারন অনেক বাঙালির মত দার্জিলিং আমারও অনেকখানি আবেগ আর তার চেয়েও বেশি ভালোবাসার জায়গা।
চাকরিজীবনের একদম শুরু (১৯৮১ – ১৯৮৫) এবং একদম শেষ (২০১৬ – ২০১৯) পর্যায়ে সরকারি কাজে বহুবার দার্জিলিং যেতে হয়েছে, এবং তদানীন্তন অবিভক্ত দার্জিলিং জেলায় প্রবল ঘুরে বেড়াতে হয়েছে।
অবসরের পরেও উপমহাদেশে রেলপথের বিস্তৃতির ইতিহাসচর্চার সূত্রে, খোঁজখবর নিতে (গবেষণা বললে বড্ড ভারি শোনায়), আলোচনাচক্রে যোগ দিতে, উপনিবেশিক স্মৃতিমেদুরতায় সিক্ত হতে বারবার যেতে হয়েছে দার্জিলিং।

দার্জিলিং এর মধ্যে যে দার্জিলিং—নানা সময়ের, নানা মানুষের—এই বই সেই বহুমাত্রিক দার্জিলিং এর গল্প বলে—ঠিক যেমন  ‘মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে’। আমি সেটা বুঝি। ২০২৩ এর সেপ্টেম্বরে দার্জিলিং এ আয়োজিত Darjeeling Himalayan Railway – Past, Present and Future with Tea Tourism and Toy Train শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। এক সন্ধ্যায় ম্যালের দাস স্টুডিয়োর সামনে দাঁড়িয়ে মনে পড়লো ১৯৫৮ সালে আমার সদ্যবিবাহিত পিতামাতা মধুচন্দ্রিমায় এসে দাস স্টুডিয়োয় লুকিয়ে লুকিয়ে ছবি তুলিয়েছিলেন, সে ছবি পরিবারের কারও চোখে পড়লে গালমন্দ নাকি নিশ্চিত ছিল—বাড়ির বউ এত বেহায়া!! আমি তখন কোথায় ছিলাম—আমি কি তখন এভাবেই দাস স্টুডিয়োর সামনে জ্যাকেট গায়ে দাঁড়িয়েছিলাম? আর সেই কড়া মেজাজের রোগাপ্যাংলা লোকটা কি এখন এখানে কাছাকাছিই আছেন, কেমন আছেন, আমি তাঁকে স্মরণ করায় তিনি কি বিষম খেলেন? এক্ষুনি এসে আবার আমার কান ধরবেন নাকি? কে জানে!!!!!!
এই বইয়ের কুড়ি পৃষ্ঠায় লেখক শুনিয়েছেন তিস্তা আর রঙ্গিতের এক অত্যাশ্চর্য প্রেমকাহিনি। পড়ে পিছিয়ে গেলাম অনেকখানি। ১৯৮৪ তে আমাদের মধুচন্দ্রিমার পয়সা নেই শুনে অগ্রজ সহকর্মীরা প্রভাব খাটিয়ে দার্জিলিং কালিম্পং এর কয়েকটি বনবাংলোয় বিনিপয়সায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তখন এই গল্পটি শুনেছিলাম।

