মোগলমারির সখি।। ভাস্কর দাস।। পাঠপ্রতিক্রিয়া।।

সুপ্রকাশ প্রকাশিত ভাস্কর দাসের বই 'মোগলমারির  সখি' পড়ে লিখেছেন দিবাকর দাস। আমরা তাঁর অনুমতি নিয়ে নিজেদের টাইমলাইন থেকে শেয়ার করছি।
.
.
সখিসোনার আড্ডায়
_______________

বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক, ছবি তুলিয়ে, বাচিক শিল্পী, ভ্রামনিক ও সেই সংক্রান্ত লেখায় সিদ্ধহস্ত ভাস্কর দাস (Bhaskar Das ) যখন “মোগলমারির সখি” নিয়ে লেখা বইয়ের কথা ফেসবুকে জানান, আগ্রহ বাড়ে। 
সদ্য প্রকাশিত এই বইটি সংগ্রহ করে প্রথমেই আটকে পড়ি এর নির্মাণ সৌকর্যে। প্রচ্ছদের সবুজ অশ্বত্থ চারাটি যেন এক অযুত সম্ভাবনার ঈঙ্গিত….  
আমার মতে মোগলমারির সখি এক নিশ্বাসে পড়ার বই না। ইতিহাসের ছাত্র ছাত্রীদের পরীক্ষায় উত্তর লেখার মানে বুকও না। কোনো নীতিমালা শোনাতে তার আগ্রহ নেই। তবে খনন আছে। সময়ের পারত সরিয়ে দেখাতে চাওয়ার আগ্রহ আছে। এই বই সেই সব পাঠকের জন্য যারা এক গল্প আড্ডায় রাত কাবার করতে পারে। তারাই জানে আড্ডার গতি বহু বিভক্ত। মাঝে মাঝে সিগারেটের কাউন্টার বা ফেলে দেওয়া বিড়ির পোঙা আবার ধরিয়ে আড্ডার যুগ যুগ জিও করা পাব্লিকের জন্য এই ছোট্ট বই। আড্ডা যেমন কোনো সিদ্ধান্তে আসে না, সে উপসংহার রহিত। এই ‘শশীসেনার’ কাহিনিও অমিত সম্ভাবনার কথা বলে থেমে যায়। আগ্রহী পাঠকের জন্য রেখে যায় ১৫ টি বইয়ের হদিস আর ৩৮ টি টিকা ভাষ্য। লেখক যদিও টিকা ভাষ্যের মাঝে ‘ও’ জুড়েছেন। মানে ওখানেও গল্প আছে। 

যাইহোক, ‘পরণকথা’য় আসি… পরণকথা তো আমাদের ঠাকুমা দিদিমার গল্প বলিয়ে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিদের বহমান ঐতিহ্য। কিন্তু মাটি পাথরের স্থাপত্য মোগলমারি হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া অতীত গৌরব এক বৌদ্ধ মহাবিহারের খননকার্য, যা বর্তমান অস্থির সময়ের বাস্তব। কালের গর্ভে এখনো অনেক সম্পদ। কিন্তু স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শোনা গল্পকে রচয়ীতা(গল্পকার নয়) নিয়ে ফেলেন কালের গর্ভে। আফগান শাষক, বাংলার মসলিন, ওড়িশার তন্ত্র সাধনা, বৌদ্ধ জাতক, জাত পাতের রাজনীতি ও ধর্মান্তরণ…. কি ভাবে যেন মিলে মিশে যায় ফকিররাম থেকে রবীন্দ্রনাথে।  ১৬৭৩ খৃষ্টাব্দে হাতে লেখা পুঁথি ‘ফকিররাম কবিভূষণের সখীসেনা’ বইয়ের পরিশিষ্টে ছাপাও হয়েছে। 
আমি যদিও পরম আগ্রহে গিললাম, দক্ষিনারনঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘'ঠাকুমার ঝুলি’ র পূর্বসূত্র বিচার। অনেকদিন আগে পড়েছিলাম ‘'গোপাল রাখাল দ্বন্দ সমাস’’ শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কি কি পড়েছিলাম মনে নেই কিন্তু ভালো লাগার রেশ যেটা মনে লেগেছিল সেটাই চাগিয়ে উঠছিল সখিসোনার গল্প পড়তে পড়তে। সেই রেশ বয়েই চলল.... 

কাল গননা বা ইতিহাসের উপাদানগুলো সঠিক মাত্রায় ব্যাবহার হয়েছে কিনা সে বিচারের ভার পণ্ডিতদের। 
আমরা আড্ডার ভোক্তা। আমাদের ভালোবাসার চলন নিয়মরহিত। নির্মল আনন্দ পাওয়াই যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তাদের জন্য এই বই। 
যাদের স্মৃতি শক্তি ভালো তারাও এই বই পড়তে পারেন। গুগুল যুগ হেড লাইন নিউজের মতো জ্ঞান থাকলেই জ্ঞানীর যুগ। বড্ড কাজে লাগবে চটজলদি রেফারেন্স সহ মন্তব্য বিতরণ করতে। 


Comments

Popular posts from this blog

বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১।। সম্পাদনা : সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়।।

সময় ভ্রমণ।। দার্জিলিং : পাহাড়-সমতলের গল্পগাছা।। সৌমিত্র ঘোষ।।

সময় ভ্রমণ।। সৌমিত্র ঘোষ।।