গ্রন্থটি বহুতর আখ্যায়িকায় বিভক্ত। ধারাবাহিক ভাবে পড়লে মর্মোদ্ধারে সুবিধা হবে বলেই মনে হয়। লেখকের ইতিহাসচেতনা চমকে দেয়। সাহেবগন কর্তৃক সিকিমরাজের কাছ থেকে দার্জিলিং দখলের যে উপাখ্যান তিনি শুনিয়েছেন; তা পশ্চিমা থ্রিলারকেও টেক্কা দেয়। তার প্রতিটি পঙক্তিতে মিশে আছে লেখকের শ্রমস্বেদ। খুব সাধারণভাবে খুব সাধারণ কথা বলতে বলতে লেখক আমাদের নিয়ে যান দূর অতীতে, কখনও বা অনাগত ভবিষ্যতে। এই বই তাই আক্ষরিক অর্থেই সময় ভ্রমণ। সিঙ্কোনা সম্পৃক্ত অধ্যায়গুলি ভারি সুলিখিত। এককালে মংপুর ওই আপিসে West Bengal Audit & Accounts Service এর একটি পদ ছিল, সেই সূত্রে জায়গাটিকে চেনা। আর লেখকের বলা শিকারের কথা পড়তে পড়তে মনে পড়লো বহুযুগ আগে, বিগত শতকের আটের দশকের গোড়ায় কালিম্পং পৌরসভার তদানীন্তন সভাপতি মিস্টার হিসসের (নাম ঠিক লিখলাম তো!) সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। তিনি তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে দেখেছিলাম সারি সারি শিকার স্মারক – বাঘের চামড়া থেকে গণ্ডারের খড়গ, হরিণের শিং থেকে গউরের খুলি – সবই স্থানীয় অরণ্যের।
আর সেখানেই মিশে থাকে কিঞ্চিৎ আক্ষেপ। বইটির বৈঠকি চালে, ঝরঝরে ভাষায় লেখা, যেন মনে হয় লেখক সামনে বসে গল্প বলছেন। লেখক ইতিহাসগত তথ্য দিয়েছেন বিস্তর, কিন্তু সূত্রনির্দেশ বহুলাংশে অনুপস্থিত। সম্ভবত বৈঠকিচালে স্মৃতিচারণ করতে বসে লেখক তার লেখাকে ফুটনোটে পুস্তকতালিকায় ভারাক্রান্ত করতে চান নি, কিন্তু তাইতে কৌতূহলী পাঠকের ক্ষতি অনেক। প্রথমত কৌতূহলের বশে কেউ কোন বিষয় নিয়ে আরও পড়াশোনা খোঁজখবর করতে চাইলে সে পথ রুদ্ধ – কারন জানিই তো না কোথায় খুঁজতে হবে; আর দ্বিতীয়ত, আলোচনাচক্রে বা কোন ফোরামে মত বিনিময়ে এই বইয়ের তথ্য উদ্ধৃত করা যাবে না; কারন সূত্র জানতে চেয়ে কেউ চেপে ধরলে বলতে পারবো না।

লেখক শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা বিগত ছয় দশক ধরে। আমি শিলিগুড়ি শহর প্রথম দেখি ১৯৮১তে—তার পর থেকে প্রতি বছর ন্যূনতম একবার করে। শহরের ক্রমবিকাশ নিয়ে তার আবেগঘন প্রতিটি বক্তব্যের সঙ্গে আমি পরিপূর্ণ একমত। ১১৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন ‘১৮৭৮ এর শেষদিকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেল পৌঁছোয়’। বস্তুত North Bengal State Railway র হাতে ১০ই জুন ১৮৭৮ শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের পথ চলা শুরু। শিলিগুড়ি শহরের কেন্দ্রে, মহাবীরস্থান উড়ালপুলের নীচে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনটি এখন এক উপেক্ষিত ভ্রমণগন্তব্য। এর এক পাশে ২৮ নম্বর ওয়ার্ড টিকিয়াপাড়া, অন্য পাশে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাগরোকাট; আর সামনে লোকাল বাসস্ট্যান্ড। এখানে দু ফুটের ন্যারোগেজ, মিটারগেজ আর সাড়ে পাঁচ ফুটের ব্রডগেজ পাশাপাশি বিরাজমান। রবিবাবু (মংপু যাওয়ার পথে) থেকে সুভাষবাবু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন – সবাই এই স্টেশনে রেলগাড়িতে উঠেছেন। হাতে টানা লিফট, সোরাবজির বইয়ের দোকান, রেস্তোরাঁ মিলিয়ে শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন তখন জমজমাট। এই স্টেশনেই ১৯০৮ সালের এপ্রিল মাসে ক্যাপ্টেন মার্ফি, লেফটেন্যান্ট সমারভিল ও আরও দুজন ব্রিটিশ অফিসারের সাথে বাঘাযতীন এর মারপিট হয়। ওই চার অফিসারের সবারই নাকি চোয়াল ভেঙে দিয়েছিলেন বাঘাযতীন (যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯ – ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫)। নিউ জলপাইগুড়ি জংশন রেলওয়ে স্টেশন নেহাতই অর্বাচীন, ১৯৬০ এ তার পথ চলা শুরু। শিলিগুড়ি জংশন চালু হয় স্বাধীনতার পরেই, ১৯৪৯এ।

স্টেশনটিতে তিনটি প্ল্যাটফর্ম। একটি আইল্যান্ড প্ল্যাটফর্ম (অর্থাৎ যে প্ল্যাটফর্মে পদসেতু দিয়ে পৌঁছাতে হয় এবং যে চওড়া প্ল্যাটফর্মের দুদিকেই রেললাইন) এর একদিকে ন্যারোগেজ, অপরদিকে ব্রডগেজ – যাতে কলকাতা থেকে ব্রডগেজ রেলগাড়িতে আগত যাত্রীরা সেখান থেকেই পাহাড়গামী দু ফুটের ন্যারোগেজ রেলগাড়িতে উঠতে পারেন; এবং পাহাড় প্রত্যাগত যাত্রীরাও নির্বিঘ্নে ন্যারোগেজ রেলগাড়ি থেকে নেমে কলকাতাগামী ব্রডগেজ রেলগাড়িতে উঠতে পারেন; কারন এই স্টেশনই দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের ‘original southern terminus’। ন্যারোগেজ লাইন এখান থেকে নিউ জলপাইগুড়ি অবধি সম্প্রসারিত হয়েছে এই সেদিন, ১৯৬০ এ - নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের স্থাপনার পর। অপর ব্রডগেজ প্ল্যাটফর্মটি মূলত দুরপাল্লার রেলগাড়িদের জন্য।
হ্যানয়ের Train Street একটি ভ্রমণ গন্তব্য। একটি অবৈদ্যুতায়িত সিংগল লাইন হ্যানয়ের Old Quarter এর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে দিয়ে, অগণন বাড়িঘরের পাশ দিয়ে গিয়েছে। দিনে কয়েকবার সেই লাইনে রেলগাড়ি যায়, আর তাই দেখতে সারা পৃথিবীর রেলউৎসাহীরা ভিড় জমান। কিংবা ধরুন ব্যাংককের Maeklong Train Market (Talat Rom Hup, বাংলায় ‘ছাতা নামানো বাজার’)। রেলগাড়ির ভোঁ শুনলেই দোকানদাররা ঝটপট খুলে ফেলে প্লাস্টিকের ছাউনি, রেললাইনের উপর থেকে সরিয়ে নেয় ঝিঙে, ধুধুল, বাঁধাকপি, বেগুন, ঢেঁড়স, ডুমুর, টম্যাটো, শসা, থানকুনিপাতা, তুলসিপাতা। রেলগাড়ি চলে গেলেই আবার যে কে সেই। আর তাই দেখতেই পর্যটককুল আকুল। শিলিগুড়ি টাউন রেল ইষ্টিশনের হকারস কর্নারের মধ্য দিয়ে গিয়েছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের দু ফুটের ন্যারোগেজ লাইন। সেখানে রেলগাড়ি দোকানের এত কাছে দিয়ে যায় যে রেলগাড়ির কোন যাত্রী একবার ইচ্ছা করলেই রেলগাড়ির জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দোকান থেকে একটা জামা টেনে নিতে পারেন। চিকিৎসাশাস্ত্রে hyperopia নামে একটি রোগের কথা আছে। hyperopia  হলে রোগী দূরের জিনিষ স্পষ্ট পরিষ্কার দেখতে পায়, কিন্তু কাছের জিনিস ধোঁয়া ধোঁয়া দেখে। বাঙালি পর্যটকদের একটা বড় অংশ এই hyperopiaয় আক্রান্ত।

১১০ পৃষ্ঠায়  যে ব্যাডেন পাওয়েল সায়েবের কথা বলা হয়েছে, তিনিই কি স্কাউটিং এর প্রবর্তক Lieutenant-General Robert Stephenson Smyth Baden-Powell, 1st Baron Baden-Powell (22 February 1857 – 8 January 1941)?

১৩৮ পৃষ্ঠায় লেখক বেহালার পরিচয় দিয়েছেন ‘দক্ষিণ কলকাতার উপকণ্ঠে’। কিন্তু বেহালা এখন আর সেই পচা বেহালা নেই; বেহালা তো বটেই, বেহালা ছাড়িয়ে দূরবর্তী ঠাকুরপুকুর জোকা এখন শহুরে আলোয় উদ্ভাসিত। তবে তাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে ফ্রেড পিন সাহেব প্রতিষ্ঠিত ইস্কুল এখনও আছে, বেহালা চৌরাস্তা ছাড়িয়ে দক্ষিণে গেলেই ডগলাস গ্রাউন্ডের কাছে অক্সফোর্ড মিশন বেহালা। তার ভিতরে মস্ত পুকুর, এই সেদিনও সেখানে সাঁতার কেটেছি।

পাহাড়ি এথনিক জনগোষ্ঠীর প্রতি ঊনবিংশ শতকের শহুরে সামন্ততান্ত্রিক ইংরেজিজানা ধনী বাঙালি সম্প্রদায়ের অবজ্ঞা উপেক্ষা উন্নাসিকতা তাচ্ছিল্য লেখক দেখিয়েছেন সমকালীন লেখালেখি থেকে (পৃষ্ঠা ১৮৪ – ১৮৯)। এ রোগ বাঙালির চিরকালীন; চিরকালই সে নিজেকে ঈশ্বরের দ্বিতীয় সন্তান ভাবতে অভ্যস্ত (প্রথম সন্তান অবশ্যই ব্রিটিশ)। বিদ্যাসাগর মশাই তো জীবনের শেষ সতেরোটা বছর কাটালেন কার্মাটাঁড়ে; সেখানে তিনি আদিবাসী বালিকাদের জন্য কটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? উনবিংশ শতাব্দী ও তার অব্যবহিত পরবর্তী যুগের বাংলার এক অদ্ভুত প্রহেলিকা - যে সেলেব্রিটিদের স্ত্রী অথবা বান্ধবীরা ইংরাজি জানতেন না, যে সেলেব্রিটিদের ছিল না মেমসাহেব স্ত্রী অথবা বান্ধবী, তারা কেউই কলকাতার অভিজাত সমাজে কল্কে পান নি; চলে যেতে হয়েছে দূরে। শরৎবাবু দেউলটি গিয়ে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন; বিদ্যাসাগর মশাই, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ অথবা বিভূতিবাবুকে শান্তি ও সান্ত্বনা খুঁজতে হয়েছে বাংলার বাইরে, আদিবাসীসঙ্গে।
এবং এর বিপরীতটাও সমভাবে সত্য। সম্পন্ন পাহাড়ি মানুষজন – গোর্খা, লেপচা, ভুটিয়া, কিরাতি, লিম্বু, ধিমল – সবাই মানসিকতায় জীবনচর্যায় সাহেবদের অনেক কাছাকাছি, এবং কিয়ৎপরিমাণে সমতলদ্বেষী। ছাত্রাবস্থায় (১৯৭৬-১৯৭৭) হিন্দু হোস্টেলের এক পাহাড়ি আবাসিক তরুণের কাছে আমি প্রথম ডোনা সামারের (Donna Adrian Gaines, December 31, 1948 – May 17, 2012) নাম শুনি। তখন খুব কম বাঙালিই ইংরিজি গান শুনতো।

ইদানীং বাংলা বই কিনতে এবং পড়তে গেলে এক আতঙ্ক গ্রাস করে। বইটা বইয়ের মত হবে তো, কিনে টাকাটা জলে যাবে না তো! কিনে দেখবো না তো উপন্যাসের নামে গল্পের গোরু গাছে ওঠানো বা স্মৃতিকথনের নামে মিথ্যাকথন, ছাপার ভুল, বানানের গঙ্গাপ্রাপ্তি! বাংলা বই এক অদ্ভুত পণ্য, মুদ্রিত মূল্যে তাকে কিনতে খরিদ্দারের সার্বি্ক অনীহা – ছাড় না দিলে সে বাজারে বিকোয় না। এই বইটি আমার সেই আতঙ্ক অনেকাংশে অপনয়ন করেছে; বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছে ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’ আপ্তবাক্যে। বইটির প্রকাশনার মান চমৎকার, ভাল কাগজে ঝকঝকে ছাপা, খটখটে বাঁধাই – হাতে নিলেই মন ভালো হয়ে যায়।
তবে বইটিতে কিছু ছাপার বা তথ্যগত ভুল্ আছে - ৪৭ পৃষ্ঠায় ‘দাঁড়িয়ে আছে’ হয়ে গেছে ‘দাঁড়িয়েআছে’; ৫৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন আন্দেজ – কিন্তু পরবর্তীতে তাকে আন্দিজ বলা হয়েছে, ৫৭ পৃষ্ঠায় ‘ল্যাবিরিন্থ’ হয়ে গেছে ‘ল্যাবিরিস্থ’। ৬১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘চাষ শুরু হলো – কফির, তুলোর, চিনির, কোকোর’। চিনির চাষ? খটকা লাগে; চিনি এরকমভাবে সরাসরি চাষ করা যায় নাকি? ৬২ পৃষ্ঠায় ‘ম্যালেরিয়া’ হয়ে গেছে ‘ম্যলেরিয়া’। ৭০ পৃষ্ঠায় ‘পুরোনা আফিম’ সম্ভবত ‘পুরনো অফিস/আপিস’ হবে। ৯৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘উদ্ভিততত্ত্বে’। ৯৮ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘বাগডোগরা বাজার ছাড়িয়ে জাতীয় সড়ক ৩১’। বইটির প্রকাশকাল ২০২২ – তার আগেই জাতীয় সড়কসমূহের ক্রমিক পরিবর্তিত, বর্তমানে জাতীয় সড়ক ৩১ বিহারের কাটিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকছে হরিশ্চন্দ্রপুর মালদা হয়ে। তাই খটকা লাগে। ১০৪ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘সম্প্রদয়ের’, ১২০ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘অগে’, ২০৫ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘তখনওা’, ২০৯ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘অভিযোজিত।(ন্যাচুরালাইজড)’ – পূর্ণচ্ছেদটি সম্ভবত অনাবশ্যক। ২২৫ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘ভূগেলের’। ২২৫ পৃষ্ঠায় ‘পুষ্পও’ ‘পুষ্প ও’ হবে। ২৪৬ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘পাদ্রীবাবা’, আবার ২৪৯ পৃষ্ঠায় ‘পাদ্রিবাবা’। এখানে বানানে সমতা তথা সাযুজ্যবিধান কাঙ্ক্ষিত ছিল। ২৪৯ পৃষ্ঠায় ‘উপনিবেশ’ ‘উপনিবেশে’ হবে। ২৫৩, ২৯৩ ও ২৯৪ পৃষ্ঠায় ‘মহার্ঘ্য’ ‘মহার্ঘ্’ হবে, ২৫৫ পৃষ্ঠায় ‘প্রতিদ্বন্দী’ ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ হবে, ২৯৫ পৃষ্ঠায় ‘ঘর্মঘটের’ ‘ধর্মঘটের’ হবে, ৩০০ পৃষ্ঠায় ‘লুঙ্গি করে’ ‘লুঙ্গি পরে’ হবে, ৩১০ পৃষ্ঠায় ‘ইম্যানিজড’ ‘ইম্যাজিনড’ (সূত্র - Imagined Communities: Reflections on the Origin and Spread of Nationalism by Benedict Anderson) হবে।

ভুলগুলি না থাকলেই ভালো হত। আশা রাখবো সংস্করণের ভুলগুলি সংশোধিত হবে।

পরিশেষে বলি, বহুদিন বাদে মন ভরে যাওয়ার মত একটি বই পড়লাম; এমন একটি বই পড়লাম যার সঙ্গে আমি নিজেকে ‘রিলেট’ করতে পারি।


Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